কানাডার প্রায় ৬০ লাখ মানুষ ২০২১ সালে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হয়

গত তিন বছরেও সমস্যার তেমন কোনও উত্তরণ ঘটেনি, গবেষকদের সতর্কবার্তা

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : ২০২১ সালে কানাডার প্রায় ৫.৮ মিলিয়ন মানুষ কোনও না কোনও ধরণের খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হন। গত আগস্ট মাসে প্রকাশিত টরন্টো ইউনিভার্সিটির গবেষকদের এক নতুন সমীক্ষায় এই তথ্য জানা যায়। এই পরিসংখ্যানে ১.৪ মিলিয়ন শিশুও অন্তর্ভুক্ত। খবর সিবিসি নিউজের।

কানাডায় পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা ২০২১ শিরোনামের ওই সমীক্ষায় বলা হয়, দেশের ১০টি প্রদেশের সব কয়টি মিলিয়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখে পড়া পরিবারের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৫.৯ শতাংশে। সমীক্ষায় পুরো মহামারিকাল ও তার পরবর্তী বর্তমান রেকর্ড পরিমাণ মূল্যস্ফীতির সময় পর্যন্ত দেশের প্রদেশগুলিতে খাদ্য নিরাপত্তহীনতার হার পর্যবেক্ষণ করা হয়।

গবেষকরা দেখেছেন, গত তিন বছরে সমস্যার খুব একটা উত্তরণ ঘটেনি।

টরন্টো ইউনিভার্সিটির টেমার্টি ফ্যাকাল্টি অব মেডিসিনের পুষ্টিবিজ্ঞানের প্রফেসর ভ্যালেরি তারাসুক বলেন, “কানাডায় স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার কোনও স্পষ্ট উন্নতি আমরা দেখতে পাইনি।”

গত মাসের শুরুর দিকে টরন্টোতে নতুন বেথার্স্ট-ফিঞ্চ কমিউনিটি ফুড স্পেস-এর উদ্বোধনকালে লোকেরা যখন খাবারের জন্য লাইন ধরেছে তখন নর্থ ইয়র্ক হারভেস্ট ফুড ব্যাংকের কর্মীরা তাজা খাবারের থলি সাজাচ্ছেন। (সাবাহ রহমান/সিবিসি)

সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, খাদ্য নিরাপত্তহীনতার ক্ষেত্রে প্রদেশগুলোর মধ্যে বড় ধরণের ব্যবধান রয়েছে; কুইবেকে ১৩.১ শতাংশ পরিবার থেকে শুরু করে আলবার্টায় ২০.৩ শতাংশ পরিবার পর্যন্ত নানা মাত্রায় খাদ্য নিরাপত্তহীনতা বিদ্যমান। আর সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তহীনতা ও গুরুতর খাদ্য নিরাপত্তহীনতার উভয়টি বিবেচনায় নিলে টরন্টোর অবস্থান হয় মাঝামাঝিতে। সমীক্ষায় বলা হয়, টেরিটোরিগুলির উপাত্ত এখনও পাওয়া যায়নি।

প্রুফ (PROOF) নামে পরিচিত প্রফেসর তারাসুকের গবেষণা দলটি স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার ২০২১ সালে সম্পাদতি কানাডিয়ান ইনকাম সার্ভের জন্য সংগৃহীত ৫৪ হাজার পরিবারের উপাত্ত ব্যবহার করে। গবেষকরা খাদ্য নিরাপত্তহীনতার সংজ্ঞায়ন করেন এভাবে, “আর্থিক সীমাবদ্ধতার কারণে অপর্যাপ্ত অথবা অনিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তি।”

অন্টারিওতে ২০২১ সালে প্রতি ছয়টির মধ্যে একটি বা ১৬.১ শতাংশ পরিবারের খাদ্য প্রাপ্তি ছিল অনিরাপদ, যা সংখ্যায় ২.৩ মিলিয়ন মানুষের সমান। একইভাবে এই প্রদেশের ৪.৬ শতাংশ বা দুই লাখ ৫৯ হাজার পরিবার মারাত্মক খাদ্য নিরাপত্তহীনতার মুখে পড়ে। এর অর্থ হলো, পরিবারের সদস্যরা কিছু বেলায় না খেয়ে থেকেছেন, খাওয়ার পরিমাণ কমিয়েছেন

অথবা টাকার অভাবে দিনের পর দিন কিছু না খেয়েই কাটিয়েছেন।

খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা অব্যাহত আছে, বলেন গবেষকরা

সমীক্ষা রিপোর্টের সার-সংক্ষেপে বলা হয়, “পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বস্তুগত বঞ্চনার স্মারক, এটি সামাজিক ও  অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার অন্যান্য সূচকের সঙ্গে জোরালোভাবে সম্পর্কিত। স্বল্প-আয়ের পরিবারগুলোর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার সম্ভাবনাও বেশি।”

গবেষকরা বলেন, খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার উচ্চ হার অব্যাহত রয়েছে এবং মানুষের স্বাস্থ্য ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার ওপর প্রভাবের দিক থেকে এটি “গভীর উদ্বেগের” বিষয়। তারা মনে করেন, মানুষের আয় যদি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে ব্যর্থ হয় তাহলে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরও মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

রিপোর্টের সার-সংক্ষেপে বলা হয়, “সমগ্র কানাডায় পারিবারিক খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার অব্যাহত উচ্চ হারে বিস্তার এবং এই রিপোর্টে উঠে আসা নাজুক পরিস্থিতির যে ধরণগুলি চিহ্নিত হয়েছে তা কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারগুলোর পক্ষ থেকে আরও কার্যকর, প্রমাণ-ভিত্তিক নীতিগত পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার দিকে আলোকপাত করে।

গবেষকরা চাকরির আয়ের ওপর নির্ভরশীল কিন্তু মৌলিক চাহিদা মেটাতে অক্ষম পরিবারগুলোর নাজুক অবস্থা দূর করা এবং শ্রমশক্তির অন্তর্ভুক্ত নয় এমন কর্মক্ষম বয়সের প্রাপ্তবয়স্কদের মৌলিক চাহিদা পূরণের মত আয়ের নিশ্চিয়তা বিধানের জন্য সরকারগুলো প্রতি আহবান জানিয়েছেন।