বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস

গত ২ এপ্রিল ছিল ১৭তম বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ‘রূপান্তরের অভিযাত্রায় সবার জন্য নিউরোবান্ধব অন্তর্ভুক্তিমূলক বিশ্ব গঠন’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে ঐ দিন অটিজম সচেতনতা দিবস কানাডায়ও পালন করা হয়। অটিজম বিষয়ে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি ও আক্রান্ত শিশু ও বয়স্কদের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে সহায়তার প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরতে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০০৭ সালে ২ এপ্রিলকে ‘বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস’ হিসেবে পালনের  সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর পর থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হচ্ছে।

অটিজম মূলত শিশুদের বিকাশগত একটি সমস্যা। এ ধরণের শিশুরা সাধারণত অপরের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করতে পারে না বা তারা তাদের মতো করে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যা সবাই সবসময় বুঝে উঠতে পারে না। আবার দেখা গেছে তাদের অনেকের ভাষা থাকেনা। কিংবা ভাষা থাকলেও সেটি হয় খুব সরল ধরণের। সাধারণত অল্প ও সহজ শব্দ ব্যবহার করে তারা কথা বলার চেষ্টা করে। কেউ কেউ আছে যারা অন্যের সঙ্গে চোখে চোখে রেখে কথা বলে না। নিজেকে সবসময় গুটিয়ে রাখার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে থাকে অটিজমে ভোগা শিশুরা। অতিরিক্ত জেদীও হয়ে থাকে এদের কেউ কেউ।

নানারকম অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় অটিজমে ভোগা মানুষগুলো। ছবি: সংগৃহীত

বস্তুত, অটিজমে ভোগার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ নেই। গবেষকরা অবশ্য মনে করেন, জেনেটিক, নন-জেনেটিক ও পরিবেশগত প্রভাব অটিজমের জন্য দায়ী। শিশুর বিকাশে প্রাথমিক পর্যায়ে এটি সৃষ্টি হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে পরিচর্যাই এর একমাত্র চিকিৎসা।

বিশ^ ব্যাপী প্রচুর অটিজম স্পেকট্রাম ডিজঅরডার সম্পন্ন মানুষ দেখা যায়। বাংলাদেশে প্রতি এক হাজার জন শিশুর মধ্যে দুই জন শিশুর অটিজম দেখা যায়। গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে এদেরসংখ্যা বেশী। অন্যদিকে কানাডার চিত্রটি হলো এখানকার জনসংখ্যার প্রায় ১-২% লোক অটিজমে ভোগে। কানাডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নাল এর তথ্য এটি। এই অ্যাসোনিয়েশনের তথ্যমতে কানাডার অন্টারিওতে প্রায় এক লক্ষ পয়ত্রিশ হাজার লোক রয়েছে যারা অটিজমে ভুগছে।

দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো, এই অটিজমে ভোগা মানুষদেরকে অধিকাংশ লোক সহজভাবে নিতে পারে না। কতকটা ভয়ে আবার কতকটা নানান কুসংস্কারের কারণে এদেরকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে অধিকাংশ মানুষ। কখনো কখনো নির্দয় আচরণও করে থাকে কেউ কেউ এদের সঙ্গে। অনেকে এ ধরণের শিশুর সঙ্গে নিজেদের শিশুকে মিশতে দেয় না। এসব কারণে অটিজমে ভোগা শিশুদের বাবা মায়েরাও সবসময় থাকেন একটা আশঙ্কার মধ্যে। কারণ কখন কোন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় কে জানে।

নানারকম অধিকার থেকেও বঞ্চিত হয় এই অটিজমে ভোগা মানুষগুলো। সম্পত্তি, আদর-ভালবাসা, আনন্দ উৎসবসহ আরো অনেক কিছু থেকেই তাদেরকে দূরে ঠেলে রাখার একটা প্রবণতা সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত বাবা-মা অথবা ভাই-বোন ছাড়া আর কেউই তাদের সঙ্গে মিশতে চায় না। এগুলো স্পষ্টতই অটিজমে ভোগা মানুষদের মানবাধিকার লংঘন।

জাতিসংঘ এই ধরণের মানবাধিকার লংঘনের বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংস্থাটি চায় অটিজমসহ সব ধরণের পঙ্গুত্ব সম্পন্ন মানুষের মানবাধিকার যাতে রক্ষা পায়। তারা যেন চিকিৎসা পায়, যত্ন পায় এবং নিজেদেরকে পরিপূর্ণ ভাবে বিকশিত করতে পারে।

এই দিবস পালনের আরো উদ্দ্যেশ্য হলো, যাদের অটিজম আছে তাদেরকে যেন অন্যেরা স্বীকার করে নেয়, নিজের করে নেয়। তাদের জন্য যাতে এমন পরিবেশ তৈরী করে যার ফলে এই মানুষগুলো সাধারণের চেয়ে ভিন্নধরণের বৈশিষ্ট্য থাকা সত্বেও সবার সাথে একাত্ম হতেপারে। তা হলেই তারা সমাজে অবদান রাখতে পারবে।