আমার জীবনের নানা কথা

সাইদুল হোসেন

(পূর্ব প্রকাশিতের পর)

তিনটি খবর

১) একজন বয়ষ্ক মুসলিম পরিচয় দিলেন যে তিনি হচ্ছেন ঈশ্বরের কেরানী। বক্তৃতা, গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ লেখালেখি যাই তিনি করেন তা ঈশ্বরেরই ইংগিতেই ঘটে, তিনিই প্রভু, আমি তো নিমিত্ত মাত্র।

২) এক মহিলা fund raising করতে এলেন, donation চাই, কারণ বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত মহিলা কবি খুবই অসুস্থ, তার চিকিৎসার জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। কবির নামটা কি? জানতে চাইলাম। তার নাম হলো: শ্বেতা শতাব্দী এষ।

এ কেমন নাম? কি অর্থ এর?

৩)           একটা বাংলা গান আছে এরকম :

                ভ্রমর কইও গিয়া

                শ্রীকৃষ্ণ বিচ্ছেদের অনলে

                অংগ যায় জ্বলিয়া রে

                ভ্রমর কইও গিয়া ॥

গায়িকার নাম সংগী। Stage performance. অতি মধুর কণ্ঠে আবেদনময় গান একটা।

এই গানটা একই সুরেতালে stage-এ গেয়েছে তাজিকিস্তানের বিখ্যাত গায়িকা NOZIYA KAROMATULLO তাদের নিজস্ব তাজিক ভাষায়। গানটার English translation-টা Internet-এ (YouTube) দেখেছি যার বাংলা গানটার শব্দ ও প্রকাশ ভংগীর সংগে হুবহু মিল রয়েছে। গানটার শুরু Kujo Kujo এই কথা দু’টি দিয়ে। মনমাতানো performance গায়িকার। এই বাংলা গানটা সুদূর সেই তাজিকিস্তানের সংগীত জগতেও আলোড়ন সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছে, একথাটা ভাবতেও মনে আনন্দ জাগে।

আগষ্ট ৬, ২০১৭

মুবীন ঢালিওয়াল

ঢালিওয়াল ইন্ডিয়ার শিখদের একটা পারিবারিক নাম। এবং মুবীন একটা আরবী শব্দ যা শুধু মুসলিম সম্প্রদায়ই ছেলেদের নাম হিসাবে রেখে থাকে। মুবীন অর্থ অতি স্পষ্ট, সুস্পষ্ট, প্রকাশ্য, উন্মুক্ত, clear, plain, distinct, manifest.

সদ্য কাজে যোগ দিয়েছে এমন একটি volunteer মেয়ের সংগে দেখা হলো আজ। নাম কি জানতে চাইলে বলল: মুবীন ঢালিওয়াল। ইন্ডিয়ান। শিখ।

বিষ্মিত হয়ে বললাম: মুবীন তো সাধারণতঃ মুসলিম ছেলেদের নাম হয়ে থাকে। তুমি তো শিখ। তাছাড়া তুমি একটি মেয়ে। এ কেমন করে হলো, বুঝিয়ে বলবে কি?

হেসে দিয়ে মেয়েটি যা বলল তা এরকম:

মুবীন একটা মুসলিম নেইম সেটা আমার বাবা জানতেন। তিনি একজন কলেজ টিচার, তাঁর একজন অতি প্রিয় মুসলিম স্টুডেন্ট ছিল মুবীন। মুবীনের চারিত্রিক নানা গুণের প্রশংসায় বাবা সদা পঞ্চমুখ থাকতেন। মনে একটা বাসনা পোষণ করতেন যে তাঁর একটা ছেলে জন্মালে তিনি তার নাম রাখবেন “মুবীন”, এবং সেই সন্তানটিকে এমনিভাবে গড়ে তুলবেন যে সে যেন তার প্রিয় ছাত্র মুবীনের সব গুণাবলী পায়। কিন্তু ছেলের পরিবর্তে ভগবান পাঠালেন আমাকে, অথচ আমি একটি মেয়ে, ছেলে নই। কিন্তু বাবা দমলেন না, আমার নাম রাখলেন মুবীন এবং চেষ্টা শুরু করলেন যাতে আমাকে মুবীনের মত করে গড়ে তোলা যায়।

বাবাকে আমি শ্রদ্ধা করি, তাঁর ইচ্ছাকে আমি গুরুত্ব দিই। তাই আমিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি বাবার মনোমত সন্তান হতে।

মেয়েটি এখানে এসে ইতি টানলো তার কাহিনীর। চমৎকার, অতি চমৎকার একটি জীবনধর্মী কাহিনী।

অবশেষে বললাম: শুকরিয়া, মুবীন।

সে হেসে উত্তর দিল: শুকরিয়া আপকোভী!

আগষ্ট ৮, ২০১৭

ভলান্টিয়ারদের ভালোবাসা

হসপিটালে ভলানটিয়ারিং করতে গিয়েছিলাম। Kathleen নামের একটি Chinese school student ভলানটিয়ারিং করছিল আমাদের Fracture & Plastic Surgery Clinic-এ বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে। চমৎকার কাজের মেয়ে ছিল, সুযোগ পেলেই এসে patient registration-এর কাজে আমাকে সাহায্য করতো, ডেকে আনতে হতো না। অতি অমায়িক ব্যবহার। লোকের সংগে কথা বলতে বলতে কাগজ-কলম হাতে থাকলে এবং অনুমতি পেলে তাৎক্ষণিক ভাবে তার স্কেচ আঁকতে পারতো, ফুল-পাতা-পাখী যোগ করে সেটাকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারতো। আমার একটা স্কেচ এঁকে দেবে কথা দিয়েছিল।

Kathleen আজ সকাল সাড়ে ১১টায় এসে জানালো: আজই আমার last working day, আমি তোমার কাছে বিদায় নিতে এসেছি। আর কোনদিন দেখা হবে না, কিন্তু তোমার স্নেহ আমার চিরদিন মনে থাকবে। তোমার জন্য করা স্কেচটা একদিন এসে clinic-এর কারো হাতে দিয়ে যাবো, তুমি পেয়ে যাবে। এবার তোমাকে একটা  hug দিতে দাও বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার চোখে পানি এসে গেল। বললাম: Take care. God bless you.

“Thank you” বলে আমার ডান হাতটা ওর দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে Bye বলে ধীর পদে clinic থেকে বের হয়ে গেল।

মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। বারবারই হয়। প্রতি বছরেই হয় যখন অল্প বয়সী চঞ্চল সদাহাস্যমুখ ছেলে-মেয়েরা ওদের term শেষ হলে Volunteer Services department থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়, বিশেষ করে সেই ছেলে-মেয়েগুলো যারা আমার সংগে কয়েক মাস কাজ করে। হৃদয়ে একটা শূন্যতা, একটা ক্ষত সৃষ্টি হয় প্রজাপতির মত সুন্দর ঐ ছেলেমেয়েগুলো বিদায় নিয়ে চলে গেলে। একটা তৃপ্তিও অনুভব করি ওদের শ্রদ্ধা-ভালোবাসা পেয়ে।

গত ১৩ বছরের Volunteering Service আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে, নানাজনের সাহচর্যে এসে আমি একজন better person হতে পেরেছি বলেই আমার বিশ্বাস। বয়স ৮৫ বছর হলো, জানি না আর কতদিন চালিয়ে যেতে পারবো। -আগষ্ট ১৬, ২০১৭

বাংলাদেশী মেয়ে TAMMY

আজ সকালে আমার Walker-এর দু’টি spare parts কেনার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বেশ দূরে Lawrence West and Bathurst St. Intersection-এ Lawrence Plaza-তে গিয়েছিলাম Lawrence West বাসে চড়ে। আমার কাজ শেষ করে ফেরার সময় ঐ Plaza-তেই অবস্থিত Metro Supermarket-এ ঢুকলাম সেখানে কি কি পাওয়া যায়, price কি রকম ইত্যাদি দেখার উদ্দেশ্যে। প্রথমেই গেলাম Fish Section-এ।

ওখানে live fish পাওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে কর্মরত এক তরুণী বলল: সরি স্যার, আমরা live fish রাখি না; কিন্তু আমাদের freezer-এ রাখা মাছ live fish-এর চেয়ে কোন অংশেই কম fresh নয়। তরুণীটির কথা বলার ধরণ, ভদ্রতা, হাসি- এসবই বেশ প্রশংসনীয়। বললাম: আমি একজন বাংলাদেশী, আপনি কোন দেশের?

বড় একটা হাসি মুখে ফুটিয়ে ইংরেজীতে সে বলল: আমিও বাংলাদেশী। হেসে বললাম (বাংলায়): বাংলা বলতে পারেন?

সে খিলখিল করে হেসে উঠলো, বললো: বলেন কি, আমি আজন্ম একটা বাংলাদেশী মেয়ে আর আপনি জানতে চাইছেন বাংলা বলতে জানি কি না? অবশ্যই জানি। বাংলাতেই কথা বলছি আপনার সংগে, আর তো কোন সন্দেহ থাকার কথা নয়। আমি ছাড়াও আরো বাংলাদেশী মেয়ে এখানে কাজ করে। ওরা এই shift-এ নেই, থাকলে আপনার সংগে পরিচয় করিয়ে দিতাম।

ওর ID Card-এ নাম লেখা দেখলাম TAMMY, বললাম: তোমার ব্যবহারে আমি খুবই মুগ্ধ, Tammy.

বললো: ধন্যবাদ, uncle. আসলে আমার নামটা হলো Tamanna, এই দেশে এসে Canadianize করে Tammy হয়ে গেছি। আবার আসবেন। ইনশাআল্লা­হ আবার আমাদের দেখা হবে। আসসালামু আলাইকুম।

তামান্না অতি চমৎকার মেয়ে। -আগষ্ট ১৯, ২০১৭

Spring season এলেই প্রায় প্রতিদিন জবা ফুল ফোটে। ছবি : সংগৃহীত

জবা ফুল

আজ ১০ বছরেরও অধিক দিন ধরে আমার স্ত্রী indoor plant হিসাবে একটা জবা ফুলের গাছ সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন। বেশ বড় গাছ, প্রচুর ডালপালা। মাঝেমাঝে ডাল কেটে flower pot-এ রেখে ‘কলম’ করেন এবং অকাতরে বিলিয়ে দেন। আত্মীয়-বন্ধু বহু লোকের বাড়িতেই তার দেয়া জবা গাছ বছরের পর বছর ফুল দিয়ে চলেছে, এবং তিনিও সবার প্রশংসা/কৃতজ্ঞতা কুড়িয়ে চলেছেন। তিনি খুব খুশী।

Winter-এ গাছটা বিশ্রাম নেয়, কোন ফুল ফোটে না। কিন্তু Spring season এলেই সে জেগে উঠে এবং Summer-এর শেষ পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন ফুল দেয়- একটা, দু’টা, তিনটা, এমনকি একই দিনে ৫টা ফুলও ফোটে। সে এক দেখার মত দৃশ্য। তিনদিন আগে ৫টা ফুল ফুটেছিল, আজ আবার ৫টা ফুটেছে। কিন্তু ফুল গুলোর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে ওরা বড়ই ক্ষণস্থায়ী- সকালে ফোটে, সন্ধ্যায় বুঁজে যায়, দু’দিন পর নিজ থেকেই ঝরে যায়।

নেপালী এক ইনজিনিয়ারের স্ত্রী ও দুই ইনজিনিয়ার ছেলের মা বাংলাদেশী (ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ার) এক হিন্দু মেয়ে রেখা আমাদের সংগে খালু-খালাম্মা সম্বন্ধ পাতিয়েছে। অতি ভালো মেয়ে। ওকে দেয়া জবার “কলম” থেকে প্রচুর ফুল ফোটে, এবং সেই ফুল দিয়ে সে প্রতিদিন ভগবানের পূজা করে এবং বলে: খালা, প্রতিদিন পূজার সময় আপনাদের মংগলের জন্য ভগবানের কাছে আমি প্রার্থনা করি।

আগষ্ট ২৩, ২০১৭

চান্দ্রা

গায়ানীজ মহিলা, বয়স ৬৩ বছর। বিধবা। হিন্দু, Indian-origin Hindu. এক ছেলে, এক মেয়ে- ওরা দু’জনই আমেরিকায় বসবাস করে। মেয়েটি এক মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করেছে- দুই সন্তান। সুখেই আছে। চান্দ্রা আমেরিকা যায় নিয়মিত ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনিদের সংগে দেখা করতে। চান্দ্রা Toronto Airport-এ একটা কোন ডিপার্টমেন্টে regular basis একটা job করে। সে আমাদের Community Housing building-এর একজন tenant. আমাদের সংগে পরিচয় হওয়ার পর থেকে ওর অতি উত্তম ব্যবহারের ফলে আমাদের সে অতি আপন হয়ে গেছে- আমাকে Papa এবং আমার স্ত্রীকে Mummy ডাকে। চান্দ্রা অতি উদার হৃদয় এক মহিলা। উদাহরণ-

এক) টরোন্টো শহরের বাইরে কোন এক agriculture farm-এর মালিকের সংগে চান্দ্রার উত্তম একটা সম্পর্ক বর্তমান, যার ফলে সে ঐ ফার্মে গেলেই কিছু সবজী ফ্রী পেয়ে থাকে। সেই সবজীর ভাগ আমরাও পাই।

দুই) সেই ফার্ম থেকে সে সদ্য দোয়ানো গরুর দুধও আনে এবং বড় container এ ভরে ৫-৬ লিটার দুধ আমাদের দেয়। ঘনঘনই এমনটা ঘটে। আমার স্ত্রী সেই দুধ দিয়ে নানা ধরনের মিষ্টি তৈরী করেন। চান্দ্রাকেও ভাগ দেন, সংগে তার নিজের রান্না করা তরকারী, পিঠা ইত্যাদিও দেন। চান্দ্রা খুব খুশী মনে সেগুলো গ্রহণ করে।

ওর কাছ থেকে ফ্রি সবজী ও দুধ নিতে আমরা আপত্তি জানাই, বিনিময়ে মূল্য নিতে বলি।

সে আপত্তি তোলে, বলে, আমি ওসব ফ্রি পেয়ে থাকি। কি করে তোমাদের কাছ থেকে মূল্য নেবো, বল? তাছাড়া আমি তো ভাগও পাচ্ছি। সর্বোপরি, তোমাদের সংগে মাবাবা ও সন্তানের সম্পর্ক, কি করে বিনিময় গ্রহণ করবো?

সুতরাং আমরা চুপ করে থাকি।

তিন) আমাদের কমিউনিটি বিলডিংয়ের সামনে বড় একটা plot–এ প্রতি বছর চান্দ্রা নিজে পরিশ্রম করে নানা রকম ফুলের চাষ করে, নিয়মিত পানি দেয়, আগাছা পরিস্কার করে। সুন্দর সুন্দর ফুল ফোটে সেখানে। বলে, গার্ডেনিং করতে আমার ভাল লাগে। শারীরিক পরিশ্রম করি, স্বাস্থ্যটাও ভালো থাকে। বেশ আছি। -আগষ্ট ২৪, ২০১৭

একজন রসিক মানুষ

Fracture Clinic. দুই বয়স্ক স্বামী-স্ত্রী (ক্যানাডিয়ান) পেশেন্টকে যথারীতি ওয়েলকাম করার পর পাশে রাখা চেয়ারগুলোর দিকে ইশারা করে বসতে বলে বললাম: ইউ আর ইন দ্য রাইট প্লেইস। নো ওরিজ এনিমৌর। প্লীজ হ্যাভ আ সীট এবং রিল্যাক্স।

চেয়ারে বসতে বসতে হাসি মুখে স্বামী মহাশয় বললেন: To relax, I need a cold beer in my hand. Do you serve cold beer, sir?

আমিও হেসে জবাব দিলাম: Unfortunately, we don’t serve any cold beer or hot coffee, sir. What we serve is a welcoming smile, good service and a comfortable chair to sit on.

তিনি জোরে হেসে দিয়ে বললেন: That’s more than enough, I can forgive the absence of the cold beer, for a change. Thank you, sir.

চমৎকার রসিক লোক।

আগষ্ট ৩০, ২০১৭

BIJAN DAVAEI

তিনি একজন ইরানী। পঞ্চাশোর্ধ অতি সুন্দর সুপুরুষ। শিক্ষিত। শালীন পোশাক পরিহিত। অমায়িক ভদ্রলোক। পেশায় একজন taxi driver. তিনি ছিলেন আজকে আমার Wheel-Trans taxi driver, ক্লিনিক থেকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে গেলেন।

আমার নামের শেষে Hossain আছে লক্ষ্য করে তিনি জানতে চাইলেন আমি একজন শিয়া মুসলিম কিনা। বললাম: না, আমি শিয়া নই, আমি সুন্নী মুসলিম।

দ্বিতীয় প্রশ্ন: আপনি কোন দেশের লোক?

বললাম: বাংলাদেশী। তারপর আমি জানতে চাইলাম: আপনার দেশ?

BIJAN বললেন: ইরান। আপনি কি একজন শিয়া মুসলিম? প্রশ্ন করলাম।

– না আমি শিয়া নই, সুন্নীও নই, আমি কোন ধর্মই মানি না। আমার স্ত্রীপুত্রকন্যাকেও আমি কোন ধর্মেই দীক্ষা দিইনি। ধর্ম হচ্ছে একটা ব্যক্তিগত বিশ্বাসের ব্যাপার- between the Creator and the creation. জোর করে সমাজগতভাবে কারো উপর কোন একটা ধর্মমত চাপিয়ে দেয়া, তা না করলে শাস্তি দেয়া, পরকালের শাস্তির ভয় দেখানো ইত্যাদিকে আমি একটা অত্যাচার বলে মনে করি। God মানুষকে একটা বিবেকসহ সৃষ্টি করেছেন যাতে তারা ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায় বিচার করে জীবনটা শান্তিতে কাটাতে পারে। এখানে শাস্তির ভয় দেখিয়ে বিবেকটাকে শ্বাস-রুদ্ধ করাটাকে আমি সমর্থন করি না। -নভেম্বর ২৮, ২০১৭

দুই হিজাবী-নিকাবি নারীর কথা

১৬ই ডিসেম্বর ২০১৭। বাংলাদেশের ৪৬তম বিজয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক বিজয় মেলাতে গিয়েছিলাম স্কারবরোর এক Community Centre-এ। উদ্দেশ্য ছিল কিছু বই বিক্রি করা। লোক সমাগম ছিল ভালোই কিন্তু বইয়ের ক্রেতার সংখ্যা ছিল নগণ্য। তাই বিক্রয়ও হলো নগণ্য। শাড়ি-সালোয়ার-কামিজের দু’টি স্টল ছিল। একটিতে বসা এক শ্রীলংকান মহিলা, নাম Yogeswari, সংক্ষেপে Yoga. কথাবার্তা বললাম।

অপরটি চালাচ্ছিলেন এক হিজাবী-নিকাবি মহিলা। তার মুখ দেখার কোন উপায় নেই, তবে তার দেয়া Business Card থেকে জানা গেল যে তার নাম Zuraira. জিজ্ঞাসা করলাম: এই নামের অর্থ কি?

তিনি বললেন: অর্থ জানি না। আমার নানা রেখেছিলেন এই নাম।

জানতে চাইলাম: নিকাব কবে থেকে পরতে শুরু করেছেন?

– তিন বছর আগে আমার স্বামী মারা যাওয়ার আগে থেকেই।

মহিলার বয়স অনুমান করার তো কোন উপায় নেই, জিজ্ঞাসা করাটাও চরম অভদ্রতা। ঠিক তেমনি সময়ে তার থেকে বেশ লম্বা সর্বাংগ হিজাব ও মুখে নিকাব বাঁধা একটি যুবতি এসে উপস্থিত।

মহিলা সেই যুবতির দিকে হাত দিয়ে ইশারা করে বললেন: এটা আমার মেয়ে।

মেয়েটি মাথা নীচু করে বলল: আসসালামু ’আলাইকুম।

বললাম: ওয়ালাইকুম সালাম। তারপর প্রশ্ন করলাম: কি ধরনের লেখাপড়া করছেন?

– স্কুলে গ্রেইড ইলেভেনে পড়ছি।

কাছে কোন কাস্টমার নেই দেখে মা ও মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলাম: আপনাদের দু’জনের দেহই তো মোটা জামাকাপড় দিয়ে ঢাকা, চোখ দু’টি ছাড়া মুখও নিকাব দিয়ে ঢাকা। চেহারা দেখা যায় না। ঘরের বাইরে পাবলিক প্লে­ইসে আপনারা একে অন্যকে চেনেন কি করে? মেয়ে কি দিয়ে চিনতে পারে আপনি তার মা? আপনিইবা কি দিয়ে চিনতে পারেন এটা আপনার মেয়ে?

আমার প্রশ্ন শুনে দু’জনেই চুপ।

একটুক্ষণ পর মেয়েটি মৃদু কণ্ঠে বললো: Natural instinct, I think.

কিন্তু মা কোন জবাব দিলেন না। -ডিসেম্বর ১৬, ২০১৭

(চলবে)

সাইদুল হোসেন। মিসিসাগা