আরও বেশি কানাডীয় বলছেন, কানাডার চেয়ে নিজের ভাষার সঙ্গে তাদের বন্ধন জোরালো: জরিপের তথ্য

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের প্রাথমিক ভাষার প্রতি জোরালো অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। ছবিতে টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশী কানাডিয়ানদেরকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে। ছবি : কাজী সরোয়ার

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : নতুন এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, আরও বেশি সংখ্যক কানাডীয় বলেছেন যে, তারা যেটিকে নিজের বাড়ি বলে সেটিসহ পরিচিতির অন্য সব প্রতীকের চেয়েও তারা জোরালো সংশ্লিষ্টতা বোধ করেন তাদের প্রাথমিক ভাষা বা মাতৃভাষার সঙ্গে। খবর নজুদ আল মালিস – দ্য কানাডিয়ান প্রেস।

কানাডা স্টাডিজ বিষয়ক অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে লেগার-এর পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা যায়, ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের প্রাথমিক ভাষার প্রতি জোরালো অনুভূতির কথা জানিয়েছেন, যেখানে ৮৫ শতাংশ বলেছেন তারা কানাডার প্রতি একইরকম অনুভূতি  পোষণ করেন।

এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা তাদের প্রাথমিক ভাষার প্রতি জোরালো অনুভূতির কথা জানিয়েছেন। ছবিতে টরন্টো প্রবাসী বাংলাদেশী কানাডিয়ানদেরকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন করতে দেখা যাচ্ছে। ছবি : কাজী সরোয়ার

ভাষার বৃহত্তর গুরুত্ব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল যাদের আদিভাষা ফরাসী তাদের এবং কানাডার আদিবাসীদের ক্ষেত্রে। 

প্রাথমিক ভাষার সঙ্গে দৃঢ় সংযোগের বিষয়টি ভৌগোলিক অবস্থান, জাতিগত গোষ্ঠী এবং ধর্মীয় সম্পৃক্ততাসহ ব্যক্তির পরিচিতির অন্য সব চিহ্ণকে ছাড়িয়ে গেছে।

সমীক্ষায় বিবেচনার জন্য পরিচিতির যেসব স্মারক নির্দিষ্ট ছিল তার মধ্যে কানাডীয়দের কাছে ধর্মীয় গোষ্ঠীর সঙ্গে দৃঢ় সম্পৃক্ততার অনুভূতি ব্যক্ত করার সম্ভাবনা ছিল সবচেয়ে কম।

কানাডিয়ান স্টাডিজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাক জেডওয়াব বলেন, সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্য মানুষের পরিচয়ের ক্ষেত্রে ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাই তুলে ধরে। 

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এই ফলাফল অনেক কানাডীয়কে বিস্মিত করেছে, যারা হয়ত সজ্ঞানে ভাবেননি যে, পরিচিতির অন্য সব অভিব্যক্তির মত ভাষা এতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং মনোযোগ আকর্ষণ করে।”

জেডওয়াব বলেন, একটি সম্প্রদায়ের কাছে ভাষা কতটা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে সেই বিবেচনা থেকে লোকেদের উচিৎ ভাষার গুরুত্বকে খাটো করে না দেখার বিষয়ে সচেতন হওয়া। তিনি বলেন, ভাষার দুটি ভূমিকা আছে, একটি হলো যোগাযোগের সুবিধা সৃষ্টি করা, আরেকটি সংস্কৃতির অভিব্যক্তি ঘটানো।

তিনি বলেন, “মানুষের মধ্যে অন্যের ভাষার গুরুত্ব খর্ব করার একটি প্রবণতা থাকতে পারে।”

তিনি যোগ করেন, “ঐতিহাসিকভাবে আমরা আদিবাসী ভাষাগুলির প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ দিইনি, যেটা আমরা এখন দেখছি, আমাদের কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে আদিবাসী ভাষাগুলি টিকিয়ে রাখা ও পুনরুজ্জীবনে সহায়তার জন্য যথেষ্ট বিনিয়োগ করছে।” 

যেসব কানাডীয়র প্রাথমিক ভাষা ফরাসী তাদের ৯১ শতাংশই নিজের ভাষার সঙ্গে দৃঢ় সংশ্লিষ্টতার কথা বলেন। সেই তুলনায় তাদের ৬৭ শতাংশ কানাডার প্রতি একই ধরণের সংশ্লিষ্টতা অনুভব করার কথা বলেছেন। 

কুইবেকে অধিক সংখ্যক মানুষ সেই প্রদেশের চেয়ে তাদের প্রাথমিক ভাষার প্রতি দৃঢ় সংশ্লিষ্টতার কথা জানান।

মাত্র ৩৭ শতাংশ কানাডীয় ধর্মীয় গোষ্ঠীর প্রতি দৃঢ় অনুভূতি আছে বলে জানান। সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ পায় স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার ভাষা সম্পর্কিত আদমশুমারীর ফল প্রকাশের আগে।

জেডওয়াব বলেন, আদমশুমারীর প্রকাশ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে কুইবেকের জন্য যেখানে অন্য সব ভাষার তুলনায় ফরাসী ভাষার ওপর সরকারের নিবিড় পর্যবক্ষণ জারি আছে।

লেগার-এর জরিপে এটাও দেখা যায়, কুইবেকের ফরাসীভাসী নাগরিকদের অর্ধেকেরও বেশি সংখ্যক বলেছেন যে, কথাবার্তা চালানোর মত যথেষ্ট ইংরেজি তারা জানেন। এর বিপরীতে কুইবেক ও নিউ ব্রান্সউইক ছাড়া অন্য সব প্রদেশে ইংরেজিভাষী উত্তরদাতাদের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজনেরও কম সংখ্যক জানান যে, তারা ফরাসীতে কথোপকথন করতে পারেন।

শেষ আদমশুমারীর তথ্য অনুযায়ী, ইংরেজি ও ফরাসী উভয় ভাষায় কথা বলতে সক্ষম দ্বিভাষিক লোকের সংখ্যা ২০১১ সালের ১৭.৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১৬ সালে ১৭.৯ শতাংশে উন্নীত হয়। এটিই কানাডার ইতিহাসে দ্বিভাষিকতার সর্বোচ্চ হার। দ্বিভাষিকতার যে বৃদ্ধি ঘটে তার ৬০ শতাংশই আবার কুইবেকের অবদান।