কানাডায় হৃদরোগে প্রতি ২২ মিনিটে একজন নারী মারা যায়; বেশিরভাগ মৃত্যুই প্রতিরোধযোগ্য

নারী রোগীদের চিকিৎসা করা হয় প্রায়শ পুরুষের মতই কিন্তু নারীর হৃদপিণ্ড ও রোগের লক্ষণ সম্পূর্ণ আলাদা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কানাডায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ২২ মিনিটে একজন নারী মারা যান।

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মারা যাবার কথা নয়। তারা এমন সতর্কবাণী দিয়েছেন যে, চিকিৎসক সমাজ নারী রোগীদের প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা সেবা ঢেলে না সাজালে আরও বেশি সংখ্যক নারী অকারণে মারা যাবেন। প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন সিবিসি নিউজের আইওনা রোউমেলিয়টিস ও ব্রেন্ডা উইটমার।

টরন্টোর উইমেন্স কলেজ হাসপাতালের মেডিসিনের বিভাগীয় প্রধান হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. পলা হার্ভি বলেন, “বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা আমাদের আছে। কিন্তু আমরা নারীদের সেবা দিচ্ছি না। আমাদেরকে এ বিষয়ে আরও ভালো কিছু করতে হবে।”

কানাডায় নারীদের বৃহত্তম এক ঘাতক হলো হৃদরোগ। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটানো অন্য যে কোনও সময়ের চেয়ে এখন বেশি জরুরী। হার্ভি বলেন, হৃদরোগের উচ্চ ঝুঁকির লক্ষণগুলো এখন অনেক বেশি সংখ্যক অল্পবয়সী নারীর মধ্যে দেখা যাচ্ছে, যেমন, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং স্থূলতা।

কানাডায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রতি ২২ মিনিটে একজন নারী মারা যান। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই মারা যাবার কথা নয়। ছবি : Wear Red Canada

হার্ভি বলেন, “হৃদরোগের ঝুঁকির উপাদানগুলি অপেক্ষাকৃত কম বয়সেই সমস্যা হয়ে দেখা দিচ্ছে। এটা বেশ বড় সমস্যা মনে করি।  ৪০ এর কোটায় বয়স কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ নেই এমন নারী দেখা যায় না। এমনটাই দেখছি এবং এর অর্থ হলো অল্প বয়সের নারী হৃদরোগী আরও বাড়বে।

হরমোনের মাত্রা কীভাবে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে

এরই মধ্যে কিছু জরিপে দেখা গেছে, ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে হৃদরোগের আক্রান্ত হবার হার বেড়েছে।

এই প্রবণতার পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে জবিনযাত্রা প্রণালী, কিন্তু যে হুমকি সৃষ্টি হয়েছে সেটাই অনেক ব্যাপকতর- কানাডার সংখ্যাগরিষ্ঠ নারীর শরীরে হৃদরোগে আক্রান্ত হবার মত অন্তত একটি ঝুঁকির লক্ষণ আছে। বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারী এবং নির্দিষ্ট কিছু জাতিগোষ্ঠীর ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসা নারীরা। তবে হরমোনের মাত্রার তারতম্য যে কোনও নারীর হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে, বিশেষ করে যখন তাদের মেনোপজ শুরু হয়। কারণ এসময় তাদের হৃদযন্ত্রের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন এস্ট্রাজেনের নিঃসরণ কমতে থাকে।

হার্ভি বলেন, এই পরিবর্তন শুরু হয় নারীদের বয়স যখন ৪০-এর কোটায় পৌঁছে।

তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, এসব ঘটনার অনেকটাই ঘটে এখ নপর্যন্ত নারীদের এসব বিষয়ে শিক্ষিত করে না তোলার কারণে, তাদেরকে কেউ পরামর্শ দেয়নি, বয়সের সঙ্গে শরীরের পরিবর্তন যে তাদেরকে হৃদরোগের ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে এটা তারা বুঝতে পারে না।” 

হৃদরোগে মারা যায় স্তন ক্যান্সারের চেয়ে ৫ গুণ বেশি নারী

অটোয়া ইউনিভার্সিটির হার্ট ইন্সটিটিউটের অধীন কানাডিয়ান উইমেন্স হার্ট হেল্থ সেন্টারের তথ্য অনুযায়ী, হৃদরোগে প্রতি বছর ২৪ হাজার কানাডীয় নারী মারা যান। এটি স্তন ক্যান্সারে মৃত্যুর চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি।

তার পরও হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গ উঠলে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এটি এখন পর্যন্ত প্রধানত পুরুষদের ক্ষেত্র হয়ে আছে। রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা সেবা এবং সচেতনতার দিক থেকে নারীরা পিছিয়ে আছে।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসার ডা. ক্যারিন হাম্পরিজ বলেন, চিকিৎসা সেবার মৌলিক কাঠামো এখনও পুরুষদের প্রাধান্য দেয় এবং এটি সাধারণভাবে নারী ও স্বাস্থ্যসেবা দানকারীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব তৈরিতে ভূমিকা রাখে। সচেতনতা বাড়তে থাকলেও তা কাক্ষিত মাত্রায় বাড়ছে না।

তিনি বলেন, “আমাদের সংস্কৃতির সবকিছুতেই জোর দিয়ে দেখানো হয় যে, হৃদরোগ হলো পুরুষদের রোগ। যেমন, হলিউডের কথা ভাবুন, সব সময়ই অঅপনি দেখবেন হার্ট অ্যাটাক হচ্ছে পুরুষের, ঠিক না? হলিউডের মুভিতে কখনই কোনও নারীর হার্ট অ্যাটাকের দৃশ্য দেখতে পাবেন না।”