কানাডায় আত্মহত্যার উচ্চ হারের কারণ জানা গেল নতুন গবেষণায়

(সতর্কীকরণ: এ নিবন্ধে আত্মহত্যার উল্লেখ আছে।)

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : আমেরিকা মহাদেশে আত্মহত্যার উচ্চ হারের দিক থেকে কানাডার অবস্থান শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে। সেন্টার ফর এডিকশন অ্যান্ড মেন্টাল হেলথ-এর (CAMH) এক নতুন গবেষণায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। খবর নাতাশা ও’নিল –  সিটিভি নিউজ।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে কানাডীয় নারী ও পুরুষের আত্মহত্যার হার ছিল ৩৩টি দেশের মধ্যে ষষ্ঠ সর্বোচ্চ। উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ওই ৩৩টি দেশ গবেষণার আওতায় ছিল।

২০১৯ সালে আমেরিকা অঞ্চলে পুরুষ ও নারী উভয়ের ক্ষেত্রে আত্মহত্যায় মৃত্যুর সর্বোচ্চ হার ছিল গায়ানায়। প্রতি লাখ পুরুষের মধ্যে ৯৬.৯৬ জন এবং প্রতিলাখ নারীর মধ্যে  ১৬.৯৫ জন আত্মহত্যা করে। অন্যদিকে বারবাডোস ছিল এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন হারের দেশ। সেখানে আত্মহত্যা করে প্রতি লাখে ০.৪৮জন পুরুষ এবং ০.১৬জন নারী।

টরন্টোর ডাউউটাউনে সেন্টার ফর এডিকশন এ্যান্ড মেন্টাল হেলথ এর ক্যাম্পাস। ছবি : কোলে বারস্টন/কানাডিয়ান প্রেস

গবেষণার ফলাফল গত ২৩ ফেব্রুয়ারি আমেরিকা অঞ্চলের দি ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ দপ্তরে প্রকাশিত হয়। আমেরিকা অঞ্চলের দেশগুলিতে আত্মহত্যার হারের পেছনে যে পরিপ্রেক্ষিতগত কারণ বিদ্যমান সেগুলি সুনির্দিষ্টভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে এটিই ছিল “এমন ধরণের” প্রথম গবেষণা।

বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার গ্লোবাল হেলথ এস্টিমেটস-এর স্বাস্থ্য বিষয়ক উপাত্ত ব্যবহার করে গবেষকরা আত্মহত্যার হারে প্রভাব ফেলেছে এমন আটটি জনসংখ্যা-স্তরের কারণ খুঁজে পেয়েছেন।

গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, কোনও অঞ্চলের আত্মহত্যার হারে প্রভাব রাখে এমন কারণগুলি হলো, অ্যালকোহল পান, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য, চিকিৎসা খাতে ব্যয়, হত্যার হার, ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে মাদক গ্রহণ, নিয়োগকৃত চিকিৎসকের সংখ্যা, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং বেকারত্বের হার।

২৩ ফেব্রুয়ারি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সিএএমএইচ-এর মানসিক স্বাস্থ্যনীতি গবেষণা ইন্সটিটিউটের স্বাধীন বিজ্ঞানী ডা. শ্যানন ল্যাঞ্জ বলেন, “এইসব সুনির্দিষ্ট কারণের সঙ্গে  কোন দেশের আত্মহত্যার হারের মধ্যকার সম্পর্ক পরিমাপের মাধ্যমে আমরা কার্যকর জাতীয় আত্মহত্যা প্রতিরোধ কৌশল প্রণয়নে সিদ্ধান্তগ্রহণকারীদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ সরবরাহ করতে পারি। আমাদের গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত দেয় যে, স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণের লক্ষ সামনে রেখে বিভিন্ন খাতে বহুমুখি পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করতে হবে।”

গবেষণা প্রতিবেদনের লেখকরা বলেছেন, গত ২০ বছর ধরে অবশিষ্ট বিশ্বে আত্মহত্যার হার কমে আসছে, কিন্তু উত্তর, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলিতে ক্রমেই বাড়ছে।

উত্তর আমেরিকায় আত্মহত্যার হার সবচেয়ে বেশি। প্রতি লাখ মানুষের মধ্যে ১৪.১ জন। আর সবচেয়ে কম আন্দিজ অঞ্চলে (ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, ইকুয়েডর, পেরু, বলিভিয়া ও চিলি)। সেখানে আত্মহত্যার হার ছিল প্রতি লাখে ৩.৯জন। 

গবেষণায় দেখা যায়, আত্মহত্যার কারণগুলি পুরুষ ও নারীকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। উদাহরণ স্বরূপ, যখন একাডেমিক সম্পদ বা উপকরণ বণ্টনে বৈষম্য ঘটে তখন বিশেষ করে নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার বেড়ে যায়।

ড. ল্যাঞ্জ তার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, “আমাদের গবেষণা, আত্মহত্যার ঝুঁকি হ্রাসের যে কোন উদ্যোগ প্রণয়ন, গ্রহণ ও পরীক্ষা করার সময় জেন্ডারের পার্থক্য বিবেচনায় নেয়ার অত্যাবশ্যকতার গুরুত্ব তুলে ধরে। জেন্ডারের সাথে সম্পর্কিত নিয়ম-বিধি ও প্রত্যাশাগুলি আত্মহত্যার ঝুঁকির কারণগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, তাই এ সম্পর্কিত উদ্যোগ এক সাইজেই সবার গায়ে লাগবে এমন হতে পারে না।