বেশিরভাগ কানাডীয় অভিবাসীদের স্বাগত জানায়

তবে অভিবাসনবিরোধী মনোভাবও আছে

অভিবাসীদের প্রতি বৈরিতা পাশ্চাত্যের কিছু দেশে দক্ষিণপন্থী জনতুষ্টিবাদীদের শক্তিশালী উপকরণ হয়ে উঠেছে। তবে এখন পর্যন্ত কানাডা এই তরঙ্গে গা ভাসিয়ে দেয়নি।

কানাডায় অভিবাসনের প্রতি মনোভাব কখনই নির্দিষ্ট করে বিভাজনের ইস্যু অথবা প্রধান নির্বাচনী ইস্যু হয়ে ওঠেনি।

ম্যক্সিম বার্নিয়েরের পিপলস পার্টি অব কানাডা একমাত্র কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক দল যেটির কর্মসূচিতে দেশের অভিবাসন ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত। তা সত্¦েও দলটি দুবার পার্লামেন্টে একটিও আসন পেতে ব্যর্থ হয়েছে।

কানাডায় অভিবাসনের প্রতি মনোভাব কখনই নির্দিষ্ট করে বিভাজনের ইস্যু হয়ে ওঠেনি। ছবি : বেনল্মস-সিবিসি

অভিবাসনবিরোধী মনোভাব সম্পর্কে আমাদের চলমান গবেষণার প্রাথমিক প্রেরণা এসেছে সাম্প্রতিক সময়ে বিদেশিদের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঘটনা থেকে যা অভিবাসীবিরোধী মনোভাবের পুনরুত্থানের প্রকাশ। উদাহরণ, ২০২১ সালে অন্টারিওর লন্ডনে সংঘটিত চোরাগোপ্তা হামলা, প্রধানমন্ত্রী যেটিকে “সন্ত্রাসী হামলা” বলে অভিহিত করেছেন। ওই হামলায় একটি মুসলিম পরিবারের চার সদস্যকে হত্যা করা হয়। ঘটনাটি অনেক কানাডীয়কে মর্মাহত করে।

২০২০ সালে কানাডার পুলিশ ২,৬৬৯টি ফৌজদারি অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত করে যেগুলি ছিল ঘৃণাপ্রসূত হামলা। ২০০৯ সালের পর এটিই ঘৃণাপ্রসূত হামলার সর্বোচ্চ সংখ্যা।

অভিবাসীবিরোধী মনোভাব বিদ্যমান, তবে কোনও প্রদেশই এর বাইরে নয়

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে কানাডার জনমত জরিপ প্রতিষ্ঠান অ্যাবাকাস ডেটার সঙ্গে মিলে আমরা একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলাম সারা দেশের এক হাজার মানুষের মধ্যে। আমরা তাতে চারটি প্রশ্ন করি:

১)            অভিবাসন কি দেশের ক্ষতির কারণ ঘটাচ্ছে।

২)           অভিবাসীর সংখ্যা কি কমানো উচিৎ।

৩)           অভিবাসীরা কি অপরাধ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

৪)           সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য কি কানাডীয়দের সুযোগ সীমিত করছে। “সুযোগ” বলতে আমরা বুঝিয়েছি চাকরি, শিক্ষা ও আবাসনের মত বিষয়।

আগের সমীক্ষায় প্রকাশ পায় যে, কিছু প্রদেশ অন্যগুলোর চেয়ে অভিবাসীদের কম স্বাগত জানায়। ২০১৯ সালে জরিপের সেরা প্রতিষ্ঠান ইকোস পলিটিকস (ঊকঙঝ ঢ়ড়ষরঃরপং) এর জরিপে দেখা যায়, ৪০ শতাংশ কানাডীয় “অশ্বেতাঙ্গ’ (ারংরনষব সরহড়ৎরঃু) অভিবাসীদের নিয়ে শঙ্কিত ছিল।

ইকোস-এর রিপোর্ট থেকে জানা যায়, আলবার্টার ৫৬ শতাংশ, অন্টারিওর ৪৬ শতাংশ এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার ৩১ শতাংশ মানুষ ওই মনোভাবের সঙ্গে একমত। একইভাবে, মারু পাবলিক ওপিনিয়নের ২০২১ সালের এক রিপোর্টে দেখা গেছে, কানাডীয়দের মাত্র অর্ধেক সংখ্যক মানুষই মনে করেন আলবার্টা অভিবাসীদের সাদরে গ্রহণ করার মত জায়গা।

আমরা অবশ্য কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে অভিবাসীবিরোধী মনোভাবে উল্লেখযোগ্য কোনও পার্থক্য খুঁজে পাইনি। তার ওপর, আমাদের গবেষণা বলছে, জবাবদাতাদের বৃহদংশই অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন না।

“অভিবাসন অর্থনীতির ক্ষতির কারণ কিনা” এমন প্রশ্নে ভিন্নমত জানান ৫৩ শতাংশ জবাবদাতা। যেহেতু কানাডীয়রা অভিবাসীবিরোধী কঠোর মনোভাব প্রকাশ করে না, তাই আমরা যতটা ভাবি তারা আসলে অভিবাসীদের প্রতি তার চেয়ে কমই বন্ধুভাবাপন্ন। আমরা দেখতে পেয়েছি, ২৪ শতাংশ জবাবদাতার অভিবাসন বিষয়ে কোন মতামতই নেই। অন্যদিকে ২৩ শতাংশ জবাবদাতা একমত যে, অভিবাসন অর্থনীতির ক্ষতি করে।

এছাড়াও, ৩৪ শতাংশ কানাডীয় একমত যে, “অভিবাসন কমানো উচিৎ।”

২৪ শতাংশ একমত যে, “অভিবাসীরা অপরাধ বাড়ায়” এবং ২০ শতাংশ একমত যে, “সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তাদের সুযোগ-সুবিধা সীমিত করে।”

অভিবাসী জনগণের মনোভাব

আমাদের গবেষণায় দেখা যায়, কানাডায় সাম্প্রতিককালের অভিবাসীরা অনেক আগে আসা অভিবাসীদের চেয়ে অভিবাসনের বিষয়ে বেশি সহিষ্ণু। তবে এই পার্থক্য নেহায়েতই সামান্য। এ বিষয়ে অন্য যারা গবেষণা করেছেন তারাও একইরকম উপসংহারে পৌঁছেছেন।

কনভয় সমর্থকদের মধ্যে অভিবাসীবিরোধী মনোভাব কঠোর

প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ২০২২ সালের শুরুর দিকে অটোয়ায় ট্রাক চালকদের বিক্ষোভকে “ঘৃণা ও বিভাজনের প্রতীকে” আবিষ্ট বলে বর্ণনা করেন এবং বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে “বর্ণবাদ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের” অভিযোগ তোলেন। এর বিপরীতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দক্ষিণপন্থী ব্যক্তিরা ওই ট্রাক কনভয়ের বিক্ষোভে সমর্থন জানান। সেইসব নেতাদের মধ্যে ছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ফক্স-নিউজের কমেন্টেটররা।

আমরা দেখতে পেয়েছি যে, কানাডায় মাঝারি ধরণের অভিবাসীবিরোধী মনোভাব বিদ্যমান আছে। তবে প্রদেশগুলোর মধ্যে এ বিষয়ে পার্থক্য তেমন উল্লেখযোগ্য নয়।

সূত্র: দিকনভারসেশন.কম