কানাডায় নবাগতদের তুলনায় পুরনো অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য বেশি খারাপ
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : এমিলিয়া এলভিয়ার গারসিয়া পোস্ট-গ্রাজুয়েট পর্যায়ে লেখাপড়া করতে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রথম কানাডায় আসার পর পরিবারের অনুপস্থিতিতে নিঃসঙ্গ বোধ করছিলেন, যেমনটা করেন প্রথম আসা অগণিত অভিবাসী।
অবশ্য, কানাডায় যতদিন ধরেই বসবাস করুন না কেন, নবাগতদের তীব্র উৎেকণ্ঠা ও মনখারাপ অবস্থার কোনও উন্নতি হয় নাÑ বরং তার আরও অবনতি ঘটে। ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির সমাজতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি গবেষক ইকবাল চৌধুরীর গবেষণায় এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে। খবর গুইলিয়ানা গ্রিলো ডি ল্যাম্বারি /নিউকানাডিয়ান.সিএ।
আটলান্টিক কানাডার উপাত্তের আলোকে পরিচালিত চৌধুরীর গবেষণা অবশ্য Canadian immigration paradox তত্ত্ব সমর্থন করে।
ওই প্যারাডক্স হলো: কানাডায় আসা অভিবাসীরা প্রায়শ তাদের কানাডীয় প্রতিপক্ষের চেয়ে স্বাস্থ্যবান হলেও, নবাগতদের স্বাস্থ্য গড় কানাডীয়দের চেয়ে বেশি দ্রুত খারাপ হতে থাকে।
ইকবাল চৌধুরীর গবেষণায় প্রাথমিকভাবে দেখা যায়, নয় বছরের কম সময় আগে কানাডায় আসা অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য এদেশে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাসকারীদের চেয়ে ভালো। কিন্তু পরে, নবাগতদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা সময়ের সাথে সাথে গড় কানাডীয়দের চেয়ে দ্রুত খারাপ হতে থাকে।
“গবেষণায় উঠে এসেছে যে, অভিবাসীরা যখন কানাডায় আসে তখন তারা মানসিকভাবে স্বাস্থ্যবান থাকে এবং একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর (চৌধুরী বলেন ১০ বছর পর) তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে।”
জনসংখ্যাগত নির্দিষ্ট গ্রুপ, যেমন নারী, অশে^তাঙ্গ, একক ব্যক্তিবিশেষ, স্বল্পশিক্ষিত এবং নিম্নআয়ের ব্যক্তিরা এসব ব্যাধির কারণে উচ্চমাত্রায় নাজুকতার মুখে পড়েন।
এমিলিয়া এলভিয়ার কানাডায় এখনও নতুন, কিন্তু এখানে এসে এরই মধ্যে তিনি চাপের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন, যেমন স্টাডি পারমিট পাওয়ার প্রক্রিয়া, এখানকার সংস্কৃতিতে খাপ খাইয়ে নেয়া, কাজের সঙ্গে তার লেখাপড়ার বৈরিতা ইত্যাদি। এখনও তিনি উদ্বিগ্ন এই ভেবে যে, সময়ের সাথে সাথে এটা আরও খারাপ হতে পারে, বিশেষ করে যখন তিনি অনুভব করেন যে, অভিবাসীদের জন্য দেয়া সুবিধাগুলি সুলভ নয়।
ইকবাল চৌধুরীর মতে, সম্পদ ও শ্রমবাজারে প্রবেশাধিকারের অভাব নিয়ে তার হতাশার সাথে, নবাগত ও দীর্ঘকাল ধরে বসবাসকারী অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে বিদ্যমান ব্যবধানের সম্ভাব্য একটি ব্যাখ্যার মিল আছে। অনেক অভিবাসী কানাডায় আসার পর তার প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতির সম্মুখিন হন এবং যে চাকরির জন্য নিজেকে যোগ্য মনে করেন সেরকম চাকরি না পাওয়ায় তারা উদ্বিগ্ন থাকেন যা মানসিক রোগের সৃষ্টি করতে পারে।
তিনি বলেন, “এটি চিন্তার বিষয়। অভিবাসীরা যখন কানাডায় আসেন তখন তারা অভিবাসন পরবর্তী বিভিন্ন ধরণের চাপের মধ্যে পড়েন, যার মধ্যে রয়েছে চাকরিতে স্থির হওয়া এবং অন্য নানা পরিবেশগত চাপ। এটা যখন অব্যাহতভাবে চলতে থাকে তখন মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি হতে শুরু করে।”
বাংলাদেশী ইকবাল চৌধুরী ম্যানিটোবা ইউনিভার্সিটিতে তার দ্বিতীয় মাস্টার্স ডিগ্রি নেয়ার জন্য ২০১৩ সালে কানাডায় আসেন। যেহেতু তিনি নিজের দেশে অভিবাসন সম্পর্কিত বিষয়ে জড়িত ছিলেন সেজন্যেই একজন অভিবাসী হিসাবে তার অভিজ্ঞতা এই কমিউনিটির লোকেদের মানসিক স্বাস্থ্যের ব্যাপারে তাকে আগ্রহী করে তোলে।
ইকবাল চৌধুরী বলেন, “আমি কানাডায় এসে ওইরকম অনুভব করতে শুরু করি, তখন মনে করেছি দেশে ফিরে যাবো। আমি নিঃসঙ্গ বোধ করতাম এবং তা ক্রমশ আরও গভীর হতে থাকে।”
তিনি স্মরণ করেন, চাপ যখন সীমা ছাড়িয়ে যেত তখন তার প্রফেসারদের সমর্থন তাকে অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ নিয়ে গবেষণা করার প্রেরণা যুগিয়েছে।
চৌধুরী আশা করেন, তার প্রারম্ভিক গবেষণা, কানাডাজুড়ে অভিবাসীদের মানসিক কল্যাণের বিষয়ে সমন্বিত গবেষণার অনুঘটক হিসাব কাজ করবে। তিনি এই বিষয়টির অন্তর্নিহিত জটিলতাগুলি বুঝে ওঠা এবং নির্দিষ্ট কোনও প্রদেশে আরও
গুরুতর চ্যালেঞ্জ রয়েছে কিনা তা নির্ধারণের জন্য বৃহত্তর জাতীয় মনোযোগ নিবিষ্ট করার ওপর জোর দেন।
গবেষণার মূল কেন্দ্র আটলান্টিক কানাডায় গত ১৫ বছরে অভিবাসীর সংখ্যা তিনগুণ বেড়েছে এবং প্রদেশটি অভিবাসনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল প্রদেশগুলির একটি হয়ে উঠেছে। ইকবাল চৌধুরী আশা করেন, তার গবেষণা এই জনগোষ্ঠীর মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি করবে, যা তারপরে কার্যকর পদেক্ষপের সূচনা করতে পারে।
অভিবাসন ও সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া স্বভাবতই চাপের
উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে কানাডার ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ক এন্ড হেল্থ এর এক রিপোর্টেও বলা হয়েছে কানাডায় আসার কিছুদিন পর থেকেই পেশাজীবী অভিবাসীদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। আর এর কারণ নিজ নিজ পেশায় চাকরী না পাওয়া এবং তাদের কোয়ালিফিকেশনের তুলনায় অনেক নিন্মআয়ের চাকরী করতে বাধ্য হওয়া। ইনস্টিটিউট অব ওয়ার্ক এন্ড হেল্থ এর গবেষণা সহকারী সিনথিয়া চেন বলেন, আমরা জানি এবং দেখেছি যে কানাডায় আসার পর অনেক ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার পিজ্জা ডেলিভারী অথবা ক্যাব চালাতে বাধ্য হন। অথবা ফ্যাক্টরীতে দিনমজুরের কাজ করেন।
সিনথিয়া এবং তার গবেষণা সহকর্মীরা স্যাটিসটিকস কানাডার অধীনে পরিচালিত Longitudinal Survey of Immigrants to Canada (LSIC) জরীপ রিপোর্টের ডাটা ও তথ্য বিশ্লেষন করে দেখেছেন। ঐ জরীপ রিপোর্টে এমনসব অভিবাসীদেরকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল যারা কানাডায় আসার আগে দেশে চাকরী করেছেন এবং কানাডায় আসার সময় ভাল স্বাস্থ্যে অধিকারী ছিলেন। কানাডায় আসার পর পরবর্তী চার বছরে তাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে তিনবার (ওয়েভ ১, ওয়েভ ২ এবং ওয়েভ ৩)। এক বছর পর পর নেয়া হয়েছিল ঐ সাক্ষাৎকারগুলো। প্রতিবার সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানতে চাওয়া হয়েছিল তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য এক বছরে কোন পর্যায়ে নেমেছে। সাক্ষাৎকারে বিভিন্ন প্রশ্নের মধ্যে বিশেষ যে প্রশ্নটি করা হতো তা হলো- বিগত এক বছরে তারা কোন ক্রমাগত বিষন্নতা, মনমরা ভাব বা একাকিত্বে ভুগেছিলেন কি না। জরীপে মোট ২,৬৮৫ জন পেশাজীবী অভিবাসীকে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছিল। জরীপে দেখা গেছে একাডেমিক লেভেল এর বিচারে এই অভিবাসীদের মধ্যে শতকরা ৫২জন ছিলেন ওভারকোয়ালিফাইড এবং শতকরা ৪৪ ভাগ ওভারকোয়ালিফাইড ছিলেন তাদের চাকরীর অভিজ্ঞতার বিচারে। আর এই বিরূপ পরিস্থিতির কারণে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে সেই চার বছরের মধ্যে। তবে শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক ছিল।
সিনথিয়া তার গবেষণা পত্রে আরো বলেন, কানাডার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাদের পলিসি অনুসারে বিদেশ থেকে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন ও ভাল স্বাস্থ্যের অধিকারী পেশাজীবী লোকদের নিয়ে আসেন অভিবাসী হিসেবে। কিন্তু কানাডায় আসার পর তাদের অধিকাংশেরই স্ব স্ব দেশের অভিজ্ঞতা ও সার্টিফিকেটের যথাযথ মূল্যায়ন হয়না বলে পেশাভিত্তিক চাকরীর বাজারে প্রবেশের সুযোগ থেকে তারা বঞ্চিত হন। সিনথিয়ার পরামর্শ হলো, কানাডায় ইমিগ্রেশনের জন্য আবেদন করার আগে প্রার্থীদেরকে ভাল করে চাকরীর বাজার যাচাই করে দেখা উচিৎ। কারণ, দেখা গেছে ইপ্সিত চাকরী না পেয়ে অভিবাসীদের অনেকেরই মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে কানাডায় আসার অল্পকিছুদিনের মধ্যেই।
এরকম মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে অনেক বাংলাদেশীর মধ্যেও। এদের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। মানসিক চাপ, দুঃশ্চিন্তা, হতাশা, বিষন্নতা ইত্যাদি অনেক সমস্যা নিয়েই বাংলাদেশীরা ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হন। প্রধান কারণ ঐ একটাই। নিজ পেশায় চাকরী না পাওয়া। নিজ পেশায় চাকরী না পেয়ে অন্য চাকরী করতে যান যেখান থেকে পর্যাপ্ত অর্থ আসে না। ফলে সংসারও চলে না ঠিকমত। এর পর অধিকাংশেরই আবার রয়েছে দেশের প্রতি পিছুটান। প্রতি মাসে না হোক, দুই তিন মাস পর পরই দেশে অর্থ পাঠাতে হয়। এসব মিলিয়ে তারা কি করবেন তা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। আর তার অবস্বম্ভাবী পরিনতি মানসিক সমস্যা। টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশী ডাক্তার আবু আরিফের মতে বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ লোক মানসিক সমস্যায় ভুগছেন।
ইউনিভারসিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে ক্রস কালচারাল সাইকোলজিতে পিএইচ ডি করা মনোবিজ্ঞানী সুনাইনা আসানান্দ তার এক গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন, এখানে সমস্যা হলো, অভিবাসীদের মধ্যে যারা মানসিক সমস্যায় ভুগেন তাদের অনেকেই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে চান না। বিষয়টির সঙ্গে দেশজ সংস্কৃতি সম্পর্কিত। মানসিক সমস্যা হলে অনেকেই লজ্জায় ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। তারা মনে করেন, আত্মীয়- বন্ধুরা যদি জেনে যায় তবে লজ্জার ব্যাপার হয়ে দাড়াবে।
মনোবিজ্ঞানী সুনাইনা আরো উল্লেখ করেন, পরিসংখ্যানে দেখা গেছে মূলধারার কানাডিয়ানদের চেয়ে অভিবাসীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বেশী দেখা দেয়। অথচ এরাই সবচেয়ে কম যান ডাক্তারের কাছে সাহায্য নিতে। পরিবারের অন্যান্য সদস্য, আত্মীয়- বন্ধু এদের কাছে লজ্জা পেতে হবে বা একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে এই ভয়েই তারা ডাক্তারের কাছে যেতে চান না। ফলে সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তা বড় রকমের সমস্যা হয়ে দাড়ায়।
মনোবিজ্ঞানী সুনাইনার মতে, অভিবাসীদের অনেকেরই ধারণা- এখানকার ডাক্তাররা অভিবাসীদের মানসিক সমস্যাটা সঠিকভাবে ধরতে পারবেন না। কালচারাল গ্যাপের কারণে এরকম হতে পারে বলে তারা মনে করেন। বৈষম্যমূলক আচরণ পেতে পারেন এই ভয়েও মূলধারার ডাক্তারের কাছে যেতে ভয় পান অনেকে। এ বিষয়ে তিনি পরামর্শ দিয়ে বলেন, সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন কমিউনিটিতে বেশ কিছু ডাক্তার যোগ হয়েছেন যারা নিজেরাও ঐ কমিউনিটিরই সদস্য বা একই কালচারাল ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা। সুতরাং তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া যেতে পারে কোনরকম দ্বিধা দ্বন্দ্ব ছাড়াই।
কানাডায় যখন কেউ অভিবাসী হয়ে আসেন তখন তাকে একসাথে অনেকগুলো সেটেলমেন্ট ইস্যু নিয়ে কাজ করতে হয়। এর মধ্যে আছে হাউজিং, নিজ পেশায় চাকরী খোঁজা, নতুন দেশের নতুন পরিবেশ ও আইন সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার চেষ্টা করা, নিজ দেশ থেকে নিয়ে আসা সংস্কার ও সংস্কৃতির সঙ্গে কানাডার সংস্কার আর সংস্কৃতির বিরোধ থাকলে তার সমন্বয় ঘটানো বা এড়িয়ে চলতে শেখা, ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজের লেখাপড়ার দিকে নজর দেয়া, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক গড়ে তোলা এ সবকিছু মিলিয়ে একটা প্রচন্ড চাপের মধ্যে দিয়ে যেতে হয় নতুন আসা অভিবাসীদেরকে। আর এই পরিস্থিতি অনেক সময়ই প্রচন্ড মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তার সঙ্গে যোগ হয় আরো ওজনদার চাপ যদি নিজ পেশায় কোন অভিবাসী চাকরী না পান। আর এই মানসিক চাপই ক্রমান্বয়ে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায় এবং চিকিৎসকের স্মরনাপন্ন না হলে একপর্যায়ে তা রোগের কারণ হয়ে দাড়ায়।
Longitudinal Survey of Immigrants to Canada এর ডেটা বিশ্লেষণের ফলাফলে আরো দেখা যায়, ওয়েভ ৩-এ সামগ্রিকভাবে প্রায় ২৯% অভিবাসী মানসিক সমস্যা আছে বলে জানিয়েছেন এবং ১৬% অভিবাসী উচ্চতর স্তরে চাপের মুখে থাকার কথা বলেছেন। বর্ণনামূলক ও বিশ্লেষণমূলক ফলাফল থেকে আভাস পাওয়া যায় যে, নারীদের মানসিক সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা বেশি। আরও ইঙ্গিত মেলে যে, মানসিক সমস্যা ও চাপের ব্যাপকতার বিষয়টির সঙ্গে অভিবাসনের বিভিন্ন ক্যাটেগরির সম্পর্ক আছে। পারিবারিক শ্রেণীর অভিবাসীদের তুলনায় উদ্বাস্তু শ্রেণীর লোকেদের মানসিক সমস্যা ও উচ্চমাত্রার চাপের মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা বেশি। দেখা গেছে, কোন অঞ্চলে জন্ম তার ওপরেও আবেগগত সমস্যা থাকার সম্পর্ক আছে। দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকার অভিবাসীদের আবেগগত সমস্যার মুখে পড়ার সম্ভাবনা বেশি, অন্যদিকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অভিবাসীদের চেয়ে উত্তর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য ও পশ্চিম ইউরোপের অভিবাসেিদর এ ধরণের সমস্যায় পড়ার সম্ভাবনা কম। উচ্চমাত্রার চাপের ক্ষেত্রে, দেখা গেছে, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অভিবাসীদের তুলনায় উত্তর আমেরিকা ও সমস্ত ইউরোপের অভিবাসীদের বেশিরভাগ দিনকে খুব বেশি বা অত্যন্ত চাপের বলে চিহ্নিত করার সম্ভাবনা কম। সাম্প্রতিক অভিবাসীদের মধ্যে সর্বনিম্ন আয়ের চতুর্থাংশের উচ্চমাত্রার চাপ বা মানসিক সমস্যার সম্মুখিন হবার সম্ভাবনা সর্বোচ্চ আয়ের চতুর্থাংশের চেয়ে বেশি ছিল। সবশেষে, Longitudinal Survey of Immigrants to Canada’র ডেটা থেকে ইঙ্গিত মেলে যে, এদেশে সেটেলমেন্টের প্রক্রিয়া সম্পর্কে সাম্প্রতিক অভিবাসীদের ধারণার সঙ্গে মনসিক সমস্যা সম্পর্কযুক্ত। সেটেলমেন্ট প্রক্রিয়া বিষয়ে যেসব অভিবাসী সন্তুষ্ট তাদের তুলনায় যারা ‘সন্তুষ্ট বা অসন্তুষ্ট’ কোনওটাই নয় কিংবা ‘অসন্তুষ্ট’ তাদের মানসিক সমস্যার সম্মুখিন হবার সম্ভাবনা বেশি।
দ্বিতীয় ওয়েভে প্রায় ২৭% পুরুষ ও ৩৩% নারী স্থায়ী দুঃখবোধ, বিষণ্নতা ও একাকীত্বের মত আবেগগত সমস্যায় ভোগার কথা বলেছেন। তৃতীয় ওয়েভে পৌঁছার সময়ের মধ্যে এই ব্যবধান কিছুটা বেড়ে যায় যখন ৩৩% নারীর বিপরীতে পুুরুষের হার দাঁড়ায় ২৪%।
অভিবাসী ক্যাটেগরির ভিত্তিতে তাদের মানসিক সমস্যার স্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনা করলে দেখা যায়, অভিবাসীদের বিভিন্ন উপ-দলের মধ্যে বৈষম্য আছে। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েভে সব ক্যাটেগরির মধ্যে উদ্বাস্তু শ্রেণীর অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তরের মানসিক সমস্যা দেখা যায় (যথাক্রমে প্রায় ৩৬% এবং ৩৮%)। আর পারিবারিক শ্রেণীর অভিবাসীদের মধ্যে উভয় ওয়েভে সবচেয়ে কম মাত্রা দেখা গেছে (যথাক্রমে প্রায় ২৫% এবং ২৬%)। এসব তথ্য এলএসআইসির প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে অন্য যেসব গবেষণা করা হয়েছে সেগুলোর তথ্যের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা ইঙ্গিত করে যে, অভিবাসীদের অন্যসব উপ-দলের চেয়ে দুর্বল স্বাস্থ্য থাকার সম্ভাবনা শরণার্থীদের বেশি। শরণার্থীদের উচ্চ স্তরের মানসিক সমস্যার সম্মুখিন হবার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে অভিবাসন-পূর্ব চাপের কারণ, যেমন যুদ্ধ ও পরিবারের সদস্যদের হারানো অথবা অভিবাসন-পরবর্তী চাপ যেমন, বিচ্ছিন্নতা, বৈষম্য ও মানিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা ইত্যাদি।
দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েভের উভয় ক্ষেত্রে দক্ষ কর্মী-প্রধান অবেদনকারীরা সব অভিবাসী উপ-দলের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যায় (যথাক্রমে প্রায় ১৬% এবং ১৯%) সমস্যার কথা জানিয়েছে, যেখানে পারিবারিক শ্রেণীর অভিবাসীদের সংখ্যা ছিল সর্বনিম্ন (যথাক্রমে প্রায় ৮% এবং ১২%)। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়েভের মাঝে সব অভিবাসী উপ-দলই উচ্চ পর্যায়ের চাপ বেড়ে যাবার কথা জানায়।