‘কুকুর হইতে সাবধান’
খুরশিদ আলম
‘কুকুর মানুষের সেরা বন্ধু’ এমন একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে। ‘বিশ^স্ত প্রাণী’ হিসাবে গৃহপলিত কুকুরের ‘খ্যাতি’ অনেক। জীবন দিয়ে হলেও মনিবের প্রাণ রক্ষা করতে এগিয়ে আসে এই প্রাণীটি। কানাডায় এরকম কিছু নজির আছে যেখানে নিজের জীবন দিয়ে কুকুর তার মনিবের জীবন রক্ষা করেছে।
কিন্তু এই প্রাণীটিই আবার ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। বিপদাপন্ন করে তুলতে পারে মানুষের জীবন। এমনকি খোদ মনিবের জীবনও এবং মনিবের পরিবারের সদস্যদের জীবনও। কুকুরের সামনে সবচেয়ে বেশী অরক্ষিত থাকে শিশুদের জীবন। গৃহপালিত কুকুরের নৃশংস হামলায় শিশুরা প্রাণ হারিয়েছে এমন কিছু নজির রয়েছে কানাডায়। নজির রয়েছে মনিবেরও প্রাণ হারানোর।
আর রাস্তা-ঘাটে অপরিচিত মানুষের উপর কুকুরের হামলাতো প্রতিদিনকার ঘটনা। টরন্টোতে আমি নিজেও এরকম হামলার শিকার হয়েছি তিনবার। তবে সৌভাগ্যবশত কোনবারই আহত হয়নি। সবশেষ হামলার ঘটনাটি ঘটেছে গত সপ্তাহে আমি যখন বিকেলে হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। বিকেলে হাঁটা আমার নিয়মিত অভ্যাস।
প্রতিদিনকার মতো সেদিনও আমি হাঁটতে বেরিয়েছিলাম। হাঁটা প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। লক্ষ্য করলাম আমার সামনে প্রায় ২০০ গজ দূরে একজন সেলোয়ার-কামিজ পরা মহিলা হাঁটছেন। মাথায় ওড়না জড়ানো। বাংলাদেশী বা ভারতীয় হতে পারেন মহিলা। কিংবা পাকিস্তানী। হঠাৎ শুনতে পেলাম ঐ মহিলা ভয়ে আর্তচিৎকার করছেন এবং এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছেন। ভাল করে তাকিয়ে দেখলাম, তাঁর পিছনে পিছনে দৌড়াচ্ছে বড় আকৃতির এক কুকুর। দ্রুত কাছে এগিয়ে গেলাম। ততক্ষণে কুকুরের মালিকও বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন। কিন্তু কুকুরের আক্রমণাত্মক দৌড়ানি বন্ধ হচ্ছে না। এক পর্যায়ে আমার সামনে এসেও আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে কতক্ষণ ঘেউ ঘেউ করলো। কামড়ে দেয় দেয় এমন অবস্থা। কুকুরটির গলায় কোন দড়ি বা ফিতা ছিল না।
দু:খজন বিষয় হলো, ত্রাস সৃষ্টিকারী কুকুরটির মালিক বিষয়টিকে মোটেও গুরুত্ব দিচ্ছিলেন না। উল্টো ঐ মহিলাকে দোষারোপ করছিলেন কেন তিনি সাইডওয়াক ছেড়ে তাঁর বাড়ির সীমানায় প্রবেশ করেছেন।
কুকুরের আক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে ঐ মহিলা সাইডওয়াক থেকে সরে গিয়ে বাড়ির সীমানায় প্রবেশ করেছিলেন। ঐ সময় বাড়ির গ্যারাজের ঝাপ খোলা ছিল। ভিতরে মালিকসহ আরো দু-তিন ব্যক্তি বসেছিলেন। এবং এ কারণেই মহিলা দৌড়ে তাঁদের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন এই ভেবে যে তাঁরা সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসবেন। কিন্তু দেখা গেলো, সাহায্যের বদলে উল্টো ঐ মহিলাকে দোষারোপ করা হচ্ছিল কেন তিনি বাড়ির সীমানায় প্রবেশ করেছন। আর কুকুরটিকে থামানোর তেমন কোন চেষ্টাও তাঁরা করছিলেন না। যেন মজা পাচ্ছেন এমন এটা ভাব। মুচকি মুচকি হাসছিলেনও কুকুরের মালিক এবং ঐ মহিলাকে বলছিলেন, ‘কুকুরতো আপনাকে কামড়ে দেয়নি, রক্তপাতও হয়নি। তাহলে কেন আপনি এমন করছেন?’ অন্যদিকে ঐ সময় গ্যারাজের ভিতর যাঁরা বসেছিলেন তাঁরাও সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার পরিবর্তে কুকুরের মারমুখী আক্রমণ ও মহিলার ভয় পাবার বিষয়টি নিয়ে হাসা-হাসি করছিলেন এবং থেকে থেকে ‘এফ ওয়ার্ড’ও ব্যবহার করছিলেন।
কুকুরের মালিকের এহেন আচরণে ঐ মহিলা তখন বেশ ক্ষুব্দ ও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেন। আমিও জানতে চেয়েছিলাম কুকুরকে কেন তাঁরা সামলাচ্ছেন না। এটিতো যে কোন মূহুর্তে কামড়ে দিতে পারে। আমি তখন ঐ মহিলাকে জিজ্ঞেস করতে যাচ্ছিলাম তিনি পুলিশ ডাকতে চান কি না। দেখলাম, তিনি ইতিমধ্যেই ৯১১ এ কল দিয়েছেন। কিন্তু যেহেতু কোন ইনজুরী ছিল না তাই ৯১১ এর অপারেটর তাকে ৩১১ এ কল দেওয়ার পরামর্শ দেন যারা কুকুরের আক্রমণের বিষয় দেখাশুনা করেন।
এরপর ঐ মহিলা ৩১১ এ কল দিয়ে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং আমার নাম ও টেলিফোন নম্বরও দেন সাক্ষী হিসাবে। আর লক্ষ্য করেছিলাম, ৯১১ এ কল দেয়ার আগে ঐ মহিলা কুকুরের মালিকের সঙ্গে বাদানুবাদের ঘটনাটি তাঁর সেলফোনে রেকর্ড করে রাখছিলেন। এই রেকর্ড একটি বড় সাক্ষী হিসাবে কাজে দেয়।
ইতিমধ্যে এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। ঐ মহিলার সঙ্গে রাস্তায় আবার দেখা। তিনি জানালেন, ‘টরন্টো এনিমেল সার্ভিস’ তাকে একটি ইমেইল পাঠিয়েছে এবং জানিয়েছে যে, কুকুরের মালিককে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশে বলা হয়েছে কুকুরটির গলায় বেল্ট পরাতে হবে এবং দড়িও লাগাতে হবে। আর লাইসেন্স নিতে হবে কুকুরটির জন্য। কারণ তার লাইসেন্স ছিল না। এবং কুকুরটি সরাসরি ‘পিট বুল’ না হলেও ঐ গোত্রেরই একটি যা খুবই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে মানুষের জন্য।
উল্লেখ্য যে, কেউ যদি কুকুরের আক্রমণ বা হামলার শিকার হয়ে ‘টরন্টো এনিমেল সার্ভিস’ এ অভিযোগ করেন তখন নিয়ম অনুযায়ী সেখানকার একজন কর্মকর্তা দুই ঘন্টার মধ্যে ঘটনাস্থলে হাজির হবেন যদি কুকুরটি তখনো গলায় দড়ি বা ফিতার বাধন ছাড়া ঘুরাঘুরি করতে থাকে। আর তা যদি না হয় অর্থাৎ কুকুরটি যদি তার মালিকের নিয়ন্ত্রণে থাকে তবে পরবর্তী ২৪ ঘন্টার মধ্যে একজন কর্মকর্তা অভিযোগকারী, কুকুরের মালিক এবং প্রয়োজনে সাক্ষীর সঙ্গেও যোগাযোগ করবেন ঘটনাটি তদন্ত করার জন্য। অভিযোগকারী যদি হামলায় আহত হয়ে থাকেন এবং ডাক্তারের কাছে গিয়ে থাকেন তবে মেডিক্যাল ডকুমেন্ট চাইতে পারেন টরন্টো এনিমেল সার্ভিসের কর্মকর্তা। হামলার ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য কোন প্রমাণ থাকলে সেটিও সংগ্রহের চেষ্টা করবেন তিনি। এবং তদন্তের জন্য সব তথ্য ও প্রমাণ একত্রিত করবেন।
সিটি অব টরন্টোর ওয়েবসাইটে এ কথা বলা হয়েছে। সেখানে আরো বলা আছে, যথাযথ তদন্তের পর যদি প্রমাণিত হয় যে কুকুর আক্রমণ করেছিল তাহলে যে সকল পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে তার মধ্যে আছে :
Ñ কুকুরের মালিককে একটি লিখিত সতর্কবার্তা প্রদান করা হবে যদি আক্রমণের ঘটনাটি গুরুতর বা বিপজ্জনক না হয়ে থাকে এবং কুকুরটির বিরুদ্ধে প্রথমবারের মতো কেউ অভিযোগ করে থাকেন।
– যদি কুকুরের আক্রমণটি গুরুতর বা বিপজ্জনক বলে প্রমাণিত হয় অথবা দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বারের মত কেউ অভিযোগ করে থাকেন তবে মালিককে সেই অনুযায়ী একটি পত্র দেয়া হবে যেখানে উল্লেখ থাকবে :
– মালিকের বাড়ির প্রাঙ্গণ ছাড়া অন্যত্র কুকুরকে নিয়ে গেলে অবশ্যই তার মুখে মুখবন্ধ পরিয়ে নিতে হবে।
– মালিকের বাড়ির সামনে অবশ্যই একটি সতর্কতার চিহ্ণ বা প্রতীক লাগিয়ে রাখতে হবে।
– সিটি’র leash-free dog park সমূহে ঐ কুকুরের প্রবেশাধিকার থাকবে না।
– মালিককে অবশ্যই একটি ‘dangerous dog tag’ সংগ্রহ করতে হবে কুকুরের জন্য।
– কুকুরের চামড়ার নিচে একটি মাইক্রোচিপ বসাতে হবে শনাক্তকরণের জন্য।
– কুকুরের মালিককে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে কুকুরটি আদেশ জারির ৯০ দিনের মধ্যে সামাজিকীকরণ ও আনুগত্যের প্রশিক্ষণ পেয়েছে।
এখন রাস্তায় বের হলে বা এলিভেটরের ভিতরে কিংবা কোন পার্কে বেড়াতে গেলে কোন কুকুর যদি আপনাকে কামড়ে দেয় এবং আপনি গুরুতরভাবে আহত হন তখন মালিকের বিরুদ্ধে এই সকল সতর্কবার্তা বা আইনী নোটিশ কি কাজে আসবে আপনার? আপনার ক্ষত কি সারবে তাতে? যদি মুখে বা শরীরের অন্য কোন স্থানে ক্ষতের স্থায়ী দাগ বসে যায়? আর শারীরিক ক্ষতের পাশাপাশি মানসিক যে ক্ষত দেখা দিবে সেটির কি হবে? আপনি তখন ভয় পাবেন রাস্তায় বের হতে গেলে। এলিভেটরে চড়তে ভয় পাবেন। পার্কে যেতেও ভয় পাবেন। আপনার মনের মধ্যে সারাক্ষণ একটি আতঙ্ক বা ভয় কাজ করবে আবার কখন কোন কুকুর আপনাকে আক্রমণ করে বসে।
বাংলাদেশে প্রায় সব কুকুরই বেওয়ারিশ। তার মধ্যে আবার দু-চারটি থাকে ‘পাগলা কুত্তা’। তবে ঐ বেওয়ারিশ ও পাগলা কুকুরগুলো সাইজে থাকে ছোট বা অপুষ্টিতে ভোগার কারণে থাকে দুর্বল। আর সেই কুকুরগুলোকে না ক্ষেপালে কামড়াতে আসে না। কিন্তু কানাডার কুকুরগুলো অপুষ্টিতে ভোগে না। আর কোন কোনটি সাইজে নেকড়ে বাঘের চেয়েও বড়। দূর থেকে দেখলেই ভয় লাগে। এগুলো নিয়ে কুকুরের মালিকেরা রাস্তায় বের হন ডগ ওয়াকিং এর জন্য। অবশ্য গলায় দড়ি থাকে। তবে সবাই যে কুকুরের গলায় দড়ি পরান তা নয়। দেখা গেছে নিয়ম থাকলেও কেউ কেউ কুকুরের গলায় দড়ি না পরিয়েই রাস্তায় বা পার্কে বেড়াতে যান। তাদের কুকুরগুলো কি নিরীহ প্রকৃতির? নাকি ভাল করে ট্রেনিং দেয়া থাকে অপরিচিত লোকজনের সঙ্গে ‘ভদ্র’ ব্যবহার করার জন্য? আমার জানা নেই। তবে রাস্তায় কুকুর নিয়ে বের হলে তার গলায় দড়ি থাকবে এটাই এখানকার নিয়ম। কারণ কখন কোন কুকুর কাকে কামড়ে দিবে তার কি কোন ঠিক-ঠিকানা আছে?
আদমশুমারীর রিপোর্ট অনুযায়ী টরন্টোতে প্রায় তিরিশ লক্ষ মানুষ বাস করেন। আর এই শহরে কুকুরের সংখ্যা প্রায় দুই লক্ষ তিরিশ হাজার। pitbullinfo.org এর এক হিসাবে দেখা যায় টরন্টোতে ২০১৪ সালে ৭৬৭ টি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। ২০০৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪৮৬ টি। অর্থাৎ এই দশ বছরে টরন্টোতে কুকুরের আক্রমণের ঘটনা ৫৭% বৃদ্ধি পেয়েছে। আর gregmonforton.com এর এক হিসাবে দেখা যায় অন্টারিওতে কুকুর কর্তৃক কামড়ের ঘটনা ঘটে প্রতি বছর ৫ হাজারেরও বেশী। এবং গোটা কানাডায় প্রতি ঘন্টায় ৪২ টি কামরের ঘটনা ঘটে।
এরকম একটি দেশে রাস্তায় হাটতে বের হলে কুকুরের সম্ভাব্য আক্রমণের বিষেয়ে সতর্ক থাকাটা প্রয়োজন। তবে আতঙ্কিত হলে চলবে না। আতঙ্কিত হলে রাস্তায় বের হওয়াই বন্ধ হয়ে যাবে। চেনা পথে প্রতিদিন হাটার সময় লক্ষ্য রাখতে হবে কোন কোন বাড়িতে কুকুর আছে, বিশেষত মাঝারী ও বড় আকৃতির কুকুর। যে সকল বাড়িতে বড় কুকুর আছে সে সকল বাড়ির সামনে দিয়ে না হেটে অপর প্রান্ত দিয়ে হাটা ভাল। তবে এটি সবসময় সম্ভব নয়। কারণ, বড় কুকুর আছে কোন কোন বাড়িতে তা আগে থেকে অন্দাজ করা কঠিন যতক্ষণ পর্যন্ত না কোন ঘটনা ঘটে বা ঐ কুকুর ঘরের বাইরে আসে। গত সপ্তাহে যে বাড়ির সামনে কুকুরের আক্রমণের ঘটনাটি ঘটেছিল সেই পথ দিয়ে আমি গত ৪ বছর ধরেই বিকেলে বা সন্ধ্যায় হেঁটে আসছি। কিন্তু কোনদিন দেখিনি ঐ বাড়িতে কুকুর আছে। কিংবা এমনও হতে পারে যে, আগে ঐ বাড়িতে কুকুর ছিল না। এখন আছে।
আর যে শুধু পাগলা কুকুরই কামড়াতে আসে তা নয়। Ontario SPCA and Humane Society এর মতে অনেক সময় কুকুর অসুস্থ হলে, আঘাত পেলে বা ভয় পেলেও কামড়াতে আসে। আবার কোন কোন কুকুর যে বাড়িতে থাকে সেই বাড়ি বা বাড়ির সদস্যদের রক্ষা করতে গিয়ে অথবা খাবার বা খেলনা রক্ষা করতে গিয়েও কাউকে কামড়ে দিতে পারে।
কুকুর থেকে নিরাপদে থাকার জন্য Ontario SPCA and Humane Society কিছু গাইডলাইন দিয়েছে যা নিন্মরূপ:
– কুকুর যখন খাবার খায়, ঘুমায় বা নিজ বাচ্চাদের যত্ন নিতে থাকে তখন তাদের বিরক্ত করা যাবে না।
– কুকুরের খাবার, খেলনা বা খাবারের বাটির কাছে যাবেন না।
– কখনোই কুকুরকে জ¦ালাতন বা তাড়া করবেন না। তাকে লক্ষ্য করে চিৎকারও করবেন না।
– কুকুরের সঙ্গে রুক্ষভাবে খেলতে যাবেন না। তাদের কান বা লেজ ধরে টানাটানি করবেন না।
– মনে রাখবেন বয়স্ক কুকুর এবং প্রতিবন্ধী কুকুর সহজেই বিরক্ত বা ভীত হয়ে উঠতে পারে।
– কুকুরের কাছ থেকে কোন খাবার তুলে নিয়ে যাবেন না। কুকুরের উপস্থিতিতে মাটিতে বা কোন পাত্রে ফেলে রাখা কোন খাবারও তুলে নিবেন না।
– কুকুরের পাশ দিয়ে দৌড়াবেন না বা সাইকেল চালাবেন না। কিছু কুকুর দ্রুত চলমান বস্তু তাড়া করতে পছন্দ করে।
– রাস্তাঘাটে বা গাড়িতে অথবা অন্য কোন স্থানে কুকুরের মালিকের অনুপস্থিতিতে কোন কুকুরের কাছে ভিড়বেন না।
– যদি কোন কুকুর আপনার সামনে খুব উত্তেজিত হয়ে উঠে বা আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে তবে আপনার হাত দুটি আপনার দুই বগলের নিচে চেপে ধরে শান্তভাবে দাড়িয়ে থাকুন। এই সময় কুকুরের চোখের দিকে সড়াসড়ি তাকাবেন না। এরকম ভঙ্গি কুকুরের কাছে বরিং বা অবসাদকর। এই পরিস্থিতে কুকুর আগ্রহ হরিয়ে দ্রুত অন্যত্র চলে যেতে পারে।
এভাবে দাঁড়িয়ে থাকাটা একটা সাধারণ কৌশল কুকুরের হাত থেকে বাঁচার। তবে শতভাগ গ্যারান্টি নেই যে কুকুর তারপরও আক্রমণ করবে না। আবার দৌড় দেওয়াটাও নিরাপদ নয়। কারণ সে ক্ষেত্রে কুকুরও আপনার পিছু পিছু দৌড়াতে থাকবে। বরং দৌড় না দিয়ে আপনার কাধে ঝুলানো ব্যাকপ্যাক (যদি থাকে) বা জ্যাকেট অথবা ভ্যানিটি ব্যাগ কিংবা এরকম অন্যকিছু যদি থাকে তবে তা আপনার ও কুকুরের মাঝখানে একটি প্রতিবন্ধক হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
মনে রাখতে হবে কুকুর, বিশেষ করে মাঝারি থেকে বড় আকৃতির কুকুরগুলো হিংস্র বন্যপ্রাণীর মতই হয়ে উঠতে পারে কখনো কখনো। পোষমানানো বা গৃহপালিত হলেও এই প্রাণীগুলো মানুষ হত্যা করেছে এমন নজীর কানাডায় কম নেই। এমনি তার মালিকের শিশু সন্তানদেরও নৃশংসভাবে কামড়ে মেরে ফেলেছে এমন ঘটনাও আছে বেশ কয়েকটি। বাদ যাননি খোদ মনিবও। এখানে তার কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হলো :
২০০৭ সালের ১লা জুলাই। অন্টারিও’র মন্টেগু এলাকায় কোরি লিন এডওয়ার্ডস নামের ১ বছর বয়সী একটি শিশুকে কামড়ে মেরে ফেলে তার দাদার ১০ বছর বয়সী এক কুকুর। শিশুটির দাদাকে এর জন্য দায়ী করা হয়নি।
২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারীর ঘটনা। সাচকাচুয়ানে কিথ আয়রন নামের এক শিশুকে স্থানীয় নর্থান রিজার্ভ এলাকায় ৩ টি কুকুর মিলে একসাথে আক্রমণ করে মেরে ফেলে। শিশুটি তার এক আত্মীয়ের বাসায় যাচ্ছিল।
২০১০ সালের ২২ মার্চ। নুনাভাটের পাংনিরতুং এলাকায় ৩ টি স্লেজ কুকুর মিলে ৪ বছর বয়সী ‘সাবক আকপালিয়লুক’ নামের একটি শিশুকে হত্যা করে। শিশুটির ঘাড় ও গলায় মারত্মকভাবে কামড়ে দিয়েছিল কুকুরগুলো।
২০১০ সালের ৭ জুন। কুইবেক এর সেন্ট-বারনাবে-সুদ এলাকায় ৩ সপ্তাহ বয়সী এক শিশুকে বাড়ির কুকুর কামড়ে মেরে ফেলে। শিশুটির ১৭ বছর বয়সী মা ও ৩৭ বছর বয়সী নানী ঘরের বাইরে কয়েক মিনিটের জন্য গিয়েছিল ধুমপান করার জন্য। শিশুটি তখন ঘরের মধ্যে রাখা একটি কার সিটে বেল্ট বাধা অবস্থায় ছিল। হঠাৎ কান্নার শব্দ শুনে ঘরের মধ্যে এসে তাঁরা দেখেন শিশুটিকে মারাত্মকভাবে কামড়ে দিয়েছে বাড়ির কুকুর দুটি।
২০১৮ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। আলবার্টার রকি ভিউ কাউন্টিতে ৫০ বছর বয়সী লিসা লয়েড নামের এক মহিলা নিজ বাড়িতে নিজের কুকুরের আক্রমণে প্রাণ হারান। কুকুরটি প্রথমে লিসা’র নাতনীকে আক্রমণ করেছিল। সে কেবল হাটতে শিখেছে। তাকে বাচাতে গিয়ে লিসা নিজেও আক্রমণের শিকার হন এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন। পরে শিশুটিকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ইতিপূর্বে হিংস্রতার কোন রেকর্ড ছিল না কুকুরটির। তবে প্রতিবেশীরা একাধিকবার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিকট নালিশ করেছিলেন কুকুরটির বিরুদ্ধে এর ভীতিকর আচরণের কারণে। কুকুরটিকে পরে মেরে ফেলা হয়।
২০১৭ সালের ১৩ মে। রোজ ঈগলস্টিক নামের এক ২৪ বছর বয়সী মহিলা রাতে এক কনস্ট্রাকশন সাইটের পাশ দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। সেখানেই হঠাৎ এক কুকুরের আক্রমণের শিকার হন তিনি। কুকুরটি ভয়ানকভাবে তাকে কামড়ে দেয়। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু ঘটে এবং সারারাত সেখানেই তার লাশ পরে ছিল। পরের দিন সকালে লোকজন তাঁর লাশ দেখতে পায় সেই কনস্ট্রাকশন সাইটের পাশে।
২০২১ সালের ১লা এপ্রিল। অন্টরিওর স্ট্রাথ্রয় ক্যারাডক এলাকায় ১৭ বছর বয়সী এক শিক্ষার্থী তাঁর এক পারিবারিক বন্ধুর মালিকানাধীন কুকুরের আক্রমণে প্রাণ হারান।
উপরে উল্লেখিত ঘটনাগুলোর তথ্য উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া। আরো অনেকগুলো ঘটনার বিবরণ রয়েছে সেখানে।
অবশ্য এ কথাও সত্যি যে, কুকুর মানুষের অনেক উপকারেও লাগে। সার্ভিস ডগ বা পুলিশ ডগ এর কথা উল্লেখ করা যায় এখানে। সার্ভিস ডগের একটি ঘটনা আমার স্মৃতিপটে আজও গেঁথে আছে প্রায় ২৭ বছর পরেও। তখন আমি নতুন এসেছি কানাডায়। থাকি মন্ট্রিয়লে। সেখানকার Berri–UQAM মেট্রো (সাবওয়ে) স্টেশনে একদিন দেখি এক অন্ধ ব্যক্তি একটি কুকুরের পিছনে হাঁটছেন। কুকুরটির গলায় বাধা দড়ির এক প্রান্ত অন্ধ ব্যক্তিটির এক হাতে ধরা এবং তাঁর অন্যহাতে একটি সাদা ছড়ি। স্টেশনের কাছাকাছি একটি ট্রেন চলে এসেছে। ট্রেনটির আওয়াজও শুনা যাচ্ছে। আর ২০/২৫ সেকেন্ডের মধ্যেই ট্রেনটি প্লাটফর্মে এসে দাঁড়াবে। কিন্তু অন্ধ ব্যক্তিটি তখনো প্লাটফরম থেকে অনেকটা দূরে। কুকুরটি তখন ট্রেনের আওয়াজ শুনে দ্রুত এগুতে থাকে। পিছনে অন্ধ ব্যক্তিটিও। আশ্চার্য হয়ে লক্ষ্য করলাম, কুকুরটি ঠিক সময়মত অন্ধ ব্যক্তিটিকে প্লাটফরমে নিয়ে এলো এবং খোলা দরজা দিয়ে ট্রেনের ভিতরে নিয়ে গেল। পরে জেনেছি এটি ছিল একটি সার্ভিস ডগ। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের সাহায্যে এই জাতীয় কুকুরগুলোকে ট্রেনিং দেয়া হয়। আর সেই ট্রেনিং এর জন্য অনেক টাকা ব্যয় করতে হয়।
পুলিশ ডগও অনেক উপকারী। মাদক চোরাকারবারীসহ বিভিন্ন অকর্মের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের ধরতে এই জাতীয় কুকুর বেশ দক্ষতার পরিচয় দেয়। যুদ্ধ ক্ষেত্রে মাটির তলায় লুকিয়ে রাখা মাইন খুঁজে বের করতে পারে এই জাতীয় কুকুরগুলো।
অন্যদিকে গৃহপালিত কুকুর তার মনিবকে ভালুকের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছে এমন কিছু নজীরও আছে কানাডায়। এমনকি নিজের জীবন দিয়ে হলেও। এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল ২০১৩ সালের আগস্ট মাসে। সিবিসি নিউজের এক রিপোর্ট থেকে জানা যায়, অন্টারিও’র থান্ডার বে এলাকায় ৪২ বছর বয়সী এক ব্যক্তি স্থানীয় এক পার্কে গিয়েছিলেন বেড়াতে। সঙ্গে ছিল তার দুুটি কুকুর। হাটতে হাটতে এক পর্যায়ে তিনি যখন কিছুটা ক্লান্তি বোধ করছিলেন তখন একটি জলাশয়ের ধারে বসে পড়েন একটু বিশ্রাম নেয়ার জন্য। ঠিক এই সময়ই পিছন থেকে একটি কালো ভালুক অতর্কিতে তাঁর উপর হামলা চালায়। তখন তিনি আত্মরক্ষার জন্য পানিতে ঝাপ দেন এবং সেখানেই অপেক্ষা করতে থাকেন। একপর্যায়ে ভালুকটি ধৈর্য হারিয়ে ঐ স্থান থেকে চলে যায়। পরে তিনি পানি থেকে উঠে এসে তাঁর গন্তব্য পথে পা বাড়ান। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ভালুকটি আবার এসে হাজির হয় এবং ঐ ব্যক্তিকে আবারও আক্রমণ করে বসে। এই সময় তাঁর সঙ্গে থাকা দুটি কুকুরের মধ্যে একটি কুকুর নিজের জীবন বাজি রেখে ভালুকটিকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে মনিবকে রক্ষা করার জন্য। এই সুযোগে মনিব দৌড়ে নিকটস্থ পার্ক রেঞ্জার স্টেশনে ঢুকে পড়েন। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। পরে তাকে স্থানীয় এক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তিনি বেঁচে যান। কিন্তু কুকুরটি ভালুকের আক্রমণে মারা যায়।
ভালুকের আক্রমণ থেকে মনিবকে বাচাতে গিয়ে আরেকটি কুকুর জীবন দিয়েছিল ২০১৩ সালের মে মাসে। ক্যালগারি’র কোচরান এলাকায় ঘটেছিল ঐ ঘটনাটি। সেদিন ৩০ বছর বয়সী জো আজগার নামের এক ব্যক্তি তাঁর রিমোট কেবিনে বসে অবসর সময় কাটাচ্ছিলেন। সাথে ছিল তাঁর কুকুরটিও। আর ঠিক সেই সময়ই জঙ্গল থেকে এসে হাজির হয় এক কালো ভালুক। প্রস্তুতি নেয় আক্রমণের। বিপদের গন্ধ পেয়ে কুকুরটি সচকিত হয়ে উঠে এবং মনিবকে বাচানোর জন্য অতুলনীয় বীরত্ব নিয়ে ভালুকের মুখোমুখি হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য কুকুরটির। ভালুকের আক্রমণের কাছে পরাজিত হয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ে সে। এরপর ভালুকটি কেবিনের জানালার পাশে এসে দাঁড়ায়। দুর্বল জানালাটি ভাঙ্গতে তার বেশী সময় লাগেনি। এরপরই ভালুকটি ঢুকে পড়ে কেবিনের ভিতর। তখন উপায় না দেখে জো আজগার কেবিন থেকে বের হয়ে দৌঁড়াতে থাকেন। কিন্তু ভালুকটিও নাছোড় বান্দা। সেও আজগারের পিছনে দৌড়াতে থাকে এবং এক পর্যায়ে তাঁকে ধরে মাটিতে ফেলে দিয়ে কামড়াতে থাকে। আজগার মরিয়া হয়ে ভালুকের আক্রমণ থেকে বাচার চেষ্টা করেন। কিন্তু পেরে উঠেন না। একপর্যায়ে ভালুকের চোখদুটি চেপে ধরেন তিনি। ভাগ্যক্রমে এই সময় দুজন মহিলা একটি গাড়িতে করে ঐ এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ একজনের আর্তচিৎকার শুনে দ্রুত তাঁরা সেখানে হাজির হন এবং গাড়ির হর্ন বাজিয়ে ভালুকটিকে ভয় দেখান। কৌশলটি কাজে দেয়। ভালুকটি ভয় পেয়ে ঐ স্থান পরিত্যাগ করে। এরপর ঐ মহিলা দুজন দ্রুত আজগারকে নিকটস্থ একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তার শরীরে ৩০০ টি সেলাই দিতে হয়েছিল। সেই যাত্রায় তিনি প্রাণে বেচে যান। ভালুকটিকে পরে মেরে ফেলে স্থানীয় ন্যাচারাল রিসোর্স কর্তৃপক্ষ।
উপরে আমরা কুকুরের দুই রূপই দেখলাম। মানুষের জন্য সে প্রাণ দেয়, আবার মানুষকে কামড়ে মেরেও ফেলে। তবে মানুষের জন্য প্রাণ দেয়ার ঘটনা একেবারেই বিরল। অন্যদিকে মানুষকে আক্রমণের ঘটনা অনেক অনেক গুণ বেশী। তার মধ্যে আছে আবার হত্যার ঘটনাও। সুতরাং আমাদের মনে হয় বিষয়টি নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের সিটি কর্তৃপক্ষকে আরো জোরালো ভূমিকা নিতে হবে।
কারো সখের প্রাণী অন্যজনের জীবনহানী ঘটাবে, শারীরিক ও মানসিক সমস্যা তৈরী করবে তা মেনে নেয়া যায় না। উপরে আমরা দেখেছি- দাদা’র কুকুরের আক্রমণে ১ বছর বয়সী শিশুর প্রাণ গেছে, অথচ দাদা বেকুসুর খালাস পেয়ে গেলেন। এটি কোন ধরণের আইন? দাদা’র কি কোন দায় ছিল না এখানে?
যে সকল বাসায় শিশু আছে বা শিশুদের যাতায়ত আছে সেই সব বাসায় মাঝারি বা বড় আকৃতির কুকুর পালা যে নিরাপদ নয় তার কয়েকটি উদাহরণ আমরা দেখেছি উপরে। এরকম বহু নজীর আছে কানাডায়। একটি শিশু যদি তার শৈশবেই কুকুরের আক্রমণের শিকার হয় এবং আহত হয় তবে বাকি জীবনই সে সেই ক্ষত তার শরীর ও মনে বয়ে বেড়াবে। অথচ এটি হওয়া উচিৎ নয়। কিন্তু তারপরও অহরহই ঘটছে এগুলো। এর জন্য দায়ি প্রধানত কুকুর সম্পর্কিত নমনীয় আইন এবং কুকুরের মালিকদের অবহেলা বা দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
২০১০ সালে কুইবেকের সেন্ট-বারনাবে-সুদ এলাকায় ৩ সপ্তাহ বয়সী শিশুটিকে যে কুকুর কমড়ে হত্যা করেছিল সেই কুকুরটি ছিল Siberian huskie জাতের কুকুর। মাঝারী আকৃতির এই কুকুরটি দেখতে অবিকল নেকড়ে বাঘের মত। কিন্তু দাবী করা হচ্ছে যে এই জাতের কুকুর মারমুখি নয় এবং বিপজ্জনকও নয়। এমনকি কারণে অকারণে ঘেউ ঘেউ-ও করে না। যদি তাই হয় তবে কুকুরটি কেন ঐ শিশুটিকে কামড়ে মেরে ফেললো?
দুঃখজনক বিষয় হলো, কুকুরের আক্রমণের পর কেউ মারা গেলে অনেক ক্ষেত্রে মালিকের কোন সাজা হয় না এমন ঘটনাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাচকাচুয়ানে ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে কামড়ে মেরে ফেলে কয়েকটি কুকুর মিলে। নুনাভাটে ৪ বছর বয়সী আরেক শিশুকে কামড়ে মেরে ফেলে কয়েকটি কুকুর মিলে। ঐ দুটি ঘটনায় কুকুরের মালিক কাউকেই দায়ী করা হয়নি। কিন্তু কানাডায় আইন আছে কুকুরের কৃতকর্মের জন্য মনিব দায়ী থাকবেন।
কুইবেকে ৩ সপ্তাহ বয়সী শিশুটিকে Siberian huskie জাতের কুকুর কামড়ে মেরে ফেলার পর কিছুদিন একটু বিতর্ক হয়েছিল । কিন্তু তারপর আবার সব ঠান্ডা হয়ে যায়।
ব্রিটিশ কলম্বয়ার ডগ ট্রেইনার ব্রেড পেটিসন ম্যাকলিন’স ম্যাগাজিনকে বলেন, যে কোন জাতের কুকুরই মানুষকে আক্রমণ করার ক্ষমতা রাখে। আর আমরা ১৬ পাউন্ডের একটি কুকুরের ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করে থাকি।
এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, শিশুরা মাঝারি থেকে বড় আকারের যে কোন কুকুরে সামনেই অসহায়। কানাডিয়ান ভেটেনারী জার্নালের বরাত দিয়ে ম্যাকলিনস ম্যাগাজিনটি জানায়, ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০০৮ সালের মধ্যে কানাডায় কুকুরের আক্রমণে মারা যান ২৮ ব্যক্তি যাদের ৮৫ শতাংশেরও বেশী ছিল শিশু এবং বয়স ছিল ১০ এর নিচে। Canadian Hospitals Injury Reporting and Prevention Program এর হিসাবে দেখা গেছে ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে ২০০৩ সালের মধ্যে মারাত্মক নয় এমন আক্রমণের সংখ্যা ছিল ১৭ হাজার ৪ শ ৭৪ টি। আক্রান্ত এই শিশুদের অধিকাংশের বয়স ছিল ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে।
আর এই জাতীয় আক্রমণের সংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডগ ট্রেইনার ব্রেড পেটিসন বলেন, মালিকেরা মনে করেন বাড়ির কুকুরটিও তাঁদের আরেকটি শিশু সন্তান। এক বিছানায় ঘুমানও তারা। উঁচু চেয়ারে বসিয়ে মানুষের মতই খাওয়ান তাদেরকে। পোষাকও পরান। স্ট্রলারে বসিয়ে ঢেলে নিয়ে যান। এগুলো আসলে ‘দুর্যোগ সৃষ্টির রেসিপি’।
Toronto Humane Society’র গবেষণায় দেখা গেছে অন্টারিওতে কুকুর কর্তৃক কামড়ে দেয়ার সংখ্যা বাড়ছে। ২০০৩ সালে ৪৩৮১ টি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছিল। ২০০৯ সালে সেই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ৪৮১৯ টিতে। কুখ্যাত ঢ়রঃ নঁষষ কুকুর নিষিদ্ধ করার পরও আক্রমণের ঘটনা বাড়ছেই।
‘কুকুরের কামড় অত্যন্ত ব্যাপকভাবেই ঘটছে। অথচ বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে নেওয়া হচ্ছে না। আর অনেকেই এর ঝুঁকির ব্যাপারে অজ্ঞ।’ ম্যাকলিনস-কে এ কথা বলেন মন্ট্রিয়লের পশুচিকিৎসা আচরণবিদ এডিন স্টাইলস। তিনি আরো বলেন, ‘আমি কখনোই আমার শিশুকে কুকুরের সঙ্গে একলা রাখবো না। অথচ আমি দেখেছি আমার পরিচিত সবাই তাঁদের শিশু সন্তানকে একা ফেলে হয় লন্ড্র রূমে যাচ্ছেন নয়তো গার্বেজ ফেলার জন্য ঘরের বাইরে যাচ্ছেন। এই ৫ মিনিট সময়েই কিন্তু অনেক বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।’
ডগ ট্রেইনার ব্রেড পেটিসন বলেন, ‘কুকুরের বিষয়ে মানুষের মনোভাবের মধ্যে একটি বড় ধরণের পরিবর্তন আনা জরুরী। মানুষের বুঝতে হবে যে, কুকুর তার সেরা বন্ধু নয়।’
আমরাও তাই মনে করি। কেউ যদি কুকুর পালতে চান তবে যথাযথ দায়িত্ব নিয়ে তা করুন। নয়তো অন্যের জীবন হুমকীর মধ্যে ফেলতে পারেন আপনার সখ পুরণ করতে গিয়ে। আপনি নিজেও শিকার হতে পারেন এক ভয়াবহ পরিনতির।
খুরশিদ আলম
সম্পাদক ও প্রকাশক
প্রবাসী কণ্ঠ
টরেটক্কা টরন্টো