প্রবাসে বাঙ্গালীদের বিয়ের অনুষ্ঠানে বলিউডের উদ্ভট ‘সংস্কৃতি’ ও অসহনীয় শব্দদূষণ
খুরশিদ আলম
টরন্টো আর মন্ট্রিয়লে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ডজনখানেক বা তারও বেশী বিয়ের অনুষ্ঠান লেগেই থাকে বাঙ্গালীদের। সামারটাইমেই হয় এই সকল বিয়ের অনুষ্ঠান। অন্যান্য কমিউনিটির লোকজনও এই সময়টাকেই বেছে নেন। ব্যাংকুয়েট হল ভাড়া পাওয়া তখন কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
বাঙ্গালীদের এই বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোর একেকটিতে ২ শ থেকে শুরু করে ৪/৫ শ পর্যন্ত অতিথির সমাগম ঘটে। বিশাল সব পার্কিং লট কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় অতিথিদের গাড়িতে।
বিকেল থেকেই শুরু হয় অতিথিদের আগমন। বর্ণাঢ্য সাজে সজ্জিত মহিলাদের উপস্থিতি বিয়ের অনুষ্ঠানকে করে তোলে আলোকিত। পুরুষরাও কম যান না। স্যুট টাই পরে, কেউ আবার বর্ণাঢ্য রঙ এর পাঞ্জাবী পরে উপস্থিত হন বিয়ের অনুষ্ঠানে। সেই সাথে আছে বাচ্চাদেরও আনাগোনা। সব মিলিয়ে একটা সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরী হয় এই সকল বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে। বর-কনের জন্য সবাই দোয়া বা প্রার্থনা করেন, তাঁদের মঙ্গল কামনা করেন। তাঁরা যাতে সুখে শান্তিতে বাকিটা জীবন এক সাথে কাটাতে পারেন সেই কামনাও করেন।
অন্যদিকে এই বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোকে একটা মিলন মেলা বা মিলন উৎসবও বলা যেতে পারে। কারণ অনেকের সাথেই এই অনুষ্ঠানগুলোতে দেখা হয়ে যায় দীর্ঘদিন পর। এক বছর, দুই বছর বা চার-পাঁচ বছর পর দেখা হওয়ার ঘটনা নিত্যই ঘটে এই সব বিয়ের অনুষ্ঠানে। দীর্ঘ বিরতির পর পরিচিতদের মধ্যে দেখা হলে পরস্পরের কুশলাদি জিজ্ঞেস করাসহ স্মৃতি রোমন্থনে ব্যস্ত হয়ে উঠেন তাঁরা। বিয়ের অনুষ্ঠানে অতিথিদের এটি একটি বাড়তি পাওয়া। সবাই উপভোগ করেন এই বাড়তি পাওয়াটুকু। এবং পুরানো সম্পর্কগুলো আবার একটা নুতন মাত্রা পায়।
সব মিলিয়ে উৎসব মুখর এই বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো প্রবাসের ব্যস্ত ও একঘেয়ে জীবনে আনে অন্যরকম এক ভাললাগার অনুভূতি। জীবন জীবিকার তাগিদে মাতৃভূমি থেকে হাজার হাজার মাইল দূরে এসে নিজ সংস্কৃতি ও ছন্দময় পরিবেশের ছোঁয়া পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপারই বলতে হবে। সেই সাথে উৎসবমুখর এই পরিবেশ বাঙ্গালীর মননে যোগান দেয় এক ধরনের সঞ্জীবনী সুুধা। সেই সুধায় চাঙ্গা হয়ে সবাই বাড়ি ফিরেন মধ্যরাতে। পরের দিন তাঁরা চাঙ্গা হওয়া মন নিয়ে নতুন উদ্যমে শুরু করেন প্রবাসের সংগ্রামী জীবন।
কিন্তু এই ভাললাগার আনন্দ-উৎসবের পাশাপাশি প্রবাসের বেশীরভাগ বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে অযাচিত একটা ব্যাপারও ঘটে যা থেকে অনেকেই আনন্দ পাওয়ার বদলে নিরানন্দে ভোগেন। সেই অযাচিত বিষয়টি হলো শব্দদূষণ। অতিমাত্রার শব্দ যা মানুষের শ্রবণকে আঘাত করে তাকেই বলা হয় শব্দদূষণ। আর বিয়ের অনুষ্ঠানে এই শব্দদূষণের ব্যাপারটি ঘটনো হয় অতি উচ্চমাত্রায় ক্রমাগত বলিউডের গান বাজিয়ে। গোটা অনুষ্ঠানের অধিকাংশ সময় ধরেই চলে এই বলিউডি গানের উৎপাত যার সবগুলো শব্দের অর্থ অধিকাংশ বাঙ্গালী সঠিকভাবে বুঝেনও না। আর আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের কাছে এ সকল গানের শব্দ তো এলিয়েন শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয়। অনুষ্ঠানের যাঁরা মধ্যমনি- অর্থাৎ বর-কনে, তাঁরা যদি এ সকল গানের একটি শব্দের অর্থও না বুঝে তবে এগুলো তাঁদের সামনে বাজানোর প্রয়োজনটা কোথায়?
ধরা যাক আপনি কানাডায় প্রথম প্রজন্মের একজন বাঙ্গালী। আপনি বাংলা ও ইংরেজী ছাড়াও হিন্দী ও উর্দূ কিছুটা বুঝেন। এখন আপনার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বা বিয়ে বার্ষিকীতে কেউ একজন কান ফাটানো শব্দে চাইনিজ গান গাওয়া শুরু করলেন যার একটি শব্দও আপনি বুঝেন না। তখন আপনার মানসিক অবস্থাটি কি হতে পারে একবার ভাবুনতো? আমি প্রায় শতভাগ নিশ্চিত, আপনি ঐ গায়ক বা গায়িকার উপর প্রচন্ডভাবে রেগে যাবেন এবং তাকে লাঠি নিয়ে দৌড়ানি দিবেন গাল দিতে দিতে।
প্রবাসে আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের কাছে বলিউডের গান ঐ চায়নিজ গানের মতই দুর্ভেদ্য যার একটি শব্দও তাঁরা বুঝে না। অথচ এগুলোই আমরা তাঁদের বিয়ের অনুষ্ঠানে ভয়ানক শব্দ করে বাজিয়ে যাচ্ছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে বর-কনে ছাড়া আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও উপস্থিত থাকে। কিন্তু একবারও ভাবি না দ্বিতীয় প্রজন্মের এই ছেলে-মেয়েরা কি এতে আনন্দিত হচ্ছে নাকি রাগ বা বিরক্ত হচ্ছে। তাঁদের কাছে তো এই গান শব্দদূষণ ছাড়া আর কিছুই নয়। এবং একই সাথে বিরক্তিকরও। কারণ এই সকল গানের একটি শব্দও বুঝে না তাঁরা।
বাংলাদেশের জাতীয় নাক কান গলা ইন্সটিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মুহাম্মদ আবু হানিফ এর মতে শব্দ দূষণে শরীরের যে অঙ্গটি সবচেয়ে প্রথম আক্রান্ত হয় সেটি হলো কান এবং শ্রবণশক্তি। একজন মানুষ বাড়ির ভিতর সাধারণত ৪০ ‘ডেসিবল’ মাত্রায় কথা বলে থাকে। সেটিই কানের জন্য সুস্থ মাত্রার শব্দ। মানুষের কান ৭০ ‘ডেসিবল’ পর্যন্ত শব্দ সহ্য করতে পারে। এর বেশী হলেই সমস্যার সৃষ্টি হয়। (তথ্য সূত্র: বিবিসি)
‘ডেসিবল’ হলো শব্দ পরিমাপের একটি একক। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায় রক গানের কনসার্টে এই ‘ডেসিবল’ এর মাত্রা থাকে ১১০ থেকে ১২০ পর্যন্ত। প্রবাসে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে বলিউডের যে গানগুলো বাজানো হয় তার ‘ডেসিবল’ও এই রক গানের মতেই বা তার চেয়েও বেশী হতে পারে। কারণ এখানে বদ্ধ পরিবেশে গানগুলো বাজানো হয়। আর কনসার্টগুলো হয় সাধারণত খোলা মাঠে। ফলে কনসার্টের শব্দ চার দিকে অনেকদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। আর ব্যাংকুয়েট হলের ভিতর যে শব্দ হয় তা ছড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না বলে এর ‘ডেসিবল’ মাত্রা আরো বেশী হতে পারে।
কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রবন্ধ ডাক্তার আলমগীর মো. সোয়েব বলেন, ‘অতিরিক্ত শব্দের কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হার্টের অসুখ, বুক ধড়ফড় করা, ঘুমের সমস্যা, মাথা ব্যথা ও মানসিক চাপ, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে।’ তিনি আরো বলেন, ‘শব্দদূষণ একটি অদৃশ্য আতঙ্কের নাম। এটা এমন এক ধরনের শব্দ যা মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর স্বাস্থ্য ও সুস্থতা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম। কেউ কেউ একে শব্দ সন্ত্রাসও বলে থাকে।’
অবশ্য উপরে বর্নিত উপসর্গগুলো কোন একটি অনুষ্ঠানে এক বিকেল উপস্থিত থাকলেই শুরু হয়ে যায় তা নয়। দিনের পর দিন কেউ যদি উচ্চ মাত্রার শব্দের মধ্যে থাকেন, কাজ করেন তবে তার শ্রবণশক্তি ক্রমশ কমতে থাকে এবং উপরে উল্লেখিত উপসর্গগুলোতে আক্রান্ত হতে থাকেন।
তবে এটিও সত্যি যে, অতিমাত্রার শব্দ সম্বলিত কোন এক অনুষ্ঠানে এক বিকেলের উপস্থিতি মানুষের শ্রবণশক্তি ও স্বাস্থ্যের উপর স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বিরূপ প্রভাব ফেলতেই পারে। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে মানুষজন সাধারণত চার থেকে ছয় ঘন্টা বা তারও বেশী সময় ধরে অবস্থান করেন। এই সময়টুকুর মধ্যে একজন মানুষের মধ্যে শব্দদূষণের যে প্রভাব পড়ে তার ভোগান্তি পরবর্তী কয়েক ঘন্টা থেকে শুরু করে এক বা দুই দিন থাকতে পারে। এবং পরবর্তীতে অন্য কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর মধ্যে অনিহা দেখা দিতে পারে।
উচ্চ মাত্রার শব্দদূষণের কারণে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে সামাজিকতাও ব্যহত হয় উল্লেখযোগ্যভাবে। কারণ তাঁরা একজন আরেকজনের সঙ্গে ঠিকমত কথা বলতে পারেন না। শব্দের যন্ত্রণায় পাশের জনের সঙ্গে কথা বলতে গেলেও উচ্চস্বরে অথবা তাঁর কানের খুব কাছে মুখ নিয়ে কথা বলতে হয়। বিব্রতকর একটি অবস্থা এটি।
ডিনার চলাকালেও যদি এই উচ্চমাত্রার বলিউডি গান চলতে থাকে তখন লোকজন পাশে বসা কারো সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁর দিকে অনেকটা ঝুকে পড়েন এবং গলার স্বর বাড়িয়ে দেন। এতে করে অদৃশ্যভাবে যে অঘটনটি ঘটার সম্ভাবনা থাকে তা হলো, মুখ থেকে থুতুর কনা বের হয়ে পাশের জনের খাবারের উপর পড়তে পারে। উচ্চ স্বরে কথা বললে মুখ থেকে থুুতুর কনা বের হয়ে আসার মাত্রা বেড়ে যায়। এই থুতুর কণার মাধ্যমে ছড়াতে পারে ছোঁয়াচে রোগও!
করোনা মহামারী শুরু হওয়ার আগে টরন্টোতে এক বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল আমার। সেখানে এক ভদ্রলোককে এই উচ্চমাত্রার বলিউডি গানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখেছিলাম। তিনি বলছিলেন, আমাদেরকে কি বলিউডের গান শুনানোর জন্য দাওয়াত করে আনা হয়েছে এখানে? তাও জোর করে এবং কানফাটানো শব্দে? আমারতো ভাই কানে সমস্যা আছে এবং হার্টেরও সমস্যা আছে। এই পরিবেশে কিছুক্ষণ থাকলে তো আমার দফারফা হয়ে যাবে। লক্ষ্য করেছিলাম, তার সঙ্গে থাকা আরো কয়েকজন অতিথিও এই ক্ষোভের সঙ্গে একমত প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু ক্ষোভটা যথাস্থানে প্রকাশ করা হয়নি। অর্থাৎ হোস্টের কাছে এই ক্ষোভটি প্রকাশ করা হয়নি। পরে সেই ভদ্রলোক বাকিটা সময় ব্যাংকুয়েট হলের ভিতরই অবস্থান করেছিলেন না বাইরে গিয়ে অপেক্ষা করছিলেন সেটা আর লক্ষ্য করা হয়নি আমার।
বিয়ের অনুষ্ঠানের এই শব্দদূষণ এড়াতে আমি সাধারণত পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে ব্যাংকুয়েট হলের বাইরে চলে যাই কথাবার্তা বলার জন্য। কিন্তু কতক্ষণইবা আর বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলা যায়? চার থেকে ছয় ঘন্টার অনুষ্ঠানে বড়জোর আধা ঘন্টা বা এক ঘন্টা বাইরে অবস্থান করা যায়। তারপরতো আবার সেই শব্দদূষণের মধ্যেই প্রবেশ করতে হয়।
এই শব্দদূষণ আর বলিউডি সংস্কৃতির অত্যাচারের বিষয়টি নিয়ে আমার মনে হয় প্রবাসী বাঙ্গালীদের চিন্তা করার সময় এসে গেছে। কারণ,
প্রথমতঃ বলিউডি নাচ গান বাঙ্গালীদের সংস্কৃতি নয়। আমাদের নিজেদের রয়েছে উচ্চমানের এবং মননশীল সংস্কৃতি। রয়েছে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের মত গৌরবময় ইতিহাস। তাহলে আমরা কেন বলিউডের উদ্ভট সংস্কৃতির কাছে কাঙ্গালের মত হাত পাততে যাব?
দ্বিতীয়তঃ প্রবাসে এই বিয়ের অনুষ্ঠানগুলোতে আমাদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরাও উপস্থিত থাকে। বলিউডি নাচ গান বাজিয়ে আমারা আমাদের এই সন্তানদের কাছে কি বার্তা পৌঁছে দিচ্ছি? সেটা কি এই যে, সাংস্কৃতিকভাবে আমরা দেউলিয়া এবং সে কারণে অন্যের কাছে হাত পাতি কাঙ্গালের মত?
তৃতীয়তঃ আজকাল বাঙ্গালীদের বিয়ের অনুষ্ঠানে উল্লেখ করার মত অবাঙ্গালী অতিথিদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ কানাডিয়ানও থাকেন। মাল্টিকালচারাল সোসাইটি হওয়ার কারণে অন্যান্য মাইনরিটি গ্রুপের আমন্ত্রিত অতিথিরাও থাকেন। মাল্টিকালচারের একটি সুন্দর পরিবেশ তৈরী হয় এই বিয়ের অনুষ্ঠানে। যেন একটা বাগান। অনেক রকমের ফুল ফুটে আছে এখানে। কিন্তু এই সম্মানিত অতিথিদের সামনে আমরা কি আমাদের নিজ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে পারছি বলিউডের নাচ গানের মধ্য দিয়ে? তাঁরা আমাদের সম্পর্কে কি ধারণা বা ইমেপ্রশন নিয়ে ঘরে ফিরছেন?
ভিন সম্প্রদায়ের একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলে স্বভাবতই অতিথিদের মনে একটা কৌতুহল থাকে সেই সম্প্রদায়ের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য কিরকম তা দেখার জন্য। কিন্তু আমরা তাঁদের দেখিয়ে দিচ্ছি বলিউডের নাচ গান। আমরা কি এতটাই দেউলিয়া হয়ে গেলাম প্রবাসে এসে?
এই বলিউডি আগ্রাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থাটি কি তা আমার জানা নেই। কারণ প্রায় তিন দশক ধরে আমি দেশের বাইরে। এর মধ্যে কয়েকবার দেশে গেলেও কোন বিয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়ার সুযোগ হয়নি আমার। কিন্তু প্রবাসে যে চিত্রটি দেখছি তা মোটেও সুখকর নয়।
তবে প্রবাসে বাঙ্গালীদের সব বিয়ের অনুষ্ঠানেই যে শব্দদূষণ আর বলিউডের উৎপাত থাকে তা নয়। ব্যতিক্রমও আছে। কিন্তু আমি যে কয়টি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছি তার প্রায় সবগুলোতেই বলিউডের উৎপাত লক্ষ্য করেছি। লক্ষ্য করেছি শব্দদূষণও।
তবে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা আমি এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। সেখানে ছিল প্রচলিত ধারার সম্পূর্ণ উল্টো চিত্র। অতিথিরা যে যাঁর টেবিলে বসে আছেন। পরস্পরের মধ্যে কুশলাদি বিনিময় করছেন। কথাবার্তা বলছেন। থেকে থেকে বিয়ের মঞ্চ থেকে আসছিল বিভিন্ন ঘোষণা। সবাই তা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। এবং পুরো অনুষ্ঠান জুরে একবারও কানফাটানো শব্দে গান বাজানো হয়নি। যেটা বাজানো হয়েছিল সেটি হলো, মৃদু ভলিউমে ক্লাসিক্যাল মিউজিক। কয়েকটি গানের সুরে যন্ত্রসঙ্গীতও বাজানো হয়েছিল তবে সেটাও ছিল মৃদু ভলিউমে।
এতে করে কি ঐ বিয়ের অনুষ্ঠানের মর্যাদা হানি হয়েছে? না হয়নি। বরং আমি বলবো বলিউডের উৎপাত থেকে দূরে থাকার কারণে এবং শব্দদূষণ না ঘটানোর কারণে মর্যাদা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে আমন্ত্রিত অতিথিগণও একটি পরিপাটি, মার্জিত ও চমৎকার অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পেরেছেন। প্রবাসে বাঙ্গালীদের বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো এরকমই হওয়া উচিত নয় কি?
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ