কলমবাজি

সাইদুল হোসেন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

Poverty Every Inch (PEI)

ক্যানাডার ১০টি প্রোভিন্সের মাঝে Prince Edward Island (PEI) হচ্ছে একটি, দেশের পশ্চিম প্রান্তে Atlantic Ocean-এর উপর অবস্থিত ছোট একটি sland. Area 2,170 sqr. miles. Population (2022) 154,331. Capital and the largest city Charlottetown (Population 40,500). Atlantic Canada.

মূলতঃ Prince Edward Island (PEI)-এর অধিবাসী, বর্তমানে আমাদের সিনিয়র রেসিডেন্টস বিল্ডিংয়ে বসবাসরত ৮২ বছর বয়স্ক এক পড়শী গল্পচ্ছলে আমাকে একদিন জানালেন যে-

বর্তমানে যদিও PEI-এর অধিবাসী আমরা সুখী-সচ্ছল জীবন কাটাচ্ছি, অতীতে এমন একটা সময় ছিল যখন আমাদের চরম দারিদ্র্যের কারণে PEI বলতে বুঝাতো Poverty Every Inch! (কথাগুলো একটা joke হিসাবে চালু ছিল।)

মজার ইতিহাস বটে!

ডিসেম্বর ৮, ২০২২

আমি একজন কৃষকের সন্তান

মিসিসাগার One Heart Care Hospital-এ গিয়েছিলাম আমার ঘন ঘন heart problem হওয়ার কারণ খুঁজে বের করার জন্য heart test করাতে। একের পর এক তিনটা location-এ তিনজন ভিন্নভিন্ন টেকনিশিয়ান আমার বিভিন্ন ধরনের test নিল- তাদের একজন কালো আফ্রিকান, দ্বিতীয়জন একজন পাকিস্তানী মহিলা। তৃতীয়জন আমার test নেয়া শুরু করার আগেই প্রশ্ন করলেন, “What’s your last name?”

বললাম, “Hossain.”

তিনি বললেন, “My first name is Hussain.”

তখন আমি জানতে চাইলাম, “What’s your last name?”

তিনি বললেন, “ZARE- যারে- which means a farmer. I am a son of a farmer. I am from Iran.

ডিসেম্বর ১৪, ২০২২

একটা পাকিস্তানী উর্দু joke শুনুন (YouTubeথেকে)

একজন অফিসার তার boss-কে ফোন করে জানালেন : Congratulations, sir. আপনি Lottery-তে এক কোটি রুপী জিতেছেন কিন্তু এরুপী পেতে হলে সরকারকে (Government-কে) দশ লাখ রুপী ট্যাক্স দিতে হবে।

কথা শুনে boss বললেন, “কোন ট্যাক্স দেবো না। এক কোটি রুপী পুরোটাই আমি চাই। যদি সরকার রাজী না হয় তাহলে লটারী টিকেট কিনতে আমার যে ৩০ রুপী খরচ হয়েছে সেই রুপীগুলো সব ফেরত দিতে বল!”

ডিসেম্বর ১৪, ২০২২

Twins! Twice in one year!

আজ সন্ধ্যা ৭টার City TV news-এর খবরে দেখলাম যে Brampton city-তে এক মা (Black) ২০২২ সনের শুরুতে একবার এবং শেষে একবার, দু’বার মা হয়েছেন এবং দু’বারই জমজ সন্তান। এক বছরে ৪টি সন্তানের মা হয়েছেন তিনি। তার মন্তব্য : “I have two sets of twins in one year. This is life.”

এই প্রসংগে মনে পড়ে গেল প্রায় ৫৫-৫৬ বছর আগের একটা ঘটনা।

আমার ১৯৫৩-১৯৫৫ সনের ঢাকার কলেজ জীবনের এক সহপাঠির সংগে দেখা করতে গেলাম ১৯৬৮ সনে ওর ঢাকার বাসায়। ওর ছিল ৮টি সন্তান। প্রথম দুটির জন্ম দু’বছর পরপর, বাকী ছয়টি ছিল জমজ- তিনবারে প্রত্যেক বারেই দু’টি করে।  Twins.

দেখলাম দরিদ্র জীবন। অসংকোচে সে বললো, “মুখের অন্ন জোগাতেই হিমসিম খাচ্ছি প্রতিদিন। গায়ের কাপড় কেনার পয়সা জুটাতে পারি না। নিজ চোখেই তো দেখতে পাচ্ছেন।”

ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

Apache Blessing

আমেরিকার আদি অধিবাসীদের বহু tribes-এর মাঝে Apache tribe-টা সুবিখ্যাত। এই Blessing-টা ওদের tribal language থেকে Englishএ অনুবাদ করা হয়েছে-

May the sun
bring you new energy by day.
May the moon
softly restore you by night.
May the rain
wash away your worries.
May the breeze
blow new strength into your being.
May you walk
gently through the world and know
its beauty all the days of your life.”

ডিসেম্বর ২৭, ২০২২

Happy New Year, Chacha!

গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় ফোন বেজে উঠলো। সেটা উঠিয়ে হেল্লো বলতেই শুনলাম এক অতি পরিচিত কণ্ঠ ওদিক থেকে বলছে, “Happy New Year, Chacha!”

ওর greeting-টা শুনে অবাক না হয়ে পারলাম না : জানুয়ারী মাসের ২২ তারিখে New Year আসলো কোন সূত্রে!

This image has an empty alt attribute; its file name is কলাম-ছবি-১.jpg
কানাডার ভেঙ্গুভারে চাইনিজ লুনার ইয়ার পালনের একটি দৃশ্য । ছবি : সিবিসি

বললাম, “ভাতিজা নজরুল, গত ১ জানুয়ারী ২০২৩ সকালে তো আমরা দু’জনে একে অন্যকে Happy New Year জানিয়েছি স্পষ্ট মনে পড়ছে। কিন্তু এই ২২ জানুয়ারী কোন সনের Happy New Year জানাচ্ছ আমাকে?”

হাসতে হাসতে নজরুল (৬০) বললো, “Chinese Lunar New Year-এর greeting, চাচা। জানেন তো আমার ওয়াইফ একজন চাইনীজ। আমাদের দুই ছেলে। ওদের লুনার নিউ ইয়ারটা আমরা প্রতি বছরই celebrate করে থাকি আনন্দ-ফুর্তি করে। অতীতে মনে পড়েনি তবে এবার মনে হলো যে আমাদের এই আনন্দ উৎসবের মূহুর্তটা আপনার সংগেও share করা দরকার। তাই এই phone-call.”

বললাম, “আমার কথা মনে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। তোমার ওয়াইফকে আমাদের পক্ষ থেকে Happy Chinese Lunar New Year-এর শুভেচ্ছা জানিয়ে দিও।

জানুয়ারী ২৩, ২০২৩

দিলসে

(অন্তর থেকে, from the heart)

ঘরে কলম আছে অনেকগুলো কিন্তু কোনটাই ভালো লেখে না। তাই গতকাল গেলাম আমাদের নিকটবর্তী Shopping Plaza-তে এক পাকিস্তানী মহিলাদ্বারা পরিচালিত একটা Convenience store-এ। ঘনঘন নানা প্রয়োজনে যেতে হয় সেই স্টোরে, তাই পরিচয় ও হৃদ্যতা দুই-ই আছে আমাদের মাঝে। আমি বৃদ্ধ লোক, ফলে শ্রদ্ধা-ভক্তিও পাই।

মহিলা উর্দুভাষী, বয়স ৫৫-৬০ বছর হতে পারে। শিক্ষিতা মহিলা, ভালো ইংরেজীও বলেন। আমি কিছুটা উর্দু জানি, তাই কখনো কখনো উর্দুও বলি তার সাথে।

মহিলাকে বললাম, “I need a good pen that writes well. Please give me one from your store.”

তিনি গিয়ে ওয়ালে ঝুলানো নানা ধরনের বলপেনের দিকে তাকালেন কিন্তু কোন প্যাকেট নামালেন না। তার কাউন্টারে ফিরে এলেন। সেখানে রাখা তার purse-টা খুলে একটা সুদর্শন বলপেন ভেতর থেকে বের করে আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলেন, বললেন, “This pen is for you, sir. Much better than what I have in my store.”

আমি আপত্তি জানিয়ে বললাম, “No. How can I take it? This is your personal pen.”

তিনি বললেন, “আপ বুযুর্গ হ্যায়। ইয়ে কলম আপকো তোহ্ফা দেরাহি হুঁ। লেনেসে ম্যায় বহুৎ খুশী হোংগী।” [আপনি একজন সম্মানিত ব্যক্তি। কলমটা আপনাকে গিফ্ট দিচ্ছি। গ্রহণ করলে আমি খুব খুশী হবো।]

হেসে দিয়ে প্রশ্ন করলাম, “দিলসে?” [অন্তর থেকে?]

জবাবে তিনি বললেন, “সাচ বাতাহি হুঁ : দিলসে।” [সত্যি বলছি, আমার অন্তর থেকে দিচ্ছি।]

কি আর করি, শুকরিয়া জানিয়ে গ্রহণ করলাম কলমটা।

জানুয়ারী ২৩, ২০২৩

Two angels at once! Hallelujah!

গতকাল বিকালে আমাদের বিল্ডিংয়ের ব্যাক এনট্রান্স দিয়ে বের হয়ে ডাইনে তাকাতেই চোখে পড়ল যে সেখানে garbage corner-এ অতি সুন্দর একটা কাঠের long and narrow table রাখা আছে। কাছে গেলাম। দেখে অবাক না হয়ে পারলাম না যে সম্পূর্ণ নূতন এমন একটা সুন্দর ও আকর্ষণীয় টেবিল কেউ গার্বেজ করে দিতে পারে! খুব পছন্দ হয়ে গেল। রেখে যেতে ইচ্ছা করলো না। তাই সিদ্ধান্ত নিলাম যে সেটাকে আমাদের এপার্টমেন্টে নিয়ে যাবো যদিও সেখানে স্থানাভাব প্রকট। বহু কষ্ট করে সেটাকে বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকালাম। তবে দুশ্চিন্তায় পড়লাম, সেটাকে এপার্টমেন্টে নেবো কি করে? আমি তো walker ছাড়া দু’পাও হাঁটতে পারি না। Lobby-টা একেবারে জনশূন্য। ওয়াকারে বসে ভাবতে লাগলাম। যদি কেউ আসে।

কিন্তু বেশীক্ষণ ভাবতে হলো না। একই সংগে দুই সাদা বুড়ী (আমাদের বিল্ডিংয়েরই রেসিডেন্ট, যদিও আমার অপরিচিত) একটা এলিভেটরের ভেতর থেকে বের হলো। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলো, “Need any help?”

বললাম, “Yes, I do. এই টেবিলটা ৪তলায় আমাদের এপার্টমেন্টে নিয়ে যেতে চাই কিন্তু কোন হেল্পার চোখে পড়ছে না।”

শুনে এক বুড়ী হেসে বললো, “দু’জন হেল্পার তোমার চোখের সামনেই দাঁড়িয়ে আছি।” [টেবিলটা ওরা দু’জনে মিলে শূন্যে উঠিয়ে দেখলো সেটার ওজন কত।] তারপর বললো, “OK. No problem. Can do. এলিভেটর কল কর। আমরা দু’জনে মিলে এটাকে তোমাদের এপার্টমেন্টে দিয়ে আসতে পারবো। এপার্টমেন্ট নাম্বারটা বল।”

ইতিমধ্যে এলিভেটর এসে উপস্থিত। ওরা দু’জনে দু’প্রান্তে হাত লাগিয়ে টেবিলটাকে এলিভেটরের ভেতরে ঢুকিয়ে নিলো। ভেতরে ঢুকে বললাম, “Thank you, ladies. God is very kind. He has sent two beautiful angels at a time to help me. I am grateful to you. God bless you.”

এলিভেটরটা এসে আমাদের ফ্লোরের দরজা খুলে দাঁড়ালো। টেবিলটাসহ আমরা সবাই বের হলাম। ওদের একজন বললো, “Thanks for praising us. Now show us where to go. Is your wife home”

বললাম, “হ্যাঁ, তিনি বাসায় আছেন।” তারপর ওরা টেবিলটার দু’প্রান্তের দু’টি পা’ মুঠি করে ধরে সেটাকে শূন্যে ঝুলিয়ে আমাদের এপার্টমেন্টের ভেতরে রেখে Bye বলে হাত নেড়ে বিদায় নিলো। আমি ওদের খানিকটা এগিয়ে দিলাম। বললাম, “Thanks again.”

অনুমান করি ওদের দু’জনেরই বয়স ৮০’র কোঠায়। স্বাস্থ্য ভালো। দু’পায়ের উপর ভরসা করেই চলাফেরা করতে সক্ষম এখনো। এবং দৃঢ় মনোবলের অধিকারিণী।

তবে যে বিষয়টা আমাকে মুগ্ধ করলো সেটা হলো ওদের একজন অপরিচিতকে, অসহায়কে অম্লানবদনে সাহায্য করার উদার মানসিকতা যা আমাদের মাঝে বিরল। আল্লাহ ওদের উপর রহমত করুন। Hallelujah! (God be praised!)

Life is full of surprises.

মার্চ ১২, ২০২৩

আমি divorce (তালাক) চাই!

মানুষের মন ও চিন্তাধারা বড়ই বিচিত্র! কাহিনীটা শুনুন।

এক ক্যানাডিয়ান সিনিয়রের সংগে পরিচয় ও হাই-হেল্লো সম্পর্ক আজ চার বছর ধরে। একা বাস করেন। কখনো তার এপার্টমেন্টে যাবার জন্য অনুরোধ করেন। গেলাম একদিন। বয়স তার ৮২ বছর।

নানা কথার ফাঁকে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “আপনার ওয়াইফ কোথায়?”

আমার প্রশ্নের জবাবে তিনি জানালেন :

“আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে আজ থেকে ৩৭ বছর আগে। তখন তিনি সবেমাত্র আমাদের তৃতীয় সন্তান (কন্যা) ডেলিভারী দিয়ে হসপিটাল থেকে রিলিজ নিয়ে বাসায় ফিরে এসেছেন। তার cervical cancer হয়েছিল, সার্জারি করে তার uterus-টা কেটে ফেলতে হয়েছিল। খুবই কষ্ট পেয়েছিলেন তিনি সেই cancer and pregnancy’র কারণে। সেটা তিনি ভুলতে পারেননি। তার মনে একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেল যে তার এই অপরিসীম কষ্টের জন্য দায়ী আমি এবং আমাদের এই মেয়েটা। ক্রমে তার mental depression–এর লক্ষণ প্রকাশ পেতে শুরু করলো।”

“হঠাৎ একদিন তিনি বললেন, I want a divorce from you. I don’t want to maintain any relationship with you anymore. You’re the root cause of all my sufferings, and your this daughter too!”

“প্রতিবাদ করলাম না, ডিভোর্স হয়ে গেল। তিনি চলে গেলেন এক Nursing Home-এ, আজো সেখানেই আছেন। তিনি আমাদের এই ছোট মেয়েটাকে দু’চোখে দেখতে পারেন না। নার্সিং হোমে গেলে দেখা করেন না। ওর বড় আরো দু’টি ছেলেমেয়ে আছে আমাদের, ওরা সবাই বিয়েশাদী করে সংসার জীবন পালন করছে বিভিন্ন শহরে। কিন্তু ওদের প্রতিও তিনি তেমন প্রসন্ন নন। ডিভোর্সের পর আমাদের দু’জনে আর দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। এই হলো আমার জীবন।”

তিনি থামলেন।

আমি দুঃখ জানিয়ে বললাম, “আমারই ভুল। আমার উচিত হয়নি এই বেদনাদায়ক অতীতটাকে স্মরণ করিয়ে দেয়া।”

তিনি বললেন, “না, মোটেই ভুল হয়নি আপনার। মানুষের জীবনে দুঃখজনক ঘটনা কতই না ঘটে এজগতে। Don’t be sorry at all.”

অতঃপর গল্প আর জমলো না। বিদায় নিয়ে ঘরে ফিরে এলাম।

মার্চ ২৮, ২০২৩

সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা