কানাডায় পারিবারিক সহিংসতা

কানাডায় পারিবারিক সহিংসতা ক্রমশই বাড়ছে। নতুন এক রিপোর্টে এ তথ্য জানা গেছে। আর সহিংসতার শিকার ব্যক্তিদের দুই-তৃতীয়াংশই নারী ও মেয়েরা (৬৯ শতাংশ)। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড-১৯ মহামারি এবং এজন্যে আরোপিত লকডাউন এর অন্যতম কারণ। অন্যান্য কারণও আছে।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে পুলিশে রিপোর্ট হওয়া অন্তরঙ্গ সঙ্গীর (বর্তমান ও প্রাক্তন স্বামী বা স্ত্রী, কমন ল পার্টনার বা সঙ্গী, ডেটিংয়ের সঙ্গী এবং অন্যান্য অন্তরঙ্গ অংশীদারের হাতে) সহিংসতার শিকার হন ১২ বছর বা তার বেশি বয়সের এক লাখ ১৪ হাজার ১৩২ জন নারী ও মেয়ে (প্রতি লাখে ৩৪৪ জন)। এটি ছিল এধরণের সহিংসতা বেড়ে যাবার উপর্যুপরি সপ্তম বছর। এ ধরণের সহিংসতার প্রতি ১০টির মধ্যে আটটিতেই (৭৯%) শিকার হন নারী বা মেয়ে সঙ্গীটি। আর নারী ও মেয়েদের শিকার হবার ঘটনা পুরুষ ও বালকদের (৫৩৭ বনাম ১৪৭) তুলনায় প্রায় চারগুণ বেশি।

লিউকস প্লেস সাপোর্ট অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার ফর উইমেন-এর আইন বিষয়ক পরিচালক পামেলা ক্রস গ্লোবাল নিউজকে বলেন, স্ট্যাটক্যান যে তথ্য-উপাত্ত দিয়েছে তার ভিত্তি শুধুই পুলিশের রিপোর্ট। তিনি যোগ করেন, সহিংসতার শিকার নারীদের মাত্র ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ পুলিশে রিপোর্ট করেন। সুতরাং, পুলিশে রিপোর্ট হওয়া সহিংসতার পরিমাণ বেশি হলে রিপোর্ট না করা সহিংসতার ঘটনাও বেশি হবে।

কানাডায় পারিবারিক সহিংসতা ক্রমশই বাড়ছে / ছবি : সংগৃহীত

উল্লেখ্য যে, ইতিপূর্বে প্রকাশিত অন্য এক রিপোর্টে বলা হয় কানাডায় গড়ে প্রতি আড়াই দিনে একজন নারী বা মেয়ে নিহত হয়। নারীহত্যা সম্পর্কিত এক রিপোর্টে এ কথা বলা হয়। ন্যায়বিচার ও জবাবদিহি বিষয়ক কানাডার নারীহত্যা পর্যবেক্ষণ সংস্থার (Canadian Femicide Observatory for Justice and Accountability) ২০২০ সালের রিপোর্টে বলা হয়, ওই বছর কানাডায় মোট ১৬০ জন নারী ও মেয়ে হত্যার শিকার হয়েছেন। ওই বছরের এপ্রিল মাস ছিলো নারী ও মেয়েদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ মাস। ওই মাসে মোট ২৬ জন নিহত হয় বলে রিপোর্টে জানানো হয়। সংবাদটি প্রকাশিত হয়েছিল সিটিভি নিউজে।

রিপোর্ট সংকলনকারী দলের একজন সদস্য অনুরাধা ডুগাল সিটিভি নিউজ চ্যানেলকে বলেন, কানাডায় প্রতিবছর সার্বিকভাবে যত নারী বা মেয়ে হত্যার শিকার হয় সেই সংখ্যা গত কয়েক বছরে তেমন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেনি। তিনি বলেন, এটি একটি অনঢ় সংখ্যা যাতে আজকের দিনে কানাডাজুড়ে শুধু লিঙ্গের কারণে কীভাবে নারীরা হত্যার শিকার হচ্ছে তারই প্রতিফলন ঘটে।

এদিকে ২০২২ সালের নভেম্বরে প্রকাশিত জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২১ সালে বিশ্বে ৪৫ হাজার নারী খুন হয়েছেন তাদের পুরুষ সঙ্গী বা পরিবারের মানুষের হাতে। এটি মোট খুন হওয়া নারীর ৫৬ শতাংশ। জাতিসংঘের অফিস অন ড্রাগস অ্যান্ড ক্রাইম ও ইউএন উইমেনের মতে, বিশ্বে প্রতি ঘণ্টায় পরিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে খুন হচ্ছেন পাঁচ জনের বেশি নারী। সংস্থাটির মতে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলিতে নারীর প্রতি পারিবারিক সহিংসতা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোভিড লকডাউনের সময় নারীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।

পারিবারিক সহিংসতার ক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্যও একটি বড় সমস্যা। আমাদের অনেকেই মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়টিকে গুরুত্ব দিই না। চিকিৎসকের পরামর্শও নিতে চাই না। অথবা এটি যে একটি রোগ তাও স্বীকার করি না। অথচ এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা প্রায়শই পরিবারের মধ্যে সহিংসতার ঘটনা ঘটান। আর এর প্রধান শিকার হন নারীরা। সুতরাং নারী নির্যাতন কমাতে হলে মানসিক স্বাস্থ্যের বিয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।  

আমরা জানি মানব সমাজে প্রতিটি পরিবারই একেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এই পরিবারকে ঘিরেই আমাদের জীবনের সবকিছু আবর্তিত হয়। তাই এই পরিবারকে সহিংসমুক্ত রাখা অতি জরুরী। আমাদের জীবনে সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় যেসব মূল্যবোধ রয়েছে, সেগুলো যথাযথভাবে মেনে চললে পরিবারিক সহিংসতার পরিস্থিতি থেকে মুক্ত থাকা যাবে বলে আমরা মনে করি।