ক্যালগারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় বাংলাদেশী শিক্ষার্থী ফাইরুজ শাফিন মুনমুন নিহত
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ : কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাংলাদেশী মেয়ে ফাইরুজ শাফিন মুনমুন এক সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন। ২১ বছর বয়সী মুনমুন বাংলাদেশ থেকে ক্যালগারি এসেছিলেন একজন শিক্ষার্থী হিসাবে। খবর সিটিভি নিউজের।
তার এই মর্মান্তিক মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাভিভূত হয়ে পড়েন দেশে থাকা তাঁর বাবা ও মাসহ অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনেরা। গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যেও।
প্রাপ্ত খবরে জানা যায় মুনমুনের বাবা মা উভয়েই ডাক্তার। তাঁরা থাকেন ঢাকায়। মেয়েকে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন অনেক আশা ও স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু মুহুর্তের এক দুর্ঘটনায় সব স্বপ্ন, সব আশা শেষ হয়ে গেল। মুনমুন এখন দেশে ফিরে যাবেন বাবা-মায়ের কাছে। তবে নিথর লাশ হয়ে।
মুনমুনের বাবা-মায়ের যেমন অনেক স্বপ্ন ছিল মেয়েকে নিয়ে, তেমনি নিশ্চই অনেক স্বপ্ন ছিল মুনমুনেরও। একদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন শেষ হবে। ফিরে যাবেন বাবা-মায়ের কাছে। অথবা ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদন করবেন কানাডায়। শুরু হবে কর্মজীবন। নতুন দেশে নতুন জীবন। আরো কতশত স্বপ্ন। কিন্তু এ সব স্বপ্ন মুহুর্তেই মিলিয়ে গেল পিচ ঢালা কালো সড়কে। বাবা মাকে বাকি জীবন বয়ে বেড়াতে হবে অসহনীয় কষ্ট ও বেদনার এই দুঃসহ স্মৃতি।
মুনমুন ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিলেন। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে একটি ভাড়া বাসায় অন্য আরো কয়েকজন ছাত্রীর সঙ্গে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর খুব সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যায়ে যাচ্ছিলেন ক্লাশ করার জন্য। তখন সকাল ৮:১৫ মিনিট। ব্যস্ত একটি সড়ক পাড় হতে গিয়ে অচমকাই এক গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে পড়েন মাটিতে। মারাত্মক আহত অবস্থায় তাঁকে নিকটস্থ হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসরা তাঁদের সর্বাত্মক চেষ্টা করেও তাঁকে বাঁচাতে পারেননি। হাসপাতালে নেয়ার কিছুক্ষণ পরেই মুনমুন মৃত্যুর কোলে ঢলে পরেন।
পুলিশের বরাত দিয়ে সিটিভি নিউজ জানায়, মুনমুন জেব্রাক্রসিং এ না গিয়ে শর্টকার্টে ব্যস্ত একটি রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আর ঠিক তখনই একটি গাড়ি ঐ পথ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে আঘাত করে। গাড়িটি চালাচ্ছিলেন ৪১ বছর বয়সী এক পুরুষ চালক। দুর্ঘটনার পর গাড়ির চালক ঘটনাস্থলেই ছিলেন পুলিশ না আসা পর্যন্ত।
দুর্ঘটনার পর তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, গাড়ির চালক নির্ধারিত গতিতেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তিনি মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন এমন প্রমাণও পাওয়া যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে সকালে সূর্যের আলো তীর্যকভাবে চোখের উপর পড়াতে চালক হয়ত রাস্তায় কোন পথিকের উপস্থিতি ঠিকভাবে ঠাহর করতে পারেননি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর ক্যালগারিতে মুনমুনের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয় স্থানীয় আকরাম জুম্মা ইসলামিক সেন্টারে। স্থানীয় বাংলাদেশী কমিউনিটির সদস্য ছাড়াও মুসলিম কমিউনিটির অন্যান্য সদস্যরা এতে অংশ নেন।
স্থানীয় ‘বাংলাদেশ কানাডা এসোসিয়েশন অব ক্যালগারি’র সদস্য কে. চৌধুরী সিটিভি নিউজকে বলেন, ‘মুনমুনের অনেক স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সেটি শেষ হয়ে গেল এরকম একটি দুঃখজনক ঘটনার মধ্য দিয়ে। ‘
ইসলামিক সেন্টারের পরিচালক জুবায়ের সিদ্দিকী সিটিভিকে বলেন, আমাদের সমগ্র কমিউনিটির জন্য সত্যিই অত্যন্ত দুঃখজনক মুহুর্ত এটি- মুসলিম কমিউনিটির জন্য, বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য এবং ক্যালগারী ইউনিভার্সিটির জন্য। এটি অসহনীয়।
মুনমুনের মরদেহ এই সপ্তাহে দেশে পাঠানো হবে।