কানাডার জনসংখ্যা ২০২২ সালে কেন গত কয়েক দশকের মধ্যে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ২০২২ সাল যখন শেষ হয়ে আসছিল তখন কানাডার জনসংখ্যা কনফেডারেশন গঠনের পর যে কোনও বছরের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। এটি ঘটে প্রধানত নন-পারমানেন্ট রেসিডেন্ট ও অভিবাসীদের প্রবাহের কারণে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত স্ট্যাটিসিটিকস কানাডার এক হিসাবে বলা হয়েছে, ঐ বছর শুধু জুলাই থেকে অক্টোবরের মধ্যেই দেশের জনসংখ্যা বেড়েছে ৩৬২,৪৫৩ জন বা ০.৯ শতাংশ। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর।

ওই তিন মাসের মেয়াদে মানুষের প্রবাহ ২০১১ সালের পুরো বছরে জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাণের চেয়েও বেশি ছিল। ২০১১ সালে জনসংখ্যা বেড়েছে ৩৫০,০০০। সংস্থাটি উল্লেখ করে যে, ১৯৫৭ সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকের পর থেকে এটিই হল কোনও একক ত্রৈমাসিকে প্রবৃদ্ধির দ্রুততম হার। ওই সময়টি ছিল যুদ্ধোত্তরকালে জনসংখ্যা বিষ্ফোরণের কাল, সেই সঙ্গে ১৯৫৬ সালে হাঙ্গেরির বিপ্লবের পর এসেছিল উদ্বাস্তুর ঢল।

কেন্দ্রীয় সরকারের এই সংস্থাটি জনসংখ্যার এই রেকর্ড পরিমাণ উচ্চ পরিসংখ্যানের কারণ হিসাবে নন-পারমানেন্ট রেসিডেন্টদের বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করে যার মধ্যে ওয়ার্ক পারমিট পাওয়া লোকেরা এবং ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের কারণে পালিয়ে আসা লোকেরাও রয়েছে।

মন্ট্রিলের সেন্ট ক্যাথারাইন স্ট্রিটে পথচারীর ভিড়। দ্য কানাডিয়ান প্রেস/রায়ান রেমিওর্জ

অভিবাসীদের সংখ্যাকে-  নন-পারমানেন্ট রেসিডেন্টদের একটি পৃথক বিভাগ হিসাবে বিবেচনা করা হয় কেননা, এটি দিয়ে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার দেওয়া ব্যক্তিদের বোঝানো হয়। সংস্থাটি উল্লেখ করে যে, এই সংখ্যা বৃদ্ধিতে সরকারের লক্ষেরও প্রতিফলন ঘটেছে।

ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ইক্যুইটি স্টাডিজের সহকারী অধ্যাপক ইভন সু বলেন, ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচকভাবে অবদান রাখতে সহায়ক হতে পরে।

তিনি বলেন, “কানাডার নির্মাণ ও শিল্পের মত গুরুত্বপূর্ণ খাতে চাকরির পদ পূরণের মত একটি সমস্যা প্রকৃতই রয়েছে। এ ধরণের কায়িক শ্রমের কাজে শ্রমিককের বড় চাহিদা রয়েছে এবং অভিবাসীরা সেসব জায়গা পূরণ করছে।”

২০২২ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অভিবাসী এসেছে ১২২,১৪৫ জন, যা ছিল ১৯৪৬ সালের পর কোনও বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে আসা অভিবাসীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যা। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা জানায়, ওই বছর থেকেই দেশে ত্রৈমাসিক পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হতে থাকে।

ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর সোশ্যাল ইনইকোয়ালিটির পরিচালক কেট চোই বলেন, পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, কানাডায় জনসংখ্যার দ্রুত প্রবৃদ্ধি ঘটছে এবং এটি মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার জন্য উপকারী।

তিনি বলেন, “জনসংখ্যার এই বৃদ্ধি অনেকটাই ঘটছে কানাডার অভিবাসন নীতির কারণে, যাতে মহামারীর পর শ্রমিকের বিপুল ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে।”

শ্রম ঘাটতির সমস্যা সমাধানের জন্য অটোয়া গত মাসে একটি পরিকল্পনা প্রকাশ করেছে। এই পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২৫ সাল থেকে প্রতি বছর ৫০০,০০০ অভিবাসী গ্রহণ করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে সারাদেশে চাকরির ১০ লাখ শূন্যপদ পূরণ এবং বয়স্ক জনসংখ্যার কারণে শূন্যতা পূরণ করা।

অভিবাসী গ্রহণের নতুন লক্ষমাত্রা গত বছর গৃহীত ৪০৫,০০০ অভিবাসীর চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। 

মার্চ মাসে কেন্দ্রীয় সরকার রাশিয়ার আক্রমণের পর পালিয়ে আসা ইউক্রেনীয়দের সহায়তার লক্ষে একটি জরুরী কর্মসূচিও গ্রহণ করে, যার আওতায় তাদের কানাডায় আগমন দ্রুততর করা যাবে এবং তাদেরকে অস্থায়ী আবাসিকের স্টেটাস দেয়া হবে।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির নৃতত্ত্ব বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এলেক্সিয়া ব্লোচ বলেন, ইউক্রেন থেকে পালিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সহায়তার জন্য অস্থায়ী ভিসা দেওয়া একটি শুভ সূচনা। তবে এর নিজস্ব কিছু চ্যালেঞ্জও আছে।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যে একটি হল, তাদের সমস্যার সমাধানে একটি স্বল্পমেয়াদী সমাধান দেওয়া হচ্ছে, কিন্তু এই যুদ্ধ শিগগিরই শেষ হবে বলে মনে হয় না।”

ব্লোচ বলেন, সরকারি কর্মসূচির আওতায় আসা উদ্বাস্তুরা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে যে সহায়তা পায় সেই একই সহায়তা ইউক্রেনীয় উদ্বাস্তুদের দেয়া হলে তাদের জন্য সেটি আরও বেশি সহায়ক হবে।

তিনি বলেন, “যদি ইউক্রেনীয়দের যদি অন্য উদ্বাস্তুদের দেওয়া সরকারি সহায়তার মত সুবিধা এক বছর দেওয়া হয় তাহলে তাদের আরও বেশি উপকার হবে।”