ভাষাগত বর্ণবাদের’ ব্যাপক সমস্যা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নিউ ইয়র্কভিত্তিক HR consultancy প্রতিষ্ঠান ট্রায়েঙ্গেল ইনভেস্টিগেশন্স ইতিপূর্বে একটি অলাভজনক বৈশি^ক সংগঠনে উচ্চারণ বৈষম্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখেছে। ওই সংগঠনের ইথিওপিও উচ্চারণে ইংরেজি বলা একজন কর্মী অভিযোগ করেন যে, তার সহকর্মীরা জুম আলোচনায় তাকে বারবার বাধা সৃষ্টি করেন, তার ইংরেজি উচ্চারণের অবোধ্যতা নিয়ে মন্তব্য করেন এবং তাকে মিটিং থেকেই বাদ দিয়ে দেন। ট্রায়াঙ্গেলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রিন্সিপাল কিয়া রবার্টস বলেন, ওই কর্মী যেসব মিটিংয়ে উপস্থিত থাকতে পেরেছিলেন সেগুলির সময় তিনি আত্মসচেতন ছিলেন এবং কথা বলার পরিবর্তে শেষ পর্যন্ত তিনি এই চ্যাট ফিচারটির ব্যবহারই বন্ধ করে দেন।

মিজ. বরার্টস ও তার দল যখন বিষয়টি খতিয়ে  দেখেন, তারা দেখতে পান যে, অভিযোগের সারবত্তা রয়েছে। তারা দেখতে পান, ওই সংগঠনে কৃষ্ণাঙ্গ সহকর্মীদের সঙ্গে ভিন্নভাবে আচরণ করা হয়; তাদের সঙ্গে অশ্রদ্ধার সঙ্গে কথা বলা হয়, যেন তারা তাদের পদের উপযুক্ত নন এবং তাদের মতামত ও পরামর্শ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া হয় না। তদন্তের পর এই সমস্যার সুরাহা করতে অবশেষে অলাভজনক সংগঠনটি তার স্টাফদের প্রশিক্ষণ দান এবং মাঝেমধ্যে মানবাধিকার খতিয়ে দেখার ব্যবস্থা নেয়।

ভাষাগত বৈষম্যের এই ঘটনা অবশ্যই কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। কানাডাসহ সারা বিশে^ই আগের চেয়ে এখন অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ ইংরেজি ভাষা ব্যবহার করছে। আর ব্যবসায়-বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও সরকার পরিচালনায় এটি প্রধানতম ভাষা। ইংরেজি অব্যাহতভাবে বিকশিত হচ্ছে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী নানা উপায়ে সেটি ব্যবহার করছে বলে। তবুও এই ভাষাগত বৈচিত্র্য মেনে নেয়ার পরিবর্তে আমরা এখনও একটি নির্দিষ্ট ধরণের ইংরেজিকে অন্যদের ইংরেজির চেয়ে উচ্চতর স্থান দিই। এর অর্থ হলো, স্থানীয় পর্যায়ের বা অনাবাসিক ইংরেজিভাষী (যারা প্রমিত বলে বিবেচিত) মূলধারার ইংরেজি থেকে ভিন্ন উচ্চারনে ইংরেজি বলেন তাদের কাঠগড়ায় তোলা যাবে, তাদেরকে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেয়া হবে এমনকি উচ্চারণভঙ্গির জন্য তাদের শাস্তিও দেওয়া যাবে।

ইংরেজী যাদের মাতৃভাষা নয়, তাদের উচ্চারন নিয়ে উর্ধতনরা অনেক সময় অশোভন আচরণও করেন । ছবি : গেটিইমেজ

ভাষাগত বৈষম্যের সব ধরণই ইচ্ছাকৃত নয়; অনেকে নিজেদের অন্তর্ভুক্তিমূলক বলে মনে করলেও তারা বুঝতেই পারেন না যে, তাদের অন্তর্নিহিত পক্ষপাতিত্ব তাদেরকে এমন বিচারবিবেচনা প্রকাশ করতে চাপ দিচ্ছে যেটা তারা জানেনও না যে তারা করছেন। তার পরও, এ ধরণের ঘটনা যেভাবেই ঘটুক না কেন, কর্মীরা দীর্ঘস্থায়ী এবং প্রায়শ হতাশাজনক প্রভাব অনুভব করে। আর এধরণের ঘটনা অব্যাহত থাকায়- বিশেষত যখন কোম্পানিগুলি সমস্যাটি স্বীকার করে না বা রোধের ব্যবস্থা নেয় না – তখন ব্যাপারটা কর্মীদের জন্য আরও খারাপ হয়ে উঠতে পারে, কারণ, এতে করে কর্মক্ষেত্রে তাদেরকে কোনঠাসা করে রাখা এমনকি পুরোপুরি বাদও দিয়ে দেয়া হতে পারে।

যেহেতু একটি দূরবর্তী কাজের জগতে পৃথিবী আরও বেশি করে পরস্পর সংযুক্ত হয়ে উঠছে সেজন্যে কর্মীদের পরস্পরের সঙ্গে কার্যকরভাবে ও সম্মানের সঙ্গে কথা বলতে পারা অপরিহার্য। সুতরাং কীভাবে আমরা ভাষাগত বৈষম্যের অবসান ঘটাতে পারি –  এবং স্থানীয় ও অস্থানীয় ভাষাভাষীদের উভয়েই সমানভাবে উপকৃত হবে, ভাষার এমন একটি অধিকতর অন্তর্ভুক্তিমূলক ও কার্যকর ব্যবহার সৃষ্টি করতে পারি?

গোপন অথবা প্রকাশ্য

সারা বিশ্বে অস্থানীয় (non-native) ইংরেজিভাষীর সংখ্যা স্থানীয় ইংরেজিভাষীদের চেয়ে অনেক বেশি, এক জনের বিপরীতে তিনজন। যদিও ‘নেটিভ ইংরেজিভাষী’ এই পরিভাষার সংজ্ঞায়ন খুব জটিল। এই শব্দে এমন ব্যক্তিদের বোঝানো হয় যারা একেবারে শৈশব থেকে প্রথম ভাষা হিসাবে ইংরেজিতে কথা বলেন। কিন্তু অনেক শিশুই এক সঙ্গে একাধিক ভাষা শিখে বড় হয়, যেমন, যদি তাদের বাবা-মা ভিন্ন যায়গা থেকে এসে থাকেন, আবার যদি কোনও জাতির একাধিক সরকারি ভাষা থাকে সেক্ষেত্রেও এটি ঘটে।

ইংরেজির সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট মর্যাদা যুক্ত করা হয়ে থাকে যাতে মনে করা হয় যে, এটি যেন একটি ধনী দেশের ভাষা, যেখানে শে^তাঙ্গরা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং যে দেশে একটিই ভাষা প্রচলিত। এই সংকীর্ণ দৃষ্টিকোণ থেকে নাইজেরিয়া ও সিঙ্গাপুরের মত বহুভাষিক দেশগুলিতে ইংরেজির অপেক্ষাকৃত কম ‘বৈধ’ ও কম পছন্দনীয় রূপ প্রচলিত আছে (যদিও উভয় দেশেই ইংরেজি সরকারি ভাষা)। অস্ট্রেলিয়ার পার্থের কার্টিন ইউনিভার্সিটির সমাজভাষাবিদ সেন্ডার ডোভচিন বলেন, বিশ্বব্যাপী ইংরেজির সবচেয়ে সম্মানীয় রূপভেদগুলি হলো ব্রিটিশ, আমেরিকান ও অস্ট্রেলিয়ান রূপ।

কোনও একটি দেশে ইংরেজির নির্দিষ্ট রূপ খুব কমই সুবিধা নিয়ে আসে। শুধু একটি দৃষ্টান্ত উল্লেখ করা যেতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে, সেখানে আফ্রিকান-আমেরিকানদের ইংরেজি এখনও ভুল বোঝাবুঝি এবং বৈষম্যের শিকার হয়ে আছে। আর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কিছু নির্দিষ্ট ধরণের ইংরেজিভাষীকে তাদের প্রকৃত যোগাযোগ দক্ষতার পরিবর্তে তাদের জাতীয়তা বা বর্ণের ধারণার ভিত্তিতে বিচার করা হয়। ডোভচিন ব্যাখ্যা করে বলেন, “যখন কোনও ইউরোপীয় নাগরিক ইংরেজিতে কথা বলে, যেমন ফরাসি, জার্মান, ইতালীয় টানসমৃদ্ধ ইংরেজি বলে তখন সেটিকে তারা সত্যিই চমৎকার, পরিশীলিত, শৈলীমণ্ডিত এবং আরও অনেক অনেক কিছু বলে বিবেচনা করতে পারে।” কিন্তু, তিনি আরও যোগ করেন, এশীয়, আফ্রিকান বা মধ্যপ্রাচ্যের লোকেরা যখন ইংরেজি বলে তখন সেটিকে দুর্বোধ্য ও অপ্রীতিকর বলে বিবেচনা করা হতে পারে।

ভাষাগত এই গৎবাঁধা ধারণা এমনকি সেইসব এশীয়, আফ্রিকান বা মধ্যপ্রাচ্যীয়দের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করা হয় যখন আসলে তারা স্থানীয় (নেটিভ) ইংরেজিভাষী। একজন এশীয় মানুষের কেবল চেহারা দেখেই একজন আমেরিকান ধরে নেন যে, এই বক্তার ইংরেজি বোঝা কঠিন হবে। সেই বক্তা কীভাবে কথা বলছেন বা কোথায় তার জন্ম হয়েছে সেসব বিবেচনায় নেয়ারও আগেই ওই ধারণা পোষণ করা হয়। আমি যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণ করেছি, আমার যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট আছে এবং ইংরেজিতে ডিগ্রিও আছে কিন্তু এশীয় বংশোদ্ভূত অন্যান্য এশীয় মানুষের মতই আমারও ইংরেজিতে সাবলীলতার জন্য মানুষের প্রশংসা পাবার ক্ষেত্রে পরাবাস্তব অভিজ্ঞতা আছে। এসব ধারণা ভাষাগত বর্ণবাদ অথবা উচ্চারণ, উপভাষা এবং কথা বলার ধরণের উপর ভিত্তি করে বর্ণবাদের জন্ম দেয়। ভাষাগত বর্ণবাদের প্রকাশ্য রূপটির সঙ্গে ইচ্ছাকৃতভাবে অবজ্ঞা করা অথবা লজ্জা দেয়ার সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে।  যেমন, জাতিগত উচ্চারণ নিয়ে গালমন্দ করা (ethnic-accent bullying), যেটি ইংরেজিতে কারও সত্যিকারের দক্ষতা থাকার পরও ঘটতে পারে। কিংবা এটি থাকতে পারে আরও গুপ্ত অবস্থায়, যেমন, বিদেশি উচ্চারণে ইংরেজি বলার কারণে কাউকে অনিচ্ছাকৃতভাবে সামাজিকভাবে বর্জন করা অথবা একজন এশীয়-আমেরিকানের ইংরেজির প্রতি আপাতদৃষ্টিতে সৎ-উদ্দেশ্যে প্রশংসা করা।

এসব উদাহরণ থেকে দেখা যায়, অপরাধীদের কাছে এটা স্পষ্ট না-ও হতে পারে যে তারা কী করছে, কারণ, এর সঙ্গে কিছু সূক্ষè মনস্তাত্ত্বিক প্রক্রিয়াও জড়িত। কম পরিচিত উচ্চারণ বুঝতে জ্ঞানগতভাবে আরও কিছু কাজ করার দরকার হয়। বাড়তি মেধারও সংশ্লিষ্টতা আছে এক্ষেত্রে, একই সঙ্গে নিজের জনগোষ্ঠীর সদস্যদের প্রতি অতিশয় উষ্ণ অনুভূতি থাকলে সেটিও ভিন্ন ধরণের ইংরেজি বলতে পারা ব্যক্তির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি করতে পারে। সামগ্রিকভাবে অনুমান করা খুবই সাধারণ ঘটনা যে, অস্থানীয় ইংরেজিভাষীরা কম সত্যবাদী, কম বুদ্ধিমান এবং কম যোগ্যতাসম্পন্ন। মনোবিজ্ঞানের পাঠ এটাই বলে যে, বিদেশি উচ্চারণে বলা বক্তব্য মানুষের কাছে কমই বিশ্বাসযোগ্য হয়।

এ ধরণের পক্ষপাতিত্বের উল্লেখযোগ্য মূল্য দিতে হতে পারে। ডোভচিনের গবেষণায় দেখা গেছে, ভাষার কারণে লজ্জিত বা সামাজিক বর্জনের শিকার লোকদের অনেকের মধ্যে হীনমন্যতা দেখা দেয় এবং তারা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে তারা আসলেই কম বুদ্ধিসম্পন্ন। বহুভাষাভাষী অনেক মানুষ নিজ দেশে তার ইংরেজি দক্ষতায় মোটামুটি আত্মবিশ্বাসী বলে জানান। কিন্তু পরে ইংরেজির প্রাধান্য আছে এমন দেশে তাদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করা হয় তাতে তারা আস্থা হারিয়ে ফেলেন।

সবচেয়ে খারাপ পর্যায়ে, ভাষাগত বর্ণবাদ ব্যক্তিকে তার শিক্ষা, কর্মসংস্থান,স্বাস্থ্য ও বাসস্থান পাওয়ায় বঞ্চিত করতে পারে। কর্মক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ধরণে উচ্চারণ করেন এমন লোকেদের প্রকাশ্যে হয়রানি করা হতে পারে (যেমন, কল সেন্টারের একজন পুয়ের্তোরিকান কর্মীকে একজন গ্রাহক বলেছিলেন, “আপনার বোকা বোকা উচ্চারণ আমাকে অসুস্থ করে তোলে”), অথবা নির্দিষ্ট সুযোগ-সুবিধা পাওয়া থেকে বাদ দেওয়া হতে পারে (যেমন, লন্ডনে একজন পাকিস্তানী পরিবহণ শ্রমিককে তার ম্যানেজার কনফারেন্স কলের বাইরে রেখেছিলেন)।

বৈষম্যের অর্থ কখনও এমনও দাঁড়াতে পারে যে, কিছু লোক কারো দরজাও মাড়ায় না। উদাহরণস্বরূপ, নতুন ব্যবসায়ীদের মধ্যে বীজ সরবরাহের তহবিল পরিচালনাকারী ওয়াই কমবিনেটর-এর প্রতিষ্ঠাতা পল গ্রাহাম খোলাখুলিভাবে স্বীকার করেন যে তার কর্মসূচি বিদেশি উচ্চারণে কথা বলা আবেদনকারীদের বিরুদ্ধে পক্ষাপাতিত্বপূর্ণ। বিজনেস পাবলিকেশন্স ইনকরপেরটেডের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন জল্পনা প্রকাশ করেন যে, “এমনও হতে পারে যে, অর্ধেক মস্তিষ্কসম্পন্ন যে কোনও ব্যক্তিই বুঝতে পারবে, আপনি যদি রীতিসিদ্ধ ইংরেজিতে কথা বলতে পারেন তাহলে আপনি আরও সফল হবেন, তাই তারা যদি নিজেদের জোরালো আঞ্চলিক টান কাটিয়ে উঠতে না পারে তাহলে তাদেরকে অপরিজ্ঞাতই থাকতে হবে।”  এই মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছিল, কিন্তু গ্রাহাম অনুতপ্ত হননি। বরং তিনি লিখেন, “এ সব দিয়ে কেউ নিজেকে বোঝানোর কাজটা করতে পারবে না।” এটি স্থানীয় ভাষাভাষীদের বিশেষাধিকারের এক চরম অভিব্যক্তি: বিশে^র সংখ্যালঘু ইংরেজিভাষী দাবি করছেন যে, সংখ্যাগরিষ্ঠদেরকে তাদের ভাষাভঙ্গি পাল্টে ফেলতে হবে।

ভাষাগত বর্ণবাদ দূর করার উপায়

ব্যক্তিগত এবং করপোরেট উভয় পর্যায়েই বর্ণবাদের মোকাবেলা করতে হবে। ডোভচিন বিশ্বাস করেন, “আমরা যদি জৈবিকভাবে এটি ঘটবে বলে অপেক্ষা করি তবে তা কখনই ঘটবে না।”

প্রথমত, সংস্থাগুলিকে ভাষাগত বৈচিত্র্য বিষয়ে চলমান আলাপ-আলোচনাগুলিকে বৈচিত্র্যের একটি ধরণ হিসাবে সামনে আনার ব্যাপারে কৌশলী হতে হবে। ভাষা সম্পর্কিত পক্ষপাতিত্ব কীভাবে যোগাযোগ এবং সুযোগ-সুবিধাকে প্রভাবিত করে সে বিষয়ে কর্মীদের প্রশিক্ষণ দান এবং এটিকে নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

কিন্তু ব্যক্তি পর্যায়ে, প্রথম ভাষা হিসাবে ইংরেজি বলা লোকেরা তাদের ইংরেজিকে আরও সুগম বা অভিগম্য করে তুলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ, তারা ধীরগতিতে কথা বলতে পারেন এবং বক্তব্যের মধ্যে কৌতুক ও বাগধারার ব্যবহার এড়িয়ে যেতে পারেন। তারা মিটিংয়ে নিজেরা কথা কম বলে অস্থানীয়দের বেশি বলার সুযোগ দিতে পারেন, পাশাপাশি অস্থানীয়দেরকে মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করার এবং যোগাযোগের মূল সুর কী হবে তা নির্ধারণ করার সুযোগ করে দিতে পারেন। তারা বক্তার শারীরীক ভাষার দিকেও মনোযোগ দিতে এবং তাদের শ্রবণদক্ষতার উন্নয়ন ঘটাতে পারেন- যেমন, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মানুষের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে এমন জনপ্রিয় সংস্কৃতি খুঁজে নেওয়ার মাধ্যমে এবং এভাবে যোগাযোগের উপায়ে বিভিন্নতা এনে এটি করা যেতে পারে। বেশি বেশি সংশ্লিষ্টতার মাধ্যমে মস্তিস্ক একটু ভিন্নভাবে উচ্চারিত বক্তব্য বোঝার ক্ষেত্রে আরও দক্ষ হয়ে ওঠে। সার্বিকভাবে, প্রত্যেকেই ভাষা সম্পর্কিত পক্ষপাত বিষয়ে আরও সচেতন হতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির ভাষাবিদ সুরেশ কানাগারাজাহ বলেন, আন্তঃজাতিগত কর্মকাণ্ড যেমন হয়ে উঠেছে তাতে আমাদেরকে সব ধরণের ইংরেজিতে কথা বলা লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে আরও ভালো হতে হবে। “আমি ‘চিংলিশ’ বুঝি না বা আমি ভারতীয় ইংরেজি বুঝি না একথা বলার মত অবস্থায় আপনি নেই, কারণ তাতে ওইসব বাজার হারাবেন।” এটি অবশ্যই কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য; উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের উপেক্ষা করা যেতে পারে যদি তারা স্বল্প সম্মানজনক ইংরেজি উচ্চারণের মাধ্যমে কোনও নিয়োগদাতা ম্যানেজারের মনে পক্ষপাতিত্ব জাগিয়ে তোলে। কানাগারাজাহ বলেন, সেখানে “আপনি ভুল জিনিসের উপর আলোকপাত করছেন এবং সম্ভবত প্রচুর সুদক্ষ লোককে হারিয়েছেন।”

ব্যক্তি এবং কোম্পানিগুলি সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টির জন্য যা করতে পারে সেটি করার পরও আরেকটি উপায়ও আছে। সেটি হলো, ‘ভালো’ ইংরেজি বলতে কী বোঝায় সে বিষয়ে আমাদের ধারণা পাল্টে ফেলা। অনেক কর্মক্ষেত্রের পরিবেশে ফেনানো গদ্য ও অশ্লীল চ্যাটের পরিবর্তে কার্যকর যোগাযোগের ওপর ফোকাস করা হলে তা আরও অর্থবহ হবে। কার্যকরী কর্মপরিবেশে বিভিন্ন ধরণের ইংরেজি উচ্চারণ বুঝতে সক্ষম ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে সেই ব্যক্তির চেয়ে অনেক ভালো যোগাযোগকারী যিনি কেবল নিজের ধরণের ইংরেজি উচ্চারণই বুঝতে পারেন, সেটি স্থানীয় হিসাব বিবেচিত হোক বা না হোক।

তথাকথিত নেটিভ ইংলিশ স্পিকার হওয়ার সুবিধার ওপর আমার কর্মজীবন কতটা নির্ভর করে সে বিষয়ে আমি প্রচুর ভেবেছি। রুমানিয়ায় ইংরেজি শেখানোর জন্য আমার শিক্ষকতা বিষয়ে কোনও যোগ্যতার প্রয়োজন হয়নি; শুধু আমেরিকান হওয়াই যথেষ্ট ছিল। প্রকাশনার বিষয়গুলি লেখা ও সম্পদনার জন্য আমাকে নিয়োগ দেওয়া হয় বৈশি^ক বলে সিলমোহর মারা আছে এমন ইংরেজির সঙ্গে আমার পরিচিতি থাকায়।

এই বিশেষ সুযোগ নিয়ে আমি এবং আমার মত অন্যরা খুব সামান্য যে কাজটা করতে পারি সেটি হল, এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতন হওয়া এবং এক্ষেত্রে আমরা যেভাবে ভূমিকা রাখি তা কমিয়ে আনা। চিন্তাশীলতার ব্যক্তিগত কাজগুলি ক্ষমতার কাঠামো ভেঙ্গে দিতে পারে না যেটি উত্তর আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপীয় ইংরেজদের প্রভাবশালী করে রাখে। তবে এটি ইংরেজির সমস্ত বৈচিত্র্যের মধ্যে একটি গুণগ্রাহিতার সৃষ্টি করতে পারে। 

সূত্র : ক্রিস্টিন রো – বিবিসি নিউজ