“ড. সাফি ভূইয়া কে যেমন জেনেছি ও দেখেছি”
সাদামনের মানুষ, মানব সেবায় ব্রত প্রিয় ড. সাফি ভূইয়া কানাডার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ,আলোচিত এবং সমাদৃত নাম যিনি দক্ষতা, মেধা ও যোগ্যতায় কানাডার স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সমাজ সেবায় খাতে অনন্য অবদান রেখে চলেছেন।
ড. সাফি ভূইয়া ১৯৬৭ ইং সালে নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে ভূইয়া (তৎকালীন বড়বাড়ি নামে খ্যাত) পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা হাজী আব্দুর জব্বার ভূইয়া এবং রত্নগর্ভা মাতা আছিয়া বেগম। ১২ ভাইবোনের মধ্যে ড. সাফি ভূইয়া ১১ তম। তার ভাইবোনরা ইন্জিনয়ার, কৃষিবিদ, এডভোকেট, ব্যবসাসহ বিভিন্ন পেশায় ছিলেন, আছেন। তবে তিনিই পরিবারে একমাত্র চিকিৎসক, শিক্ষাবিদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় নিয়োজিত আছেন। ড. ভূইয়া বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অফ টরোন্টোর ডালা লানা স্কুল অফ পাবলিক হেলথের অধ্যাপক এবং এমএসসিসিএইচ প্রোগ্রামের কো-ক্রিয়েটর হিসেবে কাজ করছেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ড. সাফির বয়স ছিলো ৪ বছর। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে হানাদার বাহিনীর আক্রমণ থেকে বাঁচতে পরিবারের সাথে ডিঙ্গি নৌকায় করে রামনগর গ্রামের নদী পার হওয়ার সময় দূর থেকে হঠাৎ আসা পাক বাহিনীর গুলিতে বাড়ির গৃহকর্মীর কোলে থেকে তিনিও গুলি বিদ্ধ হন এবং তার হাতের একটি আঙ্গুল মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয়। তার মাতা এবং পরিবারের সকলের সেবায় তিনি সুস্থ্য হয়ে ওঠেন। মুক্তিযুদ্ধের সে সময়কার যুদ্ধাহত শিশু ডা সাফি আজও সে দু:সহ স্মৃতিচারণ করেন। ড. সাফির প্রাথমিক শিক্ষার শুরু রামনগরে, পরবর্তীতে ফরিদপুর হাই স্কুল, ঢাকার তেজগাঁও সরকারি বিজ্ঞান স্কুল, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল এবং নটরডেম কলেজে পড়ালেখা করেন। তার মায়ের ইচ্ছা ছিলো মেধাবী সাফি ডাক্তার হবে এবং মানুষের সেবা করবে। সেবার সেই ব্রত নিয়ে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করেন।
চাকরীজীবনের শুরুতে তিনি অধ্যাপক প্রভাকরসহ দেশের বরন্য চিকিৎসক জেনারেল আনিস ওয়াইছ এবং অধ্যাপক তাহির প্রমুখ প্রতিষ্ঠিত এ্যাজমা সেন্টারে, বাংলাদেশ মেডিক্যাল কলেজে কাজ করেন। ১৯৯৫ সালে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলায় এমওএমসিএইচ হিসাবে সরকারি চাকরী শুরু করেন। পরবর্তীতে আজিমপুর মাতৃসদনে চাকুরীরত অবস্থায় ড. সাফি থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবান হেলথ কেয়ারের উপর এমপিএইচ ডিগ্রী করেন এবং প্রেষনে বাংলাদেশের ইউএনএফপিএ তে আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার প্রকল্পের কনসাল্টট্যান্ট হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তিনি আটটি সিটি করপোরেশনে ইওসি কার্যক্রমের মাধ্যমে মাতৃসেবা জোরদারকরণ প্রকল্পের কাজে পরামর্শক ছিলেন। আজিমপুর মাতৃ সদনের পুনঃপ্রতিষ্ঠায় তার কাজের সুনাম মেধা ও প্রজ্ঞার জন্য তার কাজের স্বীকৃতি হিসাবে ড. সাফি ভূইয়া জাপান সরকারের বৃত্তিতে ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি এবং জে এস পি এস ফলোশিপ নিয়ে পোষ্ট ডক্টরাল করার সুযোগ পান। এরপর তিনি থাইল্যান্ডের মাহিদল বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার দায়িত্ব পান এবং দুই বছর অধ্যাপনা করে পাবলিক হেলথে আরো দক্ষতা অর্জন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে ২০০৭-২০১০ সাল পর্যন্ত ভিজিটিং স্কলার হিসাবে কাজ করার সুযোগ পান।
২০১০ সালে ড. সাফি কানাডাতে অভিবাসন গ্রহণ করেন এবং টরন্টোতে অন্টারিও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে সাইনটিষ্ট ও সিনিয়র হেলথ্ কেয়ার ম্যানেজার হিসাবে যোগদান করেন। তিনি এ সময় টরন্টো ইউনিভার্সিটিতে গ্লোবাল হেলথের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসাবে যোগদান করেন এবং রায়ারসন বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিস্টিংগুইষ্ট ভিজিটিং স্কলার হিসাবে কাজ শুরু করেন। ইমিগ্রান্ট হেলথ্ প্রফেশনালদের কানাডার স্বাস্থ্যখাতে জড়িত করার লক্ষ্যে দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে তিনি টরন্টোতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পোষ্টগ্রাজুয়েট ব্রিজিং প্রোগ্রাম এবং টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি সিএইচ প্রোগ্রাম চালু করেন। সেইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃওি নিয়ে টরেন্টো মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি থেকে এম বি এ (গ্লোবাল হেলথ ম্যানেজমেন্ট) করেন।
ড. সাফি ভূইয়া বর্তমানে টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার পাশাপাশি প্রফেশনাল সংস্থা কানাডিয়ান কোয়ালিশন ফর গ্লোবাল হেলথের বোর্ডের সদ্য প্রাক্তন চেয়ার এবং কানাডিয়ান এসোসিয়েশন ফর গ্লোবাল হেলথের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালনা বোর্ডের দায়িত্বে নিয়োজিত। কানাডিয়ান স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ইমিগ্রেন্ট হেলথ প্রফেশনালদের সম্পৃক্ততায় তিনি একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন একটি একীভূত আন্তর্জাতিক চিকিৎসক কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা কো চেয়ার হিসেবে। তিনি প্রায় দুই যুগ ধরে মাতৃ ও শিশু স্বাস্হ্যের উন্নয়নে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশ সহ পৃথিবীর প্রায় ৫০টি দেশের মা ও শিশু স্বাস্থ্য তথ্য বইয়ের প্রকশনা ও প্রয়োগের কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশের উওর ও দক্ষিণ অঞ্চলের অনগ্রসর জনগোষ্ঠির মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে রংপুর, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ির স্হানীয় প্রফেশনালদের কারীগরী সহায়তায় স্মার্ট এমসিএইচ হ্যান্ডবুক প্রোগ্রাম চালু করেছেন।
ড. সাফির অধিকতর কাজের স্বীকৃত স্বরুপ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পেশার বাইরে তিনি সামাজিক ও কমুনিটি সেবার জন্য আন্তর্জাতিক মেলবিনজোন ফেলোশীপ, হেলেন কেলার ফেলোশীপ, ডায়াবেটিক ফেলোশীপ, এবং মাষ্টার্স অব সাকসেস এওয়ার্ড ছাড়াও সেবামূলক কাজের নেতৃত্বের জন্য লায়ন্স আন্তর্জাতিক প্রেসিডেন্টের ডিস্টিংগুইষ্ট এওয়ার্ড প্রাপ্ত হয়েছেন। তিনি টরেন্টো গ্লোবাল ডক্টরস লায়ন্স ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও লায়ন্স জেলার বিজিওন চেয়ার, ইয়ুথ একচেন্জ এবং ডায়াবেটিস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে টরন্টোতে সাউথ এশিয়ান কমুনিটির মধ্যে শিক্ষা ও সমাজ সেবায় চ্যাম্পিয়ন হিসাবে নির্বাচিত হন এবং বৃহওর পরিসরে তার আর্থ-সামাজিক কাজের স্বীকৃতিস্বরুপ কানাডাতে ড. সাফি ভূইয়া টপ ৭৫ ইমিগ্রান্ট এর এওয়ার্ড পান। তিনি স্হানীয়ভাবে টরন্টোর স্কারবরোর সাউথ ওয়েষ্টে ব্লাফ নেবারহুডের কমুনিটি সার্ভিস সেন্টারে বোর্ড অব ডিরেক্টরস এবং চেয়ার হিসাবে বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। তার নেতৃত্বে হাজারো অনগ্রসর জনমানুষের সেবায় টীম বিবিএনসি নিয়োজিত আছে।
বিগত এক যুগে দেশে বিদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় তিনি প্রায় তিন শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষা ও গবেষণায় সহায়তা করেছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক ফোরামে শতাধিক পাবলিক প্রেজেনটেশনসহ আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রায় ৫৫টির ও অধিক আর্ন্তজাতিক গবেষণা পেপার প্রকাশ করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ড. সাফি ভূইয়া দুই সন্তানের জনক। তার স্ত্রী ডা:নাহীদ আখতার ক্লিনিক্যাল ডাটা লিড হিসাবে টরন্টোতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি জনস্বাস্হ্য প্রকল্পে দীর্ঘ একযুগ ধরে কর্মরত আছেন। তার সুযোগ্য কন্যা ডা: নাফিসা ভূইয়া আমেরিকার বাফেলোতে রেসিডেন্ট চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত এবং পুত্র মুফরাত ভূইয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা সমাপ্ত করে বর্তমানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগে সহকারী হিসাবে কর্ম জীবন শুরু করেছেন। সদা হাস্য উজ্জল ড. সাফি ভুইয়ার বর্নাঢ্য কর্মজীবন তথা সামাজিক ও পারিবারিক জীবন আরো সুন্দরও সফল হউক এই কামনা করি।
অনুলিখনে: ডা: সৈয়দ আযম মোহাম্মদ এমবিবিএস, এমবিএ। ষ্ট্যানটন টেরিটরিয়াল হাসপাতাল, ইয়োলোনাইফ, নর্থ ওয়েজ টেরিটরিজ, কানাডা ।
এবং ডা: মুশতারী মিমি, এমবিবিএস, এমপিএইচ। ন্যাশনাল টিউবারকিউলোসিস কনট্রোল প্রোগ্রাম,স্বাস্থ্য অধিদপ্তর,বাংলাদেশ।
একজন ড. সাফি,আমাদের বাংলাদেশের এক কীর্তিমান মানবসেবক,নির্লোভ, নিঃস্বার্থক,পরোপকারী সদাহাস্যজ্বল, বন্ধু বৎসল সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সর্ব জন প্রিয় আলোর
দিশারি আমাদের বন্ধু সাফি।ড. সাফির সফলতা বাংলাদেশ, কানাডা ছাড়িয়ে বিশ্বের নানাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।তাঁর সফলতায় বাংলাদেশী হিসেবে আমরা যারপরনাই আনন্দিত।
বঙ্কিমচন্দ্রের মতো আমিও বিষ্মোজ্জ্বোলবিভূষিতলোচনপ্রান্তে
বন্ধু ড. সাফির সফলতা দেখছি আর উচ্ছ্বসিত, উদ্বেলিত হচ্ছি।
প্রিয় বন্ধুর নিরন্তর সফলতা আর দীর্ঘায়ু কামনায়—- ডা. আশরাফ, এসএসএমসি-১৪।