আমার জীবনের নানা কথা

সাইদুল হোসেন

সুজাতা মিত্র। বয়স আটাশ বছর। অবিবাহিতা। ক্যানাডাতেই জন্ম। টরন্টো ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করে বড় এক কোম্পেনীতে কার্যরত। মিসিসাগা সিটিতে মা-বাবার সংগে নিজেদের বাড়িতে বসবাস। ছোট এক ভাই। সে-ও উচ্চশিক্ষিত এবং কর্মরত। বাবা সুদর্শন মিত্র (৬২) একজন ইঞ্জিনিয়ার কোন এক কোম্পেনীতে কর্মরত। সচ্ছল, সুখী পরিবার। সুজাতার সংগে আমি ও আমার স্ত্রীর আকষ্মিকভাবে পরিচয় ২০১৯ সনে ও ক্রমে ঘনিষ্ঠতা। চমৎকার আচার-আচরণ সুজাতার। প্রশংসনীয়। ওর বাবার সংগেও পরিচয় হয়েছে। অতি অমায়িক ব্যক্তি। এই পরিবারের ভাষা ইংরেজী- বাংলা নয়, হিন্দিও নয়।

নাম সুদর্শন মিত্র এবং সুজাতা মিত্র। বাংগালী হিন্দুদের মত নাম বটে তবে এরা হিন্দু নয়, খৃষ্টান। সুদর্শন মিত্রের দাদা বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার অধিবাসী হিন্দু ছিলেন কিন্তু পরে কোন কারণে হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে তিনি সপরিবারে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেন এবং আজো তারা খৃষ্টান। অতঃপর তারা এক সময়ে ইন্ডিয়ার কলকাতা চলে যান এবং সেখান থেকে ক্যানাডায় চলে আসেন। সে বহু যুগ আগের কথা। সুদর্শন মিত্রের জন্ম ক্যানাডাতে, তাঁর স্ত্রীও জন্মগতভাবে ক্যানাডিয়ান তবে ইন্ডিয়ান ওরিজিন। সুজাতা দেখতে পরিপূর্ণ বাংগালী মেয়ে- রংয়ে ও চেহারায়।

আমাদের সংগে পরিচয়ের অল্পদিন পরই উচুঁ পদে প্রমোশন পেয়ে সুজাতা মন্ট্রিয়লে ওদের হেড অফিসে বদলী হয়। সেখানে যাওয়ার আগে সে আমাদের খবর দিয়ে যায়। তবে মন্ট্রিয়লে পৌঁছার দিন যে অভাবনীয় ঘটনাপ্রবাহ সুজাতাকে অভিভূত করেছিল তার বর্ণনা ফোন করে সে আমাকে জানিয়েছিল। সত্যিই অভিভূত হওয়ার মত ঘটনা বটে।

মন্ট্রিয়ল ওর অপরিচিত শহর, ইতিপূর্বে সে কোন দিন সেখানে যায়নি। ওর হেড অফিসের লোকেরা দেখেশুনে ওদের অফিসের কাছের একটা বিল্ডিংয়ে ওর জন্য একটা এপার্টমেন্ট ভাড়া করে সেটাকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে বাসোপযোগী করে রেখেছিল। মিসিসাগা থেকে সব মালপত্র একটা ভ্যান ভাড়া করে মন্ট্রিয়ল পৌঁছতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। ওর সব মালপত্র ওর বাসার সামনে রাস্তার পাশে নামিয়ে দিয়ে ভ্যান ড্রাইভার বিদায় নিল। সুজাতা পড়ল মহাবিপদে। এতসব মালপত্র টেনে ওর এপার্টমেন্টে পৌঁছাবে কে? অফিসের একজন সহকর্মী উপস্থিত ছিল বটে ওখানে, কিন্তু মালামাল তো বহু এবং ভারী। কি করি! ওদিকে রাতও বাড়ছে। ঠিক এই সংকটকালে উদয় হলো দুই যুবকের। ওরা জানতে চাইলো কোন সাহায্য লাগবে কিনা।

কানাডায় white society ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে ইমিগ্রেন্টদের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে। ছবি : টরন্টো স্টার

সুজাতা ওর প্রয়োজনটা ওদের কাছে বর্ণনা করলো। সব শুনে ওরা বললো, নো প্রোব্লেম। আমাদেরকে আপনার এপার্টমেন্টে নিয়ে চলুন, দেখে আসি অবস্থাটা। অফিসের সেই সহকর্মীর হাতে এপার্টমেন্টের চাবি। সেই লোকটা যুবক দু’টির একটিকে সংগে নিয়ে দরজা খুলে লাইট জ্বালিয়ে সব দেখিয়ে আনলো। তারপর ওরা টানাটানি করে সব মালপত্র বেডরূম, লিভিংরূম ও কিচেনে ফ্লোরে রেখে আসলো। সবশেষে জিজ্ঞাসা করলো, “আপনাকে দেখে তো বাংগালী বলে মনে হচ্ছে। আপনি কি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন? আমরা দু’জন বাংলাদেশী।”

সুজাতা জানালো যে সে বাংগালী নয় তবে ওর দাদা বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার অধিবাসী ছিলেন বহু যুগ আগে। বর্তমানে ওরা ক্যানাডিয়ান। আরো জানালো যে সে মিসিসাগা থেকে এসেছে ওর হেড অফিসে কাজে যোগ দেয়ার জন্য।

এই পর্যায়ে যুবক দু’টির একজন বলল ঃ “রাত তো বেশ হলো। এবার কি খাবেন বলুন। আমরা দু’জনই আপনার নিকটস্থ একটা রেস্টুরান্টে কাজ করি। আমাদের কাজের শিফট শেষ হয়েছে। বাড়ি যাচ্ছি। আপনি কি মুসলিম? হালাল ফুড আনতে হবে?”

সুজাতা বললো, “না হালাল ফুড না হলেও চলবে, আমি একজন খৃষ্টান, আমি মুসলিম নই।”

উত্তর শুনে সেই যুবক তার রেস্টুরান্টের দিকে পা বাড়ালো। অল্পক্ষণ পরই ব্যাগভর্তি প্রচুর খাবার হাতে নিয়ে ফিরে এলো। বললো, “এই নিন ফুড। আপনাদের দু’জনের জন্য ডিনার, সকালের জন্য আপনার ব্রেকফাস্ট, এবং দুপুরের জন্য লাঞ্চ। এখন খেয়েদেয়ে নিশ্চিন্ত মনে ঘুম দিন। আগামীকাল এক সময় এসে আপনার খবর নিয়ে যাবো। গুড নাইট।”

সুজাতা বললো, “দাদাজী (সে আমাকে দাদাজী বলে ডাকে), ওরা তো চলে গেলো, কিন্তু আমরা দু’জন তো অভিভূত, হতবাক! স্বপ্নের মত এসব কি ঘটে গেল এতক্ষণ ধরে! এই মন্ট্রিয়ল শহরে স্বপ্ন দেখলাম না তো? অপরিচিতের জন্য এমন কষ্ট স্বীকার ও উদারতা তো অবিশ্বাস্য ব্যাপার! তোমরা বাংলাদেশীরা এত ভালো, দাদাজী?”

শুনে বললাম, “সব বাংলাদেশীই এমন উদার এবং সাহায্যকারী এমনটা দাবী করা যাবে না তবে হ্যাঁ, আমরা অন্যের আপদে-বিপদে সাহায্য-সহায়তা করে থাকি বটে। যুবক দু’টিকে ধন্যবাদ তো জানাবেই, তবে আরো thanks জানাও তোমার God-কে এই জন্য যে তাঁর দয়াতেই তোমার এই সংকট থেকে তুমি সহজে মুক্তি পেয়েছিলে, তিনিই তোমাকে সাহায্য করার জন্য ঐ দুই বাংলাদেশীকে সঠিক সময়ে তোমার সামনে হাজির করেছিলেন। মনে রেখো ”Life is full of surprises”

সেই সহৃদয় ও পরোপকারী দুই বাংলাদেশী যুবকের জন্য আমি গর্বিত বোধ করছি। তোমরা বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করেছো। ধন্যবাদ তোমাদের।

– জুলাই ২, ২০২২  মিসিসাগা

Ellen-এর gift

চার-পাঁচ দিন আগে downtown যাবার উদ্দেশ্যে বাসে উঠে যে সীটটাতে বসলাম সেখানে ঠিক আমার সামনে বসেছিল walker-এ ভর-দেয়া বৃদ্ধা এক সাদা মহিলা। আমিও walker নিয়ে চলাফেরা করি। আমার walker এবং সেই বৃদ্ধার walker মুখোমুখি। সে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো। তারপর সে টিনের তৈরী, পেছনে safety pin লাগানো গোলাকৃতি pink color একটা clip আমার দিকে বাড়িয়ে ধরলো, বললো: This is for you to remember me! আমি তো অবাক! জানি না শুনি না এক মহিলা আমাকে gift দিচ্ছে তাকে স্মরণ রাখার জন্য!

প্রতিবাদ না জানিয়ে সেটাকে গ্রহণ করলাম। বললাম, Thanks! But who should I remember? I don’t know your name!

মুখভরা নকল দাঁতের হাসি ছড়িয়ে বৃদ্ধা বললো: Ellen. Ellen is my name. Not very difficult to remember, eh?

বললাম: No, not very difficult. তারপর সেটাকে আমার লধপশবঃ-এর পকেটে রাখতে রাখতে আবার বললাম, Thank you, Ellen.

বৃদ্ধা ততক্ষণে দু’চোখ বুজে বাসের চলার ঝাঁকুনি খেতে খেতে ঘুমিয়ে পড়েছে। -জুলাই ১৪, ২০১৯

It’s important to have someone who loves you

গত সপ্তাহে একটা বইতে পড়লাম যে Alzheimer’s disease -এ আক্রান্ত বৃদ্ধা মা তার অতীত-বর্তমানের সব স্মৃতিই হারিয়ে অসহায় অবস্থায় Old Age Home-এ মৃত্যুর প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন। নিকটাত্মীয়, এমনকি নিজের সন্তানদেরও চিনতে পারেন না। জিজ্ঞাসা করেন: তুমি কে? তোমার নাম কি?

আবার যখন স্মৃতিটা কখনো ফিরে আসে ক্ষণিকের জন্য তখন তার বেডের পাশে উপস্থিত লোকদের চিনতে পারেন, নামও বলতে পারেন। তেমনি এক মূহুর্তে তার পাশে বসা ছেলেটিকে নাম ধরে ডাকলেন, বললেন: Billy, how are you? I love you.

Billy কাঁদতে কাঁদতে বলল: I love you too, mom.

শুনে বৃদ্ধা বললেন: Billy, it’s important to have someone who loves you.

এবং এর পরই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন তিনি। -অকটোবর ১৬, ২০১৯

WHITE SHIFT

Europe, USA, Canada, Australia and New Zealand. বহু অতীত থেকেই ওগুলো White-দের দেশ এবং Christian-দের দেশ। কিন্তু দেশগুলোর economic progress এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মত White লোকবল ওদের নেই। তাই প্রতি বছর regular immigration process-এর মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ লোক নিতে হচ্ছে। মানবতার খাতিরে millions of refugees-ও গ্রহণ করতে হচ্ছে। অথচ সেসব immigrants and refugee-রা white নয়, ওরা blacks and non-whites. ওদের ধর্মও ভিন্ন ভিন্ন- ওরা Muslim, Hindu, Sikh, Buddist অথবা অন্য কোন ধর্মাবলম্বী। ওরা সেই সব দেশে স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে সাদা খৃষ্টান মেয়েদেরকে বিয়ে করছে, সাদা খৃষ্টান পুরুষেরা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী non-white নারীদেরকে বিয়ে করছে। এতে দেশে দেশে mixed race, mixed religious belief, mixed language, food, dress and culture-এ দেশ ছেয়ে যাচ্ছে। ফলে নিজেদের দেশেই white society ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে। যতদিন যাবে, এই mixing বেড়েই চলবে, একটা mixed race-এর সৃষ্টি হচ্ছে। এই যে বিরাট পরিবর্তনের ঢেউ ধেয়ে চলেছে প্রবল বেগে এ নিয়ে white society’র নেতৃস্থানীয় রাজনীতিবিদ ও সমাজনীতিবিদ পন্ডিতগণ চিন্তিত। ক্রমে ওদের নিজস্ব white সত্বা হারিয়ে নিজ দেশে পরবাসী হওয়ার সমূহ আশংকা দেখা দিয়েছে।

White countries-এর শীর্ষ স্থানীয় নেতারা কি ভাবছেন সেই সম্পর্কে গবেষণামূলক গ্রন্থ, ERIC KAUFMANN-এর রচিত WHITE SHIFT (618 pages) এ বিষয়ে অতি চমৎকার একটি বই। USA-এর ABRAMS Press ২০১৯ সনে বইটি পাবলিশ করেছে। -অক্টোবর ২৪, ২০১৯

অক্লান্ত কর্মী Bob

Bob Aaroe (বব্ এরো). White Canadian.  বয়স ৭০-এর কাছাকাছি। বেশ বড়সড় একটা দেহের মালিক সে। সদাহাস্য মুখ। আমাদের সিনিয়র্স রেসিডেনশিয়াল বিল্ডিংয়ের Tenants’ Association-এর President. বিল্ডিংয়ের নীচের তলার বাসিন্দা। দরজায় চাবি দেয় না কখনো, কেউ knock করলেই ভেতর থেকে আহ্বান শোনা যায়, please come on in. ছ’তলা বিল্ডিংয়ের রেসিডেন্টের সংখ্যা প্রায় ১৬০জন, আমাদের বয়স ৬৫-৯৬। এদের মাঝে ৪০ জন Walker এবং ৫ জন Wheelchair-এর উপর নির্ভরশীল চলাফেরার জন্য। কিছু আছেন প্রায় শয্যাশায়ী।

রেসিডেন্টদের recreation-এর জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে নানা ধরনের প্রোগ্রাম চালু থাকে, যথা BBQ Dinners, Christmas Banquet, New Year’s Eve Party, Movie Nights, Bingo Nights, Tea Parties, and many others, যার জন্য দরকার টাকাপয়সা। সেজন্য চাই ক্রমাগত ফান্ড রেইজিং প্রচেষ্টা এবং সেই দায়িত্বটা প্রেসিডেন্টের। বিরামহীন প্রচেষ্টা।

বিনা পারিশ্রমিকের প্রেসিডেন্ট, কিন্তু তার কাজের এবং ব্যস্ত তার কোন শেষ নেই, সপ্তাহে সাত দিন। Association-এর মেম্বার সংগ্রহ করা (বার্ষিক ফি মাথাপ্রতি ৫ ডলার), ফান্ড রেইজিংয়ের জন্য বছরব্যাপী lottery tickets এবং raffle tickets বিক্রি করা Bob-এর দায়িত্ব।

আমাদের বিল্ডিংয়ের Lobby-তে Entrance-এর পাশে বড় একটা folding table-এ খাতাপত্র রেখে দু’টি প্লাস্টিক চেয়ার পেতে রেসিডেন্টদের আসা-যাওয়ার পথে hi-hello-how are you? বলে greetings জানিয়ে সে টিকিটগুলো বিক্রির আবেদন জানায় সপ্তাহে দু’দিন। এ ব্যাপারে অন্য একজন রেসিডেন্টের সাহায্য নিয়ে থাকে বরাবরই। আমরা হাসিমুখে তাকে সাহায্য করে থাকি।

আমাদের হাউজিং কর্পোরেশান এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সংগে আর্থিক ও আনুষংগিক সাহায্যের জন্য যোগাযোগ রাখা, executive committee-গুলোর সংগে প্রয়োজনীয় মিটিং করা, Association -এর বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব রাখা, annual general meeting করা। তাছাড়া আছে নানা প্রয়োজনে বিল্ডিংয়ের রেসিডেন্টদের সংগে যোগাযোগ রাখা চিঠি ও ফোনের মাধ্যমে। চিঠি লেখা ও প্রত্যেক রেসিডেন্টের এপার্টমেন্টে সেটা পৌঁছে দেয়া। এই কাজটা Bob একাই করে থাকে, তবে প্রয়োজনবোধে কখনো অন্য কোন রেসিডেন্টের সাহায্যও গ্রহণ করে। সব লেখালেখি সে করে তার নিজস্ব Computer-এ, multiple copies করতে হলে আমাদের নিকটস্থ পাবলিক লাইব্রেরীতে যায় সস্তায় ফটোকপিয়িং করাতে। চিঠিপত্র mailingI ও Bob-ই করে থাকে।

আমাদের বিল্ডিংয়ের সামনে বিস্তীর্ণ ফুলের বাগানেও তাকে নানা ধরনের tools হাতে নিয়ে গাছগুলোর পরিচর্যা করতে দেখা যায়।

আমাদের রেসিডেন্টরা সবাই Bob-কে ওর অমায়িক ব্যবহারের জন্য, helpful attitude- এর জন্য ভালোবাসে।

Bob-এর স্ত্রী অথবা সন্তান কেউ নেই। একাকী জীবন। কর্মজীবনে দায়িত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ছিল, এখন রিটায়ার্ড লাইফ, কিন্তু অলস-কর্মহীন নয়। তবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো এই যে এতো কর্মব্যস্ততা, তা সে চালিয়ে যাচ্ছে একটা motorized Wheelchair এ বসে কারণ ওর পা দু’টি কোন এক রোগের কারণে ওর দেহের ভার বহন করতে অক্ষম, সে দাঁড়াতে পারে না, হাঁটতে পারে না। চলাফেরার জন্য এই Wheelchair -টাই একমাত্র ভরসা। ওটা কখনো খারাপ হয়ে গেলে সেটা repairshop থেকে আবার চালু করে না আনা পর্যন্ত সে থাকে গৃহবন্দী,- তখন তার computer and phone-ই হয়ে দাঁড়ায় তার নিত্যসহচর।

Bob-কে ওর daily bathing, cleaning, dress changing ইত্যাদি করিয়ে দেয় সরকার নিযুক্ত Personal Support Workers. Wheelchair-এ বসেই সে kitchen-এ cooking, cleaning ইত্যাদি করে থাকে। Cigarette তার একাকীত্বের সংগী। এত বড়ো একটা physical handicap থাকা সত্বেও Bob হার মানেনি, হাসিমুখে সব challenge-এর মুকাবিলা করে যাচ্ছে। শাবাশ Bob! জুন ৩০, ২০২০

ফারহানা, হাজরা ও দ্রাষ্টি

ফারহানা

মিসিসাগাতে আমাদের হাউজিং বিল্ডিংয়ের নিকটস্থ Plaza-তে যে ফার্মেসীটা রয়েছে তাতে দু’টি বাংলাদেশী যুবতি কাজ করে। ফারহানাকে দিয়ে শুরু করি। সে একজন ফার্মাসিস্ট। বয়স ৩০-এর কাছাকাছি। বিবাহিতা, দুই বছর বয়সের এক কন্যার মাতা। একে তো পূর্ণ হিজাবী মেয়ে, তদুপরি Covid-19 এর mandatory face mask পরার ফলে ওর মুখও দেখা যায় না। বর্তমানে সে হয়ে গেছে একজন নিকাবীও। কথাবার্তা, ব্যবহার ভদ্র ও শালীন। বাংলা জানে, বলতে পারে কিন্তু লিখতে-পড়তে জানে না কারণ ওর জন্ম ও পড়াশোনা সাউদি এরাবিয়াতে। মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই টরন্টোতে বাস করেন। ওর হাজবেন্ড বাংগালী কিন্তু সেও বাংলা পড়তে-লিখতে পারে না, শুধু বলতে পারে। সে বাড়ীতে বাংলা লেখাপড়ার চর্চা নেই।

হাজরা

দ্বিতীয়টির নাম হাজরা। বয়স ২৩ বছর। Pharmacy course-এ পড়াশোনা করছে। এই ফার্মেসীতে কাজ করে পার্টটাইম। ২০২১-এ ফাইনাল দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলা লিখতে-পড়তে পারে না, তবে বলতে পারে। জন্ম ক্যানাডায়। ওর বাংলা বলার ধরনটা খুব মজার। আমরা স্বামীস্ত্রী দু’জনকেই সে চেনে Covid-19 পূর্ববর্তী দিনগুলো থেকেই যখন face mask পরার কোন প্রয়োজন ছিলো না কারুরই। মুখ দেখা যেতো।

প্রথম পরিচয়ের দিনে আমরা দু’জন বাংলাতে কথা বলছি শুনে সে নিজেই এগিয়ে এলো। বললো, ও তোমরা দু’জন বাংগালী? আসসালামু আলাইকুম। আমার নাম হাজরা। আমিও বাংগালী। বাংলা বলতে পারি। তবে তোমাদের মত নাইস বাংলা না। মাবাবার মুখে শুনে শুনে easy কথাগুলো শিখতে পেরেছি। বলতেও পারি। লেখতে-পড়তে জানি না। আমার  জন্ম ক্যানাডায়, বাড়ি বাংলাদেশে। বাবা সাউদি এরাবিয়াতে জব করে। আমি টরন্টোতে মায়ের সংগে থাকি। আমার একটা বড় বোন ও একটা ছোট ভাই আছে।

সেইদিন থেকে পরিচয়ের শুরু। ওর মুখে “তুমি”, “তোমরা” শুনতে বেশ মিষ্টি শোনায়। উত্তম ব্যবহার হাজরার। ফার্মেসীতে কোন কাজে গেলে এবং সেই সময়ে ওর কাজ থাকলে দৌড়ে আসে, সালাম জানায়, সাহায্য করে। হাজরা হিজাবী-নিকাবী নয় তবে সে নামায পড়ে, জানালো সে। ওর ব্যবহারে আমরা মুগ্ধ।

একদিন বললাম, জানো হাজরা, তোমার বয়সের আমাদের একটা নাতনি আছে। আরো দু’টি আছে, ওরা ওর বড়। পরিচয়ের শুরু থেকেই হাজরা আমাদের দু’জনকে ডাকে uncle-aunty. এখন ওর বয়সী নাতনি আছে শুনে বললো, তাহলে তো তোমাদের আর uncle-aunty ডাকা চলবে না, নানা-নানী দাদা-দাদী ডাকতে হবে। ভেবে দেখি।

আরো কিছুদিন পর ফার্মেসীতে আবার গেলাম ওষুধ আনতে। হাজরা দৌড়ে এসে খবর দিলো You know what, uncle? আমি না গতকাল থেকে খালা হইছি, আমার বড় বোনের cute একটা মেয়ে হইছে। I am so excited!

এই হলো হাজরা। ওকে স্নেহ না করে উপায় আছে?

দ্রাষ্টি

সেই একই ফার্মেসীতে অপর একটি যুবতি assistant হিসাবে কাজ করে। ওর নাম “দ্রাষ্টি” (DRASTI). শুনে বললাম, আমাদের বাংলা ভাষায় একটা শব্দ আছে “দৃষ্টি” যার অর্থ eye sight. তোমার দ্রাষ্টি নামটার অর্থ কি?

আমার কথা শুনে সে হেসে দিলো। বললো, আমার নামটারও ঐ একই অর্থ eye sight. আমার নামটা ইন্ডিয়ার গুজরাটি ভাষায়। আমি একজন গুজরাটি মেয়ে।

তারপর যোগ করলো, Uncle, আপনার সুবিধার জন্য আজ থেকে আমার নাম “দৃষ্টি”। আপনি এখন থেকে আমাকে দৃষ্টি নামেই ডাকবেন। OK, uncle?

বললাম, আমাকে এত বড় সম্মান দেখানোর জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, দৃষ্টি। আমি খুব খুশী।

এবার ওর গুজরাটি ভাষায় ওকে জিজ্ঞাসা করলাম, কেম্ছ? [কেমন আছ?]

খুব খুশী হয়ে মাথাটা নাড়াতে নাড়াতে জবাব দিলো, মজামা [আমি ভালো আছি।] জুলাই ৮, ২০২০

(চলবে)

সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা