কৃষ্ণাঙ্গ কানাডীয়দের কাছে কর্মস্থল বর্ণবাদের ‘উৎসস্থল’
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কৃষ্ণাঙ্গ কানাডীয় এবং অন্যান্য জাতিগত গোষ্ঠীর অভিজ্ঞতা পর্যবেক্ষণের লক্ষে পরিচালিত নতুন এক জাতীয় সমীক্ষায় দেখা গেছে, এসব সম্প্রদায়ের অনেকেই কর্মস্থলকে জাতিগত বৈষম্য ও অন্যায্যতার ‘উৎসস্থল’ বলে মনে করেন। খবর সিসি ডি ফ্লাভিস – সিটিভি নিউজ।
ব্ল্যাক কানাডিয়ান ন্যাশনাল সার্ভে রিসার্চ প্রজেক্ট (BCNS) শিরোনামের সমীক্ষাটি চালিয়েছে ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল রিসার্চ (আইএসআর)। তাদের সঙ্গে অংশীদার হিসাবে ছিল বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক উদ্ঘাটন বিষয়ক কানাডিয়ান রেস রিলেশন ফাউন্ডেশন।
ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ও চূড়ান্ত সমীক্ষা প্রতিবেদনের মুখ্য গবেষক লোরনি ফস্টার বলেন, এই প্রকল্পে কৃষ্ণাঙ্গ জনগণের জীবনযাপনের অভিজ্ঞতাকে গুরুত্ব দেয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সিটিভিনিউজ.সিএর সঙ্গে আলাপে ফস্টার বলেন, “আমার বিশ্বাস, অনেক গবেষণায় কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়কে নিশ্চুপ রাখা অথবা তাদেরকে সরিয়ে রাখা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, পরিসংখ্যান বিষয়ের গবেষকরা যখন “অশ্বেতাঙ্গ” (visible minority) পরিভাষাটি ব্যবহার করেন তখন তারা প্রতিটি গোষ্ঠীর সূক্ষèতা চিহ্নিত না করেই কানাডার প্রচুর সংখ্যক বিভিন্ন গোষ্ঠীকে বোঝান।
তিনি বলেন, “এই পরিসংখ্যান এবং যে পরিস্থিতি উদ্ঘাটিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে মনোবলের ঘাটতি অনেক বেশি পরিমাণে বিদ্যমান। এই অশ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বৈষম্য ও বঞ্চনাবোধ বিদ্যমান এবং জাতিগোষ্ঠী তাকেই বড় করে।”
চূড়ান্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, সমীক্ষায় অংশ নেয়া কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ মনে করেন গত এক বছরে তারা নিয়োগকর্তার পক্ষ থেকে চাকরি দেয়া, মজুরি এবং পদোন্নতির মত বিষয়ে অন্যায় আচরণের শিকার হয়েছেন।
রিপোর্টের জন্য তথ্য-উপাত্ত নেয়া হয় দুটি সমীক্ষা থেকে, একটি জাতীয় ওয়েবভিত্তিক সমীক্ষা যাতে পাঁচ হাজারেরও বেশি লোকের বক্তব্য নেয়া হয় এবং আরেকটি হলো কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায়ের জাতীয় ওয়েবভিত্তিক সমীক্ষা।
চূড়ান্ত রিপোর্টে একটি উইকি সমীক্ষায় পাওয়া উত্তরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উইকি হলো নীতি ও পরিষেবা বিষয়ে জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি পরিমাপের একটি প্রাগ্রসর হাতিয়ার। উইকি সমীক্ষায় ১০,১৯৯টি ভোট পড়ে।
সমীক্ষায় যেসব তথ্য উদ্ঘাটিত হয়েছে সেগুলিকে “যুগান্তকারী” বলে অভিহিত করে মুখ্য গবেষক বলেন, “জনগণ এটিকে নিছক আরেকটি সমীক্ষা বলেই মনে করে। কিন্তু এটি হলো সমাজে প্রকৃতপক্ষে কী ঘটছে তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিচ্ছিন্ন জাতিগত তথ্য-উপাত্তের একটি ভিত্তি।”
পদ্ধতিগত বর্ণবাদ ও প্রোফাইলিং
বিসিএনএস-এর রিপোর্টে বিভিন্ন খাতের, যেমন ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও সামাজিক পরিষেবায় কৃষ্ণাঙ্গদের অভিজ্ঞতা পরীক্ষা করা হয়।
রিপোর্টে উঠে আসা কিছু তথ্যে দেখা যায়, ৯০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ এবং ৮২ শতাংশ আদিবাসী ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বর্ণবাদের উপস্থিতিকে গুরুতর সমস্যা হিসাবে দেখেন।
ফস্টার বলেন, “কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় এবং সমগ্র কানাডার পুলিশের মধ্যে সত্যিকার অর্থেই অত্যন্ত গভীর কিছু আস্থার ঘাটতি বিদ্যমান।”
তথ্যে দেখা গেছে, কানাডাজুড়ে নারী ও পুরুষসহ গড়ে ২২ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ জনগণ জানান যে, গত ১২ মাসের মধ্যে পুলিশ তাদেরকে অন্যায়ভাবে থামতে বাধ্য করে।
এটি অন্য যে কোনও গোষ্ঠীর মানুষের ক্ষেত্রে এ ধরণের ঘটনার চেয়ে বেশি। রিপোর্ট অনুযায়ী, শ্বেতাঙ্গ কানাডীয়দের মধ্যে মাত্র পাঁচ শতাংশ আভাস দেন যে পুলিশ তাদেরকে অন্যায়ভাবে থামিয়েছে।
শিক্ষা খাতের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, ৭৩ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ এবং ৫৩ শতাংশ অশ্বেতাঙ্গ জনগণ বলেন, শিক্ষা খাতে বর্ণবাদ এক গুরুতর অথবা অত্যন্ত গুরুতর সমস্যা, যেখানে ৩৬ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ জনগণ এই বক্তব্যের সাথে একমত।
ফস্টার বলেন, বিচ্ছিন্ন এসব তথ্য-উপাত্ত এবং জাতিগত বিশ্লেষণ হতে পারে পদ্ধতিগত সমস্যাগুলির সমাধানের চাবিকাঠি।
তবে, কোনও উপসংহারে পৌঁছার আগে অবশ্যই আরও গবেষণা ও উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।
“এটি হলো আপনি যখন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন সেরকম,” তিনি বলেন, “একটিমাত্র টেস্টের ওপর ভিত্তি করে কারও সমস্যা অথবা রোগ আছে এমনটা আপনি বলতে চাইবেন না।”
“আমরা সম্ভাব্য ইস্যুগুলি তুলে ধরেছি যেগুলোর আরও সুরাহার দরকার আছে।”
কানাডাজুড়ে বর্ণবাদের সমাধান
ফস্টার বলেন, বিস্ময়কর যে, অনেক মানুষ মনে করেন, কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় যেসব নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে ভুগছে সেগুলি “বড় শহরের সমস্যা।”
যাই হোক, রিপোর্টে দেখা গেছে, সারাদেশেই বড় ধরণের বৈষম্য বিরাজমান।
আটলান্টিক অঞ্চলে ৪০ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ বলেন, তাদেরকে অন্যায়ভাবে থামানো হয়েছে আর ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় ৪১ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ একইরকম অভিজ্ঞতার আভাস দেন।
কুইবেক ও অন্টারিওতে এই হার ছিল যথাক্রমে ৩১ ও ৩০ শতাংশ।
তিনি বলেন, “জনগণ যদি বিষয়টি উপলব্ধি করে তাহলে এটি এক নতুন জাতীয় বয়ান রচনা করতে পারে।”
ফস্টার চান প্রদেশগুলি তাদের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নের জন্য তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে শুরু করুক। তিনি বলেন, বর্ণবাদ নির্মূলের জন্য যথাযথ জাতিগত উপাত্ত ভাণ্ডার প্রতিষ্ঠার বিষয়ে তিনি অন্টারিও সরকারের সঙ্গে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে প্রায় একইরকম উদ্দেশ্যে নোভা স্কশিয়া সরকারের সঙ্গে কাজ করছেন।