অন্টারিওর এই স্কুলে ৪০টিরও বেশি ভাষা ব্যবহৃত হয়
জোয়ানা ডুঅং মাত্র বছর দেড়েক আগে কানাডায় এসেছে। তবে তার ভাষায়, পূর্ব হ্যামিলটনের গ্লেনডেল সেকেন্ডারি স্কুলে প্রবেশমাত্রই তার মনে হয় নিজের বাড়িতেই আছেন।
১৮ বছরের ডুঅং দ্বাদশ গ্রেডের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, “গ্লেনডেল স্কুলে প্রথম দিনের একটি বিষয় আমি সত্যিই মনে রেখেছি। সেটি হলো আমাদের ইএসএল (ESL) [ইংলিশ অ্যাজ অ্যা সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ] স্কুলের ক্লাসরুমের সামনে টাঙ্গানো সাইনবোর্ড।”
ডুঅং স্মরণ করেন, রুশ ও ভিয়েতনামী ভাষায় “স্বাগতম” লেখা সেই সাইনবোর্ড। ডুঅং ওই দুই ভাষাতেই কথা বলেন, কারণ তার জন্ম রুশ ও ভিয়েতনামী বাবা-মায়ের ঘরে।
তিনি বলেন, “এক সেকেন্ডের জন্য আমার মনে হলো, যেন নিজের শহরেই আছি। সাথে সাথে দেশের জন্য মন খারাপের অনুভূতি ও ভাষার বাঁধা একদম দূর হয়ে গেল।”
স্কুল প্রশাসনের বক্তব্য অনুযায়ী, ডুঅং এখন শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে স্কুলের “ভাষা বান্ধব” দূত। এই স্কুলে শিক্ষার্থীরা ৪০টিরও বেশি ভাষায় কথা বলে।
তিনি স্কুলে বহুভাষাবাদের উন্নয়নে সহায়তাকারী শিক্ষক, প্রশাসক ও শিক্ষার্থীদের ১৮ সদস্যের একটি টিমের অংশও। তাদের প্রচেষ্টা গ্লেনডেলের পক্ষে উত্তর আমেরিকার প্রথম “ভাষাবান্ধব” সেকেন্ডারি স্কুলের অভিধা অর্জনে সহায়ক হয়েছে।
নেদারল্যান্ডস, স্পেন ও চীনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভাষাবান্ধব স্কুল নেটওয়ার্কের সদস্য স্কুল আছে ২৩টি। উত্তর আমেরিকার যে স্কুলটি প্রথম এই নেটওয়ার্কে যোগ দেয় সেটি হলো অন্টারিওর মিসিসগায় অবস্থিত সিলভার গ্রিক পাবলিক স্কুল।
এই নেটওয়ার্কে যোগদানের উপলক্ষটা স্মরণীয় করে রাখতে মঙ্গলবার সকালে গ্লেনডেল স্কুলে “ভাষাবান্ধব” পতাকা ওড়ানো হয়।
স্কুলের ইএসএল বিভাগের প্রধান মারজোরি হিউইট সিবিসি হ্যামিলটনকে বলেন, অভিধা পাবার ঘটনা উদযাপনের জন্য তারা ২১ শে ফেব্রুয়ারি দিনটি বেছে নেন, কারণ এটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসও।
গত শুক্রবার তিনি বলেন, “ভাষাবান্ধব পতাকা উত্তোলনের জন্য এই দিনটিকেই যথার্থ মনে হয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই নেটওয়ার্কের অংশ হওয়াটা বহুভাষিক শিক্ষার্থী ও তাদের ভাষার প্রতি সম্মান জানানো এবং অন্তর্ভুক্তির একটি স্বেচ্ছামূলক পছন্দ।”
‘এভাবেই কমিউনিটি গড়ে ওঠে’: প্রিন্সিপাল
স্কুলের প্রিন্সিপাল ডেভিড শ্রোডার বলেন, ভাষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে “সংযোগ ও বোঝাপড়া গড়ে তোলার” এই ব্যাপারটি তাকে উদ্দীপ্ত করে।”
তিনি বলেন, “প্রিন্সিপাল হিসাবে সব সময়ই সামাজিক যোগাযোগ গড়তে চাই, আর সব শিক্ষার্থীকে সঙ্গে পাওয়া, পরস্পরকে আরও একটু
ভালো করে বুঝে নেয়ার মাধ্যমেই আমরা কমিউনিটি গড়ে তুলি।”
হিউইট বলেন, অনেকগুলি ভাষায় স্বাগত জানানোর কাজটি স্কুলের শ্রেণীকক্ষে এবং পাঠ্যক্রমে এরই মধ্যে দৃশ্যমান।
তিনি বলেন, “কিছু শিক্ষক দ্বৈত ভাষার প্রকল্প নিয়েছেন, তাদেরকে যদি একটি কবিতা লিখতে হয়… দেখা যাবে খুব সম্ভব তারা ইংরেজিতে কবিতাটি পড়ছেন, কিন্তু তারা তাদের প্রাথমিক ভাষায়ও সেটি পড়ছেন এবং শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রথম ভাষায়ও শেয়ার করছেন।
হিউইট বলেন, “একেবারে মৌলিক স্তরে”, তার মানে, স্কুলে বিভিন্ন ভাষা দৃশ্যমান করে তোলা এবং স্কুলগুলিকে অভিভাবকদের কাছে ভাষার দিক থেকে আরও বোধগম্য করে তোলা।
শ্রোডারের বক্তব্য অনুযায়ী, গ্লেনডেল স্কুলের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ শিক্ষার্থী নিজের ঘরে দ্বিতীয় কোনও ভাষায় কথা বলে। তিনি বলেন,“গ্লেনডেল সব সময়ই অত্যন্ত বৈচিত্র্যময় সমাজ ছিল। আমরা আরও আনুষ্ঠানিক উপায়ে বিষয়টি উদযাপনের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই এই নেটওয়ার্কে যোগ দেওয়ার পদক্ষেপ নিই।”
“গ্লেনডেলের হলগুলোতে ঢুকলে বৈচিত্র্যের আভাস পাবেন, সেটি দেখতে পারবেন, সেইসঙ্গে বিচিত্র ভাষাও শুনতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা স্কুলে গর্বের সাথে নিজের মাতৃভাষায় কথা বলছে, এটা বাস্তবিকই এক চমৎকার অনুভূতি।”
সূত্র : অরা ক্যারেনো রোসাস-সিবিসি নিউজ