কানাডায় প্রতি বছর আত্মহত্যা করেন প্রায় চার হাজার মানুষ

বাবা-মার উচিৎ শিশুদের সঙ্গে হতাশা, উদ্বেগ এবং এমনকি আত্মহত্যার মত বিষয়েও কথা বলা

সারা বিশ্বে খুন এবং যুদ্ধে যত মানুষ মারা যায় তার চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে আত্মহত্যার মাধ্যমে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডা সরকারের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে, প্রতিদিন দেশটিতে অন্তত ১১ জন মানুষ আত্মহত্যা করে মারা যায়। এর ফলে বছরে আত্মহত্যার মাধ্যমে মারা যায় প্রায় ৪,০০০ জন। এসব মৃত্যুর এক-তৃতীয়াংশই ঘটে ৪৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের মধ্যে।

সরকারি তথ্যে আরও বলা হয়েছে যে, “যুবক ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে (১৫-৩৪ বছর) মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ আত্মহত্যা।” কিছু বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেন যে, অভিভাবকদের উচিৎ শিশুদের সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মহত্যার মত বিষয়ে নিজে উদ্যোগী হয়ে আলোচনা করা, কারণ তারা বলেন যে, এসব বিষয়ে তেমন একটা আলোচনা করা হয় না।

টরন্টোর মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক একজন বিশেষজ্ঞ মার্ক হেনিক গত বছর ১৮ নভেম্বর Roy Green Show-তে বলেন, “প্রকৃতপক্ষে তথ্য খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে, দুর্ঘটনাজনিত নয় এমন মৃত্যুর এটিই সবচেয়ে বড় কারণ। সুতরাং, এটি মৃত্যুর অন্যান্য সব কারণকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে।”  ১৮ নভেম্বর ছিল International Survivors of Suicide Loss Day (ISOSLD)

কানাডায় যুবক ও তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে (১৫-৩৪ বছর) মৃত্যুর দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ আত্মহত্যা। ছবি : সংগৃহীত

তিনি আরও যোগ করেন, “সারা বিশ্বে খুন এবং যুদ্ধে যত মানুষ মারা যায় তার চেয়েও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে আত্মহত্যার মাধ্যমে। কিন্তু আমরা ওইসব ঘটনা নিয়ে প্রতিদিন কথা বললেও আত্মহত্যার বিষয়ে এখনও যথেষ্ট কথা বলি না।”

কানাডার সুইসাইড প্রিভেনশনস অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী,  প্রতিবছর মধ্য নভেম্বরে ইন্টারন্যাশনাল সারভাইভারস সুইসাইড লস ডে পালিত হয়। এতে “আত্মহত্যার মত ক্ষতির কারণে প্রভাবিত ব্যক্তিরা নানা বিশেষ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে কিছুটা স্বস্তি পেতে, প্রিয় মানুষের স্মৃতিচারণ করতে, তাদের ক্ষতির কথা স্মরণ করতে, মানসিক নিরাময় লাভ করতে এবং আশার আলো দেখতে পারেন।”

মে মাসে  প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার সর্ব সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যায়, কোভিড-১৯ মহামারির প্রাদুর্ভাবের আগে ২০১৯ সালের তুলনায় প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে আত্মহত্যার চিন্তার প্রবণতা ২০২১ সালে বেশি ছিল।

স্ট্যাটক্যান-এর তথ্যমতে, ২০২১ সালে আত্মহত্যার চিন্তা করেন এমন প্রাপ্তবয়স্কের হার ছিল ৪.২ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের ২.৭ শতাংশের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেশি।

বিশেষজ্ঞরা কোভিড-১৯ ও মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত ২০২১ সালের সমীক্ষা ব্যবহার করে এই বৃদ্ধির হিসাব বের করেন। ২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৭ মের মধ্যে ওই সমীক্ষা চালানো হয়।

সেন্টার ফর সুইসাইড প্রিভেনশন তাদের ওয়েবসাইটে আরও রিপোর্ট করেছে যে, “আত্মহত্যার চেষ্টার কারণে হাসপাতালে ভর্তি করা টিনএজারের সংখ্যা অন্য যে কোনও বয়স গ্রুপের মানুষের চেয়ে বেশি।”

সরকারি স্কুলের শিক্ষক ও গ্রন্থকার মাইকেল জোয়াগস্ট্রা বলেন, এই পরিসংখ্যান জেনে তিনি “মর্মাহত হননি”।

রয় গ্রিন শোতে আরেক আমন্ত্রিত ছিলেন জোয়াগস্ট্রা। তিনি বলেন, “আমরা জানি, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়… গত আড়াই বছর ধরে কোভিড মহামারির মোকাবেলা এবং এ সম্পর্কিত সমস্ত বাধানিষেধ যে তরুণদের ক্ষেত্রে পুরোপুরি ধ্বংসাত্মক ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই।”

তিনি যোগ করেন, “তরুণরা মহামারির প্রভাবের যন্ত্রণার অনেকটাই বহন করেছে। আর তাই, তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু দীর্ঘমেয়াদী সমস্যার সঙ্গে এটিকে যুক্ত করা যেতে পারে যেটা আমরা দেখেছি। দুর্ভাগ্যবশত, এটি মর্মাহত হবার বিষয় নয় যে, এটি আরও অনেক বড় সমস্যা হয়ে উঠতে যাচ্ছে।”

একজন শিক্ষক হিসাবে, জোয়াগস্ট্রা বলেন, তিনি ক্লাসে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জে ভুগতে দেখেছেন।

তিনি যোগ করেন, “সবচেয়ে স্পষ্ট একটি লক্ষণ ছিল ক্লাসে অনুপস্থিতি… আর অনেক ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীর গরহাজিরার কারণ তার এড়িয়ে যাবার প্রবণতা ছিল না, বরং তাদেরকে সত্যিই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হচ্ছিল।”

জোয়াগস্ট্রা বলেন, আরেকটি লক্ষণীয় লক্ষণ ছিল শিক্ষার্থীদের সাধারণ আচরণ। “আমরা এটিকে দেখেছি বিচ্ছিন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে … বিশেষ করে যেখানে একজন তরুণের মধ্যে এমন নৈরাশ্যের অনুভূতির  সৃষ্টি হয়, যখন তারা মনে করে, পরিস্থিতি আর কখনওই ভালো হবে না। তখনই সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব দেখা যায়।”

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য স্কুলে সহায়তার ব্যবস্থা আছে যেমন, নির্দেশনা দাতা পরামর্শক যারা সাহায্য করতে পারেন। আর তিনি আশা করেন যে, তরুণরা একজন নিরাপদ ও বিশ্বস্ত প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি যেমন অভিভাবক বা শিক্ষকের সঙ্গে তাদের চিন্তাভাবনা নিয়ে কথা বলতে পারে।

হেনিক বলেন, এটি ভাল যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে সরকারি পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যার বিষয়ে অধিকতর সচেতনতা ও সহায়তার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, কিন্তু সমস্যা হল, জনগণকে এখনও বলা হচ্ছে যে, তাদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দিলে তাদের হাসপাতালে যাওয়া উচিৎ।

হেনিক বলেন, ‘সেটি ভালো। জনগণকে হাসপাতালে যেতে হবে, কিন্তু এই বাস্তবতারও স্বীকৃতি দরকার যে, ওটাই যথেষ্ট নয়।”

উদাহরণস্বরূপ, কুইবেক প্রদেশের জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের তথ্যমতে, আত্মহননের চেষ্টার পর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া টিনএজ মেয়ের সংখ্যা ২০২১ সালে ২৩ শতাংশ বেড়ে যায়।

জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওই ইন্সটিটিউটের এক রিপোর্টে বলা হয়, ২০২১ সালে আত্মহত্যার প্রবণতা জেগে ওঠায় কুইবেকে ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী প্রতি এক লাখ মেয়ের মধ্যে ১,৬৩০ জন মেয়ে হাসপাতালে আসে এবং আত্মহত্যার চেষ্টার পর ২২৭ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্য বয়স গ্রুপের লোকেদের চেয়ে এই হার দ্বিগুণেরও বেশি।

হেনিক বলেন, হাসপাতাল হয়তো ওইসব মেয়েকে একটি পরিকল্পনা দিয়ে ঘরে পাঠিয়ে দিতে পারে, কিন্তু সেটি আসলে কিছুই না করার সামিল। আমার ধারণা, পরিস্থিতি ওই পর্যায়ে যাবার আগেই অভিভাবকদের অধিকতর উদ্যোগী হয়ে শিশুদের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা উচিৎ। 

তিনি বলেন, বাবা-মার উচিৎ নৈরাশ্য, উদ্বেগ এবং এমনকি আত্মহত্যার মত বিষয়েও শিশুদের সঙ্গে আলোচনা করা।

হেনিক বলেন, “এমন ধারণা আছে যে, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আত্মহত্যার প্রসঙ্গে আলোচনা করলে তাদেরকে সেটি করার জন্য ধারণা দেওয়া হয়। সেটি এক ধরণের পুরান কথা। তারা যদি এ বিষয়ে চিন্তা করেই থাকে তাহলে এরই মধ্যে সে তা করেছে।”

হেনিক বলেন, বাচ্চা বা তরুণরা যদি নিজের ক্ষতি করা প্রবণতা দেখায় তাহলে বাবা-মাকে তৎক্ষণাৎ এ বিষয়ে ঝাপিয়ে পড়তে সক্ষম হতে হবে Ñ তাদেরকে চলমান সেবা দিতে নিয়ে যেতে হবে, যেটি নিছক একবারের জন্য হাসাপাতালের ইমার্জেন্সি রুমে নিয়ে যাওয়া নয়, বরং মানসিক স্বাস্থ্যের পরামর্শক বা থেরাপিস্টের সঙ্গে তাদের কথা বলার ব্যবস্থা করাও।

তিনি বলেন, “এটি হলো মূল প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলির একটি। তাদেরকে স্বেচ্ছাসেবায় নিয়োজিত করুন, কাজের মধ্যে রাখুন এবং কোনকিছু সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলুন এবং সত্যিকারের পুনরুদ্ধারের একটি সম্পূর্ণ মোড়ক ব্যবস্থা তৈরি করুন, যা কেবল একবারের জরুরী হস্তক্ষেপ নয়।”

আপনি বা আপনার পরিচিত কেউ সমস্যায় পড়লে এবং সহায়তার প্রয়োজন হলে তা পাওয়া সম্ভব। জরুরী প্রয়োজনে ৯১১ নম্বরে কল করুন।

আত্মহত্যা প্রতিহত করার জন্য স্কুলে মানসিক স্বাস্থ্য শিক্ষা চালু করছে অন্টারিও

এদিকে সিবিসি নিউজের এক রিপোর্টে বলা হয়, অন্টারিওর সরকার এলিমেন্টারি ও হাইস্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক পাঠ্যক্রম চালু করবে যার লক্ষ হলো মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষার বিকাশ। রিপোর্ট করেন সিবিসি’র ডেভিড থারটন। গত মার্চে প্রকাশিত ঐ রিপোর্টে বলা হয় কোভিড-১৯ মহামারির সময় থেকে উদ্ভূত অব্যাহত চ্যালেঞ্জের পরিপ্রেক্ষিতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

নতুন পাঠ্যক্রম প্রবর্তন করা হবে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে এবং তাতে ১০ম গ্রেডের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যারিয়ার স্টাডি কোর্সের সর্বশেষ আপডেট থাকবে। সেইসঙ্গে এতে ৭ম ও ৮ম গ্রেডের মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষার বিষয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক উপকরণ অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

এই কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় প্রগ্রেসিভ কনজারভেটিভ এমপিপি নাতালি পিয়েরের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যিনি গত ডিসেম্বরে মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষা বিষয়ে একটি খসড়া আইন প্রাদেশিক পরিষদে পেশ করেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে নাতালি বলেন, তার ১৭ বছরের ছেলে ছয় বছর আগে আত্মহত্যা করে মারা যায়। সেই ঘটনাটি তাকে এই বিল আনার উদ্যোগ নিতে উদ্বুদ্ধ করে।

তিনি কান্নাজড়িত স্বরে বলেন, “আমার ছেলে অন্য যে কোন ছাত্রের মতই ছিল। মৃত্যুর আগের দিনও সে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে যায়। তার আগের রাতে সে বিদ্যালয়ের নাচের অনুষ্ঠানে অংশ নেয়। তাকে দেখলে যে কেউ স্বাভাবিক স্বাস্থ্যবান কিশোর হিসাবেই দেখতে পেতো। কিন্তু এখন আমরা জানি, ঘটনা সেরকম ছিল না।”

তিনি বলেন, পরের মাসে এবং পরবর্তী বছরগুলোতে অনেকে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে মানসিক অসুস্থতা বিষয়ে তাদের নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, স্কুলে বিজ্ঞান ও গণিত যেভাবে পড়ানো হয় সেই একইভাবে মানসিক স্বাস্থ্যশিক্ষাও পড়াতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী Stephen Lecce বলেন, আমাদের “লক্ষ হলো দক্ষতার একটি ব্যক্তিগত সরঞ্জাম (toolbox of skills) সৃষ্টি করা যা তরুণরা তাদের জীবনযাত্রায়, কর্মজীবনে এবং শ্রেণীকক্ষে ব্যবহার করতে পারবে। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্য ও মাদকাসক্তি বিষয়ক সহযোগী মন্ত্রী মাইকেল তিবোলোও উপস্থিত ছিলেন।

লেকে বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রদেশ সরকার চলতি বছর এক কোটি ২০ লাখ ডলার, ২০২৪ সালে এক কোটি ৪০ লাখ এবং ২০২৫ সালে এক কোটি ৬০ লাখ ডলারের তহবিল দেবে।

তিনি বলেন, “অধিকতর ব্যবহারযোগ্য, বাস্তবসম্মত শিক্ষা সৃষ্টির জন্য এটি মৌলিক চাহিদা, যে শিক্ষা তরুণদের মানসিক স্থৈর্য অর্জন এবং জীবনের দৈনন্দিন বাধাগুলো পেরিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে।” তিনি বলেন, পাঠ্যক্রমের কেন্দ্রীয় প্রতিপাদ্য হবে শিক্ষার্থীদেরকে দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের জন্য মানসিক সুস্থতার গুরুত্ব উপলব্ধি ও গ্লানিবোধ কমানোর শিক্ষা দেয়া।

শিক্ষার্থীদের চাপ নিয়ন্ত্রণ ও সাহায্য পাবার বিষয়ে শিখতে হবে

৭ম ও ৮ম গ্রেডের জন্য নতুন পাঠ্যক্রমে বিভিন্ন কর্মতৎপরতা, ভিডিও এবং তথ্য সন্নিবেশিত হবে যা চাপ নিয়ন্ত্রণ, মানসিক স্বাস্থ্য ও মানসিক রোগের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে পারা, মানসিক অবস্থার বিভিন্ন লক্ষণ চিনতে পারা এবং কীভাবে সাহায্য পাওয়া যাবে সেসব বিষয় শিখতে শিক্ষার্থীদের জন্য সহায়ক হয়।

১০ম গ্রেডের শিক্ষার্থীদের জন্য ২০২৪ সালের শরৎকালে বাধ্যতামূলক শিক্ষা চালু করা হবে এবং তাতে বিষণ্নতার লক্ষণ চিহ্নিত করা এবং মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক পরিষেবার সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করতে হবে সেগুলি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, অন্টারিও স্কুল ডিস্ট্রিক্ট-এর সাথে কাজ করা একটি সংস্থা অন্টারিওর মানসিক স্বাস্থ্য স্কুলের বিশেষজ্ঞবৃন্দের পাশাপাশি সিক কিডস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষার মডিউলগুলি তৈরি করা হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের কল্যাণে এগিয়ে আসতে সরকারের প্রতি বিভিন্ন মহলের অনুরোধ

প্রাদেশিক সরকার ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে স্কুলগুলোর জন্য মানসিক স্বাস্থ্য খাতের তহবিল ১১ কোটি ৪০ লাখ ডলার বাড়ানোর ঘোষণাও দিয়েছে। সরকার বলছে, এই বৃদ্ধির পরিমাণ ২০১৮ সালের চেয়ে ৫০০ শতাংশ বেশি। এদিকে প্রদেশজুড়ে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতিশীল অবস্থার বিষয়টি অব্যাহতভাবে তুলে ধরছে এ বিষয়ে কর্মরত বিভিন্ন গ্রুপ ও শিক্ষক সমিতিগুলি। তারা বলছে, তহবিল অবশ্যই মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।

সিবিসি নিউজকে দেয়া এক বিবৃতিতে টরন্টো ইয়থ ক্যাবিনেটের নির্বাহী পরিচালক স্টিফেন মেনসাহ বলেন, পাঠ্যক্রমের ঘোষণা “শিক্ষার্থীদের বিজয়, যারা দীর্ঘদিন ধরে এজন্যে আহবান জানিয়ে আসছিল”, যদিও কেবল কিছু গ্রেডেই এটি প্রবর্তন করা হচ্ছে। এই সংগঠনটি কিন্ডারগার্টেন থেকে ১২’শ গ্রেডের শিক্ষার্থীদের জন্য অধিকতর বিস্তৃত হালনাগাদ পাঠ্যক্রম চালুর দাবি জানিয়ে আসছে।

গত সপ্তাহে বিভিন্ন শিক্ষক সমিতিসহ অন্য অনেক সংগঠনের সঙ্গে মিলে ইয়থ ক্যাবিনেট মন্ত্রী লেকার বরাবর একটি চিঠি পাঠায়। চিঠিতে স্কুলের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বাড়তি উদ্যোগ গ্রহণের অনুরোধ জানান হয়। চিঠিতে স্কুলে মানসিক স্বাস্থ্য দিবস চালু করা,  ছাত্রদের গরহাজিরার অনুমতি, পেশাজীবীদের পক্ষ থেকে অধিকতর সহায়তা এবং মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রয়োজনের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এতে স্বীকার করা হয় যে, আদিবাসী ও কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে এ সংক্রান্ত উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

তরুণদের ওপর মহামারির প্রভাব যখন অভ্যাহতভাবে অনুভূত হচ্ছে তখনই এসব আহবান আসছে। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা জানিয়েছে, কোভিড-১৯ শুরুর পর থেকে তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে। ২০২২ সালে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ৬১ শতাংশ তাদের মানসিক স্বাস্থ্য “খুব ভাল বা দারুণ” বলেছে, যেটি ২০১৯ সালে বলেছিল ৭৩ শতাংশ তরুণ।

এ ছাড়া, টরন্টোর একটি অলাভজনক গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপল ফর এডুকেশন-এর ফেব্রুয়ারির এক রিপোর্টে দেখা যায়, মনস্তত্ত্ববিদের পরামর্শ পাবার সুযোগ নেই এমন স্কুলের সংখ্যা গত এক দশকে দ্বিগুণ হয়েছে। আর শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ক পরিষেবা পাবে কিনা তা বহুলাংশে নির্ভর করে ভৌগোলিক অবস্থার ওপর।

তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতির বিষয়টি অন্টারিও স্কুলগুলিতে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গেও সম্পর্কিত। যেজন্যে অন্টারিও সেকেন্ডারি স্কুল টিচার্স ফেডারেশন চলতি বছরের আরও আগের দিকে মানসিক সহায়তা দিতে পারে এমন কর্মচারী নিয়োগের অনুরোধ জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকরা শিক্ষামন্ত্রীকে এলজিবিটিকিউ সম্প্রদায়ের লোকেদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সম্প্রতি ইয়র্ক ক্যাথলিক স্কুল বোর্ডের সভায় ‘প্রাইড ফ্ল্যাগ’ উত্তোলন করা হবে কিনা সেই প্রশ্নে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনাবলি এই জিজ্ঞাসার উৎস।          

মন্ত্রী যদিও স্বীকার করেন যে, এই সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহননের উচ্চ ঝুঁকি আছে, এই ইস্যুটি কানাডায় ভালোভাবেই নথিভুক্ত করা হয় এবং এই সম্প্রদায়ের তরুণদেরকে অবশ্যই তাদের স্বতন্ত্র পরিচয় ও নিরাপত্তাবোধের নিশ্চয়তা দিতে হবে। তবে মন্ত্রী স্কুলগুলোকে পতাকা উত্তোলনের নির্দেশনা দেবেন কিনা সে বিষয়ে কিছু বলেননি।