টপস নেই তো সমস্যা নেই: এডমন্টন সিটির পুলগুলিতে সবাই বুক খুলে ঢুকতে পারেন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : শহরের সুইমিং পুলগুলিতে ঊর্ধ্বাঙ্গ খোলা রাখার যে নীতি এডমন্টন সিটি কর্তৃপক্ষ নিয়েছে সেটি সম্প্রতি অনেকের চোখ কপালে তুলেছে। খবর নাতাশা রিবি  –  সিবিসি নিউজ।

নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনও গ্রাহক শরীরের ঊর্ধ্বাংশ নগ্ন রেখেই এডমন্টনের যে কোন সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে, ঘুরে বেড়াতে বা শুয়ে বসে থাকতে পারেন।

শহরের পুলগুলোতে সাঁতারের পোশাক সম্পর্কিত নির্দেশনায় এই নীতিটি অন্তর্ভুক্ত আছে ২০২২ সালের জুন মাস থেকে। তবে এ পরিবর্তন নিয়ে ব্যাপক প্রচার হয়নি।

এডমন্টনের একোয়াটিকস অ্যান্ড কমিউনিটি লেইজার সেন্টারের পরিচালক প্রিয়া ভাসিন-সিং বলেন, এই নীতি আলবার্টার মানবাধিকার আইনে উল্লেখিত জেন্ডার পরিচিতি ও অভিব্যক্তি সুরক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত।

নারী পুরুষ নির্বিশেষে যে কোনও গ্রাহক শরীরের ঊর্ধ্বাংশ নগ্ন রেখেই এডমন্টনের যে কোন সুইমিং পুলে সাঁতার কাটতে, ঘুরে বেড়াতে বা শুয়ে বসে থাকতে পারেন। ছবি : ফ্রিপিক

ভাসিন-সিং সিবিসি নিউজকে দেয়া এক বিবৃেিত বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের সুইমিং গাইডলাইনে জেন্ডারের ভিত্তিতে কোনভাবেই বৈষম্য থাকতে পারে না এবং শহরের সুবিধাগুলিতে বেড়াতে আসা কাউকে ফিরিয়ে দিতে পারে না।”

এ শহরে এখন ১৫টি ইনডোর এবং চারটি আউটডোর সুইমিং পুল আছে।

নগর কর্তৃপক্ষ সাঁতারের পোশাক সম্পর্কিত তাদের নির্দেশনা উল্লেখিত আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষে সেটি পর্যালোচনার কাজ শুরু করে ২০১৯ সালে।

শহরের যোগাযোগ বিষয়ক উপদেষ্টা ক্রিস্টোফার ওয়েবস্টার বলেন, আগের গাইডলাইনে নারীদের টপস পরতে হলেও সেটা পুরুষের জন্য প্রযোজ্য ছিল না।

সক্রিয় প্রবণতা

এডমন্টনের টায়লর জানিস এলএলপির একজন অ্যাসোশিয়েট আইনজীবী চেলসি স্কট বলেন, মনে হয় নীতিটি অন্টারিও এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার আইনী দৃষ্টান্তগুলোর ওপর ভিত্তি করে তৈরি একটি সক্রিয় পদক্ষেপ।

বুধবার এক সাক্ষাৎকারে স্কট বলেন, “আমি বলবো, এটিই হলো এখনকার ট্রেন্ড।”

“একটা সাধারণ আইন আছে, আর কানাডায় সেই সাধারণ আইন হলো, নারীদের – চূড়ান্ত বিচারে আমরা তো কথা বলছি এই নারী প্রসঙ্গেই- খোলা জায়গায় (ঢ়ঁনষরপ ংঢ়ধপবং) নারীদের স্তন ঢেকে রাখতে বাধ্য করা হবে না।”

স্কট বলেন, পৌরসভাগুলির পরিচালনায় অনেক পাবলিক স্পেস আছে যেগুলি সম্ভাব্য বৈষম্যমূলক পরিস্থিতি রোধে যথেষ্ট সক্রিয়।

একইরকম নীতি রয়েছে আলবার্টার এমন আর কোনও পৌরসভার ব্যাপারে জানতেন না স্কট।

আলবার্টার বিচার বিভাগের একজন মুখপাত্র বলেন, টপলেস হয়ে সাঁতার কাটায় বাঁধা দেয় এমন কোনও আইন প্রদেশে নেই। আর পাবলিক পুলের বিধিমালায়ও সেটার সমাধান নেই।

কিছু মানুষ বিস্মিত

বুধবার কমনওয়েথ কমিউনিটি রিক্রিয়েশন সেন্টারে যাওয়া কয়েকজন গ্রাহক ওই পলিসির খবর জানতে পারেন।

এমন একটি নীতি থাকার বিষয়ে অনবহিত কমনওয়েথ জিমের নিয়মিত গ্রাহক জেমি আর্ল বলেন, “মহিলাদের বুক খুলে রাখাটা এক ধরণের উদ্ভট ব্যাপার।”

তিনি বলেন, এখন অস্বাভাবিক মনে হলেও এটা হয়তো এমন বিষয় যাতে অভ্যস্ত হতে কিছুটা সময় লাগবে।

তিনি বলেন, “আমি নিশ্চিত, শেষ পর্যন্ত এটি গ্রহণীয় হয়ে যাবে। অনেক টপলেস বিচ আছে, সেখানে স্টাফরাও টপলেস। মানুষ এ নিয়ে একেবারেই ভাবে না।”

ইয়াসমিন সোয়ারেজ বলেন, ওই নীতির কথা জেনে তিনি বিস্মিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি না এটা আদৌ অনুমোদন করা উচিৎ, প্রত্যেক মানুষের বিশ্বাস ও মূল্যবোধ এক নয়।”

তিনি বলেন, এ ধরণের নীতি নিয়ে তার কোনও সমস্যা নেই, তবে এতে অন্যরা অস্বস্তি বোধ করতে পারে।

তিন বছরের মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে বিনোদন কেন্দ্রে আসা ম্যালোরি আন্টারেনার বলেন, তিনি এটিকে সমঅধিকারের ইস্যু বলেই মনে করেন।

তিনি বলেন, “পুরুষেরা সব সময়ই বুক খোলা রাখেন, আমার মনে হয়, মহিলারাও সেটা করতে পারবেন।”

রাদারফোর্ড নামের এক নারী বলেন, তিনি শহরের কোনও পুলে কাউকেই কখনও টপলেস অবস্থায় চলতে দেখেননি।

তিনি বলেন, “অমি নিজে পুলে টপলেস হবো না, তবে প্রত্যেকের পছন্দের অধিকারে আমি শ্রদ্ধাশীল।”

ভাসিন সিং বলেন, এই পলিসি নিয়ে নগর কর্তৃপক্ষ কোনও নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পায়নি।

তিনি বলেন, “আমরা বুঝি, কিছু মানুষ এই উদ্যোগের বিষয়ে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। তবে এটি মানবাধিকারের প্রশ্ন, আর নগরীর সুবিধাগুলির ব্যবহারে সব মানুষকে সমানভাবে দেখার দায় আমাদের আছে।”

এক ই-মেল বার্তায় ওয়েবস্টার বলেন, বিনোদন কেন্দ্রের অন্য অংশে বা নগরীর অন্যান্য সুবিধার ক্ষেত্রে টপলেস পলিসি প্রযোজ্য নয়- সেখানে যেতে হলে এখনও টপস পরতে হবে।