মনের আয়নাতে

সাইদুল হোসেন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

সবলা নারী

‘অবলা নারী’ একটা অপবাদ নারী সমাজকে সহ্য করতে হচ্ছে যুগ যুগ ধরে যা সর্বদা, সর্বক্ষেত্রে সত্য নয়। এ অপবাদটা পুরুষ-শাসিত সমাজেরই তৈরী যাতে নারীদের মানসিকভাবে দুর্বল করে তাদেরকে নিজেদের দখলে রাখা যায়। স্বার্থ প্রণোদিত এই অপবাদের প্রতিবাদী কিছু চরিত্রের কথা আমি এখানে উল্লেখ করছি।

অসম সাহসী পঙ্গু নারী

(এক)

হাসপাতালে প্রতি সোমবারই দেখি এক বয়স্কা কানাডিয়ান মহিলা বেলা ১২টা থেকে তার হুইলচেয়ারে বসে কারো জন্য অপেক্ষা করছেন। তাঁর বাম পা’টা কাটা, সেখানে স্টীলের একটা নকল পা লাগানো। তাঁর সম্পর্কে কিছু জানতে ইচ্ছা জাগছিল বহুদিন ধরেই কিন্তু সঙ্কোচবশতঃ চুপ করে ছিলাম। একদিন এগিয়ে গেলাম। বললাম : গুড মর্নিং, ম্যাম। কেমন আছেন আপনি? এবং যদি কিছু মনে না করেন, আপনাকে দু’একটা প্রশ্ন করতে পারি কি?

তিনি হেসে দিয়ে বললেন :  ভালই আছি, থ্যাঙ্ক ইউ। কি প্রশ্ন আপনার?

বললাম: প্রতি সোমবার আমি ভলন্টিয়ার হিসেবে কাজ করি এখানে। এবং প্রতি সোমবারই আপনাকে এখানে লবিতে দেখি। আপনি কি আপনার পায়ের চিকিৎসা করাতে আসেন এখানে?

-না, পা নিয়ে কোন সমস্যা আপাততঃ আমার নেই। পায়ে একটা ইনফেকশন হওয়াতে গত বছর পা’টা কেটে ফেলতে হল। নকল পা’টা লাগাতে অনেক খরচ পড়েছে তবে আমার OHIP, প্রাইভেট ইন্সিউরেন্স এবং নিজের জমানো টাকা থেকে কিছু খরচ করে পা’টা লাগাতে হলো।

আমি হাসপাতালে আসি আমার dialysis-এর জন্য, আমার কিডনি দু’টো নষ্ট হয়ে গেছে। সপ্তাহে তিন দিন আসি, প্রতিদিন ৩-৪ ঘন্টা করে ডায়ালিসিস করে শরীর থেকে excess fluid বের করে দেয়, খানিকটা আরাম পাই। এর জন্য কোন খরচ করতে হয় না, আমার OHIP-ই সব খরচ বহন করে। বাকি জীবনটা এমনি কিডনি দু’টোর ডায়ালিসিস করেই কাটাতে হবে, এটাকে আমার ভাগ্যের লিখন বলেই মেনে নিয়েছি।

আমার এক বোন ওর একটা কিডনি আমাকে দিতে চায় কিন্তু আমি রাজী হচ্ছি না কারণ ব্যাপারটা বড় রিস্কি, আমার জন্যও, আমার বোনের জন্যও। আমার দেহ ওর কিডনিটা অ্যাক্সেপ্ট করবে না রিজেক্ট করবে সেটা জানা নেই। তাছাড়া একটা কিডনি হারিয়ে বোনটা আমার একটা মাত্র কিডনির উপর নির্ভর করে অসুস্থ অবস্থায় ভয়ে ভয়ে বাকি জীবনটা কাটাবে এ-কথা ভাবলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। এটা একটা বড়ধরনের স্বার্থপরতা, জেনেশুনে আমি ওকে বিপদগ্রস্ত করতে, পঙ্গু করে ফেলতে রাজী নই।

জিজ্ঞাসা করলাম : আপনাকে হাসপাতালে আনা-নেয়া করে কে? বাড়িতে আপনার দেখাশোনা করে কে? চলতে-ফিরতে তো আপনার খুব কষ্ট হয়।

মহিলা বললেন : হ্যাঁ, কষ্ট তো হয়-ই। কিন্তু সহ্য হয়ে গেছে, নিজের ভার তো নিজেকেই বইতে হবে। যেটুকু না করলেই নয় সেটুকুই করি, কিছু সাহায্য সহযোগিতা এদিক-ওদিক থেকে পেয়ে যাই, আত্মীয়-বন্ধুরা সহানুভূতিশীল। তাঁদের ধন্যবাদ। হাসপাতালে আসা-যাওয়া করি Wheel-Trans-এ চড়ে, সরকারী খরচে। তবে আমার এই অসহায়তার জন্য আমি নিজেকে ধিক্কার দিই না, একজন পজিটিভ অ্যাটিচিউডের মানুষ আমি, সবকিছুই মেনে নিয়েছি। Complaining doesn’t help. তাছাড়া নিত্য সাহায্য করবে কে?

সব শুনে বললাম : আপনাকে এবং আপনার মনোবলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনাকে অনেক কথা বলিয়ে ছাড়লাম বলে দুঃখিত।

তিনি হাসিমুখে বললেন : না, এতে আমি কিছু মনে করিনি মোটেই। আমি একজন সহজ-সরল চরিত্রের মানুষ, কথা বলতে ভালবাসি।

আগামী সোমবার দেখা হবে বলে আমি বিদায় নিলাম। তিনিও বললেন : বা-ই, আবার দেখা হবে।

(দুই)

ঠিক একই রকম দৃঢ়চেতা এক পঙ্গু নারীর সঙ্গে আমার দেখা হয় প্রায় প্রতিদিন। তিনি, তাঁর এক কন্যা (৬৩) এবং আমরা স্বামীস্ত্রী একই বিল্ডিংয়ের একই ফ্লোরে পাশাপাশি তিনটা অ্যাপার্টমেন্টে থাকি। মা একা থাকেন একটা এপার্টমেন্টে, মেয়ে মুখোমুখি অপর অ্যাপার্টমেন্টে। মা হুইলচেয়ারে বসে চলাফেরা করেন, মেয়ে তাঁর কাজে ব্যস্ত থাকে সপ্তাহে পাঁচদিন। মাঝে মাঝে দেখি মা-মেয়ে গ্রোসারি নিয়ে বিল্ডিংয়ে ঢুকছে, হাই-হ্যালো করি। কখনো বা আমাদের ফ্লোরে করিডোরেই দেখা হয় মা অথবা মেয়ের সঙ্গে। সদাই হাসিমুখ দু’জনের।

মেয়েকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম যে তার মা খুব স্বাবলম্বী। ডাক্তার, গ্রোসারি, হেয়ার-ড্রেসার সর্বত্রই একা-একা যেতে চান, মেয়েকে তেমন টানাটানি করতে চান না। বলেন : তোর তো স্টোরে একটা রেগুলার জব্্ রয়েছে, বরং সেটাতে মনোযোগ দে। ঘরের বিছানা করা, রান্না করা, ক্লীনিং নিজ হাতে করতেই বেশী পছন্দ করেন। অবশ্য মায়ের সব কথা আমি সবসময় শুনি না, যা করা দরকার করে ফেলি। মা তখন বলে : মার্থা, তুই কি আমাকে আরো পঙ্গু, আরো নির্ভরশীল করে ফেলতে চাস? আই লাভ মাই মাম্মী।

ক্রীসমাসের ঠিক আগের দিন আমাদের করিডোরেই বৃদ্ধার সঙ্গে দেখা, হুইলচেয়ার চালিয়ে ঘরে যাচ্ছেন। বললাম : মেরি ক্রিসমাস, ম্যাম। তিনি হাসিমুখে বললেন : সেম্ টু ইউ, স্যার। সতেজ গলা।

(তিন)

কর্মচঞ্চল বৃদ্ধা রমণীগণ

যথারীতি ভলন্টিয়ার ডিউটি দিচ্ছিলাম একদিন। এক পর্যায়ে এক বয়স্কা মহিলা তাঁর বৃদ্ধা মা’কে হুইলচেয়ারে বসিয়ে ঠেলতে ঠেলতে আমাদের ইনফর্মেশন ডেস্কে নিয়ে এলেন মা’কে কোথায় নিয়ে যাবেন চিকিৎসার জন্য সেই খবর জানতে। কথা প্রসঙ্গে আমার সহকর্মী ভলান্টিয়ার রীটার দিকে ইশারা করে বললাম : ওর বয়স গতমাসে ৯৪ পার হয়েছে অথচ কোন আলস্য বা জড়তা নেই ওর দেহে অথবা চলাফেরায়। একজন যুবতীর মতই চঞ্চল পায়ে হাসপাতালের নানা স্থানে রোগী অথবা তাঁদের আত্মীয়-বন্ধুদের পৌঁছে দিচ্ছে সারাক্ষণ সপ্তাহে দু’টি দিন, কোন ক্লান্তি নেই, কারো সাহায্য নিতেও নারাজ। বয়সের কথা বলে ওকে প্রশংসা করতে গেলে সে হেসে উড়িয়ে দেয়, বলে : ইট্্স্্ নো বিগ ডীল। আমার বয়সের কথা কখনো আমাকে মনে করিয়ে দিও না, আমি তাহলে বুড়ি হয়ে যাবো। রীটা সবসময় সুন্দর রঙীন জামাকাপর জুতা পরে, ঠোটে রং লাগিয়ে সেজেগুজে থাকতে ভালবাসে।

আমার কথা শুনে মহিলা বললেন : ঠিক আমার নানীর মত। নানীর বয়স এখন ১০১ বছর, একটা ওল্ড এজ হোমে থাকেন, একা (নানা গত হয়েছেন কয়েক বছর আগে), তবে তাঁর সব কাজ তিনি নিজেই করতে পছন্দ করেন। কারো সাহায্য নিতে চান না। খুব ফিটফাট্্ মহিলা আমার নানী।

জিজ্ঞাসা করলাম : তাঁর রান্না, গ্রোসারি ইত্যাদি কে করে দেয়?

গ্রোসারিটা আমরা করে দিই তবে রান্নাটা তিনি নিজেই করেন। খুব কেয়ারফুল সব বিষয়েই, অ্যান্ড কন্ফিডেন্ট, কোন বিপদাপদ ঘটাননি আজ পর্যন্ত। লং লীভ মাই গ্রান্ডমা!

রীটাকে একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম : তোমার নাতিপুতির সংখ্যা কত? বলল : একটিও না। অবাক হয়ে বললাম : সে কি করে হয়?

হেসে দিয়ে বলল : অতি সহজ ব্যাপার কারণ আমি বিয়েই করিনি কোনদিন!

(চার)

একদিন সার্জারি ইনফর্মেশন ডেস্কে কাজ করছি এমন সময়ে এক ইটালিয়ান আমার কাছে এসে দাঁড়াল। জানতে চাইলাম কোন সাহায্য করতে পারি কিনা। বলল : নো থ্যাঙ্ক ইউ। আমার শাশুড়িকে দেখতে এসেছি, বড়ধরনের একটা সার্জারি হয়েছে, ভালোই আছেন।

জানতে চাইলাম তার শাশুড়ির বয়স কত। সে বলল : সাড়ে ৯৫ বছর। বাট শী ইজ স্ট্রঙ্গার দ্যান হার টু ডটার্স হু আর ইন দেয়ার আর্লি সেভেন্টিজ। তুমি তাঁর সচ্ছন্দ অনাড়ষ্ট চলাফেরা দেখলে অবাক হয়ে যাবে। শী ইজ স্টিল দ্য বস্্, বলেই হেসে দিল।

মরিস ওচোলা সিমে

মরিস আফ্রিকা মহাদেশের কেনিয়ার লোক, সেখানে শিক্ষকতা তাঁর পেশা। স্কলারশীপ নিয়ে উচ্চ শিক্ষার একটা ডিপ্লোমা নিতে কানাডায় এসেছিল টরন্টো ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতে। এক বছরের স্কলারশিপ। বছর শেষে ডিপ্লোমা হাতে নিয়ে দেশে ফিরে যায় মরিস।

শীতকাল। বাইন্ডার, হাইলাইটার, কিছু নোটবুক,কলম ইত্যাদি কিনতে আমাদের স্টোরে এসেছিল একদিন। সেই থেকে পরিচয়। আসত মাঝে মাঝে, কেনাকাটার প্রয়োজন না থাকলেও আসত, গল্প করার জন্য আসত। সাদাসিধা সরল প্রকৃতির লোক। স্ত্রীপুত্র দেশে রেখে এসেছে, মন পড়ে আছে ওখানে। পরিচিত লোকজনের বড় অভাব, যারা আছে তারাও নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত, মরিসকে সাহায্য সহায়তা করার মত সময় বা মানসিকতা ওদের নেই। কথা বলে নিজেকে হাল্কা করার মত কেউ নেই, তাই আমার কাছে সময় পেলেই ছুটে আসত। দু’জনে মিলে একটা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়ে বাস করত। বলত, বড় খরচের দেশ এই কানাডা, স্কালারশিপের ডলারে কিছুতেই কুলাতে চায় না। রান্নাবান্নায় অভ্যস্ত নয়, তাই খাওয়াদাওয়ার বড় কষ্ট। কোথায় গেলে আফ্রিকান ফুডস্্ পাওয়া যাবে, সস্তায়  শীতের কাপড় পাওয়া যাবে, চুল কাটানো যাবে, ইত্যাদি খবর জানতে ঘনঘন আসত আমাদের স্টোরে। যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি মরিসকে সাহায্য করতে।

একদিন এসে বলল যে ওর বাম হাতে ব্যথা, মাথায় ব্যথা, দেহটাতে কেমন জানি একটা আলস্য জেঁকে বসেছে, কিছুই ভাল লাগছে না।

জিজ্ঞাসা করলাম : কোন ওষুধপত্র খেয়েছ? অন্ততঃ টাইলেনল ট্যাবলেট?

মাথা নেড়ে বলল : না, কিছুই খাইনি। গিয়েছিলাম ফার্মেসিতে, ওখানে ওষুধের বড় দাম।

বললাম : সাধারণ গায়ে ব্যথা, ঠান্ডা লাগা, সর্দি ও কাশি ইত্যাদির জন্য টাইলেনল ট্যাবলেটটা খুবই উপকারী। ঘরে একটা কন্টেনার রাখা খুবই জরুরী। আট-নয় ডলার খরচ করলে ১০০ ট্যাবলেটের একটা কন্টেনার কিনে নিতে পার।

কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে মৃদু স্বরে মরিস জানালো যে ওষুধের জন্য অতগুলো ডলার খরচ করার মত আর্থিক সামর্থ্য ওর নেই, তাই কষ্টটা সহ্য করে যাচ্ছে। জানতে চাইল ওর দেশের মত এখানেও কি ফার্মেসিতে গেলে এই ওষুধটার ৫টা অথবা ৭টা ট্যাবলেট কিনতে পাওয়া যাবে?

বললাম : না।

রাত তখন প্রায় ৯টা, স্টোর বন্ধ করার সময় হয়ে এসেছে। মরিসকে জিজ্ঞাসা করলাম : সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে কি? তাহলে তোমাকে বাসায় নিয়ে গিয়ে কিছু টাইলেনল ট্যাবলেট দিতে পারি, আমার কাছে প্রচুর আছে।

আমার কথা শেষ হলে সে বলল : তুমি আমার জন্য এত কষ্ট কেন করবে? আমি তো তোমার কেউ নই!

বললাম : তুমি একজন মানুষ তো বটে? ওসব চিন্তা বাদ দাও। তারপর স্টোর বন্ধ করে ওকে বাসায় নিয়ে এসে অনেকগুলো ট্যাবলেট একটা কৌটাতে ভরে ওর হাতে তুলে দিলাম। বললাম : খাওয়ার পর ২টি করে ট্যাবলেট একসাথে পানি দিয়ে গিলে ফেলবে, তবে কখনো দিনে ৬টার বেশী খাবে না, খেলে ক্ষতি করবে। আর বেশী করে পানি খাবে সারাদিন। সব ঠিক হয়ে যাবে। আরো বললাম যে এখন তোমাকে দেবার মত খাবার আমার ঘরে নেই, দুঃখিত। ভবিষ্যতে হবে।

ওষুধের কৌটাটা হাতে নিয়ে মরিস বলল : থ্যাঙ্ক ইউ…। আর বলতে পারল না, ওর গলাটা ধ’রে এলো। এলিভেটর পর্যন্ত ওকে এগিয়ে দিয়ে গুড নাইট, টেক কেয়ার, বী ইন টাচ্্ বলে ওকে বিদায় দিলাম।

২০০৪ সালের ১লা এপ্রিল

গতকাল মরিসকে দাওয়াত দিয়েছিলাম পরদিন দুপুর ১টায় আমার বাসায় এসে লাঞ্চ করতে। সে খুব খুশী হয়ে রাজীও হয়েছিল। কিন্তু বেলা ২টা পর্যন্ত তার দেখা না পেয়ে ফোন করলাম। বললাম : তোমার আসার কথা বেলা ১টায়, আর এখন বাজে ২টা ১০ মিনিট। টেবিলে খাবার ঠান্ডা হচ্ছে, ক্ষুধায় কষ্ট পাচ্ছি অথচ তোমার দেখা নেই। দেরি করছ কেন?

জবাবে সে যা বলল তাতে অবাক না হয়ে পারলাম না।  সে বলল : আজ তো ১লা এপ্রিল, এপ্রিল ফুল্্’স ডে। আমি আশঙ্কা করেছিলাম যে দাওয়াতের কথা বলে তুমি হয়ত আমাকে ‘এপ্রিল ফুল’ বানাবে, তাই তোমার ওখানে যাইনি। সরি, ভেরী সরি, আমি এক্ষুণি আসছি।

মরিস এলো, টেবিলে সাজানো খাবার দেখে বলল : বেগ্্ ইউর পার্ডন, ভেরী সরি, ভুল বুঝে তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য।

বললাম : তুমি না বলা পর্যন্ত ‘এপ্রিল ফুল’ কথাটা আমার মাথায়ই আসেনি! সে যা হোক, খেতে বস।

লাঞ্চ খেয়ে মরিস দারুণ খুশী। বললো, কানাডায় আসার পর গত কয়েক মাসের ভেতর এটাই তার বেস্ট লাঞ্চ। মেনি মেনি থ্যাঙ্কস্। মরিস বিদায় নিল।

সে চলে যাওয়ার পর অনেক কিছু ভাবনাচিন্তার মাঝে একটা  কথা বারবার মনে পড়তে লাগলো যে সেই সুদূর অন্ধকার মহাদেশ আফ্রিকাতেও তাহলে আমাদের বৃটিশ ইন্ডিয়ার মত এপ্রিল ফুল্’স ডে-র কালচারটা সমভাবে প্রচলিত ছিল? ধন্য বৃটিশ রাজ!

জুন মাসের শেষে মরিসের দেশে ফিরে যাওয়ার কথা, সেটা আমাকে সে জানিয়েছিল কিছুদিন আগে। একদিন দুপুর বেলা দরজায় কেউ নক্ করছে শুনে দরজা খুলে দেখি কম্পিøট স্যুট পরিহিত মরিস। কি ব্যাপার? বিনা খবরে তুমি এখানে!

কালো মুখ আরো অধিক কালো করে মরিস বললো : তোমাকে অসময়ে বিনা খবরে বিব্রত করার জন্য আমি দুঃখিত এবং ক্ষমা প্রার্থী। আমার বড় বিপদ! দেশে ফেরার উদ্দেশ্যে টরন্টো এয়ারপোর্টে যাচ্ছি। সব মালপত্র নীচে অপেক্ষমান ট্যাক্সিতে। অথচ ট্যাক্সি ভাড়া দেবার মত ডলার আমার কাছে নেই, আমি সম্পূর্ণ শূন্যহস্ত। তুমি কি আমাকে ৫০টা ডলার দান করে সাহায্য করতে পার? ডলারগুলো তোমাকে ফেরত ফেরত দেয়ার সাধ্য আমার নেই। তুমি কি আমাকে এই সাহায্যটুকু করবে? তুমি ছাড়া আর কেউ নেই যার কাছে এই বিপদে হাত পাততে পারি।

তার অসহায় অবস্থাটা, করুণ সজল মুখটা আমাকে ব্যথিত করে তুলল। বিনা বাক্য ব্যয়ে ৫০টি ডলার মরিসের হাতে তুলে দিলাম। বললাম : বা-ই, এ্যান্ডগুড লাক!

মরিস আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরল। ওর দু’চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। অস্পষ্ট গলায় ‘থ্যাঙ্ক ইউ সাইদ, থ্যাঙ্ক ইউ, মে গড ব্লেস ইউ’ বলে এলিভেটরের ভেতরে ঢুকে গেল।

একটা কথা বলতে ভুলে গেছি যার জন্য আমি মরিসের কাছে কৃতজ্ঞ। সে আমাকে আফ্রিকার অতি প্রচলিত আঞ্চলিক ভাষা ‘সোয়াহিলি’ শিখিয়ে দিয়ে গেছে। আমি আজো সুযোগ পেলেই লোকজনের সঙ্গে সোয়াহিলি ভাষায় কথা বলার চেষ্টা করি। লোকেরা খুশী হয়। মরিসকে ধন্যবাদ। (চলবে)

সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা