মনের আয়নাতে
সাইদুল হোসেন
বাঙালির সংস্কৃতি ও নদী
নদীমাতৃক দেশ আমাদের বাংলাদেশ। মানবদেহের অগণিত শিরা-উপশিরার মত অগণিত নদী আমাদের দেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে। কোন কোন হিসাব মতে বাংলাদেশে নদী-শাখানদীর সংখ্যা প্রায় ২৩০টি। এই নদী যেমন শস্য উৎপাদন, চলাফেরা, দেশের এক অংশের সঙ্গে অন্য অংশের বাণিজ্যিক যোগাযোগ, বছরব্যাপী পানীয় জল, মাছ ইত্যাদি জোগায়, ঠিক তেমনি নদী বাঙালির সাংস্কৃতিক জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িতও বটে। বাংলা গানে, কবিতায়, উপন্যাসে, গল্পে দেশের বিভিন্ন নদীর উল্লেখ দেখা যায় বারবার। নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মতই স্বাভাবিকভাবে নদীর নাম উচ্চারিত হয় বাঙালির কথায়, গানে। শুধু বর্তমানেই নয়, সুদূর অতীতেও হতো। ভবিষ্যতেও হবে।
পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, কর্ণফুলি, শংখ, বুড়িগঙ্গা, কালীগঙ্গা, সুরমা, খোয়াই, তিতাস, আত্রাই, ধরলা, টাংগন, করতোয়া, মধুমতি, ধলেশ্বরী, কীর্তনখোলা, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি, জলসিঁড়ি কত সুন্দর সুন্দর কাব্যময় সব নাম। কোনটা বা খরস্রোতা, ধ্বংসলীলা ডেকে আনে নদীতীরে বসবাসকারী জনগোষ্ঠির জীবনে। খরস্রোতা পদ্মার ভাঙ্গনে তার তীরস্থ বহু ঐতিহাসিক কীর্তি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার কারণে সেই নদীর অপর নামই তো কীর্তিনাশা। বেশীর ভাগই অবশ্য ধীরস্রোতা।
নদীকে, নদীতীরস্থ জনগোষ্ঠীর জীবনের হাসিকান্না, মিলন-বিরহকে কেন্দ্র করে বাংলা সাহিত্যে রচিত হয়েছে বিখ্যাত সব উপন্যাস : পদ্মা প্রমত্তা নদী, পদ্মা নদীর মাঝি, তিতাশ একটি নদীর নাম। পদ্মা নদীর মাঝি (মাণিক বন্দোপাধ্যায়) অবলম্বনে একই নামে বাংলা চলচ্চিত্রও তৈরী হয়েছে ইতিমধ্যে। আর গানে-কবিতায় তো অজস্রবার উল্লেখ করা হয়েছে কোন না কোন নদীর নাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত কবিতা ‘ভারত ভাগ্যবিধাতা’ (যার খানিকটা অংশ আমরা ছেলেবেলায় প্রাইমারী স্কুলে অ্যাসম্বলীতে গাইতাম) সেখানে তো গঙ্গা ও যমুনা নদী অমর হয়ে আছে। গানের দু’টি লাইন ছিল : পাঞ্জাব-সিন্ধু-গুজরাট-মারাঠা-দ্রাবিড়-উৎকল-বঙ্গ,
বিন্ধ্য-হিমাচল-যমুনা-গঙ্গা উচ্ছল জলধি তরঙ্গ।
নদীর নাম বারবার এসেছে কাজী নজরুল ইসলামের গানেও। দু’একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে।
(ক) গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা কাবেরী যমুনা ঐ,
বহিয়া চলিছে আগেরই মতন, কইরে আগের মানুষ কই।
(খ) পদ্মার ঢেউ রে,
মোর শূণ্য হৃদয় নিয়ে যা, য্যারে
পদ্মার ঢেউ রে।
(গ) বন বিহঙ্গ যাওরে উড়ে মেঘনা নদীর পাড়ে,
দেখা হইলে আমার কথা কইয়ো গিয়া তারে।
আধুনিক কালের (ভূপেন হাজারিকা) একটি অপূর্ব সুন্দর গান : গঙ্গা আমার মা, পদ্মা আমার মা,
আমার দুই চোখে দুই জলের ধারা
মেঘনা যমুনা।
মনে পড়ছে বাংলাদেশের অতি মধুর, অতি পরিচিত কিছু গান :
(ক) এই পদ্মা, এই মেঘনা / এই যমুনা, সুরমা নদীতটে/
আমার রাখাল মন গান গেয়ে যায়/ আনন্দ-বেদানায় মিলন-বিরহ সঙ্কটে।
(খ) পদ্মা-মেঘনা-যমুনা
মাতৃভূমির সীমানা।
(গ) নদীর কূল নাই কিনার নাই, নাইকো দরিয়ার পাড়ি…
(ঘ) নদীর একূল ভাঙ্গে ওকূল গড়ে, এইতো নদীর খেলা…
(ঙ) ও নদীরে, একটি কথা শুধাই তোমারে…
(চ) গহীন গাঙের নাইয়া…
পৃথিবীর প্রতিটি দেশেই নদীকে ঘিরে তাদের জাতীয় সংস্কৃতি প্রতিফলিত হচ্ছে। সুখ এবং দুঃখ, ভাঙ্গা এবং গড়া সব দেশের নদীরই স্বাভাবিক প্রকৃতি।
আমাদের বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। নদী-প্রভাবিত গান আমাদের বাংলা সংস্কৃতির কোন একক প্রতিফলন নয়। তাই চীনের দুঃখ হোয়াংহো নদী, মিশরের জীবন-দায়িনী নীলনদ দু’টি বিপরীতধর্মী প্রকৃতির হলেও উভয় দেশের লোকই তাদের ভালবাসে। আমরা বাঙালিরাও ‘কীর্তিনাশা’ নদীকে যেমন ভয় করি, মেঘনা তিতাসকেও তেমনি তাদের শান্ত স্বভাবের জন্য ভালবাসি। আমাদের সংস্কৃতি নদীর কর্মকান্ড দ্বারা আহবমান কাল ধরে প্রভাবিত হচ্ছে যেমন ভবিষ্যতেও হবে তেমনি।
Bible Church Garage Sale
অতীতের প্রতি বছরের মত এবারো আমাদের সিনিয়র সিটিজেন্স রেসিডেন্স বিল্ডিংয়ের পেছনের রাস্তার ওপারে Christian Church অংগনে garage sale অনুষ্ঠিত হলো। প্রতি বছরই জুন মাসের তৃতীয় সপ্তাহে শনি অথবা রবিবার এই গ্যারাজ সেইলের জমজমাট মেলাটা বসে। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত চলে। প্রয়োজনীয় এবং fancy সব ধরনের জিনিসেরই দেখা মেলে সেখানে। বিরাট এলাকাজুড়ে বহু নারীপুরুষ বিক্রেতা (Vendors) তাদের অপ্রয়োজনীয় নূতন এবং পুরাতন সব ধরনের household materials নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে তারা তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার (জঞ্জালমুক্ত) করে, এদের ভাষায় declutter করে। বিক্রি করে তারা লাভের জন্য নয়, কম মূল্যে দিয়ে স্বল্প আয়ের ক্রেতাদের সাহায্য করাটাও একটা উদ্দেশ্য বটে। Garage sale or Yard sale is a long-standing tradition in Canada and in the US.
স্বামীস্ত্রী আমরা বরাবরের মত এবারো সকাল ১১টার দিকে গ্যারাজ সেইল দেখতে গেলাম এবং আমার স্ত্রী বরাবরের মতই প্রাণ ভরে তার পছন্দের সব জিনিসপত্র কিনলেন। আমি কিনলাম চমৎকার একটা বেডসাইড টেবিল ল্যাম্প (bulbসহ) মাত্র পাঁচ ডলার দিয়ে। দু’জনেই জিনিসপত্র নিয়ে আনন্দিত মনে ঘরে ফিরে এলাম।
এবার সেখানে সদ্যলব্ধ আমার একটা অভিজ্ঞতার কথা শোনাই।
চার্চের দুই কর্মী (নারী ও পুরুষ) চার্চের সামনে বড়বড় দু’টি টেবিলের উপরে বাইবেল, বাইবেল লিটারেচার এবং খৃষ্টান ধর্মের প্রতীক নানা সামগ্রী display করেছেন। ওদের আমি যথারীতি গুড মোর্নিং জানালাম। সাজানো বইপত্রের মাঝে একটা brochure আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো : JESUS AND THE QURAN, compiler Joseph P. Gudel. বেশ কিছু কপি রাখা আছে দেখে দু’টি কপি উঠিয়ে নিলাম।
সেটা দেখে চার্চের পুরুষ কর্মীটি আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলেন : “MUSLIM?”
বললাম : “Yes.”
দ্বিতীয় প্রশ্ন : “SHIA OR SUNNI?”
বললাম : “SUNNI.”
তৃতীয় প্রশ্ন : “What do you think about Jesus? Do you believe he is the Son of God? The Saviour?”
বললাম : “No. What we Muslims believe (from our religious Scripture, the Holy Quran) is that Jesus was a great Prophet, born to Mary in a miraculous way without a human father, according to Allah’s wish. He performed many miracles. Jesus was not crucified or killed, Allah raised him up to Him in the Heavens.”
চতুর্থ প্রশ্ন : “How old are you, if I may ask?”
বললাম : ”I turned 90 in March 2023.”
শুনে বললো : “Wow”
পঞ্চম প্রশ্ন : “How is your health?”
বললাম : “Very painful life. I have severe arthritic pain in my lower back and in both the knees. Can’t move around without the help of a walker, as you can see. Every movement is painful.”
ষষ্ঠ প্রশ্ন : “Would you mind if I pray for you to our Saviour Jesus and our Father, the God?”
হেসে বললাম : “No. Go ahead if you so wish.”
সপ্তম প্রশ্ন : “What’s your name?”
বললাম : “SAYED.”
তখন সে তার দু’টি হাত জোড় করে অর্ধনীমিলিত চোখে এই প্রার্থনাটি করলো : “O our Father in Heaven, please have mercy on SAYED, remove his pains and give him patience to endure. Amen..”
ওর সংগে সংগে আমিও বললাম, “Amen”. তারপর তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় নিলাম।
জুন ২৫, ২০২৩
You SAMUEL. Right?
সন্ধ্যার আগে আমাদের সিনিয়র রেসিডেন্টস্ বিল্ডিংয়ের মেইন এনট্রান্সের সামনের বিরাট বকুল ফুল গাছটার নীচে আমার ওয়াকারের সীটে বসে ফ্রেশ এয়ার নিচ্ছিলাম। এমন সময় আমাদের এই বিল্ডিংয়েরই রেসিডেন্ট পূর্বপরিচিতা এক বৃদ্ধা আমার পেছনে দাঁড়িয়ে আমাকে প্রশ্ন করলো, “You Samuel. Right?”
হেসে জবাব দিলাম, “No. I am Sayed.”
আমার জবাব শুনে সেও হেসে দিল। বললো, “Sorry, I could not remember your name correctly. Now I remember. SAYED. Right?”
বললাম, “Yes, right.”
তারপর সে বললো, “তোমাকে তো সেদিন বলেছিলাম যে আমি আমাদের Russian and Ukrainian names ছাড়া অন্য ধরনের নাম মনে রাখতে পারি না। মনে আছে?”
বললাম, “মনে আছে। আমাকে Samuel নামে ডাকাতে আমি কিছু mind করিনি। Don’t worry.”
এবার শুনুন আগের দিনের কাহিনী।
আজকের মত সেদিনও এই বৃদ্ধার সংগে দেখা ও পরিচয় এই বকুল গাছ তলাতেই। আমি আমার ওয়াকারের সীটে বসে ফ্রেশ এয়ার নিচ্ছিলাম।
এই বৃদ্ধা এসে বললো, “তোমার সামনের এই বেঞ্চটাতে বসে একটু বিশ্রাম নিই। ওকে?” বেঞ্চে বসে বললো, “আমার নাম OLGA. আমি একজন Ukrainian. আমরা পাঁচ তলায় থাকি।”
তারপর জানতে চাইলো আমার নাম, আমি কোন দেশের লোক, কোন ভাষায় কথা বলি। বললাম, “আমার নাম সাইদ (SAYED), আমরা বাংলাদেশের লোক, বাংলা ভাষায় কথা বলি। তবে বুঝতেই তো পারছো ক্যানাডায় বাস করি, এখন ইংলিশ বলি যেমন তোমরাও বল।”
শুনে বললো, “হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছো। আমরাও এখন Ukrainian language কমই বলি, English-এ অভ্যস্থ হয়ে গেছি। না হয়েও উপায় ছিল না। বহুদিন আগে আমরা স্বামীস্ত্রী দেশ ছেড়েছি, ক্যানাডার সিটিজেন হয়েছি। কাজকর্ম করেছি। ছেলেমেয়েরা জন্মেছে এদেশে, ওরা তো ক্যানাডিয়ান। শিক্ষা-সংস্কৃতি-মেন্টালিটি সবই ওদের ক্যানাডিয়ান। বড় হয়েছে, আমাদের কোল ছেড়ে নিজেদের পরিবার গড়ে তুলেছে। সুখেশান্তিতেই আছে। তবে সুখের কথা এই যে ওরা আমাদের ভুলে যায়নি, নিয়মিত আসে-যায়, খবর নেয়। নাতি-নাতনিরাও grandpa-grandma-কে ভালোবাসে।”
“তেমন কোন মোটা বেতনের জব করতে পারিনি, তাই বাড়িগাড়ি কিনতে পারিনি। বাসে চড়েই চলাফেরা করি। প্রয়োজনে ছেলেমেয়েরা ride দেয়। সরকারী বাসস্থানে কম ভাড়ায় বসবাস করছি। ভালোই আছি। Thank God.”
একটু হেসে দম নিয়ে আবার শুরু করলো Olga.
“কোন সমস্যা ছিল না। কিন্তু এই তো সেদিন বুড়োটা (my old man) বাথরুমে পড়ে গিয়ে ওর hipটা fracture হয়ে গেল। হসপিটালে পাঠাতে হলো। তার hip replacement surgery শেষে ঘরে ফিরে এসেছে। নড়াচড়া করা ডাক্তারের বারণ কিন্তু কথা শুনতে চায় না। অত বড় মানুষটাকে কি আমার এই বুড়ো বয়সে সামলানো সম্ভব?”
“যখন-তখন বেড ছেড়ে এটাসেটা করতে চায়, আমি বারণ করি বলে আমার উপর সেকি রাগ! নিজের ভালোমন্দ বুঝে না, স্বাধীনতা চাই তার। কখনো কখনো ধমক দিই, যা যৌবনকালে দেয়ার সাহস ছিল না,” বলেই হেসে দিল Olga.
এটুুকু বলেই তড়াক করে দাঁড়িয়ে পড়লো, বললো, “না, আর গল্প নয়। অনেকক্ষণ হয়ে গেল। এবার বাসায় যাই। বুড়োটা ইতিমধ্যে কিছু একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে কিনা কে জানে! Bye, Sayed, বলেই সে দ্রুতপদে বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে এলিভেটরের দিকে এগিয়ে গেল।
এতক্ষণ ধরে কান পেতে শুনলাম বহু বছর আগে নিজ দেশ, নিজ সংস্কৃতি ছেড়ে আসা এক ইমিগ্রান্টের ক্যানাডাবাসের অতি পরিচিত কাহিনী। OLGA’র সরলতায় আমি মুগ্ধ।- জুন ২৯, ২০২৩
এরাই কি আমার মায়ের পেটের ভাইবোন?
বহুদিন পর এক বন্ধু এসেছিলেন গতকাল বেড়াতে। বেশ কয়েকটা ঘন্টা আনন্দে কাটালাম আমরা অতীত-বর্তমান ও অজানা ভবিষ্যৎ নিয়ে স্মৃতিচারণ এবং মতামত বিনিময় করে। স্মরণীয় দিন একটা আমার জন্য।
সবই ঠিক ছিল। কিন্তু যাবার আগে তিনি তার নিজের বঞ্চনার যে কাহিনীটি শুনিয়ে গেলেন তাতে আমি মর্মাহত। এমনটাও সম্ভব?
বন্ধু আমার ক্যানাডাবাসী সপরিবারে বহুযুগ ধরে। চাকরি-বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত। সচ্ছলতা আছে জীবনে। স্ত্রীপুত্র পরিবার নিয়ে সুখেই আছেন, কিন্তু মনে বড় দুঃখ। জ্বালা। আপনজনের বিশ্বাসঘাতকতা তার হৃদয়কে খন্ডবিখন্ড করে দিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না কিছুতেই যে তার আপন ভাইবোনদের দ্বারাই এটা সংঘটিত হয়েছে।
ঘটনাটা এই।
তিনি একজন ধনী পিতার সন্তান যাঁর ছিল প্রচুর জায়গাজমি। বন্ধুটি প্রথম সন্তান। মা-বাবা বেঁচে নেই। তিনি নিজে ক্যানাডাতে কাজকর্ম নিয়ে উদয়াস্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে গিয়ে নিজের জায়গাজমির খোঁজ নেয়ার মত ফুরসৎ নেই। তাছাড়া ভাইবোনেরা তো আছে দেশে, রক্ষণাবেক্ষণ তো ওরাই করবে। মনে মনে এই আস্থা।
তবে অতিসম্প্রতি দেশে গেলেন। কিন্তু গিয়ে যা দেখলেন এবং শুনলেন তাতে তিন স্তম্ভিত, মর্মাহত। পৈত্রিক সম্পত্তির তার অংশটুকু তার ভাইবোনেরা জাল বিক্রির দলীলের মাধ্যমে ও সাবরেজিষ্ট্রার্স অফিসের অসাধু কর্মচারীদের যোগসাজসে তাদের কাছে বিক্রি দেখিয়ে সম্পূর্ণটাই আত্মসাৎ করে নিয়েছে! এখন তার অংশ বলে কিছুই অবশিষ্ট নেই! সবই তাদের দখলে।
বহু তদবির, বহু দেন-দরবার করেও কোন ফায়দা হলো না। সাবরেজিষ্ট্রার্স অফিস তাকে তার সই করা (ভূঁয়া সই/false signature) দলীল দেখিয়ে তার সব আপত্তি নাকচ করে দিল। তিনি বাক্যহারা হয়ে নীরবে সেই অফিস থেকে বের হয়ে এলেন।
তিনি লক্ষ্য করলেন যে এত বড় জঘন্য একটা জালিয়াতির অপরাধ করেও তার ভাইবোনেরা নির্বিকার, যেন কিছুই ঘটেনি। বুকভরা কষ্ট ও বেদনা নিয়ে ক্যানাডায় ফিরে এলেন। তবে মনে শুধু একটা প্রশ্নই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে ঃ এরাই কি আমার মায়ের পেটের ভাইবোন?
জুলাই ২, ২০২৩
Negative Energy
একজন ভিজিটর এসেছিলেন আজ দুপুরে। লাঞ্চ করে কিছুক্ষণ গল্প করে বিদায় নিলেন। তিনি সংগে নিয়ে এসেছিলেন একটা pot-এ সুন্দর দু’টি orchid. Violet color. লিভিংরুমের সেন্টার টেবিলে একটা flower vase-এ সেটাকে সাজিয়ে রাখলেন আমার স্ত্রী। Orchid তার অতি প্রিয় ফুল। প্রায় সারাটি বছর ধরেই নানা রংয়ের orchids তিনি কিনে আনেন। যত্ন নেন, বহুদিন আমাদের ঘরের শোভা বর্ধন করে সেগুলো।
কিন্তু আমাদের ভিজিটর মহাশয় শুনিয়ে গেলেন ভিন্ন কথা। তিনি জানালেন যে তাদের বাড়িতে orchid-এর প্রবেশ নিষেধ, কারণ তার স্ত্রীর অভিমত হচ্ছে, ”Orchids spread negative energy. Presence of orchids around me makes me sad, lethargic and spiritless. I don’t like them.”
So no orchids for our home”, বলে থামলেন তিনি।
ফুলের negative energy? নূতন কথা শুনলাম আজ।
সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
“মাকে ভুলতে চাই না।”
বিধবা মা। বয়স ৮৪-৮৫ বছর। দুই ছেলে এবং এক মেয়ে। সবারই বয়স ৫০-এর উর্ধে। সবাই জীবনে আপন আপন ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত, নিজেদের বাড়িগাড়ি, সম্পদ সবই আছে। সুখ সর্বত্র বিরাজমান।
বড় ছেলের দুই মেয়ে। ছোটটার নাম রেখেছে সে ওর মায়ের নামে। ঐ নাম ধরেই ঘরে এবং আত্মীয়স্বজন ডাকে ওকে।
নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে গিয়েছিলাম ওদের বাড়িতে গতরাতে। কথা প্রসংগে মেয়েটার বাবাকে প্রশ্ন করলাম,
“ভাগ্নে, বলতো দেখি, তোমার ছোট মেয়েটার নামটা তোমার মায়ের নাম কেন রেখেছো?”
ভাগ্নে জবাব দিল, “মাকে ভুলতে চাই না। মা তো বৃদ্ধ হয়ে গেছে, সে কোন দিন মরে যাবে। তার অবর্তমানে ব্যবহারের অভাবে সেই স্নেহময়ী মায়ের নামটা ক্রমে আমরা ভুলে যাবো। এই তো জগতের রীতি।”
“কিন্তু আমি মাকে এত সহজে, এত দ্রুত ভুলতে রাজী নই। তাই ছোট মেয়েটার নামটা রেখেছি মায়ের নামে। সে অনেকদিন বেঁচে থাকবে আমার মায়ের মৃত্যুর পরও। ওকে মায়ের নাম ধরে দিনরাত আমরা ডাকবো, আত্মীয়-স্বজনরাও ডাকবে, বারবার মাকে মনে পড়বে। মা আমার স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাবে না।”
শুনে বললাম, “চমৎকার সিদ্ধান্ত। ধন্যবাদ।”
সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২৩
বাতাসে গিরো দেয়া
কথাটা আমার কাছে একেবারেই নূতন, স্ত্রীর মুখে শোনা। এর আগে শুনিনি কোনদিন।
জিজ্ঞাসা করলাম, “বাতাসে গিরো দেয়া” কথাটার অর্থ কি?”
সে জানালো যে এর অর্থ হলো কারো বিরুদ্ধে কাল্পনিক, ভিত্তিহীন অভিযোগ তোলা।
তারপর সে তার এক নিকটাত্মীয়ের নাম ধরে বললো, “সে ঘনঘনই ওর আত্মীয়-স্বজনদের সংগে কিছু দিনের জন্য সম্পর্ক ছিন্ন করে বাতাসে গিরো দিয়ে। এটা ওর খুবই একটা নিন্দনীয় স্বভাব।”
বললাম, “এবার বুঝেছি। ধন্যবাদ।”
সেপ্টেম্বর ১০, ২০২৩
Big Dadu &
Small Dadu!
আমাদের এক নিকটাত্মীয়র ছেলের দু’টি মেয়ে- ১২ এবং ৭ বছর বয়স। টরন্টো সিটিতে জন্ম। চার-পাঁচ বছর পর দেখা তাদের সংগে। কথা প্রসংগে জানতে চাইলাম, “মামা, আপনাদের নাতনিরা আপনাদের কি বলে ডাকে? দাদা-দাদী?”
মামা বললেন, “না। ওরা আমাকে ডাকে Big Dadu এবং আমার স্ত্রীকে ডাকে Small Dadu. এমন অদ্ভুত ডাক কেন সেটার কারণ অজ্ঞাত। আমার ছেলে বা বৌমা কোন বাধা দেয় না অথবা আপত্তিও করে না। আমরাও কোন আপত্তি করি না। মেনে নিয়েছি। বাচ্চা দু’টি খুশী থাক।”
একেবারেই নূতন ধরনের ডাক। আজব দুনিয়া বটে! নূতনত্বের কোন শেষ নেই। (সমাপ্ত)
সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩
সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা