কানাডায় চরমপন্থার সঙ্গে জড়িতদের বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য বন্ধ করতে হবে

কানাডায় আদর্শিকভাবে উজ্জীবিত চরমপন্থার সঙ্গে জড়িত বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য “স্বাভাবিক” হয়ে উঠছে এবং সমাজের মূলধারায় ঢুকছে। ইতিপূর্বে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে এক বক্তৃতায় দেশটির নিরাপত্তা গোয়েন্দা সার্ভিসের পরিচালক ডেভিড বিগনোল্ট এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ভুল, বিভ্রান্তিকর তথ্য, অপপ্রচার ও ঘৃণা বপনের কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও অন্যান্য অনলাইন প্লাটফরমের ব্যবহার অব্যাহতভাবে কেবলই বাড়ছে এবং দ্রুততর হচ্ছে। তার মতে এসব কর্মকাণ্ডে জনমতের মেরুকরণ ঘটে এবং পরস্পর সাংঘর্ষিক বিবরণ ও বার্তা বিস্তারের পথ প্রশস্ত করে।

বিগনোল্ট এর তথ্যমতে কানাডায় চরমপন্থী মতাদর্শগত দৃষ্টিভঙ্গিতে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে উদ্বুদ্ধ হওয়া কানাডীয়রা ২০১৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত কানাডায় ২৬ ব্যক্তিকে হত্যা এবং ৪০ জনকে আহত করেছে।

লন্ডন অন্টারিওতে একই পরিবারের চার সদস্য নিহত হন এক চরমপন্থী সন্ত্রাসীর হামলায়। নিহতদের জানাজায় অংশ নিতে আসা লোকজনকে দেখা যাচ্ছে ছবিতে। ছবি: ন্যাথান ডেনেটি/কানাডিয়ান প্রেস

উল্লেখ্য যে, এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ দুটি হত্যাকান্ডের প্রথমটি ঘটেছে কুইবেক সিটিতে এবং দ্বিতীয়টি ঘটেছে লন্ডন অন্টারিওতে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে ২০১৭ সালের ২৯ জানুয়ারী। ঐ দিন ইসলামিক কালচারাল সেন্টার অব কুইবেকে মাগরিবের নামাজ আদায়কালে আলেকজান্ডার বিসোনেট নামের এক যুবক অতর্কিতে স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হামলা চালায়। বন্দুক হামলায় ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন মুসল্লি। হামলার ঘটনায় আহত হন আরো ১৯ জন।

দ্বিতীয় ঘটনায় প্রাণ হারান একই পরিবারের তিন প্রজন্মের চার সদস্য। আর অল্পের জন্য বেঁচে যায় ৯ বছরের এক শিশু। কানাডার অন্টারিও প্রভিন্সের লন্ডন শহরে সন্ত্রাসী এই হামলার ঘটনা ঘটে গত ৬ জুন রবিবার সন্ধ্যায়। হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে ন্যাথানিয়েল ভেল্টম্যান নামের ২০ বছর বয়সী এক শ্বেতাঙ্গ যুবককে আটক করে স্থানীয় পুলিশ। লন্ডন পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে এই হামলা ছিল পরিকল্পিত এবং মুসলিম বিদ্বেষপ্রসুত।

বিগনোল্ট তার বক্তিৃতায় বলেন, আদর্শিকভাবে উদ্বুদ্ধ চরমপন্থী কার্যকলাপ সব কানাডিয়ানের জন্যই হুমকির কারণ বলেই, যারা সব সময়ই বর্ণবাদ, বৈষম্য ও হয়রানির শিকার হয়ে আসছে বিশেষ করে সেইসব ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর জন্য ভীতির অনুভূতি তীব্রতর।

“কানাডায় এটি স্পষ্টতই অগ্রহণীয়। আমি শব্দগুলিকে নগণ্য মনে করতে চাই নাÑ কিন্তু এখানে কোনওরকম ইসলামোফোবিয়া, ইহুদিবিদ্বেষ বা ঘৃণার কোনও জায়গা নেই।”

উল্লেখ্য যে, লন্ডনের হামলার পর প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছিলেন, এটি সন্ত্রাসী হামলা। কোন সড়ক দুর্ঘটনা নয়। ইসলামবিদ্বেষ থেকে প্ররোচিত হয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে। কানাডার শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদী গোষ্ঠিগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই এগিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি।

কুইবেক সিটিতে হত্যাকান্ড পরিচালিত হওয়ার পরও প্রধানমন্ত্রী কানাডিয়ানদেরকে ভীত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, সন্ত্রাসবাদীদের উদ্দেশ্য আমাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করা, তাঁরা চায় অনৈক্য সৃষ্টি করতে এবং বিদ্বেষের বীজ রোপন করতে। আমরা তা হতে দিব না। তিনি কানাডায় বসবাসরত ১০ লাখ  মুসলমানদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।  আপনরা এ দেশেরই অংশ।

কিন্তু আমরা অত্যন্ত দুঃখজনকভাবেই লক্ষ্য করেছি সেদিন প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও লন্ডন অন্টারিওতে আবারও হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে। এবং কানাডার মুসলিম সম্প্রদায় এদেশের অংশ হয়েও তাঁরা অধিক হারে ঘৃণা ও বিদ্বেষপ্রসূত অপরাধের শিকার হচ্ছেন। এবং আগের তুলনায় বেশী মাত্রায় হচ্ছেন। স্ট্যাটিসটিকস কানাডার তথ্য এটি।

কানাডার মুসলিম সম্প্রদায়ের জোর দাবী, এ পরিস্থিতির অবসান ঘটাতে হবে অবিলম্বে। এখন আর কথায় বা প্রতিশ্রুতিতে কাজ হবে না। নিতে হবে বাস্তব পদক্ষেপ, যেমনটা ইতিপূর্বে বলেছেন এনডিপি নেতা জাগমিত সিং। তিনি বলেছেন, ‘ লন্ডনের এই হত্যাকান্ডের পর আমাদেরকে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে।’