উইনিপেগে মুসলিম নারী ও শিশুর জন্য খোলা হলো প্রথম আশ্রায়ন, একাত্মতার বোধ সৃষ্টির আশাবাদ

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : মুসলিম নারী ও শিশুদর জন্য উইনিপেগের প্রথম আশ্রায়নের দ্বারোদ্ঘাটন করা হলো সম্প্রতি। আশা করা হচ্ছে, এটি আশ্রয় পাওয়া নারী ও শিশুদের মধ্যে নিরাপত্তা ও একাত্মতা বোধের সৃষ্টি করবে। খবর ওজটেন শেবাহকেগেত/সিবিসি নিউজ।

এই প্রকল্পের প্রথম ঘোষণা দেওয়া হয় গত মার্চে। নতুন আশ্রায়ন তৈরি করেছে অন্টারিওর মিসিসগাভিত্তিক জাতীয় পর্যায়ের দাতব্য প্রতিষ্ঠান সাকিনা হোমস। এই প্রতিষ্ঠানটি ব্রামটন, লন্ডন, মন্ট্রিল, অটোয়া এবং টরন্টোতে নারী ও শিশুদের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন আবাসনের সুবিধা দেয়। এখন উইনিপেগে এর কার্যক্রম শুরু হলো।

আইএসএসএ’র (ISSA) নির্বাহী পরিচালক শাহিনা সিদ্দিকী সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “নতুন কিছু দেখলেই কিছু শঙ্কাও মনে জাগেÑ তবে সেইসঙ্গে আশাবাদও।”

উইনিপেগের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করার বিষয়ে সাকিনা হোমসকে সাহায্য করেছে আইএসএসএ। উইনিপেগের ইসলামিক কমিউনিটিতে কয়েক দশক ধরে কাজ করতে গিয়ে সিদ্দিকী এমন অনেক মুসলিম নারীর দেখা পেয়েছেন যারা তার ভাষায় এখানকার সমাজের মূল ধারার আশ্রায়ন কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য, ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন সমস্যার  উল্লেখ করে সেখানে নিজেদেরকে বাঞ্ছিত বলে অনুভব করেন না।

সিদ্দিকী বলেন, পারিবারিক সহিংসতা কেবল শারীরিক নিরাপত্তাই নয় বরং তার চেয়েও বড় আঘাত হানে। তাই পারিবারিক সহিংসতার শিকার নারীরা যাতে নিরাপদ বোধ করেন সেজন্যে তাদের আবেগ-অনুভূতি, সংস্কৃতি ও আধ্যাত্মিক পর্যায়ে সাহায্য করার দরকার হয় যাতে তারা পীড়নমূলক পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সময় নিজেকে নিরাপদ বোধ করতে পারেন।

সিদ্দিকী বলেন, “আমি কিছু আশ্রায়নের কথা জানি যারা শুধুই থাকার জায়গা এবং খাবারের ব্যবস্থা করেন, কিন্তু একটি ফ্রিজে যদি হালাল খাবারের পাশে শুকরের মাংস রাখা হয় – তাহলেই সেটা একটা বড় ঘটনার জন্ম দেয়।”

“কিছু নারী আশ্রায়নে যাওয়া থেকে নিজেদের বিরত রাখেন এবং যারা গেছেন তারাও ফোন করে বলেন, ‘দয়া করে আমাকে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যান।”

তিনি বলেন, মূল ধারার আশ্রায়ন কেন্দ্রগুলোতে সংবেদনশীলতার অভাব কখনও কখনও গুরুতর পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। 

“এটা মেনে নেয়া আমার জন্য কঠিনতম বিষয় যে, (মুসলিম নারীরা) তাদের জন্য নিরাপদ নয়, উপযুক্ত থাকার জায়গা নয় এবং তার সন্তানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন এমন কোনও আশ্রায়ন কেন্দ্রে যাবার চেয়ে নিপীড়নমূলক সম্পর্কের মধ্যে বসবাসকেই বেছে নিচ্ছেন।”

সিদ্দিকীর লক্ষ্য উইনিপেগ ছাড়িয়ে এবং পুরো ম্যানিটোবায় মুসলিমদের চাহিদামত আরও বেশি সংখ্যক আশ্রায়ন কেন্দ্র গড়ে তোলা যেগুলি হবে সংবেদনশীল। তিনি বলেন, এই লক্ষ্য পূরণে কাজ করছে আইএসএসএ।

‘প্রথম পদক্ষেপ’

প্রথম আশ্রায়নের বিষয়ে মানুষের প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক এবং সিদ্দিকী আশা করছেন, সব কিছু ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, “আমরা প্রথম পদক্ষেপ করেছি” তবে সামনে আরও কিছু করণীয় রয়ে গেছে।

ম্যানিটোবা ইসলামিক অ্যাসোসিয়েশনের শেখ আউলদ মাওলাইয়ি বলেন, তার সংগঠন উইনিপেগের নতুন আশ্রায়নের মত আরও আশ্রায়ন কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা ‘নির্দিষ্ট’ভাবে চিহ্নিত করেছে।

সিবিসিকে তিনি বলেন, “আমাদের অনেক মুসলিম বোন (মূল ধারার) আশ্রায়নে স্বচ্ছন্দে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া হয় বলে অনুভব করেন না।”

মাওলাইয়ি বলেন, মুসলিম নারীরা তাদের খাদ্যসম্পর্কিত, ধর্মীয় ও সামাজিক চাহিদা পূরণ ছাড়াও নতুন আশ্রায়নে ভাষাগত বাধা কাটাতেও সহায়তা পাবেন।

তিনি বলেন, “তাদেরকে যত শিগগির সম্ভব বুঝতে হবে এবং সহায়তা দিতে হবে। একাত্ম বোধ করার মত জায়গা খুঁজে পাওয়া তদের জন্য অনেক সহজ হয়ে যায় যখন কেউ এমন কোনও পরিস্থিতি থেকে আসেন যেখানে তাকে অনেক চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করতে হয়েছে।”

জিনা চৌধুরী জানান, ১৩ শয্যা ও একটি খাটিয়া (ক্রিব) নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এই আশ্রায়ন কেন্দ্র সরকারি তহবিল পায়নি। তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি নর্থপাইন ফাউন্ডেশন এবং এএসকে ফাউন্ডেশনের অর্থ সহায়তা পেয়েছে।

চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর পারিবারিক সহিংসতা ব্যাপকতর হয়ে ওঠে এবং ওই সময় তার সংগঠন ম্যানিটোবার মুসলিম নারীদের কাছ থেকে ক্রমবর্ধমান হারে ফোনকল পেতে থাকে।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে সব প্রদেশের মধ্যে ম্যানিটোবা ও সাসকাচুনে সবচেয়ে বেশি পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ পুলিশের কাছে আসে।

জিনা চৌধুরী বলেন, মূল ধারার কেন্দ্রগুলোতে প্রায়শ যে “প্রাতিষ্ঠানিক” আন্দরসজ্জা দেখা যায়, উইনিপেগের আশ্রয় কেন্দ্র তার থেকে ভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে।

তিনি বলেন, কেন্দ্রটি এমনভাবে “সাজানো হয়েছে যেন মনে হয়, আপনি নিজের ঘরেই বসে আছেন। কারণ, আমরা জানি, মানসিক আঘাত পাওয়া অতীত থেকে আসা নারী ও শিশুদের এমনই একটি অবকাশ দরকার যেখানে অন্য কিছু করার আগে তাদের ক্ষতের উপশম হতে পারে।”

তিনি বলেন, “মুসলিমদের এমন নিশ্চয়তা দেয়া যেতে পারে যে, তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংবেদনশীলতার বিষয়টি বুঝতে পারে এমন কাঙ্খিত জায়গা আমরাই দিতে পারি।”

“এর অর্থ এমন নয় যে, আমরা কেবল মুসলিমদেরই বাসিন্দা হিসাবে গ্রহণ করবো Ñ থাকার জায়গা দরকার এমন যে কারও জন্য আমাদের দরজা খোলা।”