অগ্রগতি হলেও পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদনকারী বেশিরভাগ মানুষকে তাদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য এখনও দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকতে হচ্ছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : গত মাসে কানাডার অডিটর জেনারেলের দপ্তরের প্রকাশিত নতুন রিপোর্টে সতর্ক করা হয়েছে যে, পারমানেন্ট রেসিডেন্সির বকেয়া কাজ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অবশ্যই অভিবাসন কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে হবে। যদিও এক্ষেত্রে কিছু অগ্রগতি হয়েছে। খবর পিটার জিমোনজিক – সিবিসি নিউজ। 

অডিটর জেনারেল ক্যারেন হোগানের রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, কেন্দ্রীয় সরকার জানে না, সংখ্যালঘুদের অসাম্য এবং প্রতিবন্ধকতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তার কোনও অগ্রগতি আছে কিনা। রিপোর্টে বলা হয়, বড় ধরণের বিভ্রাট এড়াতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে অ্যামপ্লয়মেন্ট ইনস্যুরেন্স, ওল্ড এজ সিকিউরিটি এবং কানাডা পেনশন প্ল্যানের ভাতাদি প্রদানের প্রক্রিয়া অবশ্যই দ্রুততর করতে হবে।

হোগান বৃহস্পতিবার বলেন, “এই ইস্যুগুলি নতুন নয়, কোভিড-১৯ যদি আমাদের কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকে, সেটা এই যে, প্রস্তুত থাকা এবং আগেভাগে পদক্ষেপ নেওয়া ব্যয় সাশ্রয় করে এবং ভালো ফল দেয়।”

হোগানের দপ্তর পারমানেন্ট রেসিডেন্সির আটটি কর্মসূচির অডিট সম্পন্ন করে এবং দেখতে পায় যে, মহামারির সময়কার বকেয়া কাজ কমিয়ে আনার প্রয়াস সত্ত্বেও পারমানেন্ট রেসিডেন্সির জন্য আবেদনকারী বেশিরভাগ মানুষকে তাদের আবেদন প্রক্রিয়াকরণের জন্য এখনও দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।

হোগানের দপ্তর যে আটটি প্রোগ্রাম পরীক্ষা করেছে সেগুলি তিনটি শ্রেণীতে পড়ে: উদ্বাস্তু ও মানবিক, অর্থনৈতিক এবং পারিবারিক। অর্থনৈতিক ও পারিবারিক শ্রেণীর প্রক্রিয়াকরণের সময়ে অগ্রগতি হলেও উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে তা আরও খারাপ হয়েছে।

পারমানেন্ট রেসিডেন্সির বকেয়া কাজ কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিবাসন কর্মসূচির ব্যবস্থাপনা উন্নত করার পরামর্শ কানাডার অডিটর জেনারেলের। ছবি : সংগৃহীত

মিডিয়ায় দেয়া এক বিবৃতিতে হোগান বলেন, “২০২২ সালের শেষে ৯৯,০০০ উদ্বাস্তু তাদের আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আর প্রক্রিয়াকরণের চলমান যে পরিবেশ তাতে বহু আবেদনকারীকে বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে হবে।”

রিপোর্টে বলা হয়, ব্যক্তিগতভাবে স্পন্সর করা উদ্বাস্তুদের বেশিরভাগই তাদের আবেদনের ওপর সিদ্ধান্ত পাবার জন্য প্রায় ৩০ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। অভিবাসন, উদ্বাস্তু ও নাগরিকত্ব দপ্তর (IRCC) থেকে এই শ্রেণীর উদ্বাস্তুদের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়েছে ১২ মাসের সময়সীমার মধ্যে।

সরকারী সহায়তাপ্রাপ্ত উদ্বাস্তু বিষয়ক কর্মসূচির আওতায় আবেদনকারীদের বেশিরভাগই অপেক্ষা করেছেন ২৬ মাস। এই ধরণের উদ্বাস্তুদের মাত্র ২৬ শতাংশের আবেদন ১২ মাসের মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

অভিবাসন মন্ত্রী মার্ক মিলার এজির রিপোর্ট প্রকাশে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এতে যেসব ইস্যু সামনে আনা হয়েছে সেগুলির সমাধান তিনি করবেন। তিনি বলেন, হোগানের রিপোর্ট “অনেকগুলি চ্যালেঞ্জ” প্রকাশ করেছে।

মিলার বলেন, “আমি আমার দপ্তরের কাছে সেরা কাজ চাই। যে রিপোর্ট এসেছে সেটি মোটেও ভালো নয়।” “আমি সন্তুষ্ট যে অডিটর জেনারেল কয়েকটি ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র চিহ্নিত করেছেন। একটি অধিকতর নাজুক ক্ষেত্র নিয়ে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন, সেটি হলো প্রক্রিয়াকরণের সময়ের বিষয়ে আমরা এখনও পিছিয়ে।”

প্রক্রিয়াকরণের সময়ে বিলম্ব

হোগানের রিপোর্টে বলা হয়, বিপুল কাজ বকেয়া থাকার বেশ কয়েকটি কারণ আছে। এর মধ্যে একটি হলো, বিবেচনাধীন পুরনো আবেদনের আগে নতুনগুলির প্রক্রিয়াকরণে দপ্তরের সিদ্ধান্ত।

হোগান বলেন, সিরীয় উদ্বাস্তু সঙ্কট সামলানোর মত সরকারের স্বল্প-মেয়াদী অগ্রাধিকারের কারণে আগে জমা দেয়া আবেদনের পরিবর্তে নতুনগুলি আগে ধরার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। 

অডিটে আরও দেখা যায় যে, আইআরসিসি এমন কিছু দপ্তরকে তাদের কাজ করে দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছে যাদের এই কাজ করার মত সুবিধাদি আছে কিনা তা আগে থেকে নির্ধারণ করা হয়নি।

আইআরসিসি পারিবারিক ও অর্থনৈতিক শ্রেণীর প্রোগ্রামের আবেদন প্রক্রিয়াকরণ দ্রুততর করতে ডিজিটাল পোর্টাল চালু করলেও সংস্থাটি উদ্বাস্তু শ্রেণীর জন্য সেটি করেনি। উদ্বাস্তু শ্রেণীর আবেদনকারীদের বেশিরভাগের জন্যই ডিজিটাল পোর্টাল সুলভ করা হয়নি বলে তাদেরকে বাধ্য হয়ে ই-মেলে আবেদন করতে হচ্ছে।

হোগান বলেন, আইআরসিসিকে বুঝতে হবে কেন তার কাজ বকেয়া পড়েছে, এগুলি কমিয়ে আনার জন্য তারা যেসব উপকরণ ব্যবহার করছে সেগুলি ঠিকভাবে কাজ করছে এটা নিশ্চিত করতে হবে এবং চাহিদা পূরণের জন্য তাদের সম্পদের যথাযথ বণ্টন করতে হবে। 

হোগান বলেন, “আমি মানি যে, কিছু বিষয় আছে যা এই দপ্তরের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, যখন কোনও দেশে বিশেষ পরিস্থিতির উদ্ভব হয় অথবা খুব গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র দেখার প্রয়োজন হয়। তবে আমরা দেখেছি, বেশিরভাগ বিলম্ব ঘটে আবেদন সংক্রান্ত এবং উদ্ভাবনী ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অদক্ষ কাজের ধারার কারণে।”

ইআই, সিপিপি এবং ওএএস প্রদান

রিপোর্টে আরও উঠে এসেছে যে, অ্যামপ্লয়মেন্ট ইন্স্যুরেন্স, ওল্ড এজ সিকিউরিটি এবং কানাডা পেনশন প্ল্যানের ভাতা সরবরাহের জন্য যে

তথ্যপ্রযুক্তির যে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয় সেটি “কয়েক দশকের পুরনো এবং তা ব্যর্থ হবার ঝুঁকি আছে।”

রিপোর্টে বলা হয়, এসব সুবিধার সরবরাহ ব্যবস্থা আধুনিকায়নে লিবারেল সরকারের পরিকল্পনা বিলম্বিত হওয়ায় এক্ষেত্রে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

রিপোর্টে প্রকাশ, ওএএস এর সরবরাহ ব্যবস্থা চলতি বছরেই বাস্তবায়নের কথা ছিল, কিন্তু সেটি ২০২৪ সালে চলে গেছে এবং ২০২৫-এও যেতে পারে।

রিপোর্টে বলা হয়, এই বিলম্ব “এসব সুবিধার অর্থ সরবরাহে গুরুতর বিভ্রাটের” ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। 

অডিটর জেনারেলের রিপোর্ট জাতিগত পরিচয়ের (অশে^তাঙ্গ) মানুষদের কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা ও অসাম্য কমিয়ে আনতে কেন্দ্রীয় সরকার কতটা সফল হয়েছে সেই বিষয়েও নজর দিয়েছে এবং উপসংহারে পৌঁছেছে যে, বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতাগুলোর একটিও পুরোপুরি দূর হয়নি।

রিপোর্টে নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার ও পুলিশি ব্যবস্থার দায়িত্বে নিয়োজিত ছয়টি সংস্থা ও দপ্তরের অডিট সম্পন্ন করে, যার মধ্যে ছিল কানাডা বর্ডার সার্ভিসেস এজেন্সি, কারেকশনাল সার্ভিস অব কানাডা, বিচার বিভাগ, পাবলিক প্রসিকিউশন সার্ভিস অব কানাডা, পাবলিক সেফটি কানাডা এবং আরসিএমপি।

অডিটে দেখা গেছে, প্রতিবন্ধকতাগুলো কমিয়ে আনার জন্য কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলি কতটা ভালোভাবে কাজ করছে তা নির্ধারণের জন্য নজরদারি বা পরিমাপ করা হয়নি।

রিপোর্টে বলা হয়, “এর ফলে, ছয়টি সংস্থা জানে না তাদের নেয়া ব্যবস্থা জাতিগত শ্রমিকদের কর্মজীবনে কোনওরকম পরিবর্তন এনেছে কিনা অথবা আনবে কিনা।” 

ডেমোক্রেটিক ইন্সটিটিউশন্স বিষয়ক মন্ত্রী ডোমিনিক লেব্লাঙ্ক বৃহস্পতিবার বলেন, কানাডা একটি বৈচিত্র্যময় দেশ এবং পাবলিক সার্ভিসে এর প্রতিফলন থাকা দরকার। তিনি বলেন, “অডিটর জেনারেলের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিশেষ করে আমাদের অগ্রগতি খতিয়ে দেখার জন্য তথ্য-উপাত্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে আরও অনেক কাজ এখনও বাকি রয়ে গেছে। এ বিষয়ে আমরা একমত এবং আমরা এই মূল্যায়ন গ্রহণ করি। আমাদের সরকার আগামী মাসগুলিতে ওইসব সুপারিশ বাস্তবায়ন ও সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করবে।”