কানাডার পার্লামেন্টে পাস হলো ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ বিল

এখন থেকে কানাডা ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করবে প্রতি বছর

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ৩১ মার্চ, ২০২৩: কানাডার জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিল পাস হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সংসদে ‘ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ অ্যাক্ট’ (বিল নম্বর ২১৪) পাস হয়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে অটোয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিল এস–২১৪ পাস হওয়ায় এখন থেকে কানাডার কেন্দ্রীয় সরকার ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালন করবে প্রতি বছর।

কানাডার জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিল পাস হয়েছে। ফাইল ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইতিপূর্বে ড্যানফোর্থে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনের জন্য নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পনের জন্য সমবেত হয়েছেন মূলধারার রাজনীতিকদের কয়েকজন। (বাঁ থেকে) বর্তমান সরকারের মন্ত্রী বিল ব্লেয়ার, সদ্য বিদায় নেয়া টরন্টোর সাবেক মেয়র জন টরি, লিবারেল এমপি নাথানিয়েল এরস্কিন-স্মিথ, সাবেক লিবারেল এমপিপি আর্থার পটস এবং সাবেক লিবারেল এমপি ও মন্ত্রী মারিয়া মিন্না। ছবি : কাজী সরোয়ার

উল্লেখ্য যে, কানাডার পার্লামেন্টে ইতিপূর্বে বিলটি উত্থাপন করেছিলেন লিবারেল পার্টির এমপি কেন হার্ডি । কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার খলিলুর রহমান বিলটির ওপর আলোচনা করেন ও পাসের সময় পার্লামেন্টে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিলটির সমর্থক সিনেটর মোবিনা এস জাফরসহ কানাডার পার্লামেন্ট মেম্বার ও সিনেটরেরা উপস্থিত ছিলেন।

হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো এবং পরবর্তীতে জাতিসংঘ কর্তৃক আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি গৃহীত হওয়ার জন্য মরহুম রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালাম এবং প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার অবদান এবং মাদার ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্যা ওয়ার্ল্ড সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আমিনুল ইসলামের অবদান বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা হয়।

“বিল এস- ২১৪  স্বীকৃতি দেয় যে, ভাষা একজন ব্যক্তির পরিচয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি  অপরিহার্য দিক এবং ভাষাগত বৈচিত্র্যকে উদযাপন করা, প্রচার করা এবং সংরক্ষণ করা উচিত,”

উল্লেখ্য যে, এর আগে ২০১৭ সালের নভেম্বরে কানাডার ক্যাপিটাল সিটি অটোয়ার তৎকালীন সিটি মেয়র জিম ওয়াটসন অটোয়ায় এক অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেন।

পিছনের ঘটনা :

‘স্বাধীনতার পদক’ সম্মাননাপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দুই রূপকার  এম এ সালাম এবং প্রয়াত রফিকুল ইসলাম (ডানে)।

একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন মরহুম রফিকুল ইসলাম। তিনি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পদক পান।  একই সঙ্গে এই পদক পান আবদুস সালামও।

২০১৩ সালের ২১ নভেম্বর কানাডার ভ্যাঙ্কুভার হাসপাতালে রফিকুল ইসলাম শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। বাংলাদেশের মূল ভূখন্ড থেকে প্রায় ১২ হাজার মাইল দূরে থেকেও দেশপ্রেমিক এই দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালাম বাংলা ভাষা, শহীদ দিবস, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন কোনো কিছুকেই ভুলতে পারেননি। তাঁরা সবসময় ভাবতেন আমাদের মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারিকে কীভাবে বিশ্বের দেশে দেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়। এই ভাবনা থেকেই ১৯৮৮ সালে জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণার আবেদন জানিয়েছিলেন কানাডার ভ্যাঙ্কুভার শহরে বসবাসরত এই দুই বাঙালি রফিকুল ইসলাম এবং আবদুস সালাম। তাদের ঐ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আর ২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বিশ্বের বুকে একুশে ফেব্রুয়ারি আজ একটি বিশেষ দিবস।

তাঁদের এই উদ্যোগ ও সাফল্য বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা রক্ষার জন্য যাঁরা প্রাণ দিয়েছেন, যাঁরা সংগ্রাম করেছেন, ত্যাগ স্বীকার করেছেন, তাঁদের পাশাপাশি এই দুজন বিশিষ্টজনের অবদানও স্মরণীয়।