ডোমেনিকান রিপাবলিক
রোজানা নাসরীন
ডোমেনিকান রিপাবলিকের পোরটপ্লাটা এয়ার এসে নেমেই মনে একটা আনন্দ উচ্ছ্বাস খেলে গেল কারণ টেম্পারেচার এখানে অসম্ভব সুন্দর। টেম্পারেচার দেখে মনে হল পৃথিবীর যদি এত বৈচিত্রময় না হত তাহলে মানুষ হয়ত আরও অলস হয়ে যেত। কারণ কেউ বাড়তি কাজ করে টাকা উপার্জন করে এক দেশ থেকে অন্য দেশে যাওয়ার জন্য যদি এত আয়োজন না করত তাহল একই দেশে তাদের জীবন কেটে যেত। এখন ডিসেম্বর মাস। কানাডায় এখন শীতল আবহাওয়ায় মানুষের বাইরের জীবন গুটিয়ে ফেলেছে, এই সময় অত্যন্ত জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাইরে ঘোরার কথা ভাবে না, কাজে যাওয়া ছাড়া। কানাডাতে রোদহীন অবস্থার পাকে পড়ে ঘরের মধ্যে থাকার পালা শেষ হয়েছে আজ তাই মনে একধরণের স্ফূর্তি খেলা করছে। প্লেনে উঠতেই সকল শীতের কাপড় খুলতে খুলতে একেবারে সামারের পোশাকে সবাই যেন আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠল। প্লেনে একটা শ্রীলঙ্কান ফ্যামিলি ও আমরা দুজন মিলে চারজন একই সঙ্গে ছিলাম, আমি, আমার হাজবেন্ড, রেকর্ড অব ব্রোকার জয়শ্রী এবং তাঁর স্ত্রী পেরি। মনে হল যেন আনন্দের আতিশয্যে আমরা ভেসে যাচ্ছি। এয়ারপোর্টটি দেখে মনে তেমন নতুন কোন চমক বা আন্দোলন তুলল না হৃদয়ে, মনে হল সকল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এমন সাজানো গুছানো থাকে, তাছাড়া আমরা এসেছি ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড থেকে হয়ত তাই আমাদের মনে তেমন কোন ছায়া ফেলতে পারছে না এয়ারপোর্টের চিত্র। তবে এয়ারপোর্টে নেমে সেখানের সমাজ মানসের প্রথম চিত্র আমার মনে গেঁথে থাকল। ট্যাক্সি ভাড়া আমরা বিদেশি বলে অতিরিক্ত বলল না, যেটা বাংলাদেশে আমি দেখেছি, এবং সবাইকে অনেকটা বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের বলে মনে হল। কিন্তু আমার হৃদয়ে একটা কথা খেলে যাচ্ছে, এটা হয়ত এয়ারপোর্টে বিদেশীদের সাথে এদেশের মানুষের এমন ব্যবহার। কিন্তু কোথাও ওদেরকে আমাদের জন্য অতিরিক্ত হার্মফুল মনে হয়নি। তারপরও আমি সতর্ক থাকলাম। কিন্তু আমার মনের ভেতরে একটা প্রশ্ন তা হল ট্রপিকাল কান্ট্রিতে মানুষের বাস অনেক সুবিধাজনক, জীবনের কতগুলি বাড়তি কষ্ট দেশের লোকগুলোকে ভোগ করতে হয় না, কিন্তু শীতের দেশের মানুষের জীবনে বেঁচে থাকা অপেক্ষাকৃত কষ্টকর, তা সত্ত্বেও কেন শীতের দেশে ট্রপিকাল কান্ট্রি গুলোর ধনী, এবং জ্ঞানবিজ্ঞান আর সভ্যতায় কেন তারা অগ্রসর হয়ে প্রথম বিশ্ব বলে স্বীকৃত?
কিছু কিছু নাতিশীতোষ্ণ দেশ হয়ত ধনী হয়েছে কিন্তু এর মধ্যে প্রায় দেশই তাদের সমাজ মানসকে উন্নত করতে এখনও ব্যর্থ হচ্ছে? এই ভাবনা নিয়েই চলতে থাকলাম। চারিদিকে চোখ পড়ল চরম উৎসাহ নিয়ে। মন ছুটতে থাকল। মনে হল ছোট বেলায় একটা কথা শুনেছি ‘শহর হল মানুষের গড়া আর প্রকৃতি ও গ্রাম হল ঈশ্বরের সৃষ্টি।’ তখন থেকেই আমার মনে প্রশ্ন ছিল- যে প্রকৃতি মানুষের দ্বারা শাসিত তাকে কী বলা হয়? যদিও দেশটিতে সমাজতন্ত্র নেই তবু কোন মানুষকে অতিরিক্ত ধার্মিক ও অর্থলিপ্সু মনে হয়নি। বেশিরভাগ মানুষ এখানে তিন ভাগে বিভক্ত, সাদা, কাল ও বাদামী। তবে বেশিরভাগ কাল মানুষের বাস এখানে যাকে আমরা ক্যারেবিয়ান আইল্যান্ড বলে চিনি, তবে সাদা মানুষের প্রাধান্যও কম নয়। তাদের ভাষা স্প্যানিশ, কেউ এই ভাষার বাইরে কথা বলে না। তবে ইংলিশ সেখানকার শিক্ষিত মানুষেরা কেউ কেউ ভাল জানে এবং আমরা ইংলিশ ভাষী বলে বিদেশীদের সাথে তারা অনেকেই ইংলিশে কথা বলে। আমার মতে ইংলিশ বলাকে ভাষার শাসন বলা যাচ্ছে না, এটা একটা বৈচিত্র, কারণ ইংলিশ ভাষায়ই রচিত হয়েছে যত বই, যত জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং এই ভাষার মানুষেরাই মানব জীবনের মূল্যবোধকে সার্বজনীন ও সর্বজনগ্রাহ্য করে তুলেছে, যদিও এর পেছনে অনেক রাজনীতি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে, তবু এই ভাষাকেই আমরা বড় বলে এখনপর্যন্ত জানি এবং মানি।
প্রথমদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গেছে ডাহুকের ডাকে। ঘুম ভাঙ্গার প্রক্রিয়ায় নিজেকে অনেকটা রোমাঞ্চিত মনে হচ্ছিল। মনে হয়েছিল কোন যেন দেশে আছি যেখানে আছে শুধু প্রাকৃতিক শান্তি যা এখন শহরে নেই বলে আমার ধারণা ছিল। কিন্তু এদেশে প্রভিন্সিয়াল শহরেও এই পরিবেশ টিকে আছে, তাহলে আমার এতদিন ধরে লালিত বিশ্বাস কি অমূলক? কারণ ডাহুকের ডাক শুনে আমার বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে গেল, ওখানে একটা শহরে আমার জন্ম ও বেড়ে উঠা। তারপর রাজধানীর বুকে কেটেছে জীবনের সবকিছু সম্পর্কে শিক্ষা গ্রহণ করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থাৎ আমার যৌবনের প্রারম্ভ থেকে অনেক সময়। ছোটবেলার জীবনটা মানুষের জীবনে অনেক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ, আমার যে শহরে ছোট বেলা কেটেছে ওখান থেকে আমাদের গ্রামের দূরত্ব ছিল হয়ত সহনীয়, কিন্তু বিভিন্ন কারণে কখনো গ্রামে যাওয়া হয়নি বলে ডাহুকের ডাকও শোনা হয়নি তেমনটি। আমার বাবাও অতি ছোট বয়সেই গ্রাম ছেড়ে শহরে পারি দিয়েছিলেন, যার জন্য গ্রামের সাথে তাঁরও ঘনিষ্ঠতা গড়ে ওঠে নি। হয়ত সেটাও একটা বড় কারণ হতে পারে। কিন্তু যখন এক নাম না জানা পোকারা সারা রাত ধরে ঘুমের নূপুর বাজিয়ে ঘুম পড়িয়ে দিল তখন এই শহরকেই আমার স্বর্গ মনে হচ্ছিল, ওটা ছিল ডোমেনিকান রিপাবলিকের একটা প্রভিনন্সিয়াল শহর। হয়ত একবার গ্রামে কি কারণে গিয়েছিলাম মনে নেই যেসময় এই ডাক শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল, সেই সময় ডাহুকের ডাক শুনে ঘুম ভাঙ্গত কিন্তু তখন ছোট ছিলাম বলে এত সুখ অনুভূত হয়নি, মনে হয়েছিল এই ভীতিকর পাখিটা কেন ডেকে ডেকে ভীতি ছড়াচ্ছে? আজ সেই ভয়টা সুখের অনুভূতিতে পরিবর্তিত হয়েছে। এই ভীতিটা হয়ত আমাদের কালচার থেকে আগত। তেলাপোকা দেখলে মেয়ে মানুষ ছোট হোক আর বড় হোক তারা ভয় পায়, বিশেষ করে আমাদের সমাজে। আমি এ নিয়ে ভেবেছি অনেক। বেগম রোকেয়ার আমলে হয়ত ভয় পাওয়ার সিস্টেম আরও অনেক ভাবে পরিলক্ষিত হত বলে তিনি একথা লিখেছেন। তখনই সেই কথা আমার মনে পড়ে গিয়েছিল, যখন ভয় পেতে দেখেছিলাম একটি মেয়েকে, মনে মনে তখন মেয়েটিকে ঘৃণা করেছিলাম, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যই সেই ঘৃণা উবে গিয়ে শিক্ষিত সেই মেয়েটির কথা ভেবে করুণা হয়েছিল। এই ভয় পাওয়ার উত্তর পাই সমাজের কাছে। অকারণে ভয় না পেলে নাকি আমাদের দেশে মেয়েদেরকে মেয়ে হিসেবে গণ্য করা হয় না। যদিও এই কথা সমাজের উহ্য রীতি বলে অনেকে এর বিরোধিতাও করবেন। কিন্তু আমি হয়ত ছোট থাকার কারণে ভয় পেয়েছিলাম আর অনভিজ্ঞতার কারণে, হয়ত কোন রকম কালচারাল বা মানসিক সমস্যার কারণে নয়। জীবনানন্দ দাশ এই ডাহুকের ডাককে উপভোগ করার কথা বলেছেন। তিনি আমাকে চিনিয়েছিলেন ডাহুকের সেই প্রাণ উতলা করা ডাক। এতদিন ভুলে ছিলাম সেই ডাহুকের ডাক কিন্তু হঠাৎ করে পরিণত বয়সে এসে আমার ভুবনকে ভাবালু করে তুলল সেই ডাহুকের ডাক। মনে হয়েছিল সেই কথা, ‘আমি তার বাঁশী শুনেছি তারে চোখে দেখিনি।’ যতই ভুলতে চেষ্টা করেছি আরও বেশি বেশি মনে হয়েছে রবীন্দ্রনাথের সেই কথাটি,
“দেখা হয়নি চক্ষু মেলিয়া ঘর থেকে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শীষের উপরে একটি শিশির বিন্দু”
আমাদের দেশের কথা মন জুড়ে ঘুরতে থাকে, সুযোগ পেলেই সে সামনে চলে আসে তেমনি করে তখন মনে হয়েছিল আমদের দেশের শহরগুলিতে কখনো ডাহুকের ডাক শোনা যায়না, এটি গ্রামের অভিজ্ঞতা। অনেকে গ্রাম্যতাকে সবার সামনে বলতে দ্বিধা করেন না, আবার অনেকে করেন। অনেক বাঙালিকে দেখেছি উন্নত দেশে গিয়ে নিজের পরিচয়কে লুকাতে, এবং নিজেকে সংস্কারবাদী ভাবতে গিয়ে সে নিজেকে ভারতীয় মানুষ বলে পরিচয় দেয়। তাহলে হয়ত মানুষ ভাববে কতটুকু কালচারড সে। অনেকে তাদের ঘৃণা করে কিন্তু আমার ভাবনাটি আর একটু ভিন্ন রকম। আমি ভাবছি গ্রাম ও শহরের কালচারাল অভিব্যাক্তি কোন দেশে কেমনভাবে বিরাজমান এই নিয়ে। আমদের দেশ আর বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর অবয়ব সম্পূর্ণ আলাদা সেটা আমরা সবাই জানি ও মানি। সামাজিক সংস্কারও এত আলাদা যে আমাদের আধুনিকত্ব কাজে আসে না, উন্নতদেশে প্রথম এসে নিজেকে অনেকটা অসহায় মনে হয়, যা ওদের আইন কানুন দেখে খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যায়। আর মনে হতে থাকে এই দেশের সামাজিক নিরাপত্তা কতখানি সমৃদ্ধ। হয়ত কেউ কেউ ভাবছেন ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু এইকথাটুকু না বললেই নয়। বাংলাদেশে শহর বলতে বুঝায় ঢাকা শহরকে। ঢাকায় যাদের আসল বাড়ি তারা ভাবে তারাই একমাত্র মানুষ, যারা বাইরে থাকে তারা মানুষ নয়। বাইরে যারা বসবাস করেন তারা অনেকটা হীনমন্যতায় ভোগেন যাদের ঢাকায় বাড়ি আছে এবং বাপ দাদার ভিটা ঢাকায় তাদের তুলনায়। এর কারণ আর্থিক এবং কালচারের একটা পার্থক্য। কিন্তু আসলে মানুষ সবাই এক, এবং কেন সেকথা বলতে গেলে অন্য প্রসঙ্গের আবির্ভাব হয়ে যেতে পারে তাই অন্য সময় আলোচনা করব। আমরা কালচারের ধাপকে পার হতে গিয়ে একটা ধাপে গিয়ে সবাই আটকে যাই যা হল, অন্যকে নিজের চেয়ে ছোট করে মনে মনে ভেবে নেওয়া। এক এক দেশের এক একরকম কালচার থাকে, আমাদের দেশের কালচার এটি। অন্য দেশ নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই বলে অন্য দেশের কথা বলছি না। কালচার; বাঙলা ভাষায় যার নাম হয়েছে সংস্কৃতি। সংস্কৃতির ধারণা সংস্কারের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যার অর্থ জীবন ও সমাজের শুদ্ধিকরণ, পরিশোধন, উৎকর্ষসাধন, উন্নতিবিধান, সৌন্দর্যায়ন। তাই হয়ত সংস্কৃতির একটি অংশ জুড়ে রয়েছে নাচ, গান, কবিতা, গল্প, নাটক ইত্যাদি। ইংরাজিতে পঁষঃঁৎব শব্দটি পঁষঃরাধঃরড়হ শব্দটির সাথে জড়িত, পৃথিবীর মানুষ সর্ব প্রথম চাষাবাদ দিয়েই জীবন শুরু করেছিল তাই মানুষের সকল অগ্রগতির মূলে রয়েছে চাষাবাদ। যাকে কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। এ জন্যই হয়ত ইংরাজিতে কালচার শব্দটি এভাবে যুক্ত হয়েছে। তারপর মানুষের ধারা আজ পর্যন্ত বয়ে চলেছে কত আবিষ্কারের মাধ্যমে তা বলে শেষ করা যায় না। এখন এক এক দেশ এক এক কালচার ধারণ করে আছে। বাংলাদেশের মানুষ হয়ত তাদের কালচাকে বদলাতে চাচ্ছে, তাই তাদের কালচারের একটা বড় আংশ জুড়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকায় রয়েছে ধর্ম। বংলাদেশের মানুষ একে জীবনের অবশ্য পালনীয় কর্তব্য বলে ধরে নিয়েছে, বলে ধর্মীয় সংস্কৃতিই মূল সংস্কৃতি হয়ে উঠেছে ওখানে। এই কারনেই হয়ত মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ‘ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জিত লোকের ধর্ম।’
বাংলাদেশের কথা ভাবলেই ঢাকার অসহনীয় জীবনচিত্র আমাদের চোখে ভেসে ওঠে, যাকে দেশের কালচারের সর্বোত্তম পরিচয় বলে আমরা ভেবে থাকি। অথচ আমাদের প্রিয় ঢাকার রূপ মনে করলেই হৃদয় যেন আঁতকে ওঠে। সেই যানজটের কথা কোনদিনও ভোলা যায় না, আর ঢাকার আবহাওয়াও অনেকটা অসহনীয় হয়ে উঠেছে। এর মূলে রয়েছে ঢাকার জনসংখ্যা। দলে দলে মানুষের ঢাকায় আগমনের আর একটা কারণ কচ্ছে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ঢাকায় অবস্থিত হাসপাতালগুলি। অর্থাৎ স্বাস্থ্যসেবা। বাংলাদেশ সরকার যদিও বলছে স্বাস্থ্য, শিক্ষা সবকিছুর বিকেন্দ্রীকরণ করার কথা, কিন্তু তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এটি করতে হলে জাতিকে সৎ, আন্তরিক এবং জনকল্যাণকর হতে হয়। যদিও অন্যান্য জেলায়ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়েছে, কিন্তু মানুষ ঠিকঠাক ভাবে সেবা পাচ্ছে না, তার উপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ভর্তির প্রস্তুতি স্বরূপ মানুষকে ঢাকায় ভিড় করতে হয়। আর স্বাস্থের জন্য একমাত্র ঢাকাই সর্বোত্তম বলে আমরা জানি। কিন্তু সুস্থ মানুষের ওখানে থাকা মানে মৃত্যুকে হাতছানি দেওয়া যেন। জনসংখ্যার কারণে ওখানে বাতাস ভারী হয়ে গেছে এখন বাতাসে শিশার পরিমাণ এত বেশি যা স্বাস্থের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তবু কালচারড মানুষেরা ঢাকা থাকতে বেশি পছন্দ করেন। একসময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল সহনীয় মাত্রায় তখনো মানুষেরা এসে এভাবে ঢাকায় ভিড় করেনি। এখন জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই কোটির মত। এ নিয়ে আমি কোন ভবিষ্যতবাণী করব না, আমরা শুধু জানি ঢাকাকে বাঁচাতে হবে। দেশের উন্নয়ন শুধুমাত্র ঢাকায় সীমাবদ্ধ না রেখে সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। আধুনিক বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে এগুতে হলে ঢাকা থেকে অন্যান্য জেলাগুলোর কালচারের ব্যবধান অনেকখানি কমিয়ে আনতে হবে এবং মানুষের সুযোগ সবিধা ঢাকার বাইরে সবখানে ছড়িয়ে দিতে হবে। ঢাকায় বসে কেবল ঘুষকে সম্বল করে বেশিদূর আগানো যাবে না, দেশকে বিনাশর্তে ভালবাসতে হবে। দেশকে কে ভালবাসবে তার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলে কেউ ভালবাসবে না। নিজেকেই ভালবাসতে হবে।
ডোমেনিকান রিপাব্লিক হোক আর যে দেশই হোক কোন দেশের কথা বলতে গেলে হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা কথা এভাবেই বেড়িয়ে আসে, তবে ডোমেনিকান রিপাবলিকের প্রসঙ্গেই ফিরতে হচ্ছে আবার। ক্যারাবিয়ান আইল্যান্ডসের একটি বললে হয়ত কেউ কেউ ভাল চিনবেন। ডোমেনিকান রিপাব্লিকের প্রকৃতি অনেকখানি পেছনে ফেলে আসা আমার দেশের মত হয়ত ট্রপিকাল কান্ট্রি বলে এমন। পুলের চারিপাশে অন্যান্য গাছের সাথে নারিকেল গাছের সাড়ি দেখে আমর কী যে ভাল লেগেছিল। রঙ্গন ফুলের গাছ শোভা পাচ্ছে রিজোরডের প্রধান ফুল গাছ হিশেবে, এত সুন্দর করে রঙ্গনের প্রজাতি বাছাই করে প্রতিটা বিল্ডিংএর ফেঞ্চ হিসাবে সাজানো রয়েছে যা মনকে কেড়ে নেয়। বাগান বিলাস, জবা ফুলের বিভিন্ন প্রজাতি, কখনও রক্তজবা, কখনও হলুদ জবা, আগে কোনদিন এমন করে দেখা হয়নি আমার, বিভিন্ন ফুল গাছ ও পাতা বাহারের সমারহ দেখ আবারো ছোট বেলার মত মুগ্ধ হলাম। আমার স্বর্গ মৃত্যু-পরবর্তী জীবনে বিভিন্ন বস্তু দিয়ে সাজানো ছিল না, তাই এটাকে হয়ত এত ভাললেগেছে। এই পরিণত বয়সে এসে অনেক ছোটবেলার মত বিভন্ন রংয়ের ফুল দেখে মুগ্ধ হয়েছি আবার। হয়ত জীবনচক্রের এ একটা স্বাভাবিক পরিণতি। ছোটবেলায় ভাবতাম ফুলসহ ফুলগাছ দিয়ে সাজানো মানুষের বাড়ির বেড়া হয় না কেন? এখন দেখলাম মানুষের মনে সদিচ্ছা থাকলেই হয়। পাশে পাশে রঙ্গন ফুলগাছ বসিয়ে যেন একটা স্বপ্নময় পরিবেশের সৃষ্টি করেছে ওরা। সেই ছোটবেলার ভাবনা বাস্তবে পরিণত হওয়ার অনুভূতির মধ্যে একরকম স্বপ্নের স্পন্দন থাকে। যা যৌবনে মানুষের মধ্যে ঠাই করতে পারে না। কিন্তু সে ভাবনা অবচেতন মনে থেকে যায়। বুদ্ধদেব বসুর সেই কবিতাটি খুব আবৃত্তি করতে ইচ্ছে করছে। কবিতাটির নাম ‘চিল্কায় সকাল’ প্রথম যৌবনে কবিতাটি এত বেশি ভাললেগেছিল যা পরিণত বয়সেও আমার হৃদয়কে নাড়া দিয়ে যায়। মনে পরে গেল। কবিতাটির মধ্যে একটা লাইন ছিল-‘এখানে সূর্যের বন্যা তাকানো যায় না / গরুগুলি একমনে ঘাস ছিঁড়ছে কি শান্ত!’ চিত্রটি আমাদের অনেকদিনের চেনা, কিন্তু আজ এমন করে আবৃত্তি করতে ইচ্ছে করার কারণ বাঙলার মুখকে আমার বড় বেশি মনে পড়ছে।
ডোমেনিকান রিপাব্লিকের মানুষের সৌন্দর্যবোধ হয়ত অনেকটা প্রসারিত। সোচুয়া বিচ নামে একটা বিচে আমরা বেড়াতে গিয়েছি। এখানে সমাজে বাহ্যিক তেমন কোন পার্থক্য আমাদের চোখে পড়েনি। বিচের ধারে বসে বসে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য অনেক টেবিল পাতা আছে, এবং অনেক খাবার দোকানসহ অন্যান্য সামগ্রীর দোকানও রয়েছে, তাদের সবই নিয়ন্ত্রণ করছে স্ব স্ব দোকানের মালিকগন। হয়ত মালিকগণই বসার ব্যবস্থা করেছে। ফ্রি উন্মুক্ত ব্যবস্থা নয়, কিছু টাকা দিয়ে বিচের চেয়ারগুলি এবং ছাতা নিজেদের দখলে নিতে হয়। এবং পুলিশের ব্যবস্থাও সেখানে রয়েছে, গভারমেন্ট পুলিশ আর নন গভারমেন্ট পুলিশ দেখলাম। আমরা তাদের চোখের সামনেই বসেছিলাম যেন সাহায্য চাইলে পেতে পারি। সেখানে মনে হয়েছে হৃদয়ের সব দুঃখবোধ ঘুচিয়ে দিয়ে সেই সমুদ্রের সৌন্দর্যই আমাদের কাছে সত্য হয়ে উঠেছে। আমি খুঁজে মরছি ঝিনুকের সারি কিন্তু খুঁজে পেলাম না, হয়ত আমরা যেখানে বসেছিলাম ওখানটায় কোন ঝিনুক নেই, অথবা সমুদ্রের ঐ তীরে নেই, এ নিয়ে আর ভাবি নি এবং ওখানের কাউকে জিজ্ঞেসও করিনি, তাহলে সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগ করা হয়ত প্রশমিত হয়ে যেতে পারে। তাই দৃষ্টি গেল বিচের ধারের দোকান গুলির দিকে, ওখানে কত রকম পণ্য সাজানো আছে, মানুষকে আকৃষ্ট করতেও তারা অনেক ধরণের পন্থা অবলম্বন করেছে, কিন্তু তেমন কোন ভিড় লক্ষ করা গেল না। তাই মনে হচ্ছে এখানে যারা আসে হয়ত তারা বার বার এসেছে। বিনোদনের এটি একটা খুব উপযুক্ত জায়গা। পোরটোপ্লাটার বিচের একই চিত্র চোখে পড়ে। বিচে আনন্দ করার সকল উপকরণ আছে, তার মধ্যে একটা ছিল সকল প্রকার হার্ড ও সফট ড্রিংকসের ব্যবস্থা। কিন্তু আমাদের হয়ত কালচারের কারণে ড্রিংক করার জন্য মন মাতোয়ারা হয় না বলে সবাই বিরত থেকেছি। আমারা সবাই দক্ষিণ এশিয়ান কালচার বহন করছি। এই কালচারে রয়েছে ধর্মীয় কারণ, আমরা যতই বলি না কেন আসলে আমাদের কালচারটাই অনেকখানি আলদা, এবং আমরা সবাই মোটামুটি একই কালচার বহন করছি, বিশেষ করে নারী ছোটবেলা থেকে যেকোন হার্ড ড্রিংককে ঘৃণা করতে শিখেছে। তার উপকার অপকার সম্পর্কে ছোটবেলায় কেউই জানে না, কিন্তু বোধ হওয়ার সাথে সাথে একে ঘৃণা করে সবাই। তাই কোন নারী উন্মুক্তভাবে ড্রিংক করলে তার পেছনে অনেক সমালোচনা হয়। সমাজ থেকেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের সমাজে পুরুষ শ্রেণী অনেক কালচারকে অতিক্রম করতে পারে নারী পারে না। নারীকে সমাজ কোন কালচারকে অতিক্রম করার কোন রকম বৈধতা দেয়নি। তাই ড্রিংক বিষয়টা পুরুষ সহজেই গ্রহণ করতে পারে কিন্তু আমরা পারি না বলে আমাদের কোন আকর্ষণও হওয়া উচিত নয়। এটা আমাদের জন্মগত চর্চা। লক্ষ্য করলে দেখা যায় কালচারগত কারণে এক একটি জাতি এক এক রকম চিন্তা বহন করছে। এটা যদিও আমার কাছে বড় কোন বিষয় নয়, তবু আমরা মানুষ হিশেবে একই কালচারের মানুষের কাছে নিজেকে অনেক মুক্ত ভাবতে থাকি। যতই নিজের দেশের সমালোচনা করি না কেন তাকে ছাড়তে পারি না, এবং উচিতও নয়। কারণ নিজের জাতিকে এগিয়ে নিতে হলে তাদের মাঝে থেকেই তা করতে হয়। আমাদের কালচারে নারীকে হতে হয় পুরুষের চেয়ে পেছনের মানুষ, অনেক লজ্জাশীলা, যদিও অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সে ছোটবেলা থেকে পুরুষটির চেয়ে উন্নত কালচার চর্চা করে এসেছে, তারপরও পুরুষ থাকে সার্বিকভাবে সমর্থবান। কারণ আমাদের সমাজিক ব্যবস্থা সেভাবেই তৈরি। তাই আমরা পুরুষের উপর নির্ভর করে থাকতে অনেক বেশি পছন্দ করি। এটা আমাদের কালচারের নিয়ম। আমরা যারা প্রবাসে বসবাস করি তারা খুব কসরত করি আমাদের কালচারের নিয়মগুলোকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে, তাই কালচার পরিবর্তনের গতি এতটা শ্লথ। আর নতুন প্রজন্ম অনেকটা দ্বিধাগ্রস্থ অবস্থায় থাকে বলে কেউ কেউ মানসিক সমস্যায় ভুগতে থাকে। এবং অনেক বাবা মা সেটা বুঝতেও পারে না, এবং কেউ কেউ বুঝতে চায়ও না। তাদের কাছে সন্তানের চেয়ে কালচার অনেক বড়। সন্তানকে তারা ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখে এবং অনেকক্ষেত্রেই সন্তানদের তারা সম্মান করে, কিন্তু তারপরও সন্তানের কাছে পৌঁছতে পারে না, এটা মা-বাবার ব্যর্থতা আমরা জানি, কিন্তু যেটি জানি না সেটা হল আমাদের কালচারকে তাদের উপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে।
এক সময় দেখলাম পাশের টেবিলেই একজন নারী একজন হ্যান্ডসাম ছেলেকে কিছু একটা বলছে। যেহেতু বয়সে অসম এবং জাতিতেও অসম তাই একটু কৌতূহল হল? এই ধরণের কৌতূহল থাকা অপরাধ তা আমরা জানি, কিন্তু আমাদের কালচারে একে কোন অপরাধ হিশেবে গণ্য করা হয় না, তাই আমরা জানি এটা অপরাধ কিন্তু সত্যিকার অর্থে তাকে কতটা মানি? কারণ আমরা চর্চা করিনি বলে এটাকে মেনে নিলেও মনে নেই নি। আর তাই হয়ত আমাদের বয়ে আনা কালচারটি জীবন থেকে পুরাপুরি মুছে যাবে না। আমি অনেকটা উশখুশ করতে করতে জানতে পারলাম মহিলাটি ওর সাথে কথা বলছে স্ফুর্তিকে প্রলম্বিত করার জন্য। যে কথা আমাদের কালচারে নারীদের মনে করাও জঘন্যতম অপরাধ, কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে অনেকখানি কম অপরাধ। আমাদের পুরুষেরা কাজটি করে থাকে আমাদের চোখ এড়িয়ে, তাদের সমাজে ধরা পড়ার কোন ব্যবস্থা নেই। কিন্তু আমাদের মেয়েদের মধ্যে কেউ করলে তাকে সমাজের চোখে ভীষণ নিকৃষ্ট, যাকে সমাজ বেশ্যা বলে গালি দেয়। যে বৃত্তিটি সমাজের অসহায় মেয়েরা করে এবং তারা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সীমাবদ্ধ, সমাজে তারা নিজেকে পরিচয় দিতে গেলে শুধুই মিথ্যের আশ্রয় নিতা হয়, আর সমাজে তারা নিকৃষ্ট পর্যায়ে বসবাস করে, এমনি একটা নিয়ম চালু আছে। তাই সমাজের সভ্য মেয়েরা এটা করতে পারে না, এমনকি অনেকক্ষেত্রে তার জীবন নিয়ে বেঁচে থাকাটাও একরকম দায় হয়ে পড়ে। সেই কাজটিই কত সহজ অন্য কালচারের মহিলাটির কাছে, যা করলে তার সমাজের কাছে কোন জবাবদিহি করতে হবে না। কিন্তু আমাদের সামাজিক প্রথা অনুযায়ী নারীর জন্য নিকৃষ্ট এবং পুরুষের জন্য সমাজ দেখেও না দেখার ভান করে, আর এখানেই সমস্যার সৃষ্টি। যে কোন সমাজের ভিতরে একরকম ও বাইর থেকে অন্য রকম ভাবে প্রকাশিত থাকে, আমরা সাধারণত যে কোন সমাজের বাইরে থেকেই দেখি। তাই সমাজের সবটুকু বুঝে উঠতে পারি না, সেটি মেনে নিয়েই আমি ডোমেনিকানদের সমাজ সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেছি। এদের মধ্যে যারা দেহ ব্যবসায় যুক্ত প্রচুর পরিমাণে তাদের দেখতে পেলাম সেই বিচে। এ নিয়ে আমার মনে ভাবনার উদয় হল। এরা ক্লায়েন্টের সাথে দিনের বেলায় কথা বলে দরদাম ঠিক করে রাখে। তাদের জীবন সম্পর্কে যতটুকু বাইরে থেকে জানা সম্ভব হল ততটুকুই জানতে পারলাম। আমাদের মধ্যে পার্থক্য শুধু ওখানে প্রকাশ্যে নারী পুরুষ নির্বিশেষে এ কাজটি করে, কিন্তু আমাদের সমাজে পুরুষ প্রায় সবাই রাতের বেলা সেই নারীর সঙ্গ কামনা করে। ঐ সমাজে পুরুষের জন্য মাফ কিন্তু নারীর জন্য চূড়ান্ত অপরাধ, এই ব্যপারটি নেই। সামাজের কাছে হাইড করে কিনা জানি না কিন্তু এটি জানার জন্য আমাদের মত এত উৎসাহও ঐ সমাজের নেই। যার জন্য কাউকে চরমভাবে অপমান করতে গিয়ে বেশ্যা বলে কেউ গালি
দেয় না। শুনেছি এরা যে যত আর্লি পারে বাচ্চা নেয়, বাচ্চাকে বড় করে, তারপর নিজেকে ফ্রি করে এই কাজে নেমে যায়। এবং পরবর্তীতে গ্রামে ফিরে যায়। বাচ্চা ওদের কাছে বড় কথা নয়, জীবনকে উপভোগ করাই এবং যেকোনভাবে অর্থ আসাই তাদের কাছে বড় কথা। এজন্য জনসংখ্যার বৃদ্ধি হয় সহনশীল ভুমিকায়। জনসংখ্যার বিস্ফোরণ কথাটি ওখানে একবারেই প্রচলিত নয়। ওদের সংসার কেমন থাকে সে সম্পর্কে খুব একটা জানি না তবে যৌবনে এরা অর্থের বিনিময়ে স্ফূর্তি করে এবং বার্ধক্যে এরা বাড়ির মালিক হয়, কেউ কেউ গাড়ির মালিক হয়ে যায়। পুরুষেরা বাচ্চাদের কোন প্রকার দায় নেয় না। সকল বাচ্চাই হয় মা কেন্দ্রিক। বেশিরভাগ মেয়েই সিঙ্গেল মাদার। সমাজে এইসব সন্তানদের পরিচয় কোন সমস্যা নয়। কে যে সাধারণ মানুষের ছেলে মেয়ে আর কে যে এই সব দেহ ব্যবসায়ীর ছেলে মেয়ে তা বাইরে থেকে বোঝার কোন উপায় থাকেনা। সমাজের ভিতরে এদের চেনার কোন ব্যবস্থা আছে কি না জানি না, তবে এটুকু জানি এনিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই। ওখানে মেয়েরাও অসম্ভব অ্যাক্টিভ হয়, অনেক ছোট থেকেই তাদের জীবন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। আমি বাসে যেন কোথায় যাচ্ছিলাম তখন হঠাতই দেখতে পেলাম একটি বাচ্চা মেয়ে কীভাবে তার স্যুটকেস টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি মুগ্ধ হলাম, আর ভাবলাম, যে দেশে সমাজ কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া শিশুশ্রম ছাড়া সবাই ছোটবেলা থেকে তাদের কোন মুহূর্তে কী করতে হবে সে সম্পর্কে সচেতন থাকে, তারা সভ্যতার দিকে অগ্রসর হয় দ্রুত গতিতে।
ডে ট্রিপের ব্যবস্থা করে ফিরে এসেছি রিসোর্টে, ট্যুরগাইড আমাদেরকে নিয়ে গেল ওদের গৌরবের নিদর্শনগুলো দেখাতে। সব দেশেরই কিছু সৌন্দর্য ও গর্ব থাকে, সে যতই অবহেলিতই হোক আর যত ছোটই হোক, আর তাই এ নিয়ে বিশেষ কোন আলোচনায় গেলাম না। আমি সাগরের চিত্র দেখে এত মুগ্ধ হয়ে গেছি যেন তাই নিয়েই মেতে আছি। সাগরের সৌন্দর্য বর্ণনাই আমার জীবনে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে, অনেক সৌন্দর্যকে ছাপিয়ে। একে আমি জীবনবাদী হওয়ার একটা লক্ষণ বলে মনে করছি। নগদ যা পাচ্ছি তা হাত পেতে নিচ্ছি। আমি কখনো জীবনের পরে কি হবে সে বিচার নিয়ে বসে নেই, কারণ আমি মনে করি জীবন শেষ হবে জীবনের নিয়মে, আর আমি এই জীবনে যেটুকু আনন্দ সংগ্রহ করতে পারি সেটাই হবে আমার জীবনের পরম পাওয়া।
রোজানা নাসরীন
টরন্টো