মনের আয়নাতে

সাইদুল হোসেন

আজকের লেখাটা একটা জোক (joke) দিয়ে শুরু করা যাক।

একটা বস্তিতে তিনটি কুকুর বাস করতো। ওরা একদিন খবর পেল যে অদূরেই এক পাড়ায় বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে। তিনজনই খুশী, যাক পেট ভরে খাওয়া যাবে। তবে তিনজন একসঙ্গে না গিয়ে একজন গেল ব্যাপারটা কেমন হচ্ছে দেখতে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, কুকুরটা বিয়ের প্যান্ডেলের কাছে যেতেই একজন লাঠি দিয়ে তাকে এমন মার দিলে যে সে ব্যথার চোটে মাটিতে বসে পড়তে বাধ্য হল। সেখান থেকে নড়াচড়া করা অসম্ভব। অনেক্ষণ পর কিছুটা শক্তি ফিরে পেয়ে সে ধীরে ধীরে তাদের আস্তানায় গিয়ে পৌঁছাল।

অপেক্ষমান দুই কুকুর তখন সোৎসাহে এগিয়ে এল, জানতে চাইল : কিরে, ওখানকার খবর কি? প্রথম কুকুর বলল : ওখানে যেতেই বসিয়ে দিল!

শোনামাত্র দ্বিতীয় কুকুরটা দিল দৌড়, খাবার না ফুরিয়ে যায়! সে প্যান্ডেলের কাছে গিয়ে দাঁড়াতেই কেউ একজন দিল এক বালতি গরম পানি ঢেলে ওর গায়ে। যন্ত্রণায় কুঁইকুঁই শব্দ করে সে পালাল সেখান থেকে। তারপর একসময় নিজেদের আস্তানায় পৌঁছাতেই সঙ্গীরা জিজ্ঞাসা করল : কি খবর রে? দ্বিতীয় কুকুরটা তখন বললো : ওখানে গিয়ে পৌঁছাতেই গরম গরম!

সে কথা শুনে তৃতীয় কুকুরটা ছুটলো বিয়েবাড়ির পানে। সে ওখানে পৌঁছলে লোকেরা লক্ষ্য করলো যে কুকুরটা ওখানে বারবার আসছেই, ওর একটা ব্যবস্থা করা দরকার। লোকেরা তখন কায়দা করে তাকে ধরে একটা খুটির সঙ্গে বেঁধে ফেলল, ছাড়ল গভীর রাতে সব কাজকর্ম শেষ হওয়ার পর। সারারাত অভুক্ত, কি আর করবে, সে ফিরে গেল নিজেদের আস্তানাতে। তখন ভোরবেলা।

ওর সাথীরা জানতে চাইল : কিরে, তোর এত দেরী যে?

তৃতীয় কুকুরটি তখন বললো : কি করি বল? ওরা ছাড়তেই চাইল না!

এবার গল্প শুনুন।

টরন্টো শহর। প্রকান্ড বড় স্টোর COSTCO. আকার আকৃতিতে যেমনি বিরাট বিশাল, ভেতরে জিনিসপত্রেরও তেমনি বিপুল সমাহর। হোলসেল প্রাইস সব কিছুরই, তাই তুলনামূলকভাবে দামে সস্তা। সেই স্টোরে গিয়েছিলাম একটা মাইক্রোওয়েভ ওভেন কিনতে। ঢুকার মুখে এক ঘোর কালো জামাইকান সিকিউরিটি গার্ড দাঁড়িয়ে আছে দেখে তাকে বললাম : গুড মর্নিং। হাউ আর ইউ টুডে?

আই অ্যাম গুড, স্যার। থ্যাঙ্ক ইউ বলতে বলতে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে ইশারা করল একটু থামতে। স্ত্রীকে এগিয়ে যেতে বলে আমি একপাশে দাঁড়ালাম। ভীড় হাল্কা হতেই সে আমার কাছে এসে প্রশ্ন করলো : স্যার, আর ইউ ফ্রম ঢাকা, বাংলাদেশ?

একটু অবাক হয়েই তাকে প্রশ্ন করলাম : আপনি এত নিখুঁতভাবে কি করে বুঝতে পারলেন যে আমি বাংলাদেশের লোক এবং ঢাকার লোক?

মুখভরা একটা হাসি দিয়ে সে তখন জানাল : বেশ ক’টি বছর কাটিয়ে এসেছি বাংলাদেশে, বিশেষ করে ঢাকা শহরে। চমৎকার সুন্দর দেশ আপনাদের, লোকজনও বড় ভদ্র, অমায়িক। বিদেশীদের সাহায্য-সহায়তা করতে সদা হাসিমুখে প্রস্তুত। বাংলাদেশের মাছ-মাংস-মুরগী-সবজী-ফলের (বিশেষ করে আম ও আনারস) স্বাদ এককথায় অপূর্ব। কাঁঠালও খেয়েছি। আপনাদের লোকজনের সঙ্গে খুব একাত্ম হয়ে মেশার, আপনাদের ধর্মবিশ্বাস, জীবনধারণ পদ্ধতি, আপনাদের ভাষা-সংস্কৃতি বোঝার, অনুভব করার চেষ্টা করেছি। ভাষাটা অবশ্য শিখতে পারিনি কিন্তু বলার ভঙ্গী থেকে কখনো কখনো সঠিক আঁচ করে নিতে পারতাম। ইংরেজী তো বলতে গেলে বাংলাদেশের ন্যাশনাল ল্যাঙ্গুয়েজ, প্রশ্ন করে জবাব পাইনি এমনটা কখনো হয়নি। ফলে ঢাকাবাসী বাংলাদেশী শিক্ষিত লোকদের ইংলিশ অ্যাক্সেন্ট আপনার মুখে শুনে আপনাকে ঢাকার লোক বলে চিনতে আমার এক মুহূর্তও লাগেনি। তাই আগ্রহ হলো আপনার সঙ্গে একটু কথা বলার। আমার অপরাধ নেননি তো?

হেসে হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করতে করতে বললাম : বরং খুশীই হয়েছি আপনার সঙ্গে কথা বলতে পেরে, নিজের দেশের প্রশংসা শুনে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

নামে কিবা আসে যায়?

আমাদের মসজিদের মাসিক কমিউনিটি বুলেটিন নিয়মিতই বাসার ঠিকানায় পেয়ে থাকি। বুলেটিনের কমিউনিটি অ্যানাউন্সমেন্ট সেকশনে থাকে জন্ম-মৃত্যু ও বিয়ের খবরাদি। নভেম্বর (২০০৩) এর বুলেটিনে মৃত্যুসংবাদ ছাপা হয়েছে রসুল মোহাম্মদের; তার স্ত্রী জাইতুন মোহাম্মদ বেঁচে আছেন। সবই ঠিক আছে, তবে তাদের সন্তান সংখ্যাটি আমাকে বড়ধরনের একটা মানসিক ধাক্কা দিল। এই দম্পতির মোট সন্তান সংখ্যা ১৪টি (সবাই বেঁচে আছে), এবং তাদের নামগুলো হচ্ছে : শীলা, গুলসিন, কে, রাফিনা, শাফি, জাইদ, নুশাদ, আকিম, কাসিম, ইশুন, শামিন, শারলিনা, মোনতাজ এবং সুজি।

নামে কিবা আসে যায়? ছবি : ফটোশপে সৃষ্ট

অপর খবরটিও বেশ বিচিত্র, অন্তত আমার চোখে। কারণ ইতিপূর্বে কোনদিন কোন মুসলমানের নামের শেষে সিং (Singh) পদবীটা আমার চোখে পড়েনি, অথবা শুনিনি। সেই বুলেটিনে দেখলাম সাজিওয়ান সিং-য়ের স্ত্রী হাজ্জা জাবেইদা সিং মারা গেছেন তিনটি কন্যা সন্তান রেখে। তাদের নাম লতিফা, জিনা, জেনেট।

অবশ্য ১৯৯২ সনে আজাইব সিং নামে একজনের সঙ্গে অনেক কথাবার্তা হয়েছিল আমার নানা বিষয়ে। তিনি আমাকে জানিয়েছিলেন যে তাঁর নামটা যদিও শিখদের মত, বাস্তবে তিনি একজন বৌদ্ধ ধর্মালম্বী- ধর্ম পাল্টিয়েছেন বটে কিন্তু নামটা আগের মতই রেখে দিয়েছেন।

নামের বৈচিত্র্য আরো দেখেছি।

ঢাকা থেকে এক স্বনামধন্য কবি তাঁর একটি কবিতাগ্রন্থ আমাকে উপহার হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। সেটার পাতা উল্টাতে গিয়ে নজরে পড়ল কবির দুই কন্যার নাম : বড়টির নাম অনাদি নিমগ্ন এবং ছোটটির নাম অর্জিতা মাধুর্য।

টরন্টো- নিবাসী বাংলাদেশী এক স্বামী-স্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় হলো ২০০৭ সনের শেষ দিকে। তাঁদের দুই মেয়ে : কথামালা ও বর্ণমালা।

১৯৬০-৬৫ সনের দিকে ঢাকায় এক লেখক ছিলেন যাঁর নাম ছিল ‘আজিজ মিসির’ যার অর্থ মিশরের রাজা, অথবা মিশরের একজন গণ্যমান্য ব্যক্তি।

কলেজ জীবনে আমার এক সহপাঠির নাম ছিল ‘বনি ইসরাইল’ যার অর্থ ইহুদী জাতি। এমন অদ্ভূত নাম কেন? এই প্রশ্নের জবাবে সে বলতো : কুরআন মজীদ পইড়া আমার দাদায় এই নাম রাখ্ছে, আমি কি করুম?

ঢাকায় আব্দুল্লাহ আবু সাইদ প্রতিষ্ঠিত বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে একটি যুবক কাজ করতো ১৯৮৫-৮৬ সনে, ওর নাম ছিল ‘এতোয়ার’, যার অর্থ রবিবার।

এডোয়ার্ডো শ্লোমো

হাসপাতালের এক রেগুলার পেশেন্ট, প্রতি সপ্তাহেই বৃহস্পতিবার সাকালে এসে উপস্থিত হয় একটা ইনজেকশন নেয়ার জন্য। নাম : Edoardo Slomo। সে আমাকে একদিন জানালো যে ওটা ওর স্প্যানিশ নাম, সে একজন কিউবান; কিন্তু ধর্মে সে একজন ইহুদী। তার একটি ধর্মীয় নামও আছে। Villanow Cohen। বয়স ৪৪ বছর। বাবা ছিলেন খৃষ্টান কিন্তু মা ইহুদী, তাই সেও একজন ইহুদী। ইহুদীদের ধর্ম নির্ধারিত হয় মায়ের ধর্ম দিয়ে।

সদা হাসিমুখ এডোয়ার্ডো একদিন তার জীবনের কিছু কথা অকপটে বলে গেল। খানিকটা অবিশ্বাস্য সেই কাহিনী।

সে বিয়ে করেছে ৪টি, সন্তান সংখ্যা ৬। প্রথম বিয়ে ১৭ বছর বয়সে, দু’বছর পর এক সন্তান রেখে সেই স্ত্রী মারা যায়। দ্বিতীয় বিয়ে ২৫ বছর বয়সে, সেই স্ত্রী তিনটি সন্তান রেখে সেপারেশন নিয়ে চলে গেছে। আরো দশ বছর পর তৃতীয় বিয়ে, স্ত্রী একটি সন্তান রেখে সেরপারেশন নিয়ে চলে গেছে। চতুর্থ বিয়েটা ঠিক বিয়ে নয়, কমন ল’ রিলেশনশিপ। সে এক গায়ানিজ কালো মেয়ে। এই পক্ষে এক মেয়ে।

দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্ত্রী এবং তাদের সব সন্তানদের সে নিয়মিত মেন্টেনেন্স অ্যালাউন্স দিয়ে যাচ্ছে। ওদের সঙ্গে ডিভোর্স না হওয়া পর্যন্ত সে আবার কোন নারীকে বিয়ে করতে পারবে না, আইনে বাধা রয়েছে। বড় বিজনেসম্যান, যথেষ্ট অর্থশালী লোক সে, তাই খরচপাতি নিয়ে মোটেই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নয় সে। তবে স্বাস্থ্যটা নিয়ে খুব দুশ্চিন্তা-বর্তমানে সে প্রোস্টেট ক্যানসারে ভুগছে এবং সেটার চিকিৎসার জন্য প্রতি সপ্তাহে একদিন করে আসতে হচ্ছে হাসপাতালে।

একজন ‘ভাই’য়ের মনোবেদনা

ইন্ডিয়ার গুজরাটের অধিবাসীদের চেনা খুব সহজ – নামের শেষে যার ‘প্যাটেল’ অথবা ‘ভাই’ উপাধিটা রয়েছে তিনি নিঃসন্দেহে একজন গুজরাটি। মেয়েদের বেলায় দেখা যায় ‘বহেন’। কেমন আছেন বলতে ওরা বলেন, কেম্ ছ? ভাল আছি বোঝাতে মজাম্মা ছ, ঠিক ছ, অনন্দ মা অথবা বরাব্বর। এই কটি কথা সম্বল করে হাসপাতালে আমি গুজরাটি পেশেন্ট এবং তাদের সঙ্গীদের সঙ্গে গল্প জমাই।

একদিন সকাল ৯টার ভেতরে ৪৫ জন পেশেন্ট এসে হাজির। অস্বাভাবিক রকম ভীড়। এদের মাঝে একে একে চারজন গুজরাটি-তিনজন ‘প্যাটেল’ এবং অপরজন ‘ভাই’। যার নামের শেষে ‘ভাই’ শব্দটা দেখলাম তাকে জিজ্ঞেস করলাম : ভাই সাব, কেম্ ছ?

হেসে দিয়ে তিনি বললেন, বলা তো উচিৎ মজাম্মা ছ কিন্তু ইব্রাহিম দাউদ ভাইয়ের কারণে সেটা পারছি না। ইব্রাহিম দাউদ ভাইয়ের নাম নিশ্চই শুনে থাকবেন, ইন্ডিয়ার সবচেয়ে কুখ্যাত এবং নিষ্ঠুর, শক্তিমান মাফিয়া ডন? সে থাকে ইন্ডিয়ার বাইরে দুবাইতে কিন্তু ইন্ডিয়াতে, বিশেষত : বোম্বেতে, সর্বাধিক ক্রাইম ঘটায়, একে এমনকি ইন্ডিয়াকা সরকার ভী ডরতে হ্যায়। থাকে সে ধরাছোঁয়ার বাইরে, কিন্তু আছে সে সব কুকর্মের পেছনেই। Hateful! 

সে একজন গুজরাটি, ওর নামের শেষেও ‘ভাই’ টাইটেলটা রয়েছে। তাই খুব সিরিয়াসলি ভাবছি কোর্টে গিয়ে অ্যাফিডেভিট করে আমার নাম থেকে ‘ভাই’ শব্দটা বাদ দিয়ে দেবো।

শুনে হেসে দিলাম। রসিক লোক বটে!

His basement does not work!

একদিন সকালে এক বৃদ্ধা কানাডিয়ান মহিলা আমার ডেস্কে এসে তাঁর স্বামীর নামটা উল্লেখ করে জানতে চাইলেন তিনি কখন সার্জারি থেকে বের হবেন এবং কোন রুমে তাঁকে মুভ করা হবে। যথারীতি রিকভারী রূমে ফোন করে প্রয়োজনীয় সব তথ্য সংগ্রহ করে তাঁকে শোনালাম, এবং এটাও বললাম যে তাঁর স্বামীকে স্ট্রেচারে করে ঠেলে আমার সামনে দিয়েই তাঁর বেডে নিয়ে যাওয়া হবে। তিনি পাশের পেশেন্টস্ ওয়েটিং রুমে ততক্ষণ অপেক্ষা করতে পারেন।

সব শুনে খুশী হয়ে মহিলা আমাকে চমৎকার দুটি Swiss chocolate দিলেন। বললেন, ধন্যবাদ। তারপর ওয়েটিং রুমের দিকে তিনি পা বাড়ালেন।

মিনিট পাঁচেক পর ফিরে এলেন এবং আমাকে আরো দুটি সুইস চকলেট দিলেন। বললেন, ওখানে অপরিচিতদের মাঝে মুখ বুজে বসে না থেকে তোমার সঙ্গেই বরং গল্প করা যাক। তাই ফিরে এলাম। ইউ অ্যাপিয়ার টু বি এ গুড গাই। বললাম, থ্যাঙ্কস।

তিনি জানালেন যে তাঁর স্বামী একজন ডাক্তার (physician), তাঁর বয়স আগের মাসে ৮৪ বছর পূর্ণ হয়েছে, তিনি এখনো প্র্যাকটিস করেন।

জানতে চাইলাম তাঁর general health কেমন?

মহিলা হেসে দিলেন। তারপর বললেন, He is fine excepting his basement, that does not function anymore! ঠিক তক্ষনি তাঁর স্বামীকে নিয়ে স্ট্রেচারটা ঠেলতে ঠেলতে একজন hospital attendant এসে আমার সামনে উপস্থিত। There he goes। বলে মহিলা আমাকে হাত তুলে বা-ই জানিয়ে সেই স্ট্রেচারের পিছনে হাঁটা দিলেন।

মহিলা চলে যাওয়ার পর আমি ভাবতে লাগলাম তাঁর হাজব্যান্ডের basement টা কি বস্তু? His sex organ? সেটা তো ৮৪ বছর বয়সে অকেজো হয়ে যাওয়াই স্বাভাবিক, এ নিয়ে খেদ করার কি আছে? তাছাড়া মহিলার বয়সও তো এখন ৮০’র উপরে, sex নিয়ে তো তার কোন অভিযোগ থাকার কথা নয়।

অথবা আমি কি ব্যাপারটা আগাগোড়াই ভুল বুঝেছি?

চমকপ্রদ অভিজ্ঞতা

বাসার টিভিতে কেবল্ কানেকশন নেয়ার উদ্দেশ্যে কেবল্ কোম্পানীকে ফোন করলাম একদিন সকাল বেলা। ওদিক থেকে ভেসে আসলো এক মহিলার কণ্ঠ, সে বললো : গুড মর্নিং, Sarah বলছি। আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?

বললাম : গুড মর্নিং Sarah, আমার আজকের দিনটার শুভসূচনা করে দিলে তুমি।

হাউ ইজ দ্যাট? জানতে চাইল সে।

বললাম : আমার প্রিয় বড় নাতনির নামও Sarah, তাই।

শুনে সে খুশী হয়ে বলল : Wow! How interesting!

তারপর আমি কি চাই সেটা ওকে বুঝিয়ে বললাম। আমার কথা শেষ হলে Sarah বলল : আপনার কাজটা আমার আওতার বাইরে, তবে যে এটা করতে পারবে তার কাছে আপনার লাইনটা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি।

এবার শুনলাম এক পুরুষ কণ্ঠ। আগের মতই সে-ও বলল : গুড মর্নিং, বিলাল বলছি। আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?

বললাম : গুড মর্নিং, এ্যান্ড আস্সালামু আলাইকুম, ব্রাদার বিলাল। হাউ আর ইউ?

বিলাম বিস্মিত গলায় বললেন : ওয়ালাইকুম সালাম। আমি ভাল আছি। আপনি কি একজন মুসলিম?

বললাম : হ্যাঁ, আমিও একজন মুসলিম।

বিলাল বলল : দ্যাট্স্ নাইস! এখন বলুন আমি কি ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি।

বললাম তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা। শুনে তিনি বললেন : আপনার কাজটা করবে টেকনিক্যাল সাপোর্ট ডিপার্টমেন্ট। সেখানে আপনার লাইনটা ট্রান্সফার করে দিচ্ছি।

ওদিক থেকে শুনলাম আবার এক নারীকণ্ঠ : গুড মর্নিং, Gricel বলছি। আপনার জন্য আমি কি করতে পারি?

বললাম তাঁকে আমার প্রয়োজনের কথা। আমার বক্তব্য শেষ হলে Gricel বলল যে কাজটা সে করিয়ে দিতে পারে তবে ৫৫ ডলার চার্জ দিতে হবে। বললাম : লেডি, এর আগে যখন তোমাদের কাস্টমার রিপ্রেজেন্টেটিভদের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলছিলাম তখন বলেছিল যে এই কাজটা ওরা ফ্রী করিয়ে দেবে, কোন চার্জ দিতে হবে না। অথচ এখন তুমি বলছ ৫৫ ডলার চার্জ দিতে হবে। বিষয়টা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। তাছাড়া আমি একজন সিনিয়র সিটিজেন, পেনশনই আমার একমাত্র ইনকাম। আমার জন্য ৫৫ ডলার খরচ করাটা খুবই কষ্টকর হবে। তুমি কি আমার জন্য এই চার্জটা waive করে দিতে পার, প্লীজ?

কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে Gricel বলল : ওকে, তোমার জন্য চার্জটা waive করে দিলাম।

শুনে আমি বলাম : থ্যাঙ্ক ইউ ভেরি মাচ, লেডি। মে আল্লাহ ব্লেস ইউ। তারপর বুঝিয়ে বললাম যে কথাটা মে গড ব্লেস ইউ বলতে যা বোঝায় ঠিক তাই। আমরা মুসলিমরা গডকে আল্লাহ বলে ডাকি। এবং একে অন্যকে গ্রীটিংস্ জানাতে আস্সালামু আলাইকুম বলে থাকি।

আমার কথা শেষ হওয়া মাত্র Gricel বলে উঠল : ওয়ালাইকুম সালাম।

এবার আমার বিস্মিত হওয়ার পালা। জিজ্ঞাসা করলাম : তুমিও কি একজন মুসলিম? তোমার দেশ?

সে বললো : আপনার অনুমান সত্য। আমিও মুসলিম। সাউথ আমেরিকান, আমার দেশ চিলি, আমাদের ভাষা এস্পানিঅল অর্থাৎ স্প্যানিশ।

এবার আমি তাকে বললাম : বুয়েনাস দিয়াস, কোমাস্তা? অর্থাৎ গুড মর্নিং, তুমি কেমন আছ?

আমার মুখে স্প্যানিশ শুনে সে তো বিস্ময়ে হতভম্ব। বলল : বিয়েন, গ্রাসিয়াস! অর্থাৎ আমি ভাল আছি, আপনাকে ধন্যবাদ। তারপর জানতে চাইল আমার দেশ কোথায়, স্প্যানিশ শিখলাম কোথায়।

বললাম : আমার বাড়ি বাংলাদেশে। স্প্যানিশ শিখেছি এই কানাডাতেই সাউথ আমেরিকানদের সঙ্গে মিশে।

সব শুনে খুশী Gricel. তারপর বলল : আগামী পরশু সকালে আপনার বাসায় আমাদের লোক যাবে কেবল্ কানেকশন দিতে। টেক্ কেয়ার, অ্যাডিওস (গুডবাই)।

মুচাস গ্রাসিয়াস, অর্থাৎ তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, জানিয়ে আমি বিদায় নিলাম।

বিচিত্র অভিজ্ঞতা বটে!

সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা