কানাডা কি মন্দার দিকে যাচ্ছে? যা জানা দরকার
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২৪ জুন ২০২২ : পেট্রোল ও খাদ্য পণ্যের দাম যখন ক্রমাগত বাড়ছে এবং সামনের মাসেই সুদ হার আরেক দফা বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে, তখন অনেক কানাডীয় ভাবছেন আরেকটি মন্দা আসতে যাচ্ছে কিনা। আর সে ক্ষেত্রে প্রস্তুতি কীভাবে নেয়া যাবে।
চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে ইয়াহু কানাডা/মারু পাবলিক ওপিনিয়ন প্রকাশিত এক সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, আটষট্টি শতাংশ কানাডীয় মনে করেন, দেশটি মন্দার দিকে যাচ্ছে। আর ১৭ শতাংশ মনে করেন দেশ এখনই মন্দা পরিস্থিতিতে রয়েছে। অবশ্য ১৫ শতাংশ কানাডীয় বিশ^াস করেন যে, এই মুহূর্তে বা কিছু পরে মন্দা হবে বলে যে উদ্বেগ তা অতিরঞ্জিত। খবর ক্যারিসা উইলসন /সিপি২৪
কিন্তু যদি মন্দা দেখা দেয়ই তাহলে কানাডীয়দের জন্য তার অর্থ কী দাঁড়াবে বা কীভাবে তারা এ বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে পারেন?
মন্দা কী?
সহজ কথায় মন্দার সংজ্ঞা হতে পারে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কমপক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থায়ী ধস নেমে আসা। এটা হতে পারে ভোক্তাদের ব্যয় কমে যাবার কারণে, যার ফলে পণ্যের বেচাকেনা, ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় কমানো এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে আরও বেশি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
টিডি ব্যাংক গ্রুপের উপ প্রধান অর্থনীতিবিদ ডেরেক বার্লটন সিপি২৪-কে বলেন, “আমি মনে করি মন্দার সাধারণ নিয়ম হলো অর্থনীতি এবং পণ্য উৎপাদন ও পরিষেবার পরিমাণ সরাসরি অর্ধেকে নেমে আসা।”
দেশে সর্বশেষ মন্দা দেখা দেয় ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির তুঙ্গ পর্যায়ে।
মন্দা কি আসছে?
প্রায় ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে যখন ব্যাংক অব কানাডা সামনের মাসে তার মূল সুদেরহ হার বাড়াতে যাচ্ছে তখন এসব উপাদান আরেকটি মন্দার সূচনা করতে পারে।
স্ট্যাটিস্টিকস কানাডা জানায়, গত মে মাসে ভোগ্যপণ্যের মূল্য সূচক এক বছর আগের তুলনায় ৭.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়, যা ছিল ১৯৮৩ সালের জানুয়ারির পর সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধির রেকর্ড।
বিএমওর সিনিয়র ইকোনোমিস্ট রবার্ট কাভসিক সিপি২৪-কে বলেন, “এটি তেলের বা খাবারের দাম সম্পর্কিত কোনও বিষয় নয়, পুরো অর্থনীতিতে এখন ব্যাপকতর মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে, এটা আমাদেরকে এবং নীতিনির্ধারকদেরকে বলে দিচ্ছে যে, অর্থনীতি খুবই দীর্ঘ সময়ের জন্য খুবই উত্তপ্ত অবস্থায় চলছে। আমাদের মূল্যস্ফীতির সমস্যা আছে যা কানাডীয়দের মনস্তত্বের ভেতরে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে শেকড় ছড়িয়েছে। আর এই সমস্যার সুরাহা করার দরকার আছে।”
ব্যাংক অব কানাডা বলেছে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন, চীন থেকে কোভিড-১৯-এর ছড়িয়ে পড়া এবং সরবরাহ ব্যবস্থায় জট লেগে যাওয়া ইত্যাদি কারণে “অনিশ্চয়তার” সৃষ্টি করেছে এবং জ¦ালানি ও খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে, যার কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সুদহার বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি বছরে এ পর্যন্ত তিনবার মূল সুদের হার বাড়িয়েছে যা এখন দাঁড়িয়েছে ১.৫ শতাংশে।
কীভাবে মন্দার প্রস্তুতি নেবেন
মারু পাবলিক ওপিনিয়নের সমীক্ষায় অংশ নেয়া লোকেদের মধ্যে সম্ভাব্য মন্দার কথা মাথায় রেখে ৫৬ শতাংশ কানাডীয় বলেন, তারা অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে কঠোরভাবে অগ্রাধিকার ঠিক করে নিয়েছেন এবং বিগত মাসগুলোতে কম অর্থ ব্যয় করেছেন। ৮৬ শতাংশ মানুষ বলেন, তারা আগের মাসের চেয়ে চলতি মাসে খাবার কেনায় বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন। আর ৮২ শতাংশ লোক বলেন, তারা বেশি অর্থ ব্যয় করেছেন পেট্রোল কেনায়।
টিডি ব্যাংকের অর্থনীতিবিদ বার্লটন বলেন, সম্ভাব্য মন্দার প্রস্তুতি হিসাবে বাড়তি অর্থ সঞ্চয় করা এক চৌকস ধারনা। “(সম্ভাব্য মন্দাকালে) পরিবারগুলোর নিজের রক্ষার উপায় নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করা হয়তো মন্দ না।”
সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ৬৩ শতাংশ বলেন, বিগত মাসগুলোতে যেসব খাতে তারা ব্যয় কমিয়েছেন তার মধ্যে বৃহদংশই ছিল খাদ্য কেনায়। ব্যয় সঙ্কোচনের খাতের মধ্যে এর পরেই রয়েছে বিনোদন, পোশাক ও জুতা।
ইয়াহু কানাডা/মারু পাবলিক ওপিনিয়নের সমীক্ষাটি চালানো হয় ১৭ থেকে ১৯ জুনের মধ্যে। এতে দৈবচয়নের ভিত্তিতে ১,৫১৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক কানাডীয়কে সম্পৃক্ত করা হয়।