প্রতি চারজনে একজন কানাডীয় ৫০০ ডলারের আকস্মিক ব্যয় বহনে অসমর্থ হবেন: স্ট্যাটক্যান

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : স্ট্যাটক্যান-এর এক নতুন পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক-চতুর্থাংশ কানাডীয় বলেছেন, অপ্রত্যাশিতভাবে ৫০০ ডলার ব্যয় করতে হলে তারা তা করতে অসমর্থ হবেন। খবর আলেক্সান্দ্রা মায়ে জোনস-সিটিভি নিউজ।

গত ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এই পরিসংখ্যানে বলা হয়, প্রায় অর্ধেক কানাডীয়ও (৪৪ শতাংশ) বলেছেন, তারা তাদের আবাসন অথবা ভাড়া পরিশোধের সক্ষমতা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এই ভীতির কথা উচ্চারণ করেন সুনির্দিষ্টভাবে তরুণতর কানাডীয়রা, যাদের আবাসন বা ভাড়া সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রকাশ অথবা ক্রমবর্ধমান ব্যয়ের কারণে বাড়ি কেনার অক্ষমতা বা বর্তমান আবাসনেই থেকে যাবার পরিকল্পনার কথা সবচেয়ে বেশি বলার কথা ছিল।

২০২২ সালে কানাডায় মাত্র এক বছরে ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকে বৃহত্তম উল্লম্ফন ঘটে। ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচক বেড়ে যায় ৬.৮ শতাংশ। এতে বাজারের সব পণ্যের দাম বাড়ে। ছবি : প্রবাসী কণ্ঠ

স্ট্যাটক্যান সম্প্রতি একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে যাতে কানাডিয়ান সামাজিক সমীক্ষা – জীবনযাত্রার মান ও জীবনযাত্রার ব্যয় শীর্ষক জাতীয় সমীক্ষার ফলাফল বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। এতে ২০২২ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি সময় থেকে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত সময়ের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের এক-তৃতীয়াংশ বলেন, তারা আগের ১২ মাসে অর্থনৈতিক চাহিদা মেটাতে সঙ্কটের মুখোমুখি হয়েছেন।

পুরুষের চেয়ে সামান্য কিছু বেশি সংখ্যক নারী জানান, আকস্মিকভাবে ৫০০ ডলার ব্যয় করতে হলে তারা তা করতে পারবেন না। এদের সংখ্যা ২৯ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ২৪ শতাংশ একইরকম অপারগতার কথা বলেছেন।

স্ট্যাটক্যান-এর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮২ সালের পর ২০২২ সালেই কানাডায় মাত্র এক বছরে ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচকে বৃহত্তম উল্লম্ফন ঘটে। ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ভোগ্যপণ্যের মূল্যসূচক বেড়ে যায় ৬.৮ শতাংশ। এতে বাজারের সব পণ্যের দাম বাড়ে। সর্বাধিক দাম বাড়ে পরিবহন, খাদ্য ও আবাসন খাতে। এই তিনটি খাতে বৃদ্ধির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১০.৬ শতাংশ, ৮.৯ শতাংশ এবং ৬.৯ শতাংশ।

তরুণতর কানাডীয়রা সংগ্রাম করছে যখন বয়স্ক কানাডীয়রা বেশ আরামে আছে

তরুণ কানাডীয়রা হলো সেই বয়সীদের গ্রুপ যারা তাদের আর্থিক বিষয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে ভুগেছে। ৩৫ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ গত ১২ মাসে কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়েন বলে জানান।

এ ধরণের সঙ্কটে পড়ার কথা সবচেয়ে কম বলেছেন ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী কানাডীয়রা। তাদের মাত্র ২৫ শতাংশ আর্থিক অসুবিধার কথা জানান।

৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সের কানাডীয়দের মাত্র ১৯ শতাংশ বলেন তারা আকস্মিকভাবে ৫০০ ডলার ব্যয় বহন করতে পারবেন না, যেখানে ৩৫-৪৪ বছরের কানাডীয়দের ৩৫ শতাংশ এক্ষেত্রে অপারগতার কথা বলেন।

আবাসন সম্পর্কিত প্রশ্ন দুই প্রজন্মের মধ্যে ব্যবধান জোরালো করেছে।

১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৮ শতাংশ) বলেন, আবাসন বা বাড়ি ভাড়া বহনে নিজদের সক্ষমতা নিয়ে তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন। এর পরেই রয়েছেন ২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সীরা। তাদের ৫৬ শতাংশ একই রকম উদ্বেগের কথা বলেন।

এর বিপরীতে ৬৫ বছর বা তার চেয়ে বেশি বয়সের মানুষেরা আবাসন বা ভাড়ার বিষয়ে কমই উদ্বেগ জানিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৭ শতাংশ এ বিষয়ে উদ্বেগ জানান।

২৫ থেকে ৩৪ বছর বয়সী প্রায় ৪৪ শতাংশ কানাডীয়ও জানান যে, ক্রমবর্ধমান দামের কারণে হয় তারা প্রত্যাশিত বাড়ি কেনা থেকে বিরত রয়েছেন অথবা প্রত্যাশিত সময়ের আগেই সাধ্যের মধ্যে অপেক্ষাকৃত ছোট বাড়ি বা ভাড়া বাড়িতে সরে যেতে বাধ্য হয়েছেন। ৪৫ বছর বা তার বেশি বয়সী কানাডীয়দের ১৫ শতাংশেরও কম সংখ্যক এ ধরণের সমস্যার কথা উল্লেখ করেন। অবশ্য, আবাসন বা জীবনযাত্রার অন্যান্য ব্যয় বহনের সক্ষমতা নিয়ে বিপুল উদ্বেগ থাকার পরও তরুণ কানাডীয়দের মধ্যে আশাবাদে বজায় আছে। ২৫ থেকে ৩৪ বছরের কানাডীয়রা তাদের আর্থিক উন্নতির বিষয়ে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেন, যাদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ বলেন, তারা আশা করেন যে, এক বছরের মধ্যে তাদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হবে।

বেশি বয়সীদের ক্ষেত্রে এই আশাবাদ কমে আসে। ৬৫ বা বেশি বয়সের মাত্র সাত শতাংশ কানাডীয় মনে করেন, এক বছরে তাদের আর্থিক অবস্থার কোনওরকম পরিবর্তন হতে পারে।

কানাডার অশ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী সামঞ্জস্যহীনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত

পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কানাডার নির্দিষ্ট জাতিগত গোষ্ঠীর লোকেরা আর্থিক অবস্থা নিয়ে আরও বেশি উদ্বিগ্ন, বিশেষ করে আবাসনের প্রশ্নে।

সমীক্ষায় অংশ নেয়া কৃষ্ণাঙ্গ কানাডীয়দের প্রায় ৭৪ শতাংশ এবং একইসঙ্গে দক্ষিণ এশীয় কানাডীয়দের ৬৫ শতাংশ আবাসনের দাম নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন।   আবাসনের দাম নিয়ে সবচেয়ে কম উদ্বেগ প্রকাশ করেন শ্বেতাঙ্গ কানাডীয়রা, যাদের সংখ্যা ৩৮ শতাংশ। মাত্র ২১ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ জানিয়েছেন যে, আবাসনের দামের কারণে গত ছয় মাসে তারা বাড়ি বদলের সিদ্ধান্ত নেন। সেই তুলনায় ৪০ থেকে ৪৮ শতাংশ  ফিলিপিনো, দক্ষিণ এশীয় এবং কৃষ্ণাঙ্গ কানাডীয়কে বাড়ি বদলাতে হয়েছে।

যাই হোক, অশ্বেতাঙ্গ ও জাতিগত কানাডীয়রাও দৃঢ় আস্থার কথা জানিয়েছেন। তাদের এক-চতুর্থাংশ বিশ^াস করেন যে, এক বছরে তাদের আর্থিক পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তুলনায় ১৯ শতাংশ শ্বেতাঙ্গ এই বিশ্বাস পোষণ করেন।

প্রাদেশিক বিভাজন

যদিও জীবনযাত্রার ব্যয় সারা দেশেই আকাশ ছুঁয়েছে, তবু কিছু জায়গায় এটি অন্য জায়গার চেয়ে বেশি বেড়েছে। স্ট্যাটক্যানের তথ্যমতে, ২০২২ সালে ভোগ্যপণ্যের দাম বিপুল হারে বেড়েছিল প্রিন্স এডওয়ার্ড আইল্যান্ড ও ম্যানিটোবায়।

গত শরতের সমীক্ষায় কানাডীয়দের দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এর প্রতিফলন ঘটে। আটলান্টিক কানাডা ও প্রেইরি অঞ্চলের অনেক বেশি সংখ্যক মানুষ (৩৮ শতাংশ) গত ১২ মাসে তাদের আর্থিক চাহিদা মেটাতে অসুবিধার কথা জানান। কুইবেকে এই সংখ্যা ছিল সর্বনিম্ন। সেখানে ২৯ শতাংশ মানুষ গত ১২ মাসে আর্থিক দিক থেকে অসুবিধায় পড়ার কথা জানান।

আটলান্টিক কানাডার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বলেছেন, হঠাৎ করে ৫০০ ডলার ব্যয় করতে হলে তারা অসমর্থ হবেন। ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় একই বক্তব্য রেখেছেন মাত্র ১৯ শতাংশ লোক।

অবশ্য, আবাসনের বিষয়ে উদ্বেগের ধরণ একই আকার অনুসরণ করেনি। যেমন আটলান্টিক কানাডা ও প্রেইরির কানাডীয়রা আবাসনের দাম বেড়ে যাওয়া নিয়ে সবচেয়ে কম উদ্বিগ্ন ছিলেন। উভয় অঞ্চলে মাত্র ৩৯ শতাংশ কানাডীয় এ বিষয়ে উদ্বেগ থাকার কথা  জানিয়েছেন।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও অন্টারিওতে এ নিয়ে অনেক বেশি উদ্বেগ ছিল, প্রায় অর্ধেক উত্তরদাতা – যথাক্রমে ৪৬ শতাংশ ও ৪৭ শতাংশ আবাসন বা ভাড়া বহনের সামর্থ নিয়ে গভীর উদ্বেগের কথা জানান।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ও অন্টারিওর উত্তরদাতাদের এক-চতুর্থাংশেরও বেশি (২৮ শতাংশ) জানান, তারা বাড়ি বদল করতে চেয়েছিলেন কিন্তু আবাসনের ক্রমবর্ধমান দামের কারণে তাড়াতাড়ি বদল করেছেন অথবা বদল করেননি।