মানুষ শেখ হাসিনা কেমন!

জসিম মল্লিক

১ : আমার অনুভূতিঃ

একজন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে  বা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসাবে না একজন কন্যা হিসাবে, একজন মা হিসাবে, একজন বোন হিসাবে অথবা একজন শুধুই বাংলার সাধারণ নারী হিসাবে শেখ হাসিনা কেমন মানুষ? শেখ হাসিনার ব্যাপারে আমার অনেক কৌতুহল। এর কারণ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় প্রধানমন্ত্রী তিনি, একটি দলের প্রধান তিনি, সবচেয়ে বেশি প্রতিকুলতা অতিক্রমকারী একজন ব্যাক্তি, সবচেয়ে সফল এবং সবচেয়ে ক্ষমতাবান নারী শেখ হাসিনা। শুধু বাংলাদেশেই না বিশ্বের অন্যতম আলোচিত, অন্যতম ক্ষমতাবান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাই তার ব্যাপারে আমার অনেক কৌতুহল। শেখ হাসিনার মতো এতো বর্নাঢ্য, এতো দুরদর্শী, এতো ক্যারিশম্যাটিক জীবন আর কারো নাই। আবার তার মতো  এতো দুঃখী মানুষও আর নাই। তিনি একমাত্র ব্যক্তি তিনি যিনি দেশের জন্য পুরো পরিবারকে হারিয়েছেন, নিজে বার বার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছেন। নির্মোহভাবে চিন্তা করলে খুবই অবাক একজন মানুষ শেখ হাসিনা। ২৮ সেপ্টেমম্বর তার জন্মদিন।

শেখ হাসিনাকে আমি দূর থেকে কয়েকবার দেখেছি। প্রথমবার দেখি ১৯৮১ সালে। সে বছর তিনি নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে সদ্যই দেশে ফিরেছেন। তার আগে তিনি দিল্লী থাকতেই আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সে বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারে তিনি বরিশাল এসেছিলেন। ড. কামাল হোসেন ছিলেন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী। বরিশাল বেলস পার্কে শেখ হাসিনা বক্তৃতা করেছিলেন মনে আছে। সেই প্রথম দেখা শেখ হাসিনাকে। এরপর এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যম্পাসে দেখেছি কয়েকবার। দেখতাম শিক্ষার্থীরা কিভাবে তাকে ঘিরে ধরত, পায়ে হাত সালাম করত। কয়েকবার তার জনসভায় গিয়েছি। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আর পল্টানের জনসভায় তার বক্তৃতা শুনেছি। তিনি সত্য বলতে পিছপা হননা এই ব্যাপারটা আমাকে মুগ্ধ করত। কাউকে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যান না। তার সাহসী ভূমিকা সবসময় অনুসরনীয়। শেখ হাসিনাকে আমি কখনও একদম সামনা সামনি দেখিনি। কখনও দেখতে পারব কিনা কে জানে। তিনি যদি কখনও  প্রধানমন্ত্রীত্ব ছেড়ে দিয়ে অবসরে যান তখন একদিন তার সাথে দেখা করব। তখন কোনো প্রটোকল থাকবে না। সিকিউরিটির ব্যারিকেড থাকবে না। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

আমি বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শকে বুকে ধারণ করি। তিনি জন্মেছিলেন বলেই আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি। পরাধীনতার শৃংখল থেকে মুক্তি দিয়েছেন আমাদের। তিনি জন্মেছিলেন বলেই আমরা সবুজ পাসপোর্ট পেয়েছি। নিজেদের আইডেন্টি পেয়েছি। একটা জাতির একটা আইডেনটিটি লাগে। এই যে আমরা দেশ বিদেশ ছড়িয়ে পড়েছি, আমাদের সন্তানেরা বিদেশে সাফল্য অর্জন করছে এটা কোনোদিন সম্ভব হতো না যদি একজন বঙ্গবন্ধু এই ধরায় না আসতেন। আমরাও আমেরিকান, ব্রিটিশ, জাপানী বা কানাডিয়ান হতে পারতাম না। তারই কন্যা হচ্ছেন শেখ হাসিনা। তাই আমার তার ব্যাপারে অনেক কৌতুহল। আমার আরো বেশি কৌতুহল এই কারণে যে তিনি একজন লেখকও। এতো ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি লেখেন। অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। অবাক ঘটনা বটে। তিনি সংসার করেন, সন্তানদের, আত্মীয়দের, বন্ধুদের সময় দেন, আতিথেয়তা করেন। ক্ষমতার বলয় থেকে বের হয়ে এসে কখনও কখনও সাধারন একজন মা হয়ে উঠেন, বোন হয়ে উঠেন। জীবনের এই দুই দিক তিনি কিভাবে সামাল দেন এটা জানার আমার খুবই আগ্রহ।

লুৎফর রহমান রিটনের এক লেখা পড়ে জেনেছি তিনি তাঁকে একবার ডেকে ভাপা পিঠা খাইয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার একটি ছড়া শুনে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। গুনিজনদের তিনি সম্মান করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল ছাড়িয়ে তিনি সমাজের বয়োজোষ্ঠদের যেভাবে মর্যাদা দেন সেটা বিরল ঘটনা। লেখক, সাংবাদিক, নাট্যশিল্পী, খেলোয়ারদের সাথে তিনি মিশে যান অনায়াসে। নিজের হাতে আপ্যায়ন করেন,  সাহায্য, সহযোগিতা করেন।  অন্যের দুঃখে  দুঃখিত হন। তিনি তো একজন মা হারা, বাবা হারা, ভাই হারা নারী। এই বেদনা বুকে চেপে তিনি অন্যের দুঃখে কাতর হতে পারেন। এসব গুনাবলী তাকে অনন্য করেছে। প্রধানমন্ত্রীর বাইরে গিয়েও তিনি যে একজন মমতাময়ী নারী তার শত শত প্রমাণ দেখতে পাই প্রতিনিয়ত।

প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে তিনি নিজেকে নিয়ে কি ভাবেন! রাতে যখন ঘুমাতে যান তখন শুধু দেশের কথাই চিন্তা করেন, দেশের মানুষের কল্যানের কথাই ভাবেন নাকি নিজের সুখ দুঃখের কথাও ভাবেন! কাজের বাইরে তার জীবন কেমন! তিনি কখন পত্রিকা পড়েন! কখন বই পড়েন, কখন লেখেন, কখন সিনেমা দেখেন! কখন নাটক দেখেন! কখন খেলা দেখেন! তাঁকে আমার মাঝে মাঝে খুউব সিম্পল একজন নারী মনে হয় যখন তিনি বড় বড় দেশে বিভিন্ন ফোরামে দেশীয় শাড়ি পড়ে বৈঠক করেন। যখন তিনি খেলায় সাফল্য পেলে খেলোয়ারদের মুখে মিষ্টি তুলে দেন তখন আমার চোখ ভিজে যায়! মাঝে মাঝে খেলা দেখতে মাঠেও যান। খেলোয়ারদের উৎসাহিত করেন। কিভাবে এটা সম্ভব! এমনি অসংখ্য ঘটনা আছে যা লিখে শেষ করা যাবে না।

১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি সর্বজ্যেষ্ঠ। আজিমপুর গার্লস হাইস্কুল থেকে স্কুল পর্যায়ের শিক্ষা সমাপন করে তিনি তৎকালীন গভর্নমেন্ট ইন্টারমিড থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৬৬-৬৭ মেয়াদে কলেজ ছাত্রী সংসদের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ সালে তিনি পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি বরাবর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যের নৃশংস হত্যাকান্ডের পর শেখ হাসিনা কিছুকাল জার্মানি ও ভারতে   স্ব-নির্বাসিত জীবন যাপন করেন।

২ : রাজনীতিতে আগমনঃ

১৯৮১ সালে শেখ হাসিনা তাঁর স্বামীর সঙ্গে নয়াদিল্লি অবস্থানকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। ওই বছর ১৭ মে ৬ বছরের নির্বাসিত জীবন শেষে তিনি দেশে ফিরে আসেন এবং তখন থেকে দলের সভানেত্রী পদে আসীন আছেন। সামরিক একনায়ক জেনারেল এইচ.এম এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য ১৯৮৩ সালে তিনি পনেরো দলের একটি জোট গঠন করেন। ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে তিনটি আসন থেকে বিজয়ী এবং তৃতীয় জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচিত হন।

১৯৯০ সালের গণআন্দোলনে তাঁর ৮-দলীয় জোট এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ আন্দোলনের ফলে প্রেসিডেন্ট এরশাদ ক্ষমতাচ্যুত হন। জোটসমূহের রূপরেখা অনুযায়ী একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরে এরশাদ বাধ্য হন। এরপর ১৯৯১ সালের ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত সংসদীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আসন সংখ্যার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে এবং শেখ হাসিনা পঞ্চম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৯১ সালের আগস্ট মাসে দেশে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থার পরিবর্তে একটি সংসদীয় পদ্ধতির শাসনব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের লক্ষ্যে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাশ করার ক্ষেত্রে সংসদীয় ঐকমত্য গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখেন।

একটি নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও অবাধ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা সম্বলিত বিধান সংবিধানে সংযোজনের দাবিতে শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালে আন্দোলন শুরু করেন। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের যেসব রাষ্ট্রে সংসদীয় গণতন্ত্র চালু আছে সেগুলোর জন্য এটা ছিল একটি অনন্য রাজনৈতিক ধারণা। এ আন্দোলনে তিনি জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীসহ আরো কয়েকটি বিরোধী দলকে সহযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করেন। বিএনপি সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবি মেনে নিয়ে ১৯৯৬ সালের মার্চ মাসে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল পাশ করে।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আর্বিভূত হয়। শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ২৩ জুন দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সমর্থন নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেন।

১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য ছিল: ১৯৯৬ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের সাথে স্বাক্ষরিত ৩০ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি, ১৯৯৭ সালের ডিসেম্বর মাসে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি, খাদ্যশস্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, প্রতিবেশী রাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নয়ন এবং ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতুর (বঙ্গবন্ধু সেতু) নির্মাণ সম্পন্ন করা।

মেয়াদশেষে ২০০১ সালের ১ অক্টোবর বিচারপতি লতিফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাত্র ৬২টি আসন লাভ করে। এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে চারদলীয় জোট দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। শেখ হাসিনা অষ্টম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী নির্বাচিত হন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে একটি জনসভায় বক্তৃতাকালে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসীদের গ্রেনেড হামলা থেকে অতি অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পেলেও মারাত্মকভাবে আহত হন। সংসদীয় নির্বাচনে বিএনপি জোটকে মোকাবেলার জন্য তিনি ২০০৫ সালে ১৪-দলীয় জোট এবং ২০০৬ সালে মহাজোট গঠন করেন। ২০০৭-০৮ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে তাঁর বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি দুর্নীতির মামলা রুজু করা হয় এবং তাঁকে প্রায় একবছর কারাবন্দী রাখা হয়। এরপর ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট ভোট বিপ্লবের মাধ্যমে ২৬২টি আসনে (আওয়ামী লীগ ২৩০) বিজয়ী হয়। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো শপথ গ্রহণ করেন।

৩ : পুরষ্কার, লেখালেখি ও তার সরকারের সাফল্যঃ

রাজনীতি ও বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিশ্বের অনেক প্রতিষ্ঠান ও রাষ্ট্র শেখ হাসিনাকে সম্মানসূচক পুরস্কার প্রদান করেছে। তাঁকে প্রদত্ত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মধ্যে রয়েছে: ইউনেস্কো’র হুফে বোয়নি শান্তি পুরস্কার, মাদার তেরেজা পুরস্কার, মহাত্মা গান্ধী পুরস্কার, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার সেরেস পদক, পার্ল এস বাক পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি, জাপানের ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি, যুক্তরাজ্যের ডান্ডিতে অবস্থিত অ্যাবারটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব ফিলসফি ডিগ্রি, ভারতের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট সহ দেশিকোত্তম উপাধি , অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি এবং ব্রাসেলসের ক্যাথলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডক্টর অব লজ ডিগ্রি। বিশ্ব শান্তি ও উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাটে অবস্থিত ব্রিজপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ২০০০ সালে সম্মানসূচক ডক্টর অব হিউমেন লেটারস প্রদান করে।

শেখ হাসিনা অনেকগুলো গ্রন্থ রচনা করেছেন। রচিত গ্রন্থের মধ্যে আছে ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, চবড়ঢ়ষব ধহফ উবসড়পৎধপু, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, গরষবং ঃড় এড় এবং বিপন্ন গণতন্ত্র লাঞ্ছিত মানবতা। তাছাড়া দেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়াদি নিয়ে তিনি অসংখ্য নিবন্ধ লিখেছেন। তিনি বেশ কিছু সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও জড়িত এবং দেশের শীর্ষস্থানীয় ক্রীড়া সংগঠন আবাহনী ক্রীড়াচক্রের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। শেখ হাসিনাকে তাঁর একনিষ্ঠ অনুসারীরা ‘জননেত্রী’ খেতাবে ভূষিত করেছেন।

রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার অনেক সাফল্য। অনেকগুলো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন। এগুলো সমাপ্ত হলে দেশের চেহারা বদলে যাবে। প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বাড়বে। পদ্দা সেতু ছাড়াও রয়েছে রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ কেন্ত্র, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ, পায়রা ও সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, পদ্মাসেতুতে রেল, দোহাজারি রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত সিঙ্গল লাইন ট্রাক নির্মাণ প্রভৃতি।একজন সফল প্রধানমন্ত্রী তিনি। আন্তর্জাতিক পরিসরেও তার ভূমিকা একটি শক্তিশালী দেশের প্রধানমন্ত্রীর মতোই। সত্যি কথা বলতে তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। এটাই আমাদের বিদেশে মাথা উঁচু করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তার মধ্যে অন্যতম।

১৫ আগষ্ট গ্রেনেড হামলায় তাঁকে হত্যা চেষ্টা একটি নির্মম ও জঘন্য ঘটনা হিসাবে চিরকাল ইতিহাসে লেখা থাকবে। অনেক ষড়যন্ত্রের পরও পদ্মা সেতু নির্মাণ সারাবিশ্বে একটি মডেল হিসাবে গন্য হবে। বিদেশে বাংলাদেশের নাম এখন সম্মানের সাথে উচ্চারিত হয়। যে কেউ বাংলাদেশের নাম বললে চেনে। শেখ হাসিনাকে চেনে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সোনারবাংলা গড়ে তোলার ব্রত নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি। শেখ হাসিনা আমাদের জন্য বিরাট গর্বের। আমি তার দীর্ঘ জীবন ও সুস্বাস্থ্য কামানা করি।

(তথ্যসূত্রঃ উইকেপেডিয়া)

লেখকঃ জসিম মল্লিক, লেখক ও সাংবাদিক, টরন্টো, কানাডা।