কানাডায় হত্যাকান্ডের হার ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চে
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় হত্যাকাণ্ডের (খুন) হার গত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরে রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা অপরাধের সংখ্যাও অব্যাহতভাবে বাড়ছে। গত ২৯ নভেম্বর প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে জাতীয় পর্যায়ে হত্যার হার টানা চতুর্থ বছরের মত বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর সাবা আজিজ – গ্লোবাল নিউজ
গত বছর হত্যার হার বেড়েছে প্রায় আট শতাংশ এবং প্রতি এক লাখ জনসংখ্যার মধ্যে হত্যার শিকার হন ২.২৫ জন। হত্যার হার সমাজে সহিংসতার অবস্থার প্রধান সূচক হিসাবে বিবেচিত। সংস্থার তথ্যমতে, ১৯৯২ সালের পর গত বছরের হত্যার হারই ছিল সর্বোচ্চ।
সারা কানাডায় ২০২২ সালে মোট ৮৭৪ জন নিহত হন, যা তার আগের বছরের চেয়ে প্রায় নয় শতাংশ বেশি।
স্ট্যাটক্যানের রিপোর্টে বলা হয়, “সাম্প্রতিক বৃদ্ধি সত্ত্বেও কানাডায় মানুষ হত্যা এখনও বিরল, হিসাব মতে যা ২০২২ সালে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করা সব সহিংস অপরাধের ০.২ শতাংশেরও কম।”
প্রদেশগুলির মধ্যে গত বছর নরহত্যার সর্বোচ্চ হার ছিল ম্যানিটোবায়। এর পরেই ছিল যথাক্রমে সাসকাচুয়ান ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়া। সবচেয়ে কম হত্যাকাণ্ড ঘটে প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড ও নিউ ফাউন্ডল্যান্ড এ্যান্ড ল্যাব্রাডরে।
জরিপের তথ্য অনুযায়ী, বেশিরভাগ কানাডীয় মনে করেন, কোভিড-১৯ মহামারির সময় থেকে তাদের সমাজে সহিংসতা বেড়ে গেছে। একান্তভাবে গ্লোবাল নিউজের জন্য গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইপসোস পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, ৫৮ শতাংশ কানাডীয় বিশ্বাস করেন, ২০২০ সালের মার্চে মহামারি শুরুর পর থেকে তাদের কমিউনিটিতে বেশি সহিংসতা বিরাজ করেছে। তথ্য-উপাত্ত সেই অনুভূতিরই প্রতিফলন ঘটায়। গত বছর দেশে পাঁচজন পুলিশ অফিসার তাদের “পেশার কারণে নিহত” হন, যা ছিল কানাডায় ৩৭ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
হত্যার দায়ে কানাডীয় তরুণদের অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনারও বড় উল্লম্ফন ঘটেছে। পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী ২০২২ সালে ৯০ জন তরুণ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হয়েছে। সেই তুলনায় আগের বছর অভিযুক্ত হয় ৩৩ জন।
গত বছর হত্যার দায়ে তরুণদের অভিযুক্ত হওয়ার হার গত ১০ বছরের গড় হারের চেয়ে ছিল দ্বিগুণেরও বেশি- যা প্রতি এক লাখ তরুণের মধ্যে ১.২৩ জনে পৌঁছে।
স্ট্যাটক্যান বলছে, এই বৃদ্ধির কারণ হতে পারে প্রধানত ১৮ বছরের কম বয়সী অভিযুক্ত তরুণের সংশ্লিষ্টতায় সংঘটিত খুনের ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়া।
এদিকে, স্ট্যাটক্যানের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আদিবাসী ও অশে^তাঙ্গ জনগোষ্ঠীর লোকেরা অসমানুপাতিক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হত্যার শিকার ব্যক্তিদের মোট সংখ্যার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি (২৭ শতাংশ) আদিবাসী। অন্যদিকে নিহতদের এক-তৃতীয়াংশ (৩০ শতাংশ) দৃশ্যমান সংখ্যালঘু তথা অশে^তাঙ্গ।
২০২২ সালে কানাডায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ৪১ শতাংশই ঘটে আগ্নেয়াস্ত্রের সাহায্যে, যা ২০২১ সালের সমপর্যায়েই ছিল। রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, ২০২২ সালের হত্যাগুলোর মধ্যে প্রায় এক-চতুর্থাংশ ছিল সংঘবদ্ধ গ্যাংয়ের সাথে সম্পর্কিত, ২০২১ সালের তুলনায় “জাতীয় পর্যায়ে হত্যার ঘটনা সার্বিকভাবে বেড়ে যাবার পেছনে বড় ভূমিকা” এই গ্যাং সংশ্লিষ্টতার।