আয়ের ব্যবধান সম্পর্কিত সমীক্ষায় দেখা গেছে কানাডীয়রা ‘কম ন্যায্য’ সমাজের কারণে অসুবিধার মধ্যে রয়েছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ইতিপূর্বে জাতীয় পর্যায়ের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় মনে করেন, দেশে আয়ের ব্যবধান বেড়েছে এবং এর ফলে সামাজিক ন্যায্যতা হ্রাস পেয়েছে।

টরন্টো স্টারের জন্য ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সামাজিক গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ৭৮ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন, আয়ের বৈষম্য বেড়েছে এবং ৭০ শতাংশ মনে করেন এটি কানাডাকে কম ন্যায্য সমাজে পরিণত করেছে, ৫৫ শতাংশ মানুষ তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে সঙ্কটের মধ্যে রয়েছেন; অন্যদিকে ৬৭ শতাংশ মানুষ তাদের সন্তানদের আর্থিক ভবিষ্যৎ  নিয়ে উদ্বিগ্ন।

বয়স, শিক্ষা, আয়, অঞ্চল কিংবা কোন পার্টির প্রতি আনুগত্য নির্বিশেষে সমীক্ষায় যাদের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে তাদের প্রত্যেক গ্রুপর ৭০ভাগ মানুষ মনে করেন কানাডায় আয়ের বৈষম্য বেড়েছে অনেক বড় আকারে।

ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ কানাডীয় মনে করেন যে, আয়ের ব্যবধান বেড়েছে এবং এই বৈষম্যের কারণে সামাজিক ন্যায্যতা হ্রাস পেয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

সমীক্ষার লেখক ডেভিড নর্থরাপ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘জনগণ মনে করে, আয়ের ক্ষেত্রে বৈষম্য আরও খারাপ অবস্থায় চলে গেছে। আমার কাছে যেটি বিস্ময়কর মনে হয়েছে সেটি হলো এই বিশ্বাসের সার্বজনীনতা। অপেক্ষাকৃত তরুণ, বয়স্ক, উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত, নারী-পুরুষ সবাই এটি বিশ্বাস করেন। আসলে কানাডার সর্বস্তরের ব্যাপক জনগণ বিশ্বাস করে যে, আয়ের বৈষম্য অনেক বড় এমনকি বৃহত্তর পর্যায়ে বি¯তৃত হয়েছে।

ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সমীক্ষা গবেষণার পরিচালক নর্থরাপ যিনি একই ইউনিভার্সিটির প্রফেসর লেসলি জেকবস-এর সঙ্গে যৌথভাবে রিপোর্টটি লিখেছেন, আরও বলেন, ‘‘সাধারণত আমরা এটির মত সামাজিক ধারণা সম্পর্কিত সমীক্ষায় জনমতে অনেক ভিন্নতা লক্ষ্য করি।’’

‘‘কানাডীয় হওয়ার একটি অন্যতম মৌলিক ভিত্তি হলো এমন ধারণা যে আমাদের সমাজ ন্যায়ভিত্তিক। এই সমীক্ষায় তার বিপরীত চিত্র পাওয়া যাচ্ছে।’’

আয়ের বৈষম্য সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতে বলা হলে ৭০ ভাগ লোক বলেছে, ভালো বেতন দেয়া হয় এমন যথেষ্ট কর্মসংস্থান কানাডায় নেই, অপরদিকে ৬০ ভাগ লোক বলেছে, কম বেতন দেয় এমন দেশগুলোতে চাকরি স্থানান্তরিত হওয়াই আয়ের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার কারণ। প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অর্থাৎ ৬৫ শতাংশ কানাডীয় আয়ের বৈষম্য বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে ‘শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে শীর্ষ ব্যক্তিদের ক্রমবর্ধমান হারে বেতন দেয়াকে’ দায়ী করেন।

নর্থরাপ বলেন, আয়ের ক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য নিয়ে উদ্বেগ কেবল অন্টারিও বা কানাডার ব্যাপার নয় বরং এটি গোটা পাশ্চাত্যেরই একটি সাধারণ লক্ষণ।

তিনি বলেন, ‘‘১৯৬০-এর দশকে সবকিছু সঙ্কুচিত হয়ে আসার কিছু প্রমাণ ছিলো। কিন্তু এখন ব্যবধানটা আবার বেড়ে যাচ্ছে এ বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে এবং আমার মনে হয়, জনগণের রাডারে এটি ধরা পড়েছে।’’

আয়ের ক্ষেত্রে অসমতার বিষয়ে আলোচনা বেড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছিলো ২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অধোগতির সময়েও যাকে কেন্দ্র করে রাস্তা ‘দখল’ বা ‘অকুপাই’ স্ট্রিট নামে প্রতিবাদের সূচনা ঘটে এবং ‘সবচেয়ে ধনী এক শতাংশ’ বা ‘দ্য ওয়ান পার্সেন্টার’ নামে নতুন উপ-দল চিহ্নিত করা হয়।

রাজনীতিকরা আয়ের অসমতার ইস্যুর সুযোগ নিয়েছেন। ‘‘অনিশ্চিত কর্মসংস্থান’’ কৃষিক্ষেত্রে পশ্চাদগতি, ভাল সুবিধাসম্পন্ন ভাল চাকরি এবং খন্ডকালীন চাকরি বেড়ে যাওয়া, কম মজুরির কাজÑ ইত্যাদি বিষয় নিয়েও জনগণের মধ্যে যথেষ্ট আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর ম্যাকমাস্টার ইউনিভার্সিটি ও ইউনাইটেড ওয়ে টরন্টোর এক সমীক্ষায় দেখা যায় অন্টারিওর কর্মচারীদের মধ্যে ৫০ শতাংশই অনিশ্চিত কাজের সঙ্গে সংশ্লি­ষ্ট।

জ্যাকবস বলেন, ‘‘ভাল চাকরির সংখ্যা কমে যাওয়া এবং সেইসঙ্গে অপেক্ষাকৃত কম সংখ্যক চাকরির শীর্ষ পর্যায়ে উচ্চতর বেতন দান ইত্যাদি ঘটনা সমীক্ষায় অংশ নেয়া লোকেদের মধ্যে ‘‘সামাজিক সচলতার জন্য বৃহত্তর সুযোগের বিরোধিতার কারণে সুযোগ কমে যাওয়ার ধারণার জন্ম দিয়েছে।’’

ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির সমীক্ষায় দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে ৩০ শতাংশ কানাডীয় তাদের চাকরি হারিয়েছে বা পরিবর্তন করেছে।

সমীক্ষা অনুযায়ী, ৭৫ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন ন্যূনতম মজুরি বাড়ানোর ফলে আয়ের ক্ষেত্রে ব্যবধান কমবে। এতে আরও দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ কানাডীয় মনে করেন কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকার আয়ের ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসমতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে অনেক কিছু বা কিছু অন্তত করতে পারে।

সমীক্ষায় দেখা যায়, মুষ্ঠিমেয় ২৮ শতাংশ মানুষ মনে করে, আয়ের বৈষম্য অবসানে শ্রমিক সংগঠনগুলো অনেক কিছু করতে পারে। 

মোট ৩০ শতাংশ মানুষের ধারণা, অভিবাসীরাই আয়ের ক্ষেত্রে ব্যবধান বৃদ্ধির জন্য দায়ী।

সংখ্যানুযায়ী আয়ের ব্যবধান

– ৭৮ শতাংশ মনে করেন, আয়ের ক্ষেত্রে ব্যবধান বেড়েছে

– ৪০ শতাংশ মনে করেন, এই ব্যবধান ‘অনেক’ বড়

– ৭০ শতাংশ বলেন, আয়ের বৈষম্য কানাডাকে ‘‘কম ন্যায্য’’ দেশে পরিণত করেছে

– ৭৫ শতাংশ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করলে স্বল্প আয়ের সম্ভাবনা কমে যায়

– ২৫ শতাংশ কানাডীয় বলেন, তাদের নতুন চাকরিতে বেতন কম বা সুবিধাদি কম

– ৪১ শতাংশ বলেছেন, ইআই বা বৃদ্ধ বয়সের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ফলে আয়ের ব্যবধান বেড়েছে

– ৮০ শতাংশ মনে করেন, আয়ের ক্ষেত্রে অসমতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলো অনেক কিছু বা অন্তত কিছু করতে পারে। সূত্র : টরন্টো স্টার