অভিবাসনের কারণে কানাডায় আবাসন আরও ব্যয়বহুল হচ্ছে
সরকারকে দুই বছর আগেই সতর্ক করা হয়
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কেন্দ্রীয় সরকারের আমলারা দুই বছর আগেই সরকারকে সতর্ক করেছিলেন যে, বড় ধরণের অভিবাসন সাধ্যের মধ্যে আবাসন ও অন্যান্য পরিষেবায় বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অভ্যন্তরীণ নথিপত্র থেকে এটি জানা গেছে। খবর নজুদ আল ম্যালিস – দি কানাডিয়ান প্রেস।
সম্প্রতি কানাডিয়ান প্রেসের হাতে আসা নথিতে দেখা যায়, কানাডার অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব দপ্তর তার ২০২৩-২০২৫ সময়কালের অভিবাসন লক্ষ নির্ধারণের আগে দেশের অর্থনীতি, আবাসন ও পরিষেবার ওপর অভিবাসনের কী প্রভাব পড়তে পারে সে বিষয়ে মূল্যায়ন করে।
তথ্য অধিকারের আওতায় অনুরোধ জানিয়ে পাওয়া নথি অনুযায়ী, দপ্তরটি অন্যান্যের মধ্যে ডেপুটি মিনিস্টারকে ২০২২ সালে সতর্ক করে যে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে গৃহায়ন সুবিধা নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
একটি নথিতে লেখা হয়, “কানাডায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণ সুলভ বাসযোগ্য বাড়ির সংখ্যাকে ছাড়িয়ে গেছে।”
“কেন্দ্রীয় এই কর্তৃপক্ষ অভিবাসন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত বলে, আইআরসিসির নীতি-নির্ধারকদের অবশ্যই জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি ও গৃহায়ন সরবরাহের মধ্যে বিদ্যমান অসামঞ্জস্য এবং কীভাবে পারমানেন্ট ও অস্থায়ী অভিবাসন জনসংখ্যা বৃদ্ধির অবয়ব দেয় সেটি বুঝতে হবে।”
দেশের জনসংখ্যা বয়বৃদ্ধ হয়ে পড়ায়, অভিবাসনই হয়ে উঠেছে কানাডার প্রায় সব রকম জনসংখ্যা বৃদ্ধির নিয়ামক।
কেন্দ্রীয় সরকার শেষ পর্যন্ত কানাডায় প্রতি বছর স্বাগত জানানো অভিবাসীর সংখ্যা বাড়িয়ে ২০২৫ সালে পাঁচ লাখ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট মনোযোগ আকর্ষণ করে এবং যাচাই বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে যায়। এর অর্থ হলো, কানাডা ২০১৫ সালে যে পরিমাণ পারমানেন্ট রেসিডেন্টকে স্বাগত জানিয়েছিল, ২০২৫ সালে গ্রহণ করবে তার প্রায় দ্বিগুণ সংখ্যক। নথি অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় সরকারের আমলারা উচ্চমাত্রার জনসংখ্যা বৃদ্ধি গৃহায়ন ও পরিষেবা খাতে যে চাপ সৃষ্টি করবে সে সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন।
আমলারা সতর্ক করেন যে, “দ্রুত (জনসংখ্যা) বৃদ্ধি স্বাস্থ্যসেবা ও সুলভ আবাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করবে।”
চাহিদা ছাড়িয়ে যাচ্ছে সরবরাহকে
আবাসনের প্রাপ্যতা এখন লিবারেল সরকারের জন্য রাজনৈতিক বোঝায় পরিণত হয়েছে। এই বিষয়টিকে প্রচারণার ইস্যু বানিয়ে কনজারভেটিভ পার্টি গত বছর বেশ গতি অর্জন করেছে, যদিও তারা নির্দিষ্ট করে অভিবাসনের বিষয়টি এড়িয়ে যায়। এই চাপের ফলে লিবারেল সরকারকে তার গৃহায়ন নীতির বিষয়ে নতুন করে নজর দিতে হয় এবং তারা নতুন বিধি প্রণয়নের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিদ্যমান সঙ্কট নিরসনে উদ্যোগী হয়।
সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক অস্থায়ী রেসিডেন্টও গ্রহণ করায় কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতি অব্যাহতভাবে রেকর্ড করে চলেছে। অস্থায়ী রেসিডেন্ট আনা হচ্ছে বহুলাংশে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং অস্থায়ী ফরেন ওয়ার্কার কর্মসূচির মাধ্যমে।
২০২৩ সালের শেষ তিন মাসে দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে চার লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি। এটি ছিল ১৯৫৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনও বছরের শেষ তিন মাসে সর্বোচ্চ গতির বৃদ্ধি।
ব্যবসায়ী সম্প্রদায় থেকে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সব ধরণের বিশেষজ্ঞরাই সতর্ক করছেন যে, চাহিদার পরিমাণ সরবরাহকে ছাড়িয়ে যাওয়ায় কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধি জোরালো গতি সাধ্যের মধ্যে গৃহায়নের সম্ভাবনা নস্যাৎ করছে।
ক্রমবর্ধমান উদ্বেগ
ব্যাংক অব কানাডাও একই রকমের বিশ্লেষণ করেছে। ডেপুটি গভর্নর টনি গ্রাভেল ডিসেম্বরে এক বক্তৃতায় সতর্ক করেন যে, জনসংখ্যার জোরালো বৃদ্ধি বাড়ির দাম ও বাড়িভাড়া বাড়িয়ে দিচ্ছে।
জনমত জরিপেও দেখা যাচ্ছে, অভিবাসনের কারণে পরিষেবা, আবাসন ও অবকাঠামোর ওপর যে চাপ পড়ছে তাতে কানাডীয়রা ক্রমবর্ধমান হারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছে এবং তাতে উচ্চহারে অভিবাসনের প্রতি জনসমর্থন কমে যাচ্ছে।
লিবারেল দলের সরকার তার অভিবাসন বিষয়ক সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে যে, অভিবাসীরা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে সহায়ক এবং জনসংখ্যা বয়বৃদ্ধ হয়ে পড়ায় জনসংখ্যায় ভারসাম্য আনতেও সাহায্য করে।
২০২২ সালের ওইসব নথিতে উল্লেখ করা হয় যে, কানাডার অভিবাসন লক্ষ্য, কান্ট্রি ইনিশিয়েটিভসহ কিছু বিশেষজ্ঞের সুপারিশ করা পরিমাণকে ছাড়িয়ে গেছে। কান্ট্রি ইনিশিয়েটিভ নামের সংগঠনটি দেশের জনসংখ্যা বর্তমান শতাব্দীর শেষ নাগাদ ১০ কোটিতে বাড়ানোর সুপারিশ করে।
অবশ্য, এখন এসব লক্ষমাত্রা থেকে নজর সরে এসেছে অস্থায়ী রেসিডেন্ট ব্যাপক বৃদ্ধির দিকে। জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যে কানাডার জনসংখ্যা বৃদ্ধির প্রায় তিন-চতার্থাংশই ঘটে অস্থায়ী রেসিডেন্টদের মাধ্যমে। এদের মধ্যে রয়েছে অন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী এবং অস্থায়ী বিদেশী শ্রমিক।
এই প্রবণতা নিম্ন আয়ের অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য গড়ে ওঠা ব্যবসায় বৃদ্ধি পাওয়া এবং কিছু অস্বচ্ছ পোস্ট-সেকেন্ডারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের প্রলুব্ধ করে নিয়ে আসার বিষয়ে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলছে।
ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির অর্থনিিতর অধ্যাপক মিকাল স্কাটারুড, যিনি অভিবাসন নীতির ওপর জোর দেন, বলেছেন, মনে হয়, কেন্দ্রীয় সরকার অস্থায়ী অভিবাসী প্রবাহের ওপর “নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।”
অস্থায়ী রেসিডেন্টের সংখ্যা পারমানেন্ট রেসিডেন্টের মত বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত হয় না, বরং তা ঠিক করা হয়, অভিবাসী কর্মী ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর কত চাহিদা রয়েছে তার ভিত্তিতে।