স্বল্প আয়ের এলাকাগুলোতে অভিবাসী বাবা-মায়ের শিশুরা সুস্বাস্থ্য নিয়ে জন্মায়

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : অন্টারিওর দরিদ্রতম মহল্লাগুলোতে অ-শরণার্থী অভিবাসী মায়েরা যে সন্তানের জন্ম দেন তাদের মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কানাডায় জন্ম নেয়া মায়েদের নবজাতকের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম থাকে। কানাডার মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েনের জার্নালে সম্প্রতি প্রকাশিত এক জরিপে এই তথ্য জানা গেছে। খবর মেগান ডিলেয়ার – সিটিভি নিউজ।

নবজাতকদের এই বিরূপ অবস্থার সঙ্গে অভিবাসী স্ট্যাটাস ও নিম্ন-আয়ের মহল্লায় বসবাস এই উভয় বাস্তবতার সংশ্লিষ্টতা আছে। রিপোর্টে লিখেছেন টরন্টো ইউনিভার্সিটি এবং ক্লিনিক্যাল ইভ্যালুয়েটিভ সায়েন্স ইন্সটিটিউট এবং নর্থ ক্যারোলাইনা-চ্যাপেল হিল নামে টরন্টোর দুটি হাসপাতালের শ্বেতাঙ্গ গবেষকরা।

অভিবাসী নারীদের নবজাতকের গুরুতর অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর ঝুঁকি কানাডায় জন্মগ্রহণকারী নারীদের নবজাতকের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। ছবি : কানাডিয়ান ইন্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ

এর আগের গবেষণায় নিম্ন এবং উচ্চআয়ের মহল্লার নবজাতকদের বিরূপ অবস্থার ঝুঁকি বিবেচনায় নেয়া হলেও বর্তমান সমীক্ষার গবেষকরা বলছেন, আগের গবেষণায় একইরকম নিম্নআয়ের মহল্লায় বসবাসকারী অভিবাসী এবং অনভিবাসী মায়েদের নবজাতকের ঝুঁকির তুলনামূলক বিবেচনার দিকে নজর দেওয়া হয়নি।

গবেষণাপত্রের সহ-লেখক জেনিফার জয়রাম লিখেছেন, “নিম্নআয়ের এলাকায় বসবাসকারী সব নারীর কল্যাণ ও সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নয়নের লক্ষ্যে এবং অভিবাসী ও অনভিবাসী মায়েদের সন্তান জন্মদানে বিরূপ ফলাফল সমভাবে কমিয়ে আনা যায় কিনা সেই লক্ষ্যে প্রয়াস চালাতে হবে।”

অভিবাসী এবং অনভিবাসী মায়েদের নবজাতকের গুরুতর অসুস্থতা ও মৃত্যুঝুঁকির তুলনার জন্য গবেষকরা ২০০২ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে অন্টারিওতে ২০ থেকে ৪২ সপ্তাহের গর্ভাবস্থায় হাসপাতালে জন্ম দেয়া সব জীবিত একক শিশুর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছেন।

তারা লিখেছেন, কানাডায় আসা নারী অভিবাসীদের ৫৩ শতাংশই অন্টারিওতে এসে নামেন।

গবেষকরা নবজাতকের গুরুতর অসুস্থতা ও রোগের বিষয়গুলি পরিমাপ করেন নবজাতককে  দেওয়া শ্বাসজনিত সহায়তা, ধমনীর মাধ্যমে দেওয়া তরল দ্রব্য, গর্ভাবস্থার ৩২ সপ্তাহ হবার আগেই প্রসব হওয়া, খুব কম ওজন নিয়ে জন্মানো এবং শ্বাসকষ্টের মত বিষয়গুলি পরীক্ষার মাধ্যমে।

গবেষণা চলার সময় নগর এলাকার নিম্নআয়ের মহল্লায় বসবাসরত ১৫ বা তার বেশি বয়সের ৩১২,১২৪ জন প্রসূতি ৪১৪,২৪১ টি একক নবজাতকের জন্ম দেন। ওই সময় সব জীবিত নবজাতকের মধ্যে ১৪৮,০৫০টি শিশুর জন্ম দেন কানাডায় অভিবাসী হয়ে আসা মায়েরা। আর ২৬৬,১৯১টি শিশুর জন্ম দেন কানাডায় জন্মগ্রহণকারী মায়েরা। অভিবাসী মায়েদের বেশিরভাগই দক্ষিণ এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল থেকে এসেছেন এবং ১০ বছরের কম সময় ধরে এদেশে বাস করেন।

জয়রাম ও তার দল দেখতে পেয়েছেন যে, অভিবাসী নারীদের নবজাতকের গুরুতর অসুস্থতা অথবা মৃত্যুর ঝুঁকি কানাডায় জন্মগ্রহণকারী নারীদের নবজাতকের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কম। প্রতি ১,০০০ জীবিত নবজাতকের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ৪৯.৭ এবং ৬৫.৬।

তারা বলেন যে, প্রসূতি মায়ের কোন দেশে জন্ম হয়েছে তার ওপরও ঝুঁকির কমবেশি হওয়া নির্ভর করে। জ্যামাইকা ও ঘানা থেকে আসা মায়েদের এবং যেসব প্রসূতি নারী অন্টারিওতে দীর্ঘ সময় ধরে বসবাস করছেন তাদের নবজাতকের রোগাক্রান্ত হওয়ার বা মৃত্যুর ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি।

‘স্বাস্থ্যবান অভিবাসী প্রভাব’

অভিবাসী মা ও নবজাতকেরা কানাডায় জন্মানো মা ও শিশুদের চেয়ে ভালো সেবা পাচ্ছে এমন ধারণার পরিবর্তে গবেষণাপত্রের লেখকরা মনে করছেন যে, তাদের পাওয়া ফলাফলের বিষয়টি বরং “স্বাস্থ্যবান অভিবাসী” প্রভাব দিয়ে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

সেন্ট মাইকেলস হাসপাতালের চিকিৎসক এবং গবেষণার অন্যতম সহ-লেখক ড. জোয়েল রয় লিখেছেন, “যেসব নারী স্বাস্থ্যবান এবং অধিকতর স্থিতিশীল স্বাস্থ্যের অধিকারী তারাই অভিবাসনে সবচেয়ে বেশি সক্ষম; স্বাগতিক দেশের অভিবাসন নীতিতে স্বাস্থ্যবান অভিবাসীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।” তিনি আরও যোগ করেন যে, “পরিহাসের বিষয়, অভিবাসীদের স্বাস্থ্যসেবা পাবার ক্ষেত্রে অনেক বেশি বাঁধার মুখে পড়তে হয়।” গবেষকদের তথ্যমতে, একজন অভিবাসী কোনও নতুন দেশে কত সময় ধরে বসবাস করছেন তার ওপর “স্বাস্থ্যবান অভিবাসী” প্রভাব কমে আসে। গবেষকদের আরেকটি ব্যাখ্যা এরকম যে, কিছু অভিবাসীর নিট আয়, শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং স্বাস্থ্যবিষয়ক জ্ঞান নিম্নআয়ের মহল্লার অন্যদের গড়ের চেয়ে অনেক বেশি।