কোভিড-১৯ মহামারির সময় কানাডায় ঘৃণাজনিত অপরাধ বেড়েছে: স্ট্যাটক্যান
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক: পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী কোভিড-১৯ মহামারি চলার সময় কানাডাজুড়ে ঘৃণাজনিত অপরাধের ঘটনা বাড়ছেই। যদিও এ সময় লকডাউন এবং ভাইরাস নিরোধমূলক বিভিন্ন ব্যবস্থার কারণে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। খবর গ্লোবাল নিউজ এর। রিপোর্ট করেছেন সাবা আজিজ।
গত ০২ আগস্ট প্রকাশিত স্ট্যাটিস্টিকস কানাডার নতুন এক রিপোর্টে দেখা যায়, গত বছর পুলিশের রিপোর্টে ৩,৩৬০টি ঘৃণাজনিত অপরাধের উল্লেখ করা হয়, যা ২০২০ সালের চেয়ে ২৭ শতাংশ বেশি এবং গত দুই বছরের হিসাবে ৭২ শতাংশ উল্লম্ফন।
স্ট্যাটক্যানের রিপোর্টে বলা হয়, বেড়ে যাওয়া ঘৃণামূলক অপরাধের বেশিরভাগই ঘটে ধর্মীয়, যৌন প্রবণতা সম্পর্কিত এবং বর্ণ ও জাতিগত লক্ষ্যবস্তুর ওপর।
স্ট্যাটক্যান বলেছে, “২০২১ সালে কোভিড-১৯ মহামারি কানাডার অর্থনীতি, স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ও সাধারণভাবে সমাজের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।”
“ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন নীতি কানাডীয়দের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবন নজীরবিহীনভাবে ব্যাহত করে, মানুষের সঙ্গে আমাদের পারস্পরিক ক্রিয়া, সামাজিক লেনদেন, শিক্ষণ, কর্ম ও ভোগ প্রবণতার সব কিছুই পাল্টে দেয়।”
গত বছর অপরাধের প্রখরতা সম্পর্কিত সূচক (Crime Severity Index) অনুযায়ী সহিংস অপরাধের ঘটনা দেশজুড়ে বেড়েছে- যেমন প্রথম মাত্রার যৌন হামলা, হয়রানি, হুমকি দেওয়া এবং হত্যাকান্ড ইত্যাদি। স্ট্যাটক্যানের হিসাবে, লেভেল-ওয়ান যৌন হামলা হলো হামলার শিকার নারীর সতীত্ব হরণ।
সামগ্রিকভাবে গত বছর পুলিশের নথিভুক্ত অপরাধের তেমন একটা পরিবর্তন হয়নি এবং ভাঙ্গচুর, কারো বাড়িতে বলপূর্বক অনুপ্রবেশ ও পাঁচ হাজার ডলার বা তার কম পরিমাণ অর্থ চুরির মত ঘটনা কমে যাওয়ায় অহিংস অপরাধের প্রাখর্যের সূচক ২০২১ সালে ক্রমাগত নিম্নগামী হতে থাকে।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা ২০০৯ সালে তথ্য-উপাত্ত নথিভুক্ত করতে শুরু করার পর মহামারীর প্রথম বছরে দেশে সর্বোচ্চ সংখ্যক ঘৃণাজনিত অপরাধের ঘটনা পুলিশে রিপোর্ট করা হয়।
স্ট্যাটক্যান-এর গবেষকরা বলেন, দ্বিতীয় বছরেও মহামারী কানাডীয়দের ওপর প্রভাব ফেলতে থাকে তবে দেশে বিধিনিষেধ উঠে যেতে থাকায় সেটা হয় কিছুটা ভিন্ন কায়দায়।
যৌন হামলার ব্যাপক বৃদ্ধি
উদ্বেগজনক ঘটনা হলো, ২০২১ সালে যৌন হামলার ঘটনা ১৯৯৬ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে। ওই বছর ৩৪,২৪২টি যৌন নিপীড়নের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়।
তবে স্ট্যাটক্যান বলছে, যৌন নিপীড়নের বিষয়ে পুলিশে রিপোর্ট করার হার কম বলে ওই সংখ্যাটিও প্রকৃত মাত্রার চেয়ে “যথেষ্টই অবমূল্যায়িত”।
স্ট্যাটক্যান বলছে, “বিশেষ করে মহামারীর প্রথম বছরে, দেশে মহামারী-সংশ্লিষ্ট লকডাউন পরিস্থিতির কারণে, যৌন নিপীড়নের ঘটনার নথিভুক্তকরণ আরও কমে যায়।”
উপর্যুপরি তৃতীয় বছরে, সারাদেশে হত্যাকান্ডের হারও বেড়েছে। নথিভুক্ত হয়েছে ৭৮৮ টি ঘটনা।
হত্যাকান্ডের ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে অন্টারিও এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায়। তবে আলবার্টা ও নোভা স্কশিয়ায়, যেখানে ২০২০ সালে এক গণহত্যার ঘটনায় ২২ জনকে গুলি করে মারা হয়, সেখানে হত্যাকান্ডের হার ছিল কম।
সর্বশেষ এই তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের পর কানাডার জাতিগত সম্পর্ক বিষয়ক ফাউন্ডেশন (CRRF) ঘৃণাজনিত অপরাধ মোকাবেলা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে।
সিআরআরএফ তার সুপারিশমালার অংশ হিসাবে বলেছে, ঘৃণাজনিত অপরাধের শিকার ব্যক্তিদের সহায়তায় কাজ করে এমন সংগঠনগুলোর জন্য এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সরাসরি আর্থিক সহায়তার জন্য অটোয়া সরকারকে চার কোটি ৪০ লাখ ডলারের একটি জাতীয় তহবিল গঠন করতে হবে।
সিআরআরএফ-এর নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ হাশিম মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে বলেন, “প্রতি বছর আমরা ঘৃণাজনিত অপরাধ বেড়ে যাবার কথা শুনি আর প্রতি বছরই এসব ঘটনার নিন্দা শুনি। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়।” “ আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এবং এসব বেদনাদায়ক ঘটনার পরিণতি নিয়ে কর্মরতদের জন্য আরও বেশি কিছু করতে পারি এবং তা অবশ্যই করতে হবে।”