বয়স্ক অভিবাসীদের একাকীত্বে ভোগার সম্ভাবনা বেশি কানাডায়

একাকীত্বের ব্যাপকতর নেতিবাচক প্রভাব আছে, যার মধ্যে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য নাজুক হবার উচ্চতর ঝুঁকি, অসুস্থতা, অপারগতা, দুর্বলতা এবং মৃত্যু

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ২০১৯/২০২০ সালে প্রায় ১১ লাখ বয়স্ক কানাডীয় (১৯.২%) নিঃসঙ্গতায় ভুগেছেন, যার মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীদের একাকীত্বে ভোগার ঘটনা ছিল উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। পুরুষদের মধ্যে কানাডায় জন্মগ্রহণকারী বয়স্কদের চেয়ে ইউরোপীয় এবং অ-ইউরোপীয় উভয় ধরণের অভিবাসী বয়স্ক পুরুষদের নৈঃসঙ্গে ভোগার ঘটনা ছিল অপেক্ষাকৃত বেশি। গত ১৯ জুলাই এই গবেষণা তথ্যটি প্রকাশ করে স্ট্যাটিসটিকস কানাডা। গবেষণাটি পরিচালনা করেন মো. কামরুল ইসলাম ও হিদার গিলমোর।

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার ঐ গবেষণায় আরো বলা হয়, নারীদের মধ্যে কানাডায় জন্মানোদের চেয়ে ইউরোপীয় অভিবাসীদের একাকীত্ব বোধ করার সম্ভাবনা বেশি ছিল। নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে, যারা প্রাপ্তবয়সে (১৮ থেকে ৪৪ বছর) অভিবাসী হয়েছেন এবং দীর্ঘমেয়াদে এদেশে আছেন (২০ বছর বা তার বেশি সময় ধরে কানাডায় বসবাসকারী) তাদের নৈঃসঙ্গে ভোগার সম্ভাবনা কানাডায় জন্মগ্রহণকারী মানুষের তুলনায় বেশি ছিল। একাধিক পুরনো রোগ আছে (যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগ অথবা একইসঙ্গে বিষণ্নতা) এমন বয়স্কদের এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে যোগ দিতে বাধা আছে এমন বয়স্কদের একাকীত্বে ভোগার সম্ভাবনাও বেশি।

কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় অভিবাসীদের একাকীত্বে ভোগার ঝুঁকি বেশি। ছবি : নর্থ রিভার হোম কেয়ার

এ বিষয়ে এরই মধ্যে যা জানা

–  কানাডীয়দের মধ্যে নৈঃসঙ্গবোধের উপস্থিতি ক্রমশ সাধারণ ঘটনা হয়ে উঠছে। ব্যক্তির স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ক্ষেত্রে একাকীত্বের ব্যাপকতর নেতিবাচক প্রভাব আছে, যার মধ্যে রয়েছে মানসিক স্বাস্থ্য নাজুক হবার উচ্চতর ঝুঁকি, অসুস্থতা, অক্ষমতা, দুর্বলতা এবং মৃত্যু। 

–  কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় অভিবাসীদের একাকীত্বে ভোগার ঝুঁকি বেশি। অবশ্য, অভিবাসীদের বিভিন্ন উপবিভাগে (কান্ট্রি অব অরিজিন, অভিবাসনের সময় বয়স এবং অভিবাসনের পর থেকে পেরুনো সময়ের ভিত্তিতে নির্ধারিত) কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় একাকীত্বের ঝুঁকির পার্থক্য কতটা সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত সামান্যই জানা গেছে।

– পুরুষদের চেয়ে নারীদের একাকীত্বে ভোগার ঘটনা বেশি, তবে বয়স্ক কানাডীয়দের বিভিন্ন অভিবাসী উপবিভাগে জেন্ডারের ভিত্তিতে একাকীত্ব বোধের পার্থক্য সম্পর্কেও সামান্যই জানা গেছে।

গবেষণা কর্মটির ভূমিকায় যা বলা হয়

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার এই গবেষণার ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়, কানাডীয়দের মধ্যে বিদ্যমান একাকীত্বের বিষয়টি নীতি-নির্ধারক ও কর্মসূচি প্রণয়নকারীদের গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে। কারণ, কানাডীয়দের স্বাস্থ্য ও কল্যাণের ওপর এর ব্যাপকতর প্রভাব রয়েছে। নিঃসঙ্গ ব্যক্তিরা দুর্বল মানসিক ও শারীরীক স্বাস্থ্যের ঝুঁকিতে থাকেন। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত চাপ, বিষন্নতা ও উদ্বেগ এবং অসুস্থতা, অক্ষমতা ও দুর্বলতা। উদাহরণস্বরূপ, অনুদৈর্ঘ্য উপাত্ত ব্যবহার করে ডেভিস ও সহকর্মীরা প্রকাশ করেছেন যে, কম পরিমাণে একাকীত্বে ভোগা বয়স্ক ব্যক্তিদের তুলনায় মাঝারি ধরণের বা খুব বেশি একাকীত্বে ভোগা বয়স্ক ব্যক্তিদের দুর্বল হয়ে পড়ার ঘটনা বেশি। অন্যান্য গবেষণায় দেখা গেছে, সামাজিককর্মকাণ্ডে খুব কম অংশ নেয়া লোকেদের মধ্যে মৃত্যুর ঝুঁকিও বেশি।

২০২১ সালে, ১৫ বছর ও তার বেশি বয়সী প্রায় ১৩% কানাডীয় জানান, তারা সব সময় অথবা প্রায়শ নিঃসঙ্গ বোধ করেন। এদের  মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি পরিমাণে (১৫% বনাম ১১%) একাকীত্ব বোধ করেন। অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্কদের (৬৫ বছর ও তার বেশি বয়সের) ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একাকীত্বের বোধ বাড়তে থাকে এবং এর কারণ সম্ভবত বিশেষভাবে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত, যেমন সামাজিক যোগাযোগ কমে আসা, আর্থিক সংস্থান কমে যাওয়া, পুরনো অবস্থা প্রলম্বিত হওয়া এবং কর্মক্ষম স্বাস্থ্যের নাজুকতা।

বিশেষ করে অভিবাসীরা একাকীত্ব বোধের কাছে নাজুক হয়ে পড়তে পারেন, তাদের সামাজিক যোগাযোগ ব্যাহত হওয়া, ভাষার বাধা এবং স্বাগতিক দেশে থিতু হবার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চাপের কারণে। বিদ্যমান গবেষণায় আভাস মেলে যে, অভিবাসীদের মধ্যে একাকীত্বের বোধ ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে বর্ণ ও জাতীয়তা, স্বাগতিক দেশে অবস্থানের মেয়াদ, অভিবাসনের সময় বয়স এবং মাতৃভাষার ভিত্তিতে।

একাকীত্বের ক্ষেত্রে জেন্ডারভিত্তিক পার্থক্য গবেষণায় ভালোভাবেই উঠে এসেছে কিন্তু আগের গবেষণাগুলিতে অভিবাসী স্টেটাস এবং নারী ও পুরুষের একাকীত্ব বোধের মধ্যে যে সম্পর্ক সেটি আলাদা করে পরীক্ষা করা হয়নি। বিভিন্ন কারণে অভিবাসী নারী ও পুরুষের একাকীত্বে ভোগার বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ভিন্ন হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে আর্থ-সামাজিক মর্যাদা, ভাষার দক্ষতা, সামাজিক গোষ্ঠীতে নিজের একাত্মতার বোধ এবং স্বাস্থ্যগত ভিন্নতা। এভাবেই, কানাডায় জন্মগ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর তুলনায় বিভিন্ন অভিবাসী গ্রুপের নারী ও পুরুষের একাকীত্ব বোধের মাত্রায় যে পার্থক্যই থাকুক সেটি ভালোভাবে বুঝে ওঠা যায়নি।

সমীক্ষাধীন জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য

যাদের নিয়ে স্ট্যাটিসটিকস কানাডার গবেষণাটি করা হয়েছে তাদের এক-চতুর্থাংশ (২৫.৭%) ছিলেন অভিবাসী (১২.৮% ইউরোপীয় এবং ১২.৯% ইউরোপের বাইরের), বয়স্ক কানাডীয়দের ২৩.০% দীর্ঘকালীন  অভিবাসী (২০ বছর বা তারও আগে এসেছেন) এবং ১৬% বয়স্ক কানাডীয় ছিলেন যারা প্রাপ্তবয়সে পৌঁছে কানাডায় আসেন। সমীক্ষাধীন লোকেদের বেশিরভাগ (৬১.৫%) ছিলেন ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ (৬৩.৬%) ছিলেন বিবাহিত অথবা অনানুষ্ঠানিক (কমন ল) বিবাহিত, ৫৭.০% ছিলেন মাধ্যমিক-উত্তর শিক্ষিত, ৭১.৩% বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত এবং প্রায় এক-চতুর্থাংশ সামাজিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণে বাধার মুখে ছিলেন বলে জানান। অর্ধেকের বেশি (৫৪.৬%) বৃহৎ জনসংখ্যা রয়েছে এমন এলাকায় বসবাস করেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের সাক্ষাৎকার নেয়া হয় কোভিড-১৯ এর বিধিনিষেধ বলবৎ হবার আগে এবং অবশিষ্টদের (৩৮.৪%) সাক্ষাৎকার নেয়া হয় মহামারীর সময়।

বয়স্ক কানাডীয়দের মধ্যে একাকীত্বের প্রবণতা

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার গবেষণায় আরো বলা হয়, ২০১৯/২০২০ সালের সিএইচএসএস (ঈঐঝঝ) অনুযায়ী, প্রায় ১১ লাখ বয়স্ক কানাডীয় (১৯.২%) একাকীত্বে ভোগেন। পুরুষের তুলনায় নারীদের একাকীত্বে ভোগার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি (২৩.০% বনাম ১৪.৬%)। সামগ্রিকভাবে কানাডায় জন্মগ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর তুলনায় ইউরোপীয় এবং ইউরোপের বাইরের উভয় ধরণের অভিবাসীদের একাকীত্বে ভোগার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। একই রকম প্রবণতা দেখা যায় প্রাপ্ত বয়সে কানাডায় আসা এবং দীর্ঘকাল ধরে এখানে বসবাসকারী অভিবাসীদের মধ্যেও। নির্দিষ্ট করে লিঙ্গভিত্তিক হিসাবে দেখা যায় যে, পুরুষদের মধ্যে ইউরোপের বাইরের অভিবাসীদের (১৯.৪%) মধ্যে একাকীত্বের প্রবণতা কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের (১৩.৩%) চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। বিপরীতে, নারীদের মধ্যে, কানাডায় জন্মানো নারীদের (২২.২%) তুলনায় ইউরোপের অভিবাসী নারীদের একাকীত্বের প্রবণতার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি দেখা যায়। কানাডায় জন্ম নেওয়া এবং অভিবাসীদের কিছু জনগোষ্ঠীতে, যেমন ইউরোপীয় অভিবাসী, শিশুবয়সে (১৮ বছরের কম বয়সে) অভিবাসী হয়ে এসেছেন এমন অভিবাসী, যারা বয়ঃপ্রাপ্তির পর (১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সে) অভিবাসী হয়েছেন এবং দীর্ঘকাল আগে অভিবাসী হয়ে আসা বয়স্কদের মধ্যে পুরুষের চেয়ে নারীদের একাকীত্বের প্রবণতা যথেষ্ট বেশি।

অন্য আরও কিছু স্বতন্ত্র ধরণের অংশীভাগী একাকীত্বের সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে যুক্ত। সমীক্ষাধীন ব্যক্তিদের মধ্যে ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সের ব্যক্তিদের একাকীত্ব বোধে ভোগার হার (২২.৭%) তাদের চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি যাদের বয়স ৬৫ থেকে ৭৪ বছর (১৯%)। তবে, সবচেয়ে কম বয়সের লোকদের চেয়ে সবচেয়ে বেশি বয়সের মানুষদের মধ্যে নারীদের নয়Ñ পুরুষদেরই একাকীত্বে ভোগার সম্ভাবনা বেশি। যারা বিয়ে করছেন অথবা কমন ল বিয়ের মাধ্যমে যুগল জীবন যাপন করেন এমন নারী বা পুরুষ উভয়েরই একাকীত্বে ভোগার হার একা থাকা ব্যক্তি অথবা চিরকুমারদের চেয়ে কম। নারী ও পুরুষ উভয়ের একাকীত্বের সাথে একাধিক রোগে ভোগা এবং সামাজিকতায় যোগদানে বাধার উল্লেখযোগ্য সংশ্লিষ্টতা আছে। কোভিড-১৯ মহামারির সময় একাকীত্বে ভোগা নারীর সংখ্যা (২৬.৮%) কোভিড-১৯-এর আগের চেয়ে (২০.৭%) বেশি ছিল।

অভিবাসীর উৎস দেশ ও একাকীত্ব

সমীক্ষাধীন মোট জনসংখ্যার মধ্যে ইউরোপীয় এবং ইউরোপীয় নয় এই উভয় শ্রেণীর অভিবাসীদের মধ্যে কানাডায় জন্ম নেয়া জনগোষ্ঠীর চেয়ে একাকীত্বে ভোগার জটিলতা (যথাক্রমে ১.৩% ও ১.৫%) বেশি দেখা গেছে, এমনকি জনসংখ্যাগত ও আর্থ-সামাজিক বৈশিষ্ট্য, স্বাস্থ্যের অবস্থা এবং সমীক্ষার সময় হিসাব করার পরও একই অবস্থা দেখা যায়। পুরুষের তুলনায় নারীদের একাকীত্ব বোধের সম্ভাবনা ১.২ গুণ বেশি ছিল।

নির্দিষ্ট করে লিঙ্গ-ভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউরোপীয় এবং অ-ইউরোপীয় উভয় শ্রেণীর অভিবাসীদের একাকীত্বে ভোগার সম্ভাবনা কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় বেশি (যথাক্রমে ১.৪% ও ১.৯%)। নারীদের মধ্যে সম্পূর্ণ সমন্বিত মডেলে কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় ইউরোপীয় অভিবাসীদের একাকীত্বে ভোগার রিপোর্ট করার সম্ভাবনা ছিল ১.৩ গুণ বেশি।

অভিবাসনের সময় বয়স ও একাকীত্ব

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার সমীক্ষাধীন মোট জনসংখ্যার মধ্যে, একাকীত্বে প্রভাব রাখে এমন অন্য সব কারণ সমন্বয় করার পর, কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের চেয়ে প্রাপ্তবয়সে অভিবাসী হয়ে আসা লোকদের একাকীত্বে ভোগার সম্ভাবনা ১.৬ গুণ বেশি ছিল। পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়সে অভিবাসী হয়ে আসা লোকদের একাকীত্বে ভোগার ঝুঁকি তাদের কানাডায় জন্মগ্রহণকারী সহকর্মীদের চেয়ে বেশি ছিল।

অভিবাসনের পর অতিক্রান্ত সময় ও একাকীত্ব

সমীক্ষাধীন মোট জনসংখ্যার মধ্যে, কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় মধ্য-মেয়াদী অভিবাসীদের একাকীত্ব অনুভবের সম্ভাবনা ছিল ০.৩ গুণ কম। বিপরীতে, দীর্ঘমেয়াদী অভিবাসীদের একাকীত্বে ভোগার সম্ভাবনা ছিল ১.৪ গুণ বেশি। কানাডায় জন্মগ্রহণকারীদের তুলনায় মধ্যমেয়াদী অভিবাসীদের একাকীত্ব অনুভবের ক্ষেত্রে প্রতিকূলতা কম থাকার বিষয়টি নারীদের ক্ষেত্রে ছিল উল্লেখযোগ্য- তবে তা পুরুষদের ক্ষেত্রে নয়। বিপরীতে, দীর্ঘমেয়াদী অভিবাসীদের মধ্যে তাদের নিজ নিজ কানাডীয় প্রতিপক্ষের তুলনায় একাকীত্ব অনুভবের উচ্চ ঝুঁকির বিষয়টি নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।

যারা একা অথবা কখনও বিয়ে করেননি তাদের একাকীত্ব

স্ট্যাটিসটিকস কানাডার গবেষণায় দেখা গেছে, লিঙ্গভিত্তিক বিশ্লেষণে বয়স্ক সমগোত্রীয়দের একাকীত্বের সম্ভাবনা কম দেখা যাবার বিষয়টি উল্লেখযোগ্য ছিল শুধ্ ুনারীদের ক্ষেত্রে। বিবাহিত অথবা কমন ল যুগলের ক্ষেত্রে নারী বা পুরুষ উভয়েরই একাকীত্বে ভোগার ঘটনা তাদের চেয়ে কম যারা একা থাকেন অথবা কখনও বিয়ে করেননি। বিপরীতে, একা থাকা অথবা কখনও বিয়ে না করা পুরুষের চেয়ে বিপত্নীক পুরুষের একাকীত্ব বোধের ঝুঁকি উচ্চতর।

সামগ্রিকভাবে, নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই একাধিক রোগের সঙ্গে বসবাসকারী এবং সামাজিকতায় অংশগ্রহণে বাধা আছে এমন মানুষেরা একাকীত্বে ভোগার উচ্চ সম্ভাবনায় থাকেন।

স্ট্যাটিসটিকস কানাডা জানায়, শেষ কথা হলো, কোভিড-১৯ বিধিনিষেধ জারির আগে পর্যন্ত (জানুয়ারি ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২০) সময়ের চেয়ে কোভিড-১৯ মহামারিকালে (২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর) নারীরা বেশি একাকীত্বের ঝুঁকিতে ছিল।

একটি বিষয় উল্লেখ করা গুরুত্বপূর্ণ যে, অ-ইউরোপীয়, বিশেষ করে এশীয় অভিবাসীদের মধ্যে বয়স্কদের প্রতি দায়বদ্ধতার জোরালো অনুভূতি আছে। প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা এশীয় অভিবাসীদের একটি সাধারণ মূল্যবোধ, যারা বাবা-মার যত্ন নেয়া স্বাভাবিক রীতি হিসাবে বিবেচনা করেন। একারণে, এমন হতে পারে যে, সন্তানের কাছে যথেষ্ট সেবাযত্ন পাওয়ায় অ-ইউরোপীয় বয়ঃবৃদ্ধ অভিবাসী নারী একাকীত্বের বোধের কাছে কম নাজুক হতে পারেন। বয়স্ক কানাডীয়দের মধ্যে অ-ইউরোপীয় অভিবাসীদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৫.৬%) সংখ্যক হলেন এশীয়।

আরেকটি সমস্যা হল, প্রাপ্তবয়সে (১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সী) বিদেশে পাড়ি জমানো  শৈশবকালে (০ থেকে ১৭ বছর) বা মাঝ বয়স থেকে পরবর্তী জীবনে (৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সে) অভিবাসনের চেয়ে বেশি চাপের হতে পারে। একটি নতুন দেশে চলে আসা,  শ্রমবাজারে প্রতিষ্ঠা পাওয়া, একটি সামাজিক যোগাযোগ তৈরি করা এবং স্বাগতিক দেশে ভাষা ও সাংস্কৃতিক বাধা অতিক্রম করার সঙ্গে যুক্ত চাপের ক্রমবর্ধমান প্রভাব প্রাপ্তবয়সে অভিবাসী হয়ে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে উচ্চ স্তরের একাকীত্ব সৃষ্টি করতে পারে। বিপরীতে, যারা শিশুবয়সে অভিবাসী হয়ে আসেন তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে বাস করে আয়োজক দেশে শিক্ষা অর্জন করে এবং তাদের সামাজিক যোগাযোগ বিকাশের জন্য আরও ভাল অবস্থানে থাকে, যা তাদের পরবর্তী জীবনে একাকীত্বের কাছে তাদেরকে কম সংবেদনশীল করে তুলতে পারে। একইভাবে, যারা বেশি বয়সে (৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সে) অভিবাসী হয়ে স্থানান্তরিত হয়েছেন তারাও একাকীত্বের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারেন যদি তারা পারিবারিক পুনর্মিলন প্রোগ্রামের অধীনে স্থানান্তরিত হন, যা পরবর্তী জীবনে একাকীত্বের বিরুদ্ধে নিরাপদ অঞ্চল হিসাবে কাজ করতে পারে।

কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত জনসংখ্যার তুলনায় মধ্য-মেয়াদী অভিবাসীদের মধ্যে একাকীত্বের সম্ভাবনা কম এবং দীর্ঘমেয়াদী অভিবাসীদের মধ্যে একাকীত্বের উচ্চ সম্ভাবনা, স্বাস্থ্যকর অভিবাসন প্রভাবের হাইপোথেসিসের প্রতিধ্বনি করে, যা ইঙ্গিত করে যে অভিবাসনের সময় অভিবাসীরা স্বাগতিক দেশের জনগণের তুলনায় ভাল শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকারী। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যগত এই সুবিধা আয়োজক দেশে বসবাসের সময়কাল বৃদ্ধির সাথে বিলীন হতে শুরু করে।