আপনি কি CERB’র টাকা পেয়েছেন? কানাডা রেভিনিউ এজেন্সী সেই টাকা শিগগিরই ফেরত চাইতে পারে

প্রবাসী কণ্ঠ ডেস্ক, ১ জুন ২০২২ : মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সরকার অন্তত ৯০ লাখ কানাডীয়র কাছে টাকা পাঠিয়েছিল। কানাডা এমার্জেন্সি রেসপন্স প্রোগ্রামের (CERB) আওতায় দেয়া সুবিধার আকারে ওই টাকা পাঠানো হয়।

এখন দুই বছর পর কানাডার রাজস্ব সংস্থা (সিআরএ) তার নথিপত্র পরীক্ষা করেছে। তারা এখন ওই অর্থের কিছু অংশ ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। খবর প্যাট ফোরান/সিটিভি নিউজ।

অন্টারিওর নিউমার্কেটের বাসিন্দা সারাহ মার্কার সদ্যই একটি ই-মেল পেয়েছেন যাতে সিইআরবির মাধ্যমে পাওয়া তার মোট টাকার কিছু অংশ ফেরত দিতে বলা হয়েছে। তবে কতটা ফিরিয়ে দিতে হবে সংস্থা থেকে আর কোনও চিঠি না পাওয়া পর্যন্ত তা তিনি জানতে পারছেন না।

মার্কার সিটিভি নিউজ টরন্টোকে বলেন, “এটা হাস্যকর। আমি ২০ বছর ধরে কাজ করেছি এবং সব সময়ই যথাসময়ে ট্যাক্স পরিশোধ করেছি। শেষ পর্যন্ত সরকার আমাকে দুঃসময় কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করার জন্য কিছু একটা করেছে, যা সে সময় আমার জন্য এটা ছিল স্বস্তিকর, আর দুই বছর পর আমাকে বলা হচ্ছে, ওই টাকা আমাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। ওয়াও!”

আটরান্টার স্টোনি প্লেইন-এর বাসিন্দা জানিস বাওয়ারস মহামারির শুরুর দিকে আহত হবার ঘটনায় চিকিৎসাজনিত বেকারত্বের বীমা সুবিধার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তার পরিবর্তে তাকে সিইআরবি থেকে টাকা পাঠানো হয়।

মহামারির চূড়ান্ত পর্যায়ে কেন্দ্রীয় সরকার অন্তত ৯০ লাখ কানাডীয়র কাছে টাকা পাঠিয়েছিল। এখন দুই বছর পর কানাডার রাজস্ব সংস্থা (সিআরএ) তার নথিপত্র পরীক্ষা করেছে। তারা এখন ওই অর্থের কিছু অংশ ফিরিয়ে নিতে চাচ্ছে। ছবি : এ্যলেন হ্যাবিক/সিবিসি

বাওয়ারসকে ক’দিন আগেই নোটিস দেওয়া হয়েছে যে, সিইআরবি থেকে পাওয়া সুবিধার টাকার মধ্যে ১০০০ ডলার তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, এই পরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে দেয়া তার জন্য কঠিন হবে, কারণ তার স্বামী প্রতিবন্ধিতার কারণে পেনশনের ওপর নির্ভরশীল এবং তার নিজের চাকরিও খণ্ডকালীন।

তনি বলেন, “পেট্রোলের বাড়তি দাম এবং আমার বন্ধকীর কিস্তি বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে এখন খাবার ও অন্য সবকিছুর বাড়তি দাম নিয়ে আমাদের লড়াই করতে হবে।”

সিইআরবির টাকা পাওয়া অনেক কানাডীয় এখনও এখনও লড়াই করে যাচ্ছেন। এদের কিছু সংখ্যককে যখন এক হাজার থেকে দুই হাজার ডলার করে ফিরিয়ে দিতে বলা হচ্ছে তখন অন্যদের হয়তো আরও অনেক বেশি অর্থ ফিরিয়ে দিতে হতে পারে।

অস্বচ্ছলতা বিষয়ক একজন নিবন্ধিত ট্রাস্টি, যিনি ব্রমউইচ অ্যান্ড স্মিথ-এর গ্রাহকদের অর্থনৈতিক কল্যাণ পরিষেবার পরিচালক লরি ক্যাম্পবেল বলেন, মুদ্রাস্ফীতি, বাড়তি বিল এবং স্বাস্থ্যগত কারণে তাদের আরও বেশি সংখ্যক গ্রাহক আর্থিক সঙ্কটে রয়েছেন।

ক্যাম্পবেল বলেন, অর্থ ফেরত দিতে অনেক কানাডীয় অসুবিধায় পড়বেন।

তিনি বলেন, “কোনও ব্যক্তি সাহায্য পাবার যোগ্য কিনা তা যাচাই করার আগেই কেন্দ্রীয় সরকার প্রাথমিকভাবে ২০০০ ডলার করে পাঠিয়েছিল। সুতরাং বহু সংখ্যক মানুষের কাছে হয়তো ওই দু হাজার ডলার করেই পাওনা হয়ে থাকবে। কিন্তু এমনও লোক আছেন যারা পুরো মহামারির সময় ধরে সিইআরবির অর্থ নিয়েছেন। তাদের কাছে পাওনার পরিমাণ হাজার হাজার ডলার হতে পারে।

সিটিভি নিউজ রাজস্ব দপ্তরের কাছে জানতে চেয়েছিল, কী কারণে টাকা ফিরিয়ে দিতে বলা হচ্ছে। সিআরএ-র একজন মুখপাত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “যেসব ব্যক্তি টাকা পেয়েছেন এবং পরে দেখা গেছে যে তারা এই অর্থের একটি বা একাধিক পেমেন্ট পাবার যোগ্য ছিলেন না তাদের কাছে পুননির্ধারণের নোটিস পাঠানো হচ্ছে।”

সিআরএ জানায়, তারা সময় দিয়েই টাকাটা ফেরত নেবে এবং এর ওপর কোনও সুদ ধরবে না। কিন্তু তার পরও অনেক কানাডীয়র পক্ষে ওই টাকা ফেরত দেয়া কঠিন হবে।

ক্যালগেরির সিপিএস অ্যাকাউন্টিং সার্ভিসের প্রেসিডেন্ট ডাউ গ্যাবলহস বলেন, “এই টাকা ফেরত দিতে বলা ঠিক নয়। এটা মাত্রই ২০০০ ডলারের বিষয়।”

টাকা ফিরিয়ে দিতে বলা হয়েছে এমন লোকদের কিছু সংখ্যক বলেছেন, ওই সুবিধা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার একটি ভালো কাজ করেছিল, সুতরাং তাদেরকে এখন টাকাটা ফেরত দিতে বলা উচিত নয়।

মার্কার বলেন, “আমি জানি না, ঠিক এই মুহূর্তে কীভাবে টাকাটা ফেরত দেবো। আমার কাজ নেই, এমনকি কবে চাকরি ফিরে পাবো সে বিষয়েও নিশ্চিত নই, আর এসময় এটা সত্যিকারের একটি আঘাত।”

বাওয়ারস বলেন, “তাদের ভুলের জন্য আমাকে কেন মূল্য দিতে হবে? তাদের ভুলের জন্য আমাদের সবাইকে কেন মূল্য দিতে হবে?”

সিআরএ বলেছে, তারা সিইআরবির সুবিধা পাবার জন্য আবেদনকারীদের সঙ্গে সদিচ্ছা নিয়েই কাজ করতে ইচ্ছুক এবং যাদের কাছে টাকা পাওনা হয়েছে তাদের সঙ্গে তারা প্রতিটি ঘটনা নিয়ে আলাদাভাবে কাজ করতে চায়।