কানাডীয়রা কোভিড-১৯ মহামারির আগের তুলনায় কম নিরাপদ বোধ করে, জরিপের তথ্য

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন এক জরিপে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কানাডীয় বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারির আগের সময়ের তুলনায় কম নিরাপদ বোধ করেন। আর বেশিরভাগ কানাডীয় মনে করেন, অপরাধ মোকাবিলা এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক উভয় সরকারই  তেমন ভালো করছে না। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস।

সম্প্রতি কানাডিয়ান স্টাডি বিষয়ক অ্যাসোসিয়েশন ও লেগার-এর অনলাইনে পরিচালিত এক সমীক্ষায় উত্তরদাতাদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাদের নিজ কমিউনিটিতে ২০২০ সালের শুরুতে মহামারি শুরুর আগের তুলনায় বর্তমানে অপরাধ ও সহিংসতা কোন পর্যায়ে রয়েছে।

সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বলেন, তারা মনে করেন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ৩২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, অপরাধ ও সহিংসতা “অনেক খারাপ” হয়েছে এবং ৩২ শতাংশ বলেন, “একটু খারাপ” হয়েছে।

বেশিরভাগ কানাডীয় বর্তমানে কোভিড-১৯ মহামারির আগের সময়ের তুলনায় কম নিরাপদ বোধ করেন। ছবি : সিবিসি

এক-চতুর্থাংশ উত্তরদাতা বলেন, পরিস্থিতির কোনও পরিবর্তন হয়নি, আর আট শতাংশ বলেছেন, তারা জানেন না। মাত্র দুই শতাংশ বলেন, পরিস্থিতি আগের চেয়ে “সামান্য ভালো” হয়েছে। শহরাঞ্চলে বসবাসকারী বেশিরভাগ নারী জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি বেশি খারাপ।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বেশিরভাগ মানুষ, ৭২ শতাংশ, মনে করেন অপরাধ ও সহিংসতার অবস্থা মহামারির পর বেশি খারাপ। অন্যদিকে কুইবেকের মানুষ একই ধরণের মন্তব্য করেন সবচেয়ে কম, ৫৪ শতাংশ।

অবশ্য, যখন জানতে চাওয়া হয় যে, আপনি কি ভাঙচুর, চুরি বা শারীরীক আক্রমণের মত একাধিক নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতিতে পড়েছেন অথবা এমন কাউকে চেনেন যিনি এ ধরণের অবস্থার শিকার হয়েছেন, তখন উত্তরদাতাদের বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ বলেন, তারা সেরকম পরিস্থিতির শিকার হননি।

অনিরাপদ পরিস্থিতি বলতে সচরাচর যেটা লোকেরা জানিয়েছেন তা হলো “মারমুখো আচরণ” যাকে সমীক্ষায় চিহ্নিত করা হয় হুমকি দেয়া, চিৎকার করা অথবা কাউকে তার নিরাপত্তার বিষয়ে ভীত করে তোলার মত কর্মকাণ্ড হিসাবে। সমীক্ষাধীন লোকেদের ২০ শতাংশ বলেছেন, তারা এধরণের আচরণের মুখে পড়েছেন। আর ১৯ শতাংশ বলেছেন, তারা গত ছয় মাসে অন্তত একবার তারা নিজের নিরাপত্তা নিয়ে ভয় পেয়েছেন।

পাঁচ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা শারীরীক হামলার শিকার হয়েছেন, পাঁচ শতাংশ বলেন, তারা ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের (hate crime) শিকার হয়েছেন, যখন ২০ শতাংশ বলেন, তারা শারীরীকভাবে আঘাত করা হয়েছে এমন কাউকে চেনেন, ১৭ শতাংশ বলেন, তারা ঘৃণাপ্রসূত অপরাধের শিকার হওয়া কাউকে চেনেন।

সমীক্ষায় অংশ নেয়া অর্ধেকেরও বেশি মানুষ মনে করেন, জননিরাপত্তার বিষয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, নগর বা পৌর কর্তৃপক্ষ চমৎকার কাজ করছে। কিন্তু নিজেদের প্রাদেশিক সরকারের বিষয়ে একই রকম মনোভাব প্রকাশ করেন মাত্র ৩৯ শতাংশ মানুষ। আর এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে পাশ মার্ক দিয়েছেন মোটে ৩৩ শতাংশ কানাডীয়।

৫৫ বছরের বেশি বয়সী এবং কুইবেকে বসবাসকারীরা আইনের প্রয়োগ নিয়ে বেশি সন্তুষ্ট। অন্যদিকে আটলান্টিক কানাডার অর্ধেকের কম মানুষ মনে করেন যে, পুলিশ বাহিনী ভালো কাজ করছে।

অন্টারিওর বাসিন্দারা তাদের প্রদেশিক সরকারের পারফরম্যান্স নিয়ে সবচেয়ে কম সন্তুষ্ট। আর কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যাপারে সবচেয়ে কম সন্তুষ্ট ম্যানিটোবা ও সাসকাচুনের জনগণ।

সমীক্ষায় জানতে চাওয়া হয়, অপেক্ষাকৃত কঠোর বন্দুক নিয়ন্ত্রণ (gun control) ব্যবস্থা করা হলে জনগণ আরও বেশি নিরাপদ বোধ করবে কিনা। এতে দেখা যায়, ৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেন, এটা করা হলে তারা অধিকতর নিরাপদ বোধ করবেন। ৪২ শতাংশ বলেন, এতে তাদের অনুভূতি পাল্টাবে না।

অধিকতর নিরাপদ সমাজ গড়ার জন্য নেয়া যেতে পারে এমন কিছু কর্মসূচির তালিকা সম্পর্কে মতামত চাওয়া হলে উত্তরদাতাদের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ হিংসাত্মক অপরাধ সংঘটনকারীদের কঠোর শাস্তি দেয়া এবং আরও ভালো মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিশ্চিত করার পক্ষে মত দেন। দুটি অপশনে মত দেয়া লোকের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৮১ শতাংশ ও ৭৯ শতাংশ। তিন-চতুর্থাংশ উত্তরদাতা বলেন, পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো হলে কাজ হবে, যেখানে ৭২ শতাংশ বলেন, আবাসন সঙ্কটের সমাধান করা হলে সমাজ আরও নিরাপদ হবে।