একটি দুৰ্ঘটনা ও সারাজীবনের কান্না
জসিম মল্লিক
১
টরন্টোতে গাড়ি দুৰ্ঘটনায় একটি হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাত সাড়ে এগারোটায় এই দুৰ্ঘটনা ঘটে। এতে বাংলাদেশি তিন শিক্ষাৰ্থী মারা গেছেন। একজন গুরুতর আহত হয়েছেন। আহত শিক্ষাৰ্থী গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন। নিহত শিক্ষাৰ্থীৱা হলেন শাহরিয়ার খান, এঞ্জেলা বারৈ ও আরিয়ান দীপ্ত। আহত শিক্ষাৰ্থী হচ্ছেন নিবিড় কুমার দে। সবার বয়সই ১৭ থেকে ২১ এর মধ্যে। এই ঘটনায় আমার মনটা ভেঙ্গে গেছে। যেসব বাবা মা সন্তানদের বিদেশে পাঠিয়েছেন উচ্চশিক্ষার জন্য তাদের জন্য এই ঘটনা কতবড় শোকের তা প্রকাশ করা সম্ভব না। তারা আর কোনোদিন সন্তানদের ফিরে পাবেন না। যে যায় সে আর ফেরে না। অনেক আশা আর স্বপ্ন নিয়ে আমরা সন্তানদের বিদেশ পাঠাই। সেখানে তারা কত কষ্ট করে। দেশে যেমন বাবা মা ভাই বোনের কাছে আদরে থাকে বিদেশে তেমন না। সেখানে পড়াশুনার বাইরেও অনেক কিছু করতে হয় ছোট ছোট সন্তানদের। নিজের রান্নাটা পৰ্যন্ত তারা নিজেরা করে, কাপড় ধোয়া, ডিশ ওয়াশ করতে হয়। বাইরে কাজ করতে হয়। মধ্যবিত্তরা অনেক কষ্টে টাকার সংস্থান করে সন্তানকে বিদেশ পাঠান। কানাডায় পড়াশুনা অনেক ব্যয়বহুল। সেই আদরের সন্তানদের এভাবে অকাল মৃত্যুতে হৃদয় রক্তাত্ব হয়েছে।
২
কানাডার হাইওয়েতে ওভার স্পীডে গাড়ি চালানো অনেক ঝুঁকিপূৰ্ণ। এতে নিজের বিপদতো ডেকে আনা হয়ই অন্যেরও বিপদ ঘটতে পারে। জীবননাশ সহ পঙ্গু হওয়ার ঝুঁকি থাকে। তাছাড়া টিকিট খেতে হয়, ডিমেরিটস পয়েন্টস আছে, কোৰ্টেৱ বারান্দায় দৌঁড়াতে হয়, এমনকি লাইসেন্স সাসপেন্ড সহ জেলে যাওয়ার সম্ভাবনাও থাকে। তার উপর ইন্সুরেন্সের হ্যাপাতো আছেই। নিজের দোষে কিছু হলে ইন্সুরেন্স হাই হয়ে যাবে। কানাডায় গাড়ি চালানোৱ ক্ষেত্ৰে অনেক কড়াকড়ি আইন আছে। ড্রিঙ্ক এন্ড ড্রাইভ জিরো টলারেন্স। সিঙ্গল লেনে ওভারটেকিং করা যায় না। লাইসেন্সের ক্ষেত্রে তিনটি ধাপ পার হতে হয়। জি লাইসেন্স ছাড়া হাইওয়েতে গাড়ি চালানো যায় না। প্রথমে জি-টু, তারপর জি-ওয়ান, তারপর জি লাইসেন্স নিতে হয়। আমার সন্তানদের সবসময় বলি গাড়ি সাবধানে চালাবা। কখনও ওভারস্পীড করবা না। স্টপ সাইনগুলোতে নিয়ম মানবা। হিডেন বা রেডলাইট ক্যামেরা খেয়াল করবা। কারো সাথে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হবা না। গাড়ি যেনো তোমার নিয়ন্ত্রনে থাকে।
৩
নিজের সাবধানতা নিজের কাছে। অন্যে ভুল করলেও নিজেকে সেভ করতে হবে। টরন্টোর মেজর হাইওয়েতে যেমন ৪০১, ৪২৭ বা ৪০৪ গুলোতে সৰ্বোচ্চ গতিবেগ ১০০ কিলোমিটার। কিন্তু আলোচ্য দুৰ্ঘটনা কবলিত গাড়িটি ১৪০ কিলো মিটার গতিতে চলছিল বলে বলা হয়েছে। লেন চেঞ্জ করার সময় এই গতিবেগ অতি মারাত্বক। গাড়ি কন্ট্রোল করা কঠিন। যারা বিদেশে সন্তানদের পাঠাবেন আমার অনুরোধ আপনার সন্তানকে সাবধানে গাড়ি চালাতে বলবেন। একটা দুৰ্ঘটনা সারাজীবনের কান্না। যে ঘটনা ঘটেছে তা পুরো কমিনিউনিটিকে শোকে মুহ্যমান করেছে। এমন ঘটনা আর না ঘটুক এটাই প্রত্যাশা। ঢাকা ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩