গাড়ি চুরি বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে বীমার প্রিমিয়াম

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ : গাড়ির চুরির সমস্যা বাড়তে থাকায় কানাডায় কিছু গাড়ির বীমার হার বাড়ছে। খবর এরিক স্টবার – গ্লোবাল নিউজ।

বীমার দর সমন্বয়কারী একটি সাইট রেটস.সিএ খবর দিয়েছে যে, যেসব মডেলের গাড়ি বেশি চুরি হয় সেগুলির বীমার প্রিমিয়াম গত দুই বছরে ২৫ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

রেটস.সিএ-র খবর প্রকাশের পরদিন বুধবার কানাডার ইন্স্যুরেন্স ব্যুরো গ্লোবাল নিউজকে বলেছে, “আমাদের জানামতে কিছু বীমা সংস্থা এই ‘গাড়ি চুরির উচ্চঝুঁকি সারচার্জ’ আদায় করছে, সেটা কেবল কিছু উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে এবং/অথবা উচ্চ ঝুঁকি আছে এমন গাড়ির ক্ষেত্রে।”

টরন্টোতে সিসি ক্যামেরায় ধরাপড়া গাড়ি চুরির একটি দৃশ্য। ছবি : সিটিভি

ব্যুরো বলেছে, “ইন্স্যুরেন্স সংস্থার কথামত বীমার পলিসি হোল্ডার তার গাড়ির কার্যকর সুরক্ষায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করলে অনেক সংস্থাই ওই সারচার্জ মওকুফ করছে।”

গাড়ি চুরির হার বেড়ে যাবার বিষয়ে তদন্তকারী সংস্থা ইকুইটি অ্যাসোসিয়েশনের (Équité Association) মতে  যেসব গাড়ির ক্ষেত্রে বীমার বাড়তি হার প্রযুক্ত হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে হোন্ডা সিআর-ভি যেটি কানাডায় সবচেয়ে বেশি চুরি হওয়া গাড়ির মডেল। এ ছাড়াও আছে লেক্সাস আরএক্স সিরিজ, ফোর্ড এফ-১৫০ এবং হোন্ডা সিভিক।

ইকুইটির অনুসন্ধান বিভাগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ব্রায়ান গ্যাস্টি গ্লোবাল নিউজকে বলেন, “এটি জাতীয় সঙ্কট, ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাস ২০২২ সালের চেয়ে বেশি খারাপ প্রমাণিত হচ্ছে।”

আগে একসময় গ্যাস্টি গ্লোবাল নিউজকে বলেছিলেন, কানাডা চুরি করা “গাড়ির উৎস দেশ” হয়ে উঠেছে এবং আন্তর্জাতিক চোরেরা এই দেশকে টার্গেট করেছে কারণ এখানে চুরি করা সহজ। চোরেরা মুনাফা অর্জনের জন্য চুরি করা গাড়ি আফ্রিকার মত বিভিন্ন জায়গায় পাচার করে।

গাড়ি বেশি চুরি যাওয়ায় বীমা কোম্পানিগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রেটস.সিএ-র তথ্যমতে, ২০২২ সালে কোম্পানিগুলি চুরি যাওয়া গাড়ির বীমা দাবি মেটাতে ১০০ কোটি ডলারের লোকসানের মুখে পড়ে। এটি ছিল ২০২১ সালের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি।

ইকুইটির তথ্য অনুযায়ী, অন্টারিওতে গাড়ি চুরির হার ২০২১ সালের চেয়ে ২০২২ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, আর কুইবেকে বাড়ে ৫০ শতাংশের বেশি, আলবার্টায় বাড়ে ২০ শতাংশের কাছাকাছি এবং আটলান্টিক কানাডায় প্রায় ৩৫ শতাংশ।

বীমা কোম্পানিগুলি এখন দৃশ্যত গাড়ি চুরির ফলে সৃষ্ট ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে।

রেটস.সিএ-র খবর অনুযায়ী, ৩৫ বছর বয়সী একজন গাড়িচালক, যিনি আগে থেকে জানতেন না, দেখতে পান যে, হোন্ডা সিআর-ভি গাড়ির জন্য তার বীমার অংশ ২০২২ ও ২০২৩ সালের মধ্যে ২৬ শতাংশ বেড়ে গেছে।

কিছু বীমা কোম্পানি, যেমন সিএএ, চুরির উচ্চ ঝুঁকি আছে এমন গাড়ির ক্ষেত্রে বাড়তি প্রিমিয়ামের অতিরিক্ত ৫০০ ডলার চার্জ আদায় করছে। তবে গাড়ি চালকরা যদি চুরি রোধ করার কোনও যন্ত্র যেমন হুইল লক কেনেন, তাহলে সারচার্জ মওকুফ করা হয়।

রেটস.সিএ-র খবর অনুযায়ী, আভিভা, গোর মিউচুয়াল এবং টিডি ইন্স্যুরেন্সে “হাই থেফ্ট ভেহিক্যাল সারচার্জ” এড়ানোর জন্য কাস্টমারদেরকে তাদের গাড়িতে কানাডীয় কোম্পানি ট্যাগ-এর একটি ট্র্যাকিং সিস্টেম ইন্সটল করে নিতে হয়।

খবরে বলা হয়, ইন্সটলেশনের খরচ ৪০০ ডলারের মত এবং গাড়ির যেসব যন্ত্রাংশ সচরাচর বিক্রি করা হয়, সেগুলির ওপর আলাদা ট্র্যাকার যুক্ত করা হয় যা যন্ত্রাংশ পুনঃবিক্রি কঠিন করে তোলে এবং গাড়ি পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা বাড়ায়। কিছু কোম্পানি ট্যাগের সিস্টেম ইন্সটল করার বিনিময়ে কিছু প্রতিদান দেয়, অন্যরা শুধু সারচার্জ মওকুফ করে।

রেটস.সিএ-র সেল্স টিমের নেতা ডেনিয়েল ইভান্স গ্লোবাল নিউজকে বলেন, বাড়তি সারচার্জ বীমা কোম্পানিগুলির চালু করা সম্পূর্ণ নতুন একটি উদ্যোগ যা শুরু হয়েছে মাত্র দুয়েক মাস আগে। এই মুহূর্তে মুষ্ঠিমেয় কোম্পানি এটি চালু করেছে, তবে ভবিষ্যতে পরিস্থিতি পাল্টাতে পারে।

ইভান্স বলেন, কাস্টমাররা তাদের প্রিমিয়াম বৃদ্ধির বিষয়ে আগেভাগে নোটিশ পেতে পারেন, তারপর তাকে চুরি রোধে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার বিনিময়ে এটি প্রত্যাহারের অপশন দেয়া হতে পারে।

ইভান্স বলেন, “বাজারে প্রচুর সংস্থা পছন্দের (সারচার্জ কমানোর) সুযোগ দিচ্ছে।”

গাড়ি চুরি রোধের জন্য ইকুইটি “একাধিক স্তরের” ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে, যাতে  চোরদের নিবৃত্ত করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা থাকবে। এর মধ্যে আছে গাড়ির দরজা সব সময় লক করে রাখা, উজ্জ্বল আলো আছে এমন জায়গায় এবং সম্ভব হলে নিরাপদ গ্যারেজে গাড়ি পার্ক করা, বাড়িতে থাকার সময় বিকল্প চাবি (কি ফব) বন্ধ রাখা অথবা সেটিকে আরএফআইডি-রোধক পাউচে (RFID-blocking pouch) রাখা, যাতে চোরেরা সেটি সক্রিয় করতে না পারে এবং চাকায় লক লাগিয়ে দেয়া।

গাড়ি চুরি বেড়ে যাবার বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার কি পদক্ষেপ নিচ্ছে জানতে চাওয়া হলে কানাডা বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি (CBSA) বুধবার এক ই-মেল বার্তায় জানায়, তাদের সম্পদ বা সংস্থান “পোর্ট অব এন্ট্রিতে হুমকি বা পরিষেবার চাহিদা অনুযায়ী সাড়া দিতে কার্যকরভাবে নমনীয় থাকার উপযোগী করে কৌশলগতভাবে বরাদ্দ করা হয়েছে।”

“সিবিএসএ সম্ভাব্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজীকরণ চিহ্নিত করতে সব নৌযানের সব কনটেনারের ঝুঁকি মূল্যায়ন করে। সব কনটেনার ও তার ভেতরের পণ্য সম্পর্কে ঘোষণা  দেয়া বাধ্যতামূলক এবং সেটি ঝুঁকি মূল্যায়নের উপায়।”

সংস্থা জানায়, কনটেনারে গাড়ি চিহ্নিত করার জন্য তারা উপযুক্ত প্রযুক্তি যেমন এক্স-রে অথবা গামা-রে যন্ত্রও ব্যবহার করেন।