‘কানাডা আবিষ্কার’ করেন কে?

কুইবেক বলছে, আদিবাসী নয়, ফরাসী অভিযাত্রী

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : কুইবেকের লোকেরা “কানাডা আবিষ্কারের” কৃিতত্ব জ্যাক কার্টিয়ারকে – এমনকি ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে দিতেই বেশি আগ্রহী, যেখানে দেশের বাকি অংশ আদিবাসী মানুষদের দিকে ইঙ্গিত করেন। এক নতুন সমীক্ষায় এমনই তথ্য জানা যাচ্ছে। খবর দি কানাডিয়ান প্রেস এর। প্রতিবেদক স্টেফেনি টেলর।

সমীক্ষার এই ফলাফলের ভিত্তি হলো অ্যাসোসিয়েশন ফর কানাডিয়ান স্টাডিজের পক্ষে জরিপ প্রতিষ্ঠান লেগারের এক ওয়েবসাইট ভিত্তিক গবেষণা। গত ৮ থেকে ১০ জুলাইয়ের মধ্যে পরিচালিত এই গবেষণায় দেশের ঐতিহাসিক বয়ান সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়।

সমীক্ষায় দেখা যায়, “কানাডা কে আবিষ্কার করেছেন” সরাসরি জানতে চাওয়া হলে, সামগ্রিকভাবে ২১ শতাংশ উত্তরদাতা আদিবাসী জনগণের কথা বলেন। ১৬ শতাংশের মত উত্তরদাতা ফরাসী অভিযাত্রী জ্যাক কার্টিয়ারের নাম বলেন, যিনি ১৫৩৪ সাল থেকে পরবর্তী সময়ে কয়েকবার কানাডার উপকূল ও নৌ-পথে অভিযানে এসেছেন।

সমীক্ষায় বলা হয়, অন্য ১৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তারা জানেন না।

৪৬ শতাংশ কুইবেকবাসী কানাডা আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেন কার্টিয়ারকে, আর ১১ শতাংশ আদিবাসীদেরকে। ছবি : আইস্টক

এতে বলা হয়, অবশিষ্ট উত্তরদাতারা ভাইকিং, ক্রিস্টোফার কলম্বাস এবং স্যামুয়েল দ্য চ্যামপ্লেইনের মত বিভিন্ন নাম উল্লেখ করেন। স্যামুয়েল দ্য চ্যামপ্লেইন আরেকজন অভিযাত্রী যিনি কুইবেকের প্রতিষ্ঠা করেন এবং এই অঞ্চলে ফরাসী উপনিবেশ স্থাপনে সহায়তা করেন।

সমীক্ষার ফলাফল যখন বয়সের ভিত্তিতে আলাদা করে দেখানো হয় তখন, ১৮ থেকে ৫৪ বছর বয়সীরা ৫৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের চেয়ে বেশি সংখ্যায় আদিবাসী মানুষের কথা বলেন।

“আবিষ্কার” এর ধারণাটি এমনই যে, এটি বিভিন্ন সময়ে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে, যেমনটা সবশেষে হয়েছে, অতি সম্প্রতি পোপ ফ্রান্সিসের কানাডা সফরের সময়ও।

৮৫ বছর বয়সী পোপ গত মাসে কানাডা সফর করেন। এসময় তার প্রতি বারবার আহবান জানানো হয়েছে যেন তিনি সেই ১৫ ’শ শতকে দেয়া তখনকার পোপদের কিছু আদেশের  (যেগুলি পেপাল বুলস নামে পরিচিত) নিন্দা জানান। ওইসব আদেশের মাধ্যমে এমন সব ভূখণ্ডে উপনিবেশ স্থাপনের অধিকার দেওয়া হয়েছিল যেগুলিকে বসতিহীন এলাকা বলে দাবি করা হয়। আসলে সেগুলি ছিল আদিবাসীদের আবাসভূমি।

সমীক্ষায় “কে কানাডা আবিষ্কার করেন” এই প্রশ্নটি কুইবেক ও অবশিষ্ট দেশের মানুষ কতটা ভিন্নভাবে দেখে সেটি উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, ৪৬ শতাংশ কুইবেকবাসী কানাডা

আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেন কার্টিয়ারকে, আর ১১ শতাংশ আদিবাসীদেরকে।

এর বিপরীতে ব্রিটিশ কলাম্বিয়া, আটলান্টিক কানাডা, প্রেইরি, আলবার্টা এবং অন্টারিওর উত্তরদাতাদের ২০ শতাংশ বা তারও বেশি সংখ্যক আদিবাসী জনগণকে এদেশের আবিষ্কারক বলে উল্লেখ করেন, আর এসব প্রদেশের প্রতিটিতেই ১০ শতাংশের কম মানুষ কার্টিয়ারের নাম করেন।

অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট জ্যাক জেডওয়াব বলেন, কুইবেকের মানুষের মধ্যে দেশকে ফরাসী ও ব্রিটিশ জাতির লেন্সের ভেতর দিয়ে দেখার একটা বড় প্রবণতা আছে বলে আপাতদৃষ্টে মনে হয়।

তিনি বলেন, “অথচ, বর্তমান কানাডার অবশিষ্ট অংশে তিনজন প্রতিষ্ঠাতার লেন্স দিয়ে দেখার ব্যাপারে আন্দোলন চলমান রয়েছে”। ওই তিন প্রতিষ্ঠাতার মধ্যে আদিবাসী জনগণও আছে।

তিনি আরও যোগ করেন, “কুইবেকের চেয়ে দেশের অবশিষ্টাংশে ওই পরিপ্রেক্ষিতের ওপর অধিকতর জোরালো আলোকপাত করা হয়।”

সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, কলম্বাসের প্রসঙ্গ উঠলে কুইবেকের ২০ শতাংশ উত্তরদাতা তাকে কানাডার আবিষ্কর্তা হিসাবে দেখেন, কিন্তু সেই তুলনায় সমীক্ষার আওতাধীন দেশের অন্যসব অঞ্চলে ১৫ শতাংশেরও কম উত্তরদাতা একইভাবে দেখেন।

জেডওয়াব বলেন, কলম্বাসকে এক্ষেত্রে উল্লেখ করার ঘটনাটি রীতিমত “উদ্বেগজনক।”

তিনি বলেন, “আমি জানি না, তারা কোথায় কী পড়ে, কিন্তু এটি স্পষ্ট যে, এরকম কিছু আপনি কানাডার কোনও ইতিহাস গ্রন্থে খুঁজে পাবেন না।”

সমীক্ষায় কানাডীয়দের এটাও জিজ্ঞাসা করা হয় যে, তারা কি বিশ্বাস করে যে, তারা অসমর্পিত ভূমিতে বসবাস করেন– এটা এমন ভূমি যেটি আদিবাসী জনগণ আইনগতভাবে কখনই সরকারের কাছে হস্তান্তর করেনি।

সব উত্তরদাতার মধ্যে ৬৬ শতাংশেরই জবাব ছিল, “না”, সে তুলনায় ৩৪ শতাংশ উত্তরদাতার জবাব ছিল “হ্যাঁ”।

সমীক্ষার আঞ্চলভিত্তিক ফলাফল অনুযায়ী, ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার প্রায় ৬০ শতাংশ মানুষ বলেন, তারা হস্তান্তর না করা আদিবাসীদের ভূখণ্ডে বসবাস করেন। এই সংখ্যা অন্য সব অঞ্চলের মধ্যে সর্বোচ্চ। তুলনায় ৪৪ শতাংশ মানুষ বলেন, তারা হস্তান্তর না করা ভূমিতে বসবাস করেন না।

সমীক্ষায় দেখা যায়, হস্তান্তর না করা ভূমিতে বসবাসের কথা সবচেয়ে কম স্বীকার করেন কুইবেকের মানুষ। সেখানে মাত্র ২০ শতাংশের মত উত্তরদাতা বলেন, তারা হস্তান্তর না করা ভূমিতে বসবাস করেন। তুলনায় ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতাই বিষয়টি অস্বীকার করেন।

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া অন্যান্য প্রদেশের মত নয়। এই প্রদেশের বেশিরভাগই অসমর্পিত ভূখণ্ড বলে বিবেচিত। ১৮৭১ সালে প্রদেশটি যখন কনফেডারেশনে যোগ দেয়, তখন এখানকার সরকার আদিবাসীদের স্বত্ব স্বীকার করেনি এবং তাদের সঙ্গে কোনওরকম চুক্তি সম্পাদনের প্রয়োজনও বোধ করেনি।