কানাডা ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতির সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে’ পৌঁছেছে: বিশেষজ্ঞ মত
প্রবাসী কন্ঠ ডেস্ক : কানাডায় খাদ্যপণ্যের দাম যখন অব্যাহতভাবে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হারকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে তখন একজন বিশেষজ্ঞ বললেন, খাদ্যশিল্পের এই দর বৃদ্ধি সম্ভবত সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা গত জুলাই মাসে এক রিপোর্টে জানায়, দেশে বার্ষিক মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে গত জুন মাসে ৮.১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এটি হলো ১৯৮৩ সালের জানুয়ারির পর এক বছরে মূল্যস্ফীতির হারের সবচেয়ে বড় বার্ষিক পরিবর্তন। খবর মাইকেল লি /সিটিভি নিউজ।
ভোগ্যপণ্যের দামও ক্রমাগত বাড়ছে এবং তা গত বছরের জুনের চেয়ে ৮.৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে সেই বাড়তি দর গত মে মাস থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে।
অবশ্য, জুনে ভোগ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতির যে হার ছিলো তার চেয়ে উভয় ধরণের মূল্যস্ফীতিই এখনও বেশি।
ডালহৌসি ইউনিভার্সিটির প্রফেসর এবং কৃষিজ খাদ্য বিশ্লেষণ ল্যাবরেটরির জ্যেষ্ঠ পরিচালক সিলভেইন শার্লেবোই বুধবার সিটিভি নিউজ চ্যানেলকে বলেন, “নিশ্চিতভাবে বর্ধিত মূল্যস্ফীতির কারণেই ভোগ্যপণ্যের বাজার ও হোটেল-রেস্তোরাঁয় দর বাড়ছে।”
“তবে সুখবর হলো, আমার বিশ্বাস, খাদ্য মূল্যস্ফীতি আমাদের দেশে সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে, সুতরাং শেষ পর্যন্ত আমরা খাদ্য মূল্যস্ফীতির সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্ত দেখতে পাচ্ছি।”
স্ট্যাটক্যান-এর হিসাবে একবছর আগের চেয়ে গত জুনে ৫০ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যাওয়া পেট্রোলের দামই বহুলাংশে মূল্যস্ফীতির সর্বশেষ বৃদ্ধির কারণ।
পেট্রোলের দাম বাদ দিয়ে হিসাব করলে জুন মাসে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬.৫ শতাংশ যা মে মাসে ছিল ৬.৩ শতাংশ।
গত মে মাসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে মূল্যস্ফীতি ৭.৭ শতাংশ বেড়ে গেলে কানাডায় মূল্যস্ফীতির হার সর্বশেষ অঙ্কে দাঁড়ায় যা গত এপ্রিলের চেয়ে পুরোপুরি এক শতাংশ বেশি।
শার্লেবোই বলেন, নির্দিষ্ট কিছু ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি অপেক্ষাকৃত দ্রুত বাড়ছে। স্ট্যাটক্যান-এর উপাত্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের গড় পাইকারি দরে অন্য সব পণ্যের চেয়ে বড় ধরণের উল্লম্ফন ঘটে।
তিনি বলেন, “তবে সাধারণভাবে, আমি মনে করি, খাদ্য শিল্প এখন সরবরাহ শৃঙ্খলের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয় এবং একই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে।” উপাত্ত বিশ্লেষণী কোম্পানি NielsenIQ, Charlebois’র তথ্যউপাত্তের উল্লেখ করে শার্লেবোই বলেন, কানাডীয়রা ‘ডলার স্টোর’ এর দোকান থেকে বেশি বেশি খাবার কিনছে বলে মনে হয়। গত মার্চে খাবার কেনার পরিমাণ ১৮ শতাংশ বেড়েছে। তিনি ভোক্তাদের এই প্রবণতাকে “ট্রেডিং ডাউন” বা অপেক্ষাকৃত কম দামের বিকল্প পণ্য কেনার প্রবণতা বলে অভিহিত করেন।
সিটিভি নিউজ-কে সরবরাহ করা একই রকম এক বিবৃতিতে শার্লেবোই বলেন, কানাডার কৃষি খাতে চলতি বছর ফলন খুব ভালো হবে এবং তা পণ্যমূল্য কমে আসার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে।
তবে তিনি বলেন, সার্বিকভাবে পণ্যমূল্য আগের বছরের চেয়ে শিগগিরই তেমন একটা কমবে বলে তিনি আশা করেন না।
কানাডার ডেইরি কমিশন সম্প্রতি দুধের দাম ২.৫ শতাংশ বা লিটারপ্রতি দুই সেন্ট বাড়িয়েছে, যা আগামী পহেলা সেপ্টেম্বরে কার্যকর হবে। এই দাম গত ফেব্রুয়ারির দামের চেয়ে ৮.৪ শতাংশ বা লিটারপ্রতি ৬ সেন্ট বেশি।
এই দাম বাড়ানোর কারণ হিসাবে উৎপাদনকারীরা দুধের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলছেন।
তবে কানাডীয় ট্যাক্সপেয়ারস ফেডারেশন দুধের দাম বাড়ানোর জন্য কোভিড-১৯ মহামারিকালে কমিশনের কর্মচারীদের বেতন ও বোনাস বাড়ানোর সমালোচনা করেছে।
ই-মেলে পাঠানো বিবৃতিতে শার্লেবোই বলেন, “বোনাস দেয়া দোষের নয়, কিন্তু এক্ষেত্রে স্বচ্ছতা না থাকা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।”
“ট্যাক্সপেয়ারস ও ভোক্তারা আরও ভালো কিছু পাবার যোগ্য। আমাদের কোটা ব্যবস্থার লক্ষ্য ছিল মূল্যস্ফীতির চক্র থেকে ডেয়ারি খাতের দায়মুক্তি দেয়া। কিন্তু কিছু একটা ঠিকভাবে কাজ করছে না।”
এদিকে, মূল্যস্ফীতি রোধের লক্ষ্যে ব্যাংক অব কানাডা গত ১৩ জুলাই ওভারনাইট সুদের হার ২.৫ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। চলতি বছরের আরও আগের দিকেও এ ধরণের বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় ব্যাংকটি। শার্লেবোই বলেন, সুদের হার বাড়ানোর আগে পুরো বাজারে “নগদ অর্থের প্লাবন” বয়ে যাচ্ছিল যা ভোগ্যপণ্যসহ সব জিনিসের দাম বাড়াতে ভূমিকা রাখে।
তিনি বলেন, সুদের হার বাড়ানোর পর, এখন কিছু জিনিসের দাম কমবে বা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে আসবে বলে আশা করা যায়। সেইসাথে ডলারের দাম জোরদার হওয়ায় আমদানি ব্যয় অপেক্ষাকৃত কমবে।
তবে, তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ যদি সুদের হার আরও বাড়ায় তাহলে কানাডীয় ডলার চাপে পড়বে।
আগামী দিনগুলিতে কী অপেক্ষা করছে সে বিষয়ে বলা যায়, ডালহৌসি ইউনিভার্সিটি এবং একইসঙ্গে গুয়েলফ ইউনিভার্সিটি, সাসকাচুন ইউনিভার্সিটি এবং ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির প্রকাশিত রিপোর্টে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে যে, বছরের শেষ নাগাদ খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি সাত শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
তথ্য সূত্র : সিটিভি নিউজ ও কানাডিয়ান প্রেস