বিমানযাত্রীদের সুরক্ষায় নতুন বিধি চালু কিন্তু তা যথেষ্ট নয়, বলেন সমালোচকরা

নিয়ন্ত্রক সংস্থা বলছে, কোভিড-১৯ মহামারি বিমানযাত্রীদের স্বার্থ সুরক্ষায় গলদ স্পষ্ট করেছে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : টাকা ফেরত দেয়ার নতুন বিধান চালু হয়েছে, কিন্তু ভোক্তাদের পক্ষে যারা কথা বলেন তারা এবং বিমান সংস্থাগুলি এ নিয়ে উদ্বেগ জানাচ্ছে।

২০১৯ সাল থেকে কানাডার ফেডারেল সরকারের নিয়ম ছিল, বিমান সংস্থাগুলোর নিজেদের কারণে ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল হলে যাত্রীদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। খবর ড্যারেন মেজর  – সিবিসি নিউজ।

গত ৮ ই সেপ্টেম্বর থেকে যে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে তাতে ফ্লাইট বাতিল হলে এবং তা যদি এতটা বিলম্বিত হয় যে, যাত্রীরা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্ভাব্য পরবর্তী ফ্লাইটে টিকিট বুকিং দিতে না পারেন তাহলে তার টাকা ফেরত দিতে হবেÑ এমনকি ফ্লাইট বিলম্বিত বা বাতিল হওয়ার জন্য বিমান সংস্থা দায়ী না হলেও।

কনাডার ট্রান্সপোর্টেশন এজেন্সির (সিটিএ) অ্যানালাইসিস আ্যন্ড আউটরিচ শাখার মহাপরিচালক টম উমেন বলেন, এটি এক বিরাট ঘটনা, এটি যাত্রীদের বিজয়।” একটি আধা-বিচারিক ট্রাইব্যুনাল ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে বিমান সংস্থা ও গ্রাহকদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তি ও নতুন প্রবিধান বলবৎ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

৮ ই সেপ্টেম্বর থেকে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। ফ্লাইট বাতিল হলে এবং তা যদি এতটা বিলম্বিত হয় যে, যাত্রীরা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্ভাব্য পরবর্তী ফ্লাইটে টিকিট বুকিং দিতে না পারেন তাহলে তার টাকা ফেরত দিতে হবে। ছবি: নাথান ডেনেট/দি কানাডিয়ান প্রেস

উমেন বলেন, মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর এয়ারলাইনগুলি যখন একের পর এক ফ্লাইট বাতিল এবং যাত্রীদের অর্থ ফিরিয়ে দিতে বিলম্ব করতে থাকে তখন এ সংক্রান্ত বিধিবিধানের ফাঁক ধরা পড়ে। তিনি বলেন, নতুন বিধির আওতা বাড়ানো হয়েছে এবং আবহাওয়াজনিত এবং শ্রম বিরোধের মত বিষয়ও এর আওতায় আসবে।

তবে গ্রাহকদের পক্ষের একজন প্রবক্তা নতুন নিয়মের ব্যাপারে কমই আশাবাদী।

কুইবেক-ভিত্তিক অ্যাডভোকেসি গ্রুপ অপশন কনসোমেটিওর এর আইনজীবী সিলভি ডি বিলেফিউলি বলেন, যারা অল্প সময়ের ভ্রমণে যাবেন সেইসব যাত্রীদের জন্য ২৪ ঘণ্টার বাতায়ন এখনও একটি ফাঁক রেখে যাচ্ছে।

উদাহরণস্বরূপ, তিনি বলেন, একজন যাত্রী যদি শনিবারের কোনও অনুষ্ঠানে যাবার জন্য শুক্রবারের ফ্লাইটে টিকিট বুক করেন আর সেটি বাতিল হয়ে যায় তাহলে এয়ার লাইন ওই যাত্রীর জন্য রবিবারের ফ্লাইটের টিকিট বুক করতে পারবে এবং ওই যাত্রীর টাকা আর ফিরিয়ে দিতে হবে না।

বিলেফিউলি বলেন, “যদি ওই যাত্রী নির্দিষ্ট কোনও অনুষ্ঠানে যাবার জন্য ফ্লাইটের বুকিং দিয়ে থাকেন এবং অনুষ্ঠানে যোগ দিতে না পারেন তাহলে পরের ফ্লাইটের আর

কার্যকারিতা থাকে না।”

এয়ারলাইন কাউন্সিল বলছে নতুন বিধিমালা অন্যায্য

কানাডার ন্যাশনাল এয়ারলাইন্স কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট জেফ মরিসন বলেন, নতুন বিধিমালা অন্যায্য, কারণ এতে ফ্লাইট বাতিল বা বিলম্বিত হওয়ার দায় সরাসরি এয়ারলাইনের ওপর চাপানো হয়েছে, যদি তা অন্য কারও কারণে, যেমন নিরাপত্তা, কাস্টমস এমনকি খোদ এয়ারপোর্টের জন্যও ঘটে থাকে।

মরিসন বলেন, “ফ্লাইট পরিচালনা ব্যাহত হলে ওইসব সংস্থাকে কোনও দায় নিতে হবে না। নতুন বিধিমালা সব দায় এয়ারলাইন্সের ওপর চাপিয়েছে।”

তিনি বলেন, নতুন প্রবিধি কার্যকরের পাশাপাশি নিরাপত্তা, কাস্টমস এবং বিমানবন্দরগুলির পরিষেবার মানও বাড়বে এটাই তিনি চান।

পরিবহন বিষয়ক মন্ত্রী ওমর আলগাবরার দফতরের একজন মুখপাত্র সিবিসিকে বলেন, নতুন প্রবিধি প্রণয়নের আগে এয়ারলাইন্সের সঙ্গে আলোচনা করা হয়েছে।

আলগাবরার দফতর আলাদা এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই বিধিমালা করাই হয়েছে যাত্রীদের স্বার্থ রক্ষা এবং এয়ারলাইনকে জবাবদিহির আওতায় আনার জন্য।”

প্রবক্তারা বলছেন, আরও উন্নত করা দরকার

বিমান যাত্রীদের অধিকার বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ইয়ান জ্যাক বলেন, তিনি মনে করেন, নতুন বিধিমালা কেবল তখনই প্রযোজ্য হবে যখন আরেকটি মহামারি পরিস্থিতির সৃষ্টি হবেÑ যে পরিস্থিতিতে দীর্ঘ সময়ের জন্য বিমান ভ্রমণ স্থগিত করা হবে অথবা যখন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বা কোনও দীর্ঘ শ্রম বিরোধের মত কারণে বিমানবন্দর বন্ধ হয়ে যাবে।

জ্যাক বলেন, তিনি মনে করেন, নতুন বিধিমালা আগেরটার চেয়ে কিছুটা অগ্রগতি তবে সিটিএকে এয়ারলাইনগুলোর ওপর কঠোর হতে হবে।

তিনি বলেন, “এ বিষয়ে একন মনোযোগ দিতে হবে যাতে এই ব্যবস্থা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে কাজ করে।” জ্যাক হলেন অলাভজনক ট্রাভেল এজেন্সি কানাডিয়ান অটোমোবাইল অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র।

সিটিএ বলেছে, বিমান সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অন্যায়ভাবে ক্ষতিপূরণের অর্থ দিতে অস্বীকার করার বিষয়ে যাত্রীদের ক্রমবর্ধমান বিপুল অভিযোগ নিয়ে তাদের কাজ করতে হচ্ছে।

এই পুঞ্জীভূত কাজ সম্পাদনের জন্য সরকার গত এপ্রিলের বাজেটে সিটিএর জন্য এক কোটি ১০ লাখ ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। উমেন বলেন, সিটিএ বিরোধ নিষ্পত্তির প্রক্রিয়ায় ২০১৯ এর পর বেশ উন্নতি করেছে।

তবে জ্যাক বলেন, জমে থাকা অভিযোগের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত যাত্রীরা তাদের প্রাপ্য অর্থ পাবেন না।

তিনি বলেন, “বিচার বিলম্বিত হওয়া মানেই ন্যায়বিচার অস্বীকার করা।”