মুসলিম তরুণীর উপর বর্ণবাদী হামলা
হামলাকারীর মুখের উপর সেই তরুণী ছুঁড়ে মারল কফি : দ্রুত পালালো সেই ব্যক্তি
প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ২৭ মে ২০২২ : সেন্ট জোন্সে (নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডর) দুই মুসলিম বোন যেখানে কাজ করে সেখানে এক ব্যক্তি তাদের দিকে এগিয়ে এসে তাদের প্রতি চিৎকার করতে থাকে। লোকটি ১৫ বছর বয়সী বোনটির মাথায় সশব্দে থাপ্পড় মারে, মেয়েটি প্রায় মাটিতে পড়ে যাচ্ছিলো। ঘটনার পর দুই বোন এসব কথা বলছিলো।
১৮ বছর বয়সী আসমাহান আল সালোম গত ৭ মে সংঘটিত ওই ঘটনার ভিডিওচিত্র ধারণ করেন। কানাডিয়ান প্রেস সেই ভিডিও দেখেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, কমলা রঙের টুপি পরা অল্প পাকা দাড়িঅলা একজন বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি ১৫ বছর বয়সী মালেক আল সালোমের মাথায় আঘাত করছেন। তার আগে তিনি চিৎকার করে বলছিলেন, “আমি জানি না তোমরা এদেশে কী করছো।”
আঘাতের প্রচণ্ডতায় মালেক আল সালোম রাস্তার পাশে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এরপর তিনি একটি আইসড কফি লোকটির মুখে ছুঁড়ে মারেন।
এ সময় আসমাহান ভিডিও করা বন্ধ করে দেন, কারণ লোকটি আবারও তার বোনের দিকে তেড়ে যাচ্ছিলো। গত বৃহস্পতিবার এক সাক্ষাৎকারে আসমাহান এসব কথা জানায়। সাক্ষাৎকারে তার বোন মালেকও উপস্থিত ছিলো। আসমাহান বলেন, মালেক এবার লোকটির চশমায় আঘাত করে এবং লোকটি পিছু হটে সেখানে থেকে চলে যায়।
মালেক বলেন, তিনি মানুষকে নিজের মত করে রুখে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করতে চান। তিনি বলেন, “আপনার গায়ের রঙ কী, আপনি কোত্থেকে এসেছেন বা কী করেন সেগুলি কোনও বিষয়ই না।” তিনি বলেন, “কেউ আপনাকে আঘাত করবে এমনটা হতে দেবেন না। আপনাকে মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে।”
এই দুই বোন এসেছে সিরিয়া থেকে। আসমাহান জানান, তারা তাদের পরিবারের সঙ্গে প্রায় সাত বছর আগে সেন্ট জোন্সে এসেছেন। তারা পরস্পরের সহকর্মী এবং উভয়েই হিজাব পরেন। তারা একটি ফাস্টফুডের রেস্তোরাঁর কাজ করেন এবং সেখান আবর্জনা ফেলার জন্য বেরুতেই লোকটি তাদের ওপর চড়াও হয়।
আসমাহান বলেন, লোকটি দ্রুতই তাদের উদ্দেশ করে জাত তুলে গালাগাল করে এবং তাদেরকে উদ্দেশ্য করে ‘ঘ-ড়িৎফ’ ব্যবহার করে। তিনি বলেন, “আমরা আরবিতে কথা বলছিলাম এবং তার গালাগালির কোনও জবাব দিইনি। আসলে প্রথমে আমরা ভেবেছিলাম লোকটি কৌতুক করছে। কিন্তু এরপরই সেটা গুরুতর হয়ে ওঠে।”
আসমাহান বলেন, তারা ওই রাতেই রয়েল নিউ ফাউন্ডল্যান্ড পুলিশ বাহিনীকে ডেকে সংশ্লিষ্ট অফিসারের কাছে ঘটনার ভিডিও হস্তান্তর করেন। কিন্তু এর পরের কয়েক সপ্তাহে পুলিশ একবার চেষ্টা করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়। তিনি বলেন, একজন পুলিশ কর্মকর্তা তাদের বাবার সঙ্গে কথা বলেন এবং হামলাকারীকে শনাক্ত করতে সহায়তার জন্য জনগণের প্রতি আবেদন জানাতে তারা ভিডিও থেকে একটি স্থিরচিত্র ব্যবহার করতে পারেন কিনা জানতে চান। তাদের বাবা পুলিশকে সেই রাতে ফোন করে তার মেয়েদের কাছ থেকে অনুমতি নেয়ার জন্য বলেন।
আসমাহান বলেন, “পুলিশ এর পর আর কখনই ফোন করেনি। এজন্যেই আমরা ধরে নিয়েছি, পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি অথবা হয়তো তারা এসব নিয়ে আদৌ ভাবেই না।”
রয়েল নিউ ফাউন্ডল্যান্ড পুলিশ বাহিনীর মুখপাত্র কনস্টেবল জেমস ক্যাডিগান বৃহস্পতিবার বলেন, পুলিশ সক্রিয়ভাবে ঘটনাটির তদন্ত করছে। এ বিষয়ে কোনও অভিযোগ গঠন করা হয়নি। শুক্রবার বিকেল পর্যন্তও পুলিশের পক্ষ থেকে ভিডিওর সেই হামলাকারীকে অনুসন্ধানের বিষয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়নি বা ঘটনা সম্পর্কে জানার জন্য জনগণের কাছে কোনওরকম তথ্য আহবান করা হয়নি।
ক্যাডিগান বলতে পারেননি এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে কিনা। কিংবা এ বিষয়ে কেন জনগণের উদ্দেশে কোনও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলো না সেটাও তিনি বলতে পারেননি। তিনি বলেন, সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করতে অফিসাররা নানা ধরণের পদ্ধতি ব্যবহার করেন। তিনি আরও যোগ করেন, “তদন্তের কোনও পর্যায়ে তারা যদি মনে করেন গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের দরকার আছে তাহলেই তারা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জনগণের কাছে অনুরোধ জানান।”
নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ও ল্যাব্রাডরের বর্ণবাদবিরোধী কোয়ালিশনের চেয়ারপারসন সোবিয়া শেখ উল্লেখিত ঘটনার বিষয়ে সাড়া দেবার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, “এধরণের ঘটনার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে বলিষ্ঠ অবস্থান নেয়া দরকার যে, এসব সহ্য করা হবে না।” তিনি বলেন, “কিন্তু আমরা এ নিয়ে যা শুনতে পাচ্ছি তাতে তেমন কোনও অবস্থান নেয়ার নমুনা পাওয়া যাচ্ছে না।”
ওই ঘটনা ঘটেছে ১৫ মার্চ সেন্ট জোন্সের মসজিদে ডিম ছুঁড়ে মারার ঘটনার পর। জানুয়ারি মাসে অনলাইনে বক্তৃতায় ‘ঘ-ড়িৎফ’ ব্যবহার করে গালি দেওয়ার কারণে মেমোরিয়াল ইউনিভার্সিটির একজন প্রফেসর সমালোচিত হন। একজন প্রফেসরের মুখে ‘ঘ-ড়িৎফ’ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার এই ঘটনাটি ঘটে ঠিক সেই মাসেই যখন সোবিয়া শেখের গ্রুপটি এই প্রদেশের হাই স্কুল পাঠ্যক্রমের সমাজ বিজ্ঞান বইতে অভিবাসীদের সম্পর্কে বর্ণবাদী বিষয়বস্তু থাকার বিষয়ে নিন্দা জানায়।
শেখ বলেন, এই প্রদেশে মুসলিম এবং অন্যান্য অশ্বেতাঙ্গ জনগণের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও বর্ণবাদী আচরণ বাড়ছে, বিশেষ করে নারীদের বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, “আমি জানি না, এধরণের আরও কত বেশি ঘটনা অপ্রকাশ্য থেকে গেছে।”
আসমাহান আল সালোম বলেন, তিনি যখন ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ্যে বলেন, তখন তিনি অনেককেই জাতিগত বিদ্বেষ ও দুর্ব্যবহারের নানা ঘটনা বলতে শুনেছেন। তিনি আশা করেন যে, ওইসব লোকেরাও ঘটনাগুলি প্রকাশ্যে বলতে শুরু করবেন। -দ্য ক্যানাডিয়ান প্রেস