একা ভ্রমণকারী নারীর জন্য কানাডা অষ্টম নিরাপদ দেশ

পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ কানাডায় সর্বনিম্ন

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক : এবারের গ্রীষ্মে একা সফরকারী নারীদের জন্য কানাডা অষ্টম সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। ৩০টির বেশি দেশের ভ্রমণ বিষয়ক সমীক্ষায় এই তথ্য উঠে এসেছে। খবর আলেক্সান্ডার মায়ে জোনস/ সিটিভি নিউজ।

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর ক্রমিক অবস্থান নির্ণয়ের জন্য মালামাল সংরক্ষণ সুবিধা দানকারী প্রতিষ্ঠান বাউন্স এই সমীক্ষা চালায়। সমীক্ষায় পারিবারিক সহিংসতা সম্পর্কিত আইন, খুনের হার এবং নিজের দেশে রাতের বেলা একা পথে নামার ক্ষেত্রে নারীরা কতটা নিরাপদ বোধ করে এসব বিষয়সহ নারী-পুরুষের সমতা ও নিরাপত্তার দিকগুলি বিবেচনায় নেয়া হয়।

তালিকা অনুযায়ী, নারীদের একা ভ্রমণের জন্য বিশে^র সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হলো আয়ারল্যান্ড। আর শীর্ষস্থানীয় পাঁচটি দেশের মধ্যে যথাক্রমে আছে অস্ট্রিয়া, নরওয়ে, স্লোভেনিয়া এবং সুইজারল্যান্ড।

আয়ারল্যান্ডের শীর্ষ স্থান পাওয়ার বিষয়ে সমীক্ষায় বলা হয়, “নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের আইন এবং একই সঙ্গে এ বিষয়ে স্থানীয় মানুষের মনোভাবের দিক থেকে এমারেল্ড আইল শহরটি বিশেষভাবে এগিয়ে আছে।”

একা সফরকারী নারীদের জন্য কানাডা অষ্টম সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। ছবি: কাজী মাওলা

ষষ্ঠ স্থানে আছে স্পেন। এর পরে পর্তুগাল ও কানাডা। নবম ও দশম স্থান পেয়েছে যথাক্রমে নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ড।

একা ভ্রমণকারী নারীদের সার্বিক নিরাপত্তা বিবেচনায় কানাডা পেয়েছে ১০ এর মধ্যে ৬.৬৭। অন্যদিকে আয়ারল্যান্ড পেয়েছে ৭.৮৮।

সমীক্ষায় যে ৩৪টি দেশ অন্তর্ভুক্ত ছিল তার মধ্যে সবচেয়ে কম নিরাপদ দেশ হলো কলম্বিয়া। আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অল্পের জন্য কলম্বিয়াকে পেছনে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কোস্টারিকার ঠিক আগে ৩২ নম্বরে।

সাতটি বিভিন্ন পরমাপকের ভিত্তিতে এই সমীক্ষা চালানো হয়। এর মধ্যে ছিল, সংশ্লিষ্ট দেশটিতে নারীদের কত শতাংশ সহিংসতার শিকার হয়েছেন, প্রতি এক লাখ নারীর মধ্যে  কতজন খুনের শিকার হন, রাতের বেলা একা চলাচলের ক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করেন কত শতাংশ নারী, কতজন নারী বলেন যে, তার প্রতি সহিংসতার ক্ষেত্রে তার স্বামী অন্যায় করেননি এবং দেশটিতে পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন কতটা কঠোর।

সমীক্ষায় নামবিওর (ঘঁসনবড়) ডেটাবেজ অনুযায়ী সাধারণীকৃত নিরাপত্তা সূচকে দেশটির ক্রমিক অবস্থান এবং ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামের বৈশি^ক জেন্ডার গ্যাপ সম্পর্কিত রিপোর্টের অবস্থানও বিবেচনায় নেওয়া হয়।

সাতটি ক্যাটাগরিতে প্রাপ্ত স্কোর মিলিয়ে সার্বিক নিরাপত্তার স্কোর বের করা হয়।

পৃথক ক্যাটাগরিগুলোর মধ্যে একটিতে কানাডা শীর্ষ স্থান লাভ করে। সমীক্ষার প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ কানাডায় সর্বনিম্ন।

সমীক্ষায় বলা হয়, “কানাডায় মাত্র ১.৯ জন নারী বলেছেন যে, তারা তাদের পুরো জীবনকালে একজন সঙ্গীর হাতে সহিংসতার মুখোমুখি হন। এটি তালিকার সবচেয়ে পেছনের দেশটির চেয়ে ২০ গুণ কম।”

পারিবারিক সহিংসতার বিরুদ্ধে বিদ্যমান সবচেয়ে ভালো আইনের দিক থেকে কানাডা অন্য ১০টিরও বেশি দেশের সমান অবস্থানে আছে। কানাডার আইন “নারীর অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্য না করে তাকে পারিবারিক সহিংসতা থেকে সুরক্ষা দেয়।” তালিকার ১১ নম্বর অবস্থানে আছে জাপান। আর নারীহত্যার ঘটনা সবচেয়ে কম নরওয়েতে। রাতের বেলা নারীদের একা বাইরে চলাচল করার ক্ষেত্রে নিরাপদ বোধ করার দিক থেকেও শীর্ষে নরওয়ে। নারীর প্রতি সহিংসতা মেনে নেয়ার হার আয়ারল্যান্ডে সর্বনিম্ন। মাত্র এক শতাংশ নারী বলেছেন, তারা মনে করেন, কোনও পুরুষ কখনও কখনও তার নারী সঙ্গীকে ন্যায্যত মারধর করতেই পারেন।

সমীক্ষার সব ক্যাটাগরির পরিমাপকের ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ঙঊঈউ) উপাত্ত ব্যবহার করা হয়। সংস্থাটি গবেষণা ও নীতি বিশ্লেষণের জন্য সদস্য দেশগুলো থেকে আর্থ-সামাজিক উপাত্ত সংগ্রহ করে। কানাডাসহ প্রায় ৪০টি দেশ ওইসিডির সদস্য।

কোন দেশে কত নারী রাতে একা ভ্রমণ করতে নিরাপদ বোধ করেন তার শতকরা হিসাব নেওয়া হয় ওইসিডির ২০২১ সালের নির্দিষ্ট সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে এবং খুনের তথ্য নেওয়া হয় বিশ^ ব্যাংকের রিপোর্ট থেকে।