পার্ট-টাইম চাকরিপ্রার্থী অন্টারিওর এক নারী তিন লাখ ৯৫ হাজার ডলার প্রতারণায় খুইয়ে ‘দুঃস্বপ্নের মধ্যে বাস করছেন’

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর এক নারী সম্প্রতি পার্ট-টাইম চাকরি খুঁজতে গিয়ে চাকরি-সংক্রান্ত প্রতারণায় লাখো ডলার হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। খবর প্যাট ফোরান-সিটিভি নিউজ।

টরন্টোর ওই নারী বলেন, “এই মুহূর্তে সময়টা খুবই কঠিন। আমার মনে হচ্ছে যেন দুঃস্বপ্নের মধ্যে বাস করছি।” সিটিভি নিউজ টরন্টোকে তিনি অনুরোধ করেন তাকে কেবল ইমরান নামে উল্লেখ করতে।

ইমরান বলেন, তিনি কিছু বাড়তি অর্থ আয় করার উপায় খুঁজছিলেন এবং সামাজিক মিডিয়া থেকে একটি পার্ট-টাইম চাকরির খোঁজ পান, যেখানে বলা হয় যে, এখান থেকে তিনি ঘণ্টায় ৪০০ ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।

সম্ভাব্য চাকরি ছিল সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করা এবং অ্যাপ অপ্টিমাইজ করা। ইমরান বলেন, কিন্তু তিনি যে রোবোট নন বরং বাস্তব মানুষ তার প্রমাণ হিসাবে প্রথমে তাকে কিছু অর্থ জমা দিতে বলা হয়।

প্রাথমিকভাবে তিনি কোম্পানির প্লাটফরমে ৭০০ ডলার জমা দেন। তিনি দেখেন সেই অর্থ বেড়ে প্রায় ১,৭০০ ডলার হয়েছে। ইমরান বলেন, তিনি কিছু অর্থ তুলে নিতে পেরেছিলেন। তাই তিনি ভেবেছিলেন, এটি একটি বৈধ কোম্পানি।

ছবি : ডাব্লিউডাব্লিউএমটি.কম

কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই প্লাটফরম থেকে অর্থ তুলে নেয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে।

ইমরান বলেন, “ডলার তুলে নিতে হলে আপনাকে অ্যাপ্লিকেশনের সেট পুরো করতে আরও ডলার জমা দিতে হবে। সেটি পুরো করার পর দেখি তারা ডলার তোলার ব্যবস্থা বন্ধ করে দিচ্ছে।”

কয়েক মাস ধরে তাকে আরও ডলার জমা করতে বলা হচ্ছিল এবং তিনি সেটাই করছিলেন। ইমরান বলেন, তিনি নিজের তিন লাখ ৯৫ হাজার ডলার জমা করেন এবং ভাবেন যে, তার অ্যাকাউন্টে ছয় লাখ ৫ হাজারের বেশি মার্কিন ডলার জমা হয়েছে।

কিন্তু শেষপর্যন্ত তিনি সেই অর্থের কিছুই তুলে আনতে পারেননি। এছাড়াও তিনি পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে ধার করে আড়াই লাখ ডলার জমা দিয়েছিলেন। পুরো অর্থই তিনি খুইয়েছেন।

ইমরান বলেন, “এমন অবস্থায় পড়া যে কারও জন্যে ধ্বংসাত্মক। আমি কখনই চাই না কারো জীবনে এমনটা ঘটুক।”

টরন্টোর একজন ছাত্রও সিটিভি নিউজ টরন্টোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন, যিনি একই রকম চাকরি সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির শিকার বলে জানান।

ডেনিলো পেকো নামের ওই ছাত্র বলেন, “আমি তাদের বলেছি, আমার ডলার ফেরত চাই। কেন তোমরা ডলার ফিরিয়ে দিচ্ছো না?”

পেকো বলেন, তিনিও শুরু করেছিলেন অল্প ডলার জমা করে এবং তার মধ্যে কিছু ডলার তুলতেও পেরেছিলেন। কিন্তু যখন তিনি ১,৭০০ ডলার জমা দেন, তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যায়।

“এটি আমার কাছে অনেক বড় ব্যাপার; কারণ, এগুলি আমার কষ্টার্জিত ডলার। আর আমি এগুলি সঞ্চয় করছিলাম পড়ার খরচ চালানোর জন্য।”

কানাডার প্রতারণাবিরোধী কেন্দ্রের (সিএএফসি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে চাকরি-সংক্রান্ত কেলেঙ্কারির শিকার ১,২৩০ ব্যক্তি ৪,৯৪৮৮৪৯ ডলার খুইয়েছেন। ২০২৩ সালে এখন পর্যন্ত ৫৯২ জন খুইয়েছেন ২,৭১২,৩৯০ ডলার।

সিএএফসি বলেছে, চাকরির নামে প্রতারণা (job scams) এখন একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা।

সিএএফসির জেফ হরনক্যাসল বলেন, “চাকরির নামে কেলেঙ্কারির একটি নতুন ধরণ আছে যেটির ওপর আমরা নজর রাখছি।” “যদি তারা আপনাকে কোনও সাক্ষাৎকার ছাড়াই কোনও চাকরির অফার দেয় তাহলে সেটাই এক বড় সতর্কবার্তা।”

আরও কিছু সতর্ক সঙ্কেত হলো, যদি তারা ব্যক্তিগত তথ্য এবং ব্যাংকিং সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আগেই দিতে বলে, উচ্চ বেতনের কোনও মৌলিক চাকরির বিজ্ঞাপন দেয় এবং অগ্রিম টাকা দিতে বলে।

আরেকটি সতর্কবার্তা হলো, সব যোগাযোগ হবে শুধু চ্যাটিং অ্যাপে, কোনও ফোনকল অথবা মুখোমুখি সাক্ষাৎ ছাড়া।

ইমরান বলেন, তিনি কিছু বাড়তি অর্থ আয় করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু এখন তিন লাখ ৯৫ হাজার ডলার হারানোর পর কীভাবে ধার শোধ করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

“এটি সত্যি অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক, এবং এমন যেন আমাদের যা কিছু ছিল সব গেছে, আমাদেরকে সব নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে,” বলেন ইমরান।