হাসপাতালের জরুরী বিভাগের জরুরী চিকিৎসা প্রয়োজন
গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ অন্টারিওসহ কানাডার অন্যান্য অঞ্চলে হাসপাতালের জরুরী বিভাগগুলোতে চলছে এক প্রতিকূল পরিস্থিতি। নার্স সংকটের কারণে অনেক হাসপাতালই তাদের জরুরী বিভাগ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হচ্ছে। জরুরী বিভাগে এসে রোগীদেরকে গড়ে ২০ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হচ্ছে ওয়ার্ডে বেড পেতে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে কেউ কেউ বলছেন অন্টারিওতে ভেঙ্গে পড়ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। ফলে রোগীরা জরুরী স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটেও পর্যাপ্ত নার্স পাওয়া যাচ্ছে না সেবা অব্যাহত রাখার জন্য। ফলে কোন কোন হাসপাতালে বন্ধ রাখা হচ্ছে ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটও। রোগীকে স্থানান্তর করা হচ্ছে অন্য হাসপাতালে।
টরন্টোর একটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার রঘু ভেনুগোপাল গ্লোবাল নিউজকে বলেন, ‘অন্টারিও-সহ কানাডার অন্যান্য অঞ্চলের হাসপাতালগুলোতে জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাক্তার ও নার্সরা ব্যাপকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছেন এরকম পরিস্থিতির কারণে। রোগীদের জন্য জরুরী বিভাগে অপেক্ষার সময়গুলো অত্যন্ত দীর্ঘ হয়ে উঠেছে। কাজের অস্বাভাবিক চাপে সেবা প্রদানকারী নার্সরা দিশা হারিয়ে ফেলছে।’
গ্লোবাল নিউজ জানায়, কানাডার পশ্চিমের ভ্যাঙ্কুভার থেকে শুরু করে পূবের নিউফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডর পর্যন্ত একই অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে অনেক হাসপাতালের জরুরী বিভাগ সাময়িকভাবে বন্ধ রাখতে হবে।
কানাডিয়ান মেডিকেল এসোসিয়েশন এর সভাপতি ডাক্তার ক্যাথারিন স্মার্ট গ্লোবাল নিউজকে বলেন, ‘বিভিন্ন কারণে আজ এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় কারণ হলো, কানাডা জুড়ে এখন চলছে স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাব, বিশেষ করে নার্সের অভাব।’
ডাক্তার ক্যাথারিন স্মার্টের মতে আমরা বর্তমানে যা দেখছি তা অভূপূর্ব এবং এই পরিস্থিতির মাত্রা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়নি। অন্যদিকে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে রোগী বেড়ে যাওয়ার পিছনে কভিড-১৯ এর সপ্তম ঢেউকে দায়ী করছেন টরন্টোর একটি হাসপাতালের জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাক্তার কাসিফ পীরজাদা। গ্লোবাল নিউজকে তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিধি থেকে সরকার এবং জনগণ পিছিয়ে আসায়, বিশেষ করে জনসমাগমে মাস্ক ব্যবহার না করা এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় না রাখায় সংক্রমণ আবার বাড়ছে এবং তার চাপ পড়ছে হাসপাতালের জরুরী বিভাগগুলোতে।
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন আগামী শরৎ ও শীতে কানাডায় কভিড-১৯ পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে। কারণ লোকজন তখন বাইরের খোলা পরিবেশে কম যাবে। ঘরে বা বদ্ধ পরিবেশে মেলামেশা বাড়বে। স্কুলগুলোও খুলে যাবে। সুতরাং এখনই যদি জরুরী কোন পদক্ষেপ না নেওয়া হয় তবে সামনে আরো খারাপ দিন অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে যে, স্বাস্থ্যকর্মীদের অনেকেই প্রচন্ড চাপে পড়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। এমনকি অনেকে নির্যাতনেরও শিকার হচ্ছেন রোগীদের সেবা দিতে গিয়ে। কেউ কেউ আবার জাতিগত অপবাদ এবং যৌন হয়রানিমূলক আচরণেরও শিকার হচ্ছে। এটি সত্যিই একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি।
বাস্তবতা হলো, পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এখন প্রচন্ড চাপের মধ্যে রয়েছে। ফ্যামিলি ডাক্তারগণ তার বাইরে নয়।
উল্লেখ্য যে, কানাডার অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশী অবদান রাখে অন্টারিওর অধিবাসীরা। কিন্তু অন্টারিও’র ফিনান্সিয়াল একাউন্টিবিলিটি অফিস গত এপ্রিলে তাদের এক রিপোর্টে জানায়, মহামারীর প্রথম বছরে কানাডার অন্যান্য প্রভিন্সের তুলনায় অন্টারিওতে সবচেয়ে কম অর্থ ব্যয় করা হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। সেই রিপোর্টে আরো উল্লেখ করা হয় যে, অন্টারিওতে স্বাস্থ্যখাতে মাথাপিছু ব্যয় অন্যান্য প্রভিন্সের তুলনায় সর্বনিন্ম পর্যায়ে রয়েছে গত ২০০৮ সাল থেকেই।
সুতরাং রাজনৈতিক নেতাগণও কম দায়ি নন বর্তমান পরিস্থিতি সৃষ্টির পিছনে। এই মুহুর্তে এই প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। নয়তো বিপদ আরো ঘনিভূত হবে যা কারোরই কাম্য নয়।