কানাডায় অবিবাহিত দম্পতি বাড়ছে

৪০ বছরে এদের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : আদমশুমারীর উপাত্তের এক নতুন সংযোজনে দেখা গেছে, কানাডীয় পরিবারগুলো এক সময়কার আদর্শ এককেন্দ্রীক পরিবার কাঠামো থেকে এখন সরে আসছে এবং তারা বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের (common-law partnerships) ভিত্তিতে সন্তানহীন পরিবার কাঠামো গড়ে তুলছে। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা গত জুলাই মাসে ২০২১ সালের জাতীয় আদমশুমারির ফলাফলপ্রকাশ করে। তাতে দেখা যায়, লিভ-টুগেদার করছেন এমন দম্পতিদের ২৩ শতাংশই অবিবাহিত। এই সংখ্যা শতকরা হিসাবে জি-৭ ভুক্ত অন্য সব দেশের তুলনায় বেশি। খবর নিকোল থমসন /দ্য কানাডিয়ান প্রেস।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার জনসংখ্যা বিষয়ক দফতরের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক নোরা গ্যালব্রেইথ বলেন, “৪০ বছর আগে ১৯৮১ সালে স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা যখন প্রথম অভিন্ন আইনের দম্পতিদের তথ্য সংরক্ষণ শুরু করে তখনকার চেয়ে এর বিপুল প্রবৃদ্ধি ঘটেছে; সেটি সংখ্যায় যেমন, তেমনই অনুপাতেও।”

“প্রকৃতপক্ষে ৪০ বছরে এদের সংখ্যা বেড়েছে পাঁচ গুণেরও বেশি। সেই তুলনায় বিবাহিত দম্পতির বিষয়টি বিবেচনায় নিলে তাদের প্রবৃদ্ধি হয়েছে অনেক পরিমিত।”

গ্যালব্রেইথ বলেন, এই প্রবণতার পেছনে বেশ কয়েকটি বিষয়ের অবদান থাকতে পারে।

কানাডায় বিয়ে বহির্ভূত জুটি বাঁধা দম্পতিদের ৪৩ শতাংশই থাকে কুইবেকে। ছবি : এডরুগস্টোর

“এটি বিভিন্ন সমাজগত পরিবর্তনের, সম্ভবত কানাডীয় সমাজের অধিকতর ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে ওঠার প্রতিফলন ঘটায়।”

গ্যালব্রেইথ যোগ করেন, অনেকগুলি ঘটনায়, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কের সঙ্গীরা এধরণের সম্মিলন বেছে নেন আগে কারও সঙ্গে সম্পর্কে জড়ানোর অভিজ্ঞতার পরেই।

তিনি বলেন, “আমরা যদি আগে কারো সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল এমন নর-নারীর পরিবারের (stepfamily) দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে, বাচ্চা নেই এমন দম্পতির মধ্যে  বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কে বাঁধা জুটির সংখ্যা অনেক বেশি।”

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার তথ্য বলছে, বিয়ে বহির্ভূত সম্পর্কে জুটি বাঁধার ব্যাপারটা অনেক বেশি জনপ্রিয় কুইবেকে। কানাডায় বিয়ে বহির্ভূত জুটি বাঁধা দম্পতিদের ৪৩ শতাংশই থাকে কুইবেকে।

কুইবেককে বাদ দিয়ে হিসাব করলে, ২০২১ সালে কানাডায় এ ধরণের দম্পতির অংশ হবে ১৭ শতাংশ।

এদিকে, উপাত্তে দেখা যায়, একটি সন্তান আছে এমন দম্পতির সংখ্যাও কমতির দিকে।

২০২১ সালের অদমশুমারির দিনে, লিভ-টুগেদার করা দম্পতিদের ৫০ শতাংশেরই সন্তান ছিল। আর ২০১৬ সালে সন্তানসহ দম্পতি ছিল ৫১ শতাংশ। ১৯৮১ সালে এই অনুপাত দাঁড়ায় ৬৪ শতাংশে।

স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা বলছে, এর কারণ হলো, “জনগণের বয়স্ক হয়ে পড়া ও উর্বরতা কমে যাওয়ার মিলিত ফল।”

গ্যালব্রেইথ বলেন, “জনগণের গড় বয়স যেহেতু অপেক্ষাকৃত বুড়িয়ে যাওয়ার দিকে ঝুঁকছে, তখন এর অর্থ হলো, দম্পতিদের গড় বয়স আগের চেয়ে বেশি এবং তাদের সঙ্গে কম বয়সী নির্ভরশীল সন্তান থাকার সম্ভাবনাও কমে যাচ্ছে।”

তবে একইসঙ্গে, সন্তান নেবার ব্যাপারে মানুষের উৎসাহও কম। স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার কাছে সবচেয়ে কাছাকাছি সময়ের মধ্যে ২০২০ সালের উপাত্ত আছে। গ্যালব্রেইথ জানান, ওই বছর গড়ে প্রতিটি নারীর সন্তানের সংখ্যা ছিল ১.৪ জন। যা স্বল্পতার দিক থেকে রেকর্ড।

আদমশুমারির উপাত্তে দেখা যায়, একক বাবা অথবা মায়ের পরিবারের সংখ্যা অপেক্ষাকৃত স্থিতিশীল আছে, তবে সন্তানদের প্রধানত বাবার সঙ্গে থাকার ঘটনা বেড়েছে।

আর এই প্রথমবারের মত, কানাডীয় পরিবারগুলো ওপর ঘনিষ্ঠ আলোকপাতের ফলে নারী-পুরুষের বৈচিত্র্যের ওপর আরও বিস্তারিত তথ্য অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। জন্মের সময় কারও লিঙ্গ (নারী বা পুরুষ) এবং জেন্ডারের পার্থক্য নির্ধারণের জন্য স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা ২০২১ সালের আদমশুমারিতে সংশোধনী আনার পর এটি সম্ভব হয়।   উপাত্তে দেখা যায়, ২৫০টি জুটির মধ্যে অন্তত একজন তৃতীয় লিঙ্গের।